spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদু'টি কবিতা

লিখেছেন : আরিফ আজাদ

দু’টি কবিতা

আরিফ আজাদ

১.

অপরিচিত আগন্তুকের মতো একদিন
মৃত্যুর ফেরেশতা সম্মুখে এসে দাঁড়াবে।

যে কলকাকলিতে ভরে ছিল ঘরদোর
হঠাৎ সেখানে নেমে আসবে কবরের নির্জনতা।
রঙিন মখমল স্বপ্নগুলো
তুলির সর্বশেষ আঁচড় যেখানে এখনো দেওয়া বাকি;
এক করুণ ধূসরতায় ভরে উঠবে সেসব।

যে মুখ না দেখলে ঘুম আসতো না
যে চোখের ভাষা না পড়লে মন জুড়াত না
যে শব্দ না শুনলে থামতো না বুকের ধুকপুকুনি—
কেমন দুঃসহ দুঃস্বপ্নের মতো সেগুলো পর হয়ে যাবে সহসাই।

আমি ভুলে যাব জোছনা রাতের কথা
উঠোন ভরে থাকা সন্ধ্যামালতী ফুলের কথা
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের কথা।
ভুলে যাব পাখিদের গান, নদীর কলতান।

হাঁড় কাঁপানো শীতের রাতে
বরফি বাতাসে যেরকম না না করে
কাঁপতে থাকে বাবলা গাছের পাতা
গভীর রাতে বাজ পড়ার শব্দে
যেভাবে ধক করে উঠে ছোট্ট কাক ছানাটির হৃদপিণ্ড,
আজকাল মৃত্যুর সংবাদে আমারও সেরকম অনুভূতি হয়।

তবু চাই মৃত্যু আসুক—
ভোরের শিশির ফোঁটার মতো
শীতের সকালের কুসুম কোমল রোদের মতো
সন্ধ্যের ঝিরিঝিরি বাতাসের মতো।

যা আসবার তাকে আটকানো যায় না।
প্রতিটা নতুন জন্মই যেহেতু একটি নতুন মৃত্যুর ইশতেহার;
ফলে, মৃত্যুকে ভালোবাসাই মানুষের নিয়তি।

জীবনের দাম যেহেতু মৃত্যু দিয়ে চুকোতে হবে,
তাই আজকাল মুগ্ধ হলে বলি—বাঃ ওটা তো মৃত্যুর মতো সুন্দর!

২.


একটা স্নিগ্ধ কবিতা লিখতে বসে
শুরুতে গোলাপের প্রসঙ্গ আনতেই
কলম ভেঙে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগল।

গোলাপের কথা লিখতেই কেন কলম ভেঙে যাবে
কলমের ভেতর কোথা থেকে আসলো রক্ত,
আমি জানি না।

একটা স্বাপ্নিক গল্প লিখতে চেয়েছি।
নির্জন মধ্যদুপুর,
একটা একলা পুকুর ঘাট,
পাকা কাঠাঁলের গন্ধে চারপাশ মো মো করবে।
একটা কোকিল একসুরে গেয়ে যাবে গান।

লেখা শেষ করে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখি—
খাতাজুড়ে ছড়িয়ে আছে একটা গ্রামের গল্প,
যেখানে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
কান্না, আহাজারি আর হাহাকার ছাড়া
গল্পে আর কোনো দৃশ্যকল্প নেই।

ভাবনার নির্জন মধ্যদুপুর
একলা পুকুর ঘাট
পাকা কাঁঠালের মো মো গন্ধ
দিনমান গেয়ে যাওয়া কোকিলের গান
কীভাবে যে আগুন হয়ে গেল
আমি জানি না।

একটুকরো শান্তির জন্য আমি
হেঁটেছি পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে।
ছায়াবীথি ভেবে যে গাছের তলায় একদিন ঘুমিয়ে পড়েছি,
ঘুম ভাঙতেই দেখি সেটা অজগর হয়ে আছে।

একটা জলাশয়ে এতো টলটলে স্বচ্ছ জল ছিল।
নিদারুন তৃষ্ণায় আজলা ভরে নিতে গিয়ে দেখি—
জলের মধ্যে হাঁ করে আছে আস্ত কুমির।

আমি গোলাপ লিখতে গেলে রক্ত হয়ে যায়।
আমার স্বাপ্নিক গল্পে লেগে যায় আগুন।
আমাকে ছায়া দেওয়া গাছ অজগর হয়ে উঠে,
আমার তৃষ্ণার জলে হাঁ করে থাকে ক্ষুধার্ত কুমির।

তারপর আমি বুঝেছি—
পৃথিবীতে কোনো স্নিগ্ধ কবিতা নেই
কোনো স্বাপ্নিক গল্প নেই
কোনো ছায়া নেই, তৃষ্ণার জল নেই।

আমি আরো জেনেছি—
শান্তির জন্য যুদ্ধ সর্বদা অনিবার্য।
গোলাপের স্পর্শ পেতে হলে
আমাকে গায়ে জড়াতে হবে শিরস্ত্রাণ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