spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েসাইয়্যিদ মঞ্জু জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

সাইয়্যিদ মঞ্জু জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু


| মাহমুদ নোমান |

মায়ের মুখের কথা বলতে এখন অনেক রক্তমাংসে গড়া মানুষের সম্মানবোধে আটকায়! যা যেকোনো সৃজনশীলতায় দুষ্টতার পরিচয়বাহী। এবং সেটি ধ্বসে যায় সৃষ্টির কিছুদিন পরেই। কেননা একজন গর্ভধারিণী মা তাঁর ছেলের ভাষা বা বোধের প্রথম ও প্রধান শিক্ষিকা। তাই কোনো সৃজনশীল মানুষের পরিচয়দানকারী যখন নিজের মায়ের মুখের কথা বা তাঁর আশপাশের পরিবেশ- পরিস্থিতিলব্দ জ্ঞান-বোধ সৃজন কর্মে অস্বীকার করে অথবা অন্যজনের এহেন কর্মকাণ্ডে বরঞ্চ নাক ছিটকায় তখন ওনাকে দুষ্কৃতিকারী এবং প্রচুর সন্দেহ করি। এসব কথা বলবার এতো তোড়জোড়ের কারণ একটা – সম্প্রতি কবি সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যগ্রন্থ ‘আমার সমুদ্রশিরা’ পাঠ নেওয়ার পরবর্তী ভেতরকার কেউ বলতে বাধ্য করেছে। এককথায় সাইয়্যিদ মঞ্জু মায়ের সেই আদর্শ ছেলে। সাইয়্যিদ মঞ্জুর ভাষাজ্ঞান, বোধ বা কল্পনাবল গর্ভধারিণী মায়ের আশপাশ ঘিরেই। তাই সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যিকতা সুদূরপ্রসারী এবং মজবুদ পিলারে সমৃদ্ধশালী; এজন্য সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যভুবণে পাঠক নির্দ্বিধায় প্রবেশ করবে। কোনো ভুলযোগে পাঠক বিভ্রান্ত হবে না। এটাই সাইয়্যিদ মঞ্জু আশ্বস্ত করতে পেরেছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘আমার সমুদ্রশিরা’ এর মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, এই নিজস্বতাকে কে কীভাবে শিল্পিত রূপ দিচ্ছে সেখানে একেকজন একেকজন থেকে ভিন্নতর হয়ে যায়। উপর্যুপরী সাধনার বিবিধ পরীক্ষা দিতে হয়। যেমন পরিবার বা আমার কাছে যত পোশাকআশাক আছে সেখান থেকে সবচেয়ে ভালোটাই বা মানানসই পোশাকটি পরিধান করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো। তেমনি আপনার পরিবার বা আপনিও একই কাজ করবেন। এটাই হচ্ছে শিল্পিত উপস্থাপনা। এখানেই সাইয়্যিদ মঞ্জুকে প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে…

০২.
সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতার ভাষাটা প্রাঞ্জল আন্তরিকতায় ও সংবেদনশীল, জীবন জীবিকার সাথে ভাবপূর্ণ ; মুহূর্তে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম পাঠকের অনুভূতি, যখন বলেন –

জেলে ভাই,কেন মারো তারে অপয়া বলে
সে যে সমুদ্রের ঝাড়ুদার।
– কাছিম পাঠ; ৩০ পৃ.)

সাইয়্যিদ মঞ্জু জীবনঘেঁষা নয়,জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু। কোনো কল্পনারসে টলে যায় নি,বক্তব্যে বেশ সুস্থির। সমুদ্রপাড়ের কবি সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতা সমুদ্রের সৌন্দর্যের চেয়ে তাণ্ডবতা বেশি উন্মোচিত হয়েছে এবং এটিই স্বাভাবিক। সমুদ্রপাড়ের মানুষের নানাবিধ দুঃখ – দুর্দশা সাবলিলতায় ফুটে উঠেছে। তবে উগ্রতায় নয়,মোলায়েম সুরে….

সাইয়্যিদ মঞ্জু ‘আমার সমুদ্রশিরা’ কাব্যগ্রন্থের প্রায় কবিতায় গদ্যছন্দে নিজের মতো করে কথা বলেছেন। আনুষাঙ্গিকতাকে তেমন পরোয়া করেনি,চিত্রকল্পের ভাসানো খেলায় উপমার মৃদু অলংকারিত্বে কবিতাগুলোর সাজসজ্জা, কিছু পঙক্তি উল্লেখ করলে পাঠকমাত্রই বুঝবেন –

ক.
ইলিশ -রূপচাঁদার ক্রন্দন টুনার জালে
বিপদের ফাঁদে কাছিমও
অহর্নিশ মৃত্যু সাইরেন অগভীর সমুদ্রজলে
ভয়ঘুম লইট্যা,পাইস্যা,চুরি,চিংড়ির আলয়ে
– ভয়ঘুম;৪৫ পৃ.)
খ.
রঙিন অথবা সাদাকালো তফাত বুঝি না
কালের অন্তরাল শুধু সেকাল আর একাল
– কালের অন্তরাল; ৪৪ পৃ.)
গ.
প্রার্থনার স্বরে খুঁজি এই ঠিকানা
আর্তনাদের ভাষায় অন্তিম কোনো মুহূর্তের কাছে
আবারো সেই কোলাহলের ভেতরে রেখে গেছি আমাকে।
– ঠিকানা; ৪৩ পৃ.)
ঘ.
নিশ্বাসও গুম হয় বুকের তীব্র যন্ত্রনায়
পালাবো কোথায় আছে কি কোন অচেনা প্রান্তর
তোমার রচিত পৃথিবী অথবