তাজ ইসলাম
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করা যে কোনো দেশের জন্য এটি অহংকারের বিষয়।মুক্তিযোদ্ধারাও সম্মানিত হয়ে থাকেন ইতিহাসের পাতায়।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হলেই যে তার সব কিছু মওকুফ এটা কোন দেশেই কোনকালেই সম্ভব না। যদি মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীকালে বেআইনি কাজ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। মুক্তিযুদ্ধ করার কারণে তিনি সম্মানিত।নিজের কর্মের কারণে করুণ পরিণতির মুখোমুখি হলে পূর্বের কারণে সবকিছু মওকুফ হয় না। ফৌজদারী অপরাধ করলে শাস্তিও তিনি পেতে বাধ্য।
তিনি কুখ্যাত হলে জনরোষ বা গণ ধোলাইও খেতে পারেন। রাষ্ট্র বিচার নিশ্চিত না করলেই মব তৈরী হয়। মব কারো কাম্য নয়। তবু মব ঘটে। প্রথম ঘটে বিচারহীনতা থেকে। জনতা অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই বিচার নিজ হাতে তুলে নেয়। যারা তুলে নেয় তারাও জানে আইন নিজের হাতে নেওয়া বেআইনি। পৃথিবীতে কেউ ফেরেস্তা নন। মানবীয় গুণ সবার মাঝেই বিদ্যমান। আক্রমণকারী ব্যক্তি প্রতিশোধ স্পৃহায় এ কাজ করে। তখন তিনি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজেও অপরাধী হন।
পারিবারিক, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ পরায়নতা মব হয় না। মব হয় সামাজিক অপরাধের কারণে। সমাজে তার অপরাধের বিস্তৃতি ব্যপক হলে,সমাজ অতিষ্ঠ হলে,লোকটা অত্যাচারী হলে চারপাশের লোক ক্ষিপ্ত হলে তখন মব হয়।
নির্যাতন,নিপীড়ন, জুলুম,অত্যাচার যখন সহ্যসীমা অতিক্রম করে।রাষ্ট্র,সমাজে তাকে জবাবদিহিতায় আনতে ব্যর্থ হয়।তখন একদিন বাগে পাইলেই পূর্ব ক্রোধে আক্রমণ করে জালেমকে। ঘটে একটি মব।
এমন ঘটনা কোন তথাকথিত নেতা,মুক্তিযোদ্ধা বা যে পরিচয়ই হোক তার বেলায় হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা বলে কেউ আইনের উর্ধ্বে ভাবার সুযোগ নেই।
সম্প্রতি কুমিল্লায় একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পড়ানো হয়েছে।
আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার নিন্দা জানাই।
এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটুক তা কামনা করি।
আমরা নিন্দা জানিয়ে ঘটনার অন্তরালে যেতে চাই।
যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এই মুক্তিযোদ্ধার নির্যাতনে তুমুল অতিষ্ঠ হয়ে করেছে।ব্যক্তি, গোষ্ঠী, পরিবার,সমাজ যখন আক্রান্ত হতে থাকে, জুলুমের পরিমাণ যখন সহ্যসীমা অতিক্রম করে এবং বিচার না পায়; তখন সুযোগ পেলে জালেমকে দেখে নেয়।আইন,যুক্তি তর্কের কথা ভুলে যায়।আমরা যারা সাধু সন্ত কথা বলি নিজে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কতটুকু সুবোধ থাকবেন তা ভাবার বিষয়।
আব্দুল হাই কানু একজন মুক্তিযোদ্ধা
মবের স্বীকার ব্যক্তি। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় তিনি তার সমাজে অপরাধী হিসেবে কুখ্যাত। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্টের মতো তিনিও পতিত।ক্ষমতার বলয় বিচ্যুত। সমাজ থাকে ঘৃণার চোখে দেখে। তার নামে খুনসহ একাধিক মামলা চলমান।তিনি আইনের হেফাজতে থাকলে নিরাপদ থাকতেন।কোন জালেমকেই সমাজ বরদাশত করে না।কানুকেও করেনি। পরে কী হবে তা জনতা ভাবে না। দেশ বিদেশ তার নজির।সিরিয়ার আসাদের পিতার মূর্তিতে প্রস্রাব করেছে সেদেশের শিশুরা।বাংলাদেশের দৃশ্য আমাদের চোখের পর্দায়। কানুর সমাজ তার কৃতকর্মের ফল ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন জিগির ওঠেছে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয়েছে।তা নির্জলা মিথ্যা। ভুক্তভোগীদের কাছে কানুর পরিচয় একাধিক। কানু খুনি,দখলদার,জালেম। তার এসব পরিচয় বা কুকর্ম সে নিজেই তার গৌরব জনক পরিচয়কে ম্লান করে দিয়েছে। দেশে পতিত সরকারের দোসররা ইস্যু তৈরীর পায়তারা হিসেবে কানুর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে হট্টগোল করছে।
আলোচনায় যাবার আগে কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করছি। উপস্থাপিত নামগুলোর যখন যার নাম মনে আসছে লিখছি। নামগুলোর ক্রমধারার ব্যত্যয়ের জন্য পূর্বেই নিজ ত্রুটি স্বীকার করে নিচ্ছি।
১.
মেজর জলিল একজন চৌকস মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তখন মুক্তিবাহিনী, সদ্য স্বাধীন দেশ, বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা সবাই। আজকের বাংলাদেশের মতো বহুদল,বহুমতের স্থলে ছিল এক মত,একদল।দলও না,সবাই স্বাধীনতার আনন্দে বিভোর।মেজর জলিল গ্রেফতার হলেন। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় লুটেরাদের লুটতরাজ বন্ধের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সম্মুখ সারির একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করলেন ভারতীয় বাহিনী।মুক্তি পান বাহাত্তরে।
২.
কমরেড সিরাজ শিকদার। মুক্তিযুদ্ধে তিনি,তার দল,তার বাহিনীর সুনাম ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।তাকে হত্যা করল মুজিব সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ক্রস ফায়ার। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে হত্যা করল মুজিব সরকার।
৩.
মেজর জিয়া।বীরউত্তম, সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা। সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রনায়ক।একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা।আওয়ামীলীগ তাকে পাকিস্তানের চর বলতেও দ্বিধা করেনি।মুক্তিযুদ্ধে তার সব অবদান অস্বীকারের চেষ্টা করেছে।তার খেতাব খেড়ে নিতে চেয়েছে।
৪.
কাদের সিদ্দিকী।বঙ্গবীর,বীরউত্তম। দ্বিমত করার কারণে আওয়ামীলীগে থাকতে পারেনি।
৫.
লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও বহিষ্কার।
৬.
সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন, ডালিম, রশিদ, মোসলেহ উদ্দীন এরা সবাই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।এদের সবাই সনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা।সব পরিচয়কে একপাশে রেখে তাদের দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে হাসিনা সরকার। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা মুজিব হত্যার আসামী। হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় তাদের মেজর,কর্ণেল,হাবিলদার, রিসালদার পরিচয় মৃত্যুদণ্ড থেকে তাদের রক্ষা করতে পারেনি।আওয়ামীলীগ বা হাসিনা সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে চুল পরিমাণ সম্মান না দেখিয়েই হত্যা করেছে।
৭.
খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি আওয়ামীলীগার। রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা।
অপমান অপদস্তের এহেন অপশন নেই যা তাকে করা হয়নি। মোশতাকের নাম শুনলে থুথু ছুঁড়ে একজন আওয়ামীলীগার। মুক্তিযোদ্ধা তখন সম্মানীত না হয়ে চরম অপদস্ত হয়।
আইনের কথা বলে অনেক সময় পাড় পাওয়া যায়। দোহায় থাকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার।
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াতো অপরাধ।কোন আইনের তোয়াক্কা না করে পশু আচরণ এটা কোন আইনে পড়ে? যেমন জয়নাল আবেদীন ফারুকের বেলায়।
৮.
জয়নাল আবেদীন ফারুক। বিএনপি দলীয় ব্যক্তিত্ব।সংসদ সদস্য।সংসদের চিফ হুইপ।
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তাকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নির্মম নির্যাতন করেছে আইনের পোষাক পরা লাঠিয়াল। কোনো পরিচয়কেই সম্মান দেখানো হয়নি।
৯.
সাদেক হোসেন খোকা। তার পরিচয় দিতে হবে? গেরিলা যোদ্ধা। তাকে রাজপথে রক্তাক্ত করেছে আওয়ামীলীগ।
এই রকম উদাহরণ দিলে ভুরি ভুরি দেওয়া যাবে।আওয়ামীলীগ কোনকালে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে কেবল মুক্তিযোদ্ধা বলে তার সব গোনাহ মাফ করেছে? মুক্তিযোদ্ধা অপরাধ করলে আওয়ামীলীগ সম্মান করেছে? আওয়ামীলীগের মতের সাথে না মিললে সাথে থাকতে পেরেছে কোন মুক্তিযোদ্ধা?
