ইসমাঈল হোসাইন মুফিজী
…………….
মানুষের বিবর্তন
……………..
বহু তত্ত্বের বহুলতায় বিব্রত বিহ্বল
ভাবছি বৈরাগ্যই বেছে নেবো কিনা বিলয় বয়সে
অনেকেই মঙ্গল খুঁজে বেড়ান জঙ্গলে
আবার কেউ জঙলী জানোয়ারের দেমাগ নিয়ে
আবির্ভূত হন মনুষ্য সভার রাজ দরবারে।
জেরেতে কায়েম হয় বনরাজ সিংহের সিংহাসন
এরপর কিছুদিন বাঘ ভাল্লুকের উপোস যাপন
বাঁদর, গিদর, গন্ডারের দল তখন আঙ্গুল চুষে
চারদিকে শুধু হাহাকার আর হাহাকার।
এক সময় অজান্তেই জয়ী হয় বিবর্তনবাদ
মেকুর, ময়ূররাও রূপান্তরিত হয় ব্যাঘ্রে
স্বাধীনতার সুখ পেতে গিরগিটির মতো
এভাবেই বদলে যায় পৃথিবীর তাবৎ প্রাণী
এমনকি মানুষও চেঞ্জ হয় বিশেষ চঞ্চলতায়।
………………
যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা আমাদের স্বভাব
……………..
আমরা নাকি অন্যায়মুগ্ধ এক অন্ধকার জগতের মানুষ ছিলাম
পরিচিত ছিলাম যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি কিংবা রাজাকার হিসেবে
সকল প্রকার অধিকার হারিয়ে এতদিন আমরা ছিলাম দায়িত্বহীন
কবচে আবৃত কচ্ছপের মতো কাটছিলো আমাদের আলসে জীবন
এরপর বানভাসীদের ছেড়ে ভেসে আসা আধ মরা গরুর মতো
তাজা রক্তের লাল স্রোতে আমরাও ভেসে এলাম একের পর এক।
অনেক ভেবেছি, বুঝতে পারি না; কেনো যে কেউ কেউ বলছেন
“আয়না ঘরের ভূতুড়ে নিঃসঙ্গতা অতিশয় ভালো ছিলো আমাদের
আর কিছুকাল ঘুমালেই হয়তো পেয়ে যেতাম পরকালীন পরশ”
আহা! সদ্য প্রকাশিত কাহাফ সদস্যের ঘুম ভাঙ্গালো কে সে?
প্রার্থনায় বলছে, হে পরিত্রাতা! আমরা তোমার প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
এবার তুমি ফিরে তাকাও অসহায়-দুর্বল সব মানুষের প্রতি
আবরার, সাঈদ ও মুগ্ধসহ সকল শহীদের মায়ের প্রতি
সিল মারার অবারিত সুযোগ বঞ্চিত নতুন ভোটারদের প্রতি
মাতৃভূমির মায়ায় পাগলপারা হয়ে যারা আজো আছে দূর প্রবাসে
অনুগ্রহ করে তুমি তাদের কান্না থামাও, শূণ্য বুকে সান্ত্বনা দাও।
মন্ডপ এবং জাতীয় সঙ্গীতের নিরস বিতর্ক ভালো লাগে না আর
তারচে বরং বাদশা হুমায়ুনের ভাগ্য বরণ করে
মাতব্বরির হুইলভারগুলো ওদের হাতে ছেড়ে দাও
আবার শুনতে থাকি মিছিলে গুলির গর্জন আর আহতের ক্রন্দন
কারণ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা আমাদের পছন্দ, আমাদের স্বভাব।
…………….
জাগলে এখনই জাগো
…………….
