spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিক'আমার দেশ' পত্রিকা নিয়ে ভাবনা

লিখেছেন : রেজা তানভীর

‘আমার দেশ’ পত্রিকা নিয়ে ভাবনা

রেজা তানভীর

যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই আমার দেশ সম্পাদককে চিনতাম। বাসায় আমার দেশ পত্রিকা আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। আমরা দেখেছি, আমার দেশ পত্রিকার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সমালোচনার জন্য পত্রিকাটি বিখ্যাত ছিলো৷ 

২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের সময় যখন সব পত্রিকা ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক ছিলো তখন পত্রিকাটিই শিরোনাম করেছিল, ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি।’ এরপর আরো চমক লাগানো নিউজ করে আমার দেশ সরকারের রোষানলে পড়ে।

 আওয়ামী লীগ সরকার মনে করেছিল, পত্রিকাটি আর রাখতে দেয়া যাবে না। তাই ২০১৩ সালের ১১ ই এপ্রিল পত্রিকাটির অফিসে হামলা চালানো হয়। যা ইতিপূর্বে আমরা কোনো সরকার কর্তৃক দেখিনি। আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আমরা দেখেছি, একটা ভুয়া কাল্পনিক মামলায় মাহমুদুর রহমান বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। পরবর্তীতে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আদালতে হাজিরা দেয়ার জন্য গেলে তাঁকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মেরে রক্তাক্ত করে ফেলে।ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। হামলার পর রক্তাক্ত গায়ে তিনি বলেন, ‘৬৫ বছর বয়স আমার। সাবেক মন্ত্রী। বাংলাদেশের জন্য জীবন দিব। যত সব দিল্লির কুকুর।’

স্বাধীন বাংলাদেশের একজন সম্পাদককে শুধু লেখার অপরাধে  ন্যাক্কারজনক এই হামলা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। 

আমার দেশ ২০১৩ থেকে তার পত্রিকা চালু করতে পারে না। জেল খেটে ও হামলার পর মাহমুদুর রহমান বিদেশে চলে যান। অনলাইনে আমার দেশের নিউজ প্রকাশিত হতে থাকে। মাঝে মাঝে মাহমুদুর রহমান সেখানে কলাম লেখেন, ইউটিউবের কোনো কোনো চ্যানেলে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে হাজির হতেন।

২০১৩ পরবর্তী সময় ছিলো অনেক মানুষের জন্য দু:সহ। এই সময়ে সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে অনেককে জেলে নেয়া হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করার মতো ঘটনা ঘটেছে কিংবা বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে একটা পত্রিকা ফ্যাসিস্ট সরকারের সমালোচনা করে কিছু প্রকাশ করবে  তা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিলো না। সাধারণ জনগণ ধরেই নিয়েছিল, আওয়ামী লীগ আরো বহু বছরের জন্য টিকে গেছে। তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়।

কিন্তু মহান আল্লাহর অপরিসীম করুণায় ২০২৪ এর জুলাইতে ছাত্র জনতার এক রক্ষক্ষয়ী গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়।

শেখ হাসিনার পতনের পর মাহমুদুর রহমান বিদেশ থেকে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর তিনি আইন অনুযায়ী কারাগারে গিয়ে আদালতের কাছে জামিন চান। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি আবার জনতার মঞ্চে আবির্ভূত হন। একের পর এক সমাবেশে বক্তৃতা করতে থাকেন। আমরা মাহমুদুর রহমানের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। এরকম একটি সমাবেশ থেকেই তিনি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেন। পরে সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শুনছি, মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় আমার দেশ আবার প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর কয়েকদিন পরেই ফেসবুক সূত্রে দেখতে পাই, আমার দেশ পত্রিকা অফিসে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।  শুনতে পাই ২২ শে ডিসেম্বর পত্রিকাটি আবার বাজারে আসছে।

২১ শে ডিসেম্বর রাত ১১ টার পর থেকেই আমার দেশ প্রিন্ট ভার্সনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন পত্রিকা স্বল্পতার কারণে ত্রিশ টাকা দিয়ে আমার দেশ সংগ্রহ করি। সেদিন আমার দেশের ছবি তুলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখি। যার মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকেও ছিলো।

আমার দেশ প্রকাশনায় দেশের ডানপন্থী মানুষের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেল। ডানপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, আমার দেশ বাংলাদেশের গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে।

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান পত্রিকাটির উদ্বোধনী সংখ্যায় লেখেন, ‘১১ বছর ধরে বন্ধ রাখা আমার দেশ এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে আমরা আজ পুন:প্রকাশ করলাম। প্রেস নেই তাই অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপিয়েছি। অর্থবলও নেই। কিন্তু আমার দেশের সঙ্গে আছে জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা।’ 

আমার দেশের প্রথম দিনের ছাপা সংস্করণের শিরোনাম ছিলো, ‘দিল্লিকে ঢাকা অ্যাটাক করতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা।’

তার পাশেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বেশ কয়েকজনের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম পাতায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার আছে।

সম্পাদকীয় পাতায় বদরুদ্দিন উমরের একটা কলাম আছে। তাছাড়া আমার দেশের বিশেষ ক্রোড়পত্রে আসিফ নজরুল, মিজানুর রহমান আজহারী, সিরাজুল ইসলাম চৌধরী, ফরহাদ মজহার,শফিক রেহমান, আহমাদুল্লাহ, পিনাকি ভট্টাচার্যের কলাম ছিলো।

আমার দেশ নিয়ে আলোচনা আছে, সমালোচনা আছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নতুন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের লেখার স্বাধীনতা দিতে হবে। কোনো সংবাদপত্র অফিসে ন্যাক্কারজনক হামলা ও পত্রিকা নিষিদ্ধের ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

খান কাওসার on দীর্ঘ কবিতা : কসম
মেজু আহমেদ খান on দীর্ঘ কবিতা : কসম