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানকে পুঁজি করে ব্যবসা করে গেছে আওয়ামীলীগ।
আওয়ামীলীগে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা, তারা সম্মান পায়। দ্বিমত করলেই এই সম্মান কেড়ে নেয় মুহূর্তকাল অপেক্ষা না করেই। এই সূত্র নিপাত করা হয়েছে চব্বিশের আন্দোলনে। ছাত্র জনতা চব্বিশে হিসাবে রেখেছে তাদের অপরাধকে। মুক্তিযোদ্ধা যদি পরবর্তীতে অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে কেন তাদের বিচার হবে না। যারা মুক্তিযোদ্ধা বলে গুরুত্ব পেতে চায় তারা মূলত সাবেক স্বৈরশাসকের অপশাসনকে ফিরিয়ে আনতে চায়। পতিত সরকারে ডজনখানেক মন্ত্রী এমপি আছে। যেমন,
১.বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক।
২.বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের।
৩.বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
৪.বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মজিদ হুমায়ুন।
৫.বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল।
৬.বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার।
৭.বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
৮. বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির নানক।
৯.বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ।
১০. বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াফেস উসমান।
১১. বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর হাকিম।
চব্বিশের গণ আন্দোলনে তারা খুনি,গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত, পলাতক। মুক্তিযোদ্ধা হলেই যদি সব মাফ হয় তাহলে তাদেরকে পূনর্বাসনের আয়োজন করতে হয়। তাহলে শত মায়ের বুক তারা খালি করল,শহীদ হল তাজা প্রাণ,আহত,পঙ্গু হল শত মানুষ।এসব অপরাধ কি ভুলে যেতে হবে? এটা ন্যায় বা আইনের কথা?
কোন সভ্য সমাজে ব্যক্তির অপরাধকে পদ পদবী, সম্মান,গোষ্ঠী, ক্ষমতা বলে মাফ করে দেওয়া হয় না। যে সমাজে দেয় সে সমাজ অনৈতিকতার সমাজ।যে ব্যবস্থা দেয় সে ব্যবস্থাই ফ্যাসিস্টের ব্যবস্থা। অপরাধের জন্য অপরাধী জবাবদিহিতায় আসবে।
আক্রান্ত ব্যক্তির বেলায়ও হিসাব তাই।আক্রান্তকে সবার আগে উল্লেখ করতে হবে মানুষ হিসেবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন। আধুনিক সভ্য জগতে প্রশ্ন তুলতে হবে মানুষ আক্রান্ত কেন? পৃথিবীর কোন মানুষ অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হোক এটা সুবিবেচক কেউ চায় না।আমরাও তা চাই না। ব্যক্তি অপরাধ করলে শাস্তি পাক,আইনে তার বিচার হোক।
মানুষ সত্য,মানুষ বড়, মানুষের প্রতি আমরা হব মানবিক।এটাই সততা।আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় তিনি মানুষ।এর বাইরে যারা নানা পরিচয় নিয়ে বড় গলায় কথা বলে তারা অসৎ।তারা আগায় দুরভিসন্ধি নিয়ে। আক্রান্ত হলে যারা পদ -পদবী,আসন,ক্ষমতা কেন্দ্রীক প্রশ্ন তুলে তাকে আক্রমণ করা হল কেন? তারা জগতের বৈষম্যের পূজারী।তারাই আশরাফ আতরাফের দেয়াল তুলে সমাজে।তারাই আবার সবল হলে,ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে মুচি,মেথর,রিক্সা চালক,বিরোধী মতের লোক,ছোট জাত, নিচ বলে আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না। আক্রান্তের পক্ষে প্রশ্ন তুলে নিজেরা আক্রমণকারী হিসেবে প্রস্তত হতে থাকে নিজের অজান্তে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাজীবীরাই বিগত পনের বছর বিরোধী পক্ষকে অতি উৎসাহে আক্রমণ করেছে।তারা অদৃশ্য আইনে পরিণত করেছিল তাদের নিজস্ব রীতি। তাদের মতে বিরোধী পক্ষকে আক্রমণ করা যেত, আক্রমণ করা ছিল তাদের চোখে বৈধ। মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হলে বিবেক থাকত জাগ্রত।