জাগলে এখনই জাগো
ঐক্যের ভিক্ষা মাগো।
ওগো আজ মিলনের নেইতো ভয়, কেটে গেছে অবক্ষয়
দেখো বর্গীরা লুকিয়ে আছে সন্তর্পণে, এই নিভৃত ক্ষণে–
সখি, কাছে আসো আরো কাছে; আসো মুখোমুখি হই
দল বাঁধা পাখির মতো আমরা এখন মিলিত হই সঙ্গম সুখে।
ঘুমের বুকে শুয়ে আছে স্বৈরাচার ফেরাউনের নিষ্ঠুর প্রহরী
ওগো বন্ধু আসো না, এমন নিরবতা খুব সহজে মিলে না
ওরা জেগে ওঠার আগেই নিজেকে বাঁধি প্রীতির ডোরে
ভালোবাসার না পাওয়া সুখ আবারো ফিরিয়ে আনি
এই মহামিলনে হতে পারে যুগের মুসার আবির্ভাব
তাঁর আগমনেই ইসলামের নূর প্রজ্বলিত হবে নির্বিঘ্নে
তাই আসো, এখন থেকেই শুরু করি সুবাসিত রতির মিলন।
এখন প্রতিটি হাতকড়া খুলে গেছে, পায়ে ডান্ডাব্যারিও নাই
তাই হাতে হাত রেখে বলো : আমি তোমায় ভালোবাসি
ওগো বন্ধু, বালিশের নিরবতায় মাথা রেখে ভাবো
আয়না ঘরে ছিলো না তো কোনো আকিদার দোহাই
সেখানে তো সমানে সমান : আমি তুমি সে সবাই সমান।
জানাই অবারিত আহ্বান
ওগো বন্ধু, যদি কাছে না আসো, ভালো না বাসো
সময়কে ধারণ করতে না পারো; আর হারাও পরম তৃপ্তি
তথাপি প্রোজ্জ্বল নূরের দীপ্তি হয়ে অতি বিলম্বে হলেও
নিশ্চয়ই আসবেন কালের মহানায়ক ইমাম মাহদী
আমার ঈমান বলে, নবী ঈসাও আসবেন শেষ নবীর উম্মত হয়ে
তখন ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক মিলতেই হবে সত্য জোটে
সেদিন আমাদেরকে আশ্রয় নিতেই হবে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে।
তাই জাগলে এখনই জাগো
ঐক্যের ভিক্ষা মাগো।
……………….
এক টুকরো হাড় চাই
………………
শহরের পথে পথে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি পিলারের ফাঁসি চাই
ভ্যানের উপর আগুনে ঝলসে যাওয়া লাশের বিভৎস গন্ধ
দিনের আলোয় নাক চেপে সয়েছে তারা, প্রতিবাদ করেনি
হিটলারের কন্যা থেকে বাঁচাতে কেউ আসেনি একটি বার
তাইতো ওরা দাঁড়িয়ে থাক নিথর নিরবে, আমি তা চাই না আর।
বস্তার মুখে গ্রন্থিত প্রতিটি বাঁধ খুলে হাউনের মতো উলঙ্গ করো
পঁচা সবজির মতো স্তুপীকৃত শত সহস্র শহীদের শবদেহ কেমন আছে?
আয়না ঘরের আনিয়ারা কোথায় আছে? সবিনয়ে জিজ্ঞেস করো
হয়তো থেমে যাবে সন্তানহারা হাজারো মায়ের বুকফাটা কান্না
কেবলই ওরা তোমার কাছে কামনা করছে একটা লাশ
জিন্দা লাশ কিংবা মরা লাশ
চারদিকে ভেসে আসছে এক টুকরো হাড়ের আবদার
এমনকি কলজে ছেঁড়া বাছাধনের অচেতন বাহুটা হলেও চলবে।
সবেমাত্র দাফনকৃত সারি সারি গণকবরের সন্ধান করো
সেখানে অযত্নে পড়ে থাকা প্রতিটি সুগন্ধি ফুল কুড়িয়ে এনে
খুলুসি দুআর জন্য তৈরি করো এক একটা স্বর্গীয় সমাধি
হয়ে যাক যিয়ারতের একটি জায়েয ও পবিত্র অবলম্বন।
………….
কথার মাঝে গন্ধ কেনো
………….
ইসলামের সূর্যোদয়ে জ্বলে ওঠে তেদর
তেজস্বী সেই আলো খুব অসহ্য তাদের
সর্বদাই ওরা হয়ে থাকে বাদুর ঝুলা
চলছে দেখো উল্টো জীবন
তাদের গুহ্যদ্বার জ্বলে রোদের তেজে
শুকিয়ে তা কাঠ হয়েছে
হাগু করে মুখেই এখন
কথার মাঝে গন্ধ কেনো, বুঝলে বাছা?
……………..
শহীদ ইয়ামিন
……………
শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন!
আমাকে ক্ষমা করো, ক্ষমা করো বাবা!