জগতে শত রকমের পদ, পদবী,পেশা আছে।কাউকেই তার পেশা বা পদের জন্য লাঞ্চিত করা আমরা সমর্থন করি না। কাউকে যদি আক্রমণ করা হয় ডাক্তার কেন? ইঞ্জিনিয়ার কেন? শিক্ষক,অধ্যাপক,সাংবাদিক,কেরানি,কৃষক,কামা,কুমার,নাপিত,মুচি কেন? তাহলে প্রশ্ন তুলতে পারেন কেন তারা এই বলে আক্রমণ করা হল? তখন ডাক্তার বা এই পেশার,পরিচয়ের একজনকে আক্রমণ করা মানে সমগ্র পরিচয়কে অপমানের শামিল। এর বাইরে ব্যক্তি অপরাধী হলে অপরাধের কারণে আক্রান্ত হলে মানুষ পরিচয়ে প্রশ্ন আসতে পারে পেশা পদবীর পরিচয়ে না।
যেমনটা আমাদের দেশে মুক্তিযোদ্ধার বেলায় হয়।কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি তিনি কেন মুক্তিযোদ্ধা এই কারণে নুন্যতম আক্রমণের শিকার হন তা হলে অবশ্যই তা প্রতিবাদ যোগ্য।তখন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আক্রমণ,অপমান মানেই সকল মুক্তিযোদ্ধাকে আক্রমণ অপমানের শামিল।কিন্ত মুক্তিযোদ্ধা যদি তার পরবর্তী জীবনে অন্যকোনো অপরাধে জড়িত হন তাহলে এই দায় অন্যরা নিবে কেন? অপরাধ করার পর তিনি অপরাধী।শাস্তি পাবেন অপরাধের।বরং মুক্তিযোদ্ধা খুনি,লুটেরা,ছিনতাই,ডাকাতি বা অন্য জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে গেলে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেওয়া অন্যদের জন্য লজ্জাজনক।অপরাধীকে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেওয়া মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননা করার শামিল । মুক্তিযোদ্ধা বলে তিনি পাপ থেকে মাফ পাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জনৈক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে সোরগোল করছে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয়েছে।পরবর্তীতে জানা গেল তিনি একজন কুখ্যাত অপরাধী।আওয়ামীলীগ আমলেও তিনি এলাকা থেকে ছিলেন বিতাড়িত।তার নামে আছে একাধিক হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা। কানুর সাথে যা ঘটেছে তা একান্তই তার অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া। আমরা সমর্থন করি না।কিন্ত পরিস্থিতিই ঘটনার জন্ম দেয়। ঘটনার নিন্দা জানানো যেমন জরুরি কেন তা ঘটল সে কারণ উৎঘাটন করাও জরুরি। বিগত দিনগুলোতে নানারকমের চেতনা লালন করে দেশকে শোষণ ও শাসন করে গেছে একটি পক্ষ।ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার ছিল এইসব নির্দিষ্ট কিছু বিষয়।এখনো তারা তার চর্চা করে বর্তমানকে চাপা দিয়ে অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চায়।
ধর্মগুরু অপরাধ করলে অপরাধী হয়।শিক্ষক অপরাধ করলে মুক্তি পায় না। যে কেউ, যে কোন পেশার লোক অপরাধ করলে শাস্তির আওতায় আসে। আসা প্রয়োজনও। আইন সবার জন্য সমান হোক।দূর হোক ফ্যাসিবাদী ধ্যান ধারণা। অপরাধীর কোন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা বলে আলাদা পরিচয় নাই। বরং অপরাধীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দেওয়া সৎ মুক্তিযোদ্ধাকে চরম অপমান।যারা দেয় তারা অসৎ।অসৎদের দমন করা সত্যবাদীদের কর্তব্য। পরিশেষ কথা জাতি মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান করে।কিন্ত মুক্তিযোদ্ধা যখন অপরাধী হিসেবে নিজেকে সমাজে হাজির করে তখন লাঞ্চনা অপরাধীর হয়।কোন মুক্তিযোদ্ধার না। তখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে সামনে এনে যারা অপরাধীর অপরাধকে আড়াল করতে চায় তারাও অপরাধী। এই অপরাধীদের চরিত্র এখন উন্মোচিত। সুতরাং জনরোষ থেকে বাঁচতে সাবধান থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।যত্রতত্র স্লোগান তুলে একজন মুক্তিযোদ্ধার অপমান মানে সকল মুক্তিযোদ্ধার অপমান।অপর পক্ষ থেকেও তখন জিঙ্গাসা আসে,একজন মুক্তিযোদ্ধা খুনি মানেই কী সকল মুক্তিযোদ্ধা খুনি? সবাই সৎ থাকলেই আর এমন পরিস্থিতি তৈরী হবে না।