বিবেকের কাছে আমি বড়ো অপরাধী; সেদিন–
শুধু অবাক হয়ে ভীরুতার চোখে নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম।
কেবল নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিলো না আমার
প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, ঘৃণা কিছুই করতে পারিনি আমি
ছিলাম ব্যর্থ, নিরুপায়। তবে আমি এও জানতাম–
সত্য বললেই গায়েবের আয়নায় আমার মুখ লুকাবে
অথচ তাঁরা অনায়াস আয়েবের বুলি আওড়ান আঁড়িপাতা বউয়ের মতো।
জানো বাবা, কেনো জানি তোমাকে ভুলতে পারি না কখনও
রাজপথের রাজ সাক্ষি হয়ে জেগে আছে সচকিত আমার দুচোখ :
ওরা তোমায় ট্যাঙ্কের উপর থেকে আবর্জনার মতো ছুঁড়ে ফেলেছিলো।
শহীদী তামান্নায় তখনো তোমার রোযাদার প্রাণ ওষ্ঠাগত : দমের উপর দম
ওরা তোমায় কুরবানীর পশুর মতো টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় ডিভাইডারে
এ যুগের বর্গীরা তোমাকে মানুষ মানে না, মানে না মানুষের সন্তান
সেদিন কেঁপে ওঠেছিলো মহান আল্লাহর মায়াবি আরশ। পাশাপাশি–
গলা কাটা মুরগীর মতো কাঁপন ধরেছিলো জালিমের দাম্ভিক সিংহাসনে
আর ক্ষণিকেই চুরমার হয়ে গেলো রক্তে রঞ্জিত অজুত টাকার সংসার।
…………….
ইসমাঈল হোসাইন মুফিজী : ১৯৭৯ সালের পহেলা মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার শেওড়া গ্রামের সরকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডা. মুফিজ উদ্দীন এবং মায়ের নাম কামিনা খাতুন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার হবিবপুর ও কেশবপুর ফাযিল মাদ্রাসা হতে সালে দাখিল (১৯৯৪) ও আলিম (১৯৯৬) পাস করেন। সিলেট জেলা শহরের পাঠানটুলাস্থ শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৮ সালে ফাযিল এবং একই জেলার কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি জামেউল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০০০ সালে কামিল (হাদিস) এবং ২০০৭ সালে হয়বতনগর আনোয়ারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা কিশোরগঞ্জ হতে কামিল (তাফসির) পাস করেন। ২০০৯ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাস কোর্স সমাপন করেন। ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ থেকে এম.এ (ইস. স্টাডিজ) উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বি.এম.টি.টি.আই. গাজীপুর থেকে বি.এম.এড কোর্স সমাপন করেন। ২০১৩ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা-ঢাকা থেকে এম.এড ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্ম জীবন : ২০০০ থেকে ২০০২ পর্যন্ত সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন বাগলা আ. হা. দাখিল মাদ্রাসায় ‘সহকারী মৌলভি’ পদে নিয়োজিত হয়ে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ০১.০৬.২০০২ ঈসাব্দে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাধীন মাথিয়া ই. ইউ. ফাযিল মাদ্রাসায় প্রভাষক (আরবি) পদে যোগদান করেন। বর্র্তমানে তিনি উক্ত মাদ্রাসায় সহকারী অধ্যাপক (আরবি) পদে কর্মরত আছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ : ১. ভালো লাগা গানগুলো (সঙ্গীতের সংকলন), ২০১০, নিজস্ব তত্বাবধানে প্রকাশিত। ২. আমি যেনো তোমার আশিক (কাব্য), প্রকাশক : লেখা প্রকাশ- ঢাকা, অমর একুশে বই মেলা ২০১২। ৩. কবিতা আমার পাষাণ প্রেমিক (কাব্য), প্রকাশক : লেখা প্রকাশ- ঢাকা, অমর একুশে বই মেলা ২০১৩। ৪. আল্লাহ তোমাকে ডাকে (সঙ্গীতের সংকলন), ২০১৫, নিজস্ব তত্বাবধানে প্রকাশিত। ৫. তাজবিদসহ কুরআন পড়ি (পাঠ্যপুস্তক সহায়িকা), ২০১৯, নিজস্ব তত্বাবধানে প্রকাশিত। ৬. চিন্তার সমান বড় হতে পারিনি (কাব্য), প্রকাশক : কালো- ঢাকা, অমর একুশে বই মেলা ২০২০। ৭. আল-কুরআনে শিল্পায়নের ধারণা (গবেষণা), প্রকাশক : কালো- ঢাকা, অমর একুশে বই মেলা ২০২০। ৮. শিশু-কিশোরদের ছড়া কবিতা ও গান, মুদ্রণ : প্রজাপতি প্রিন্টার্স- কিশোরগঞ্জ, প্রকাশ : জুলাই ২০২৪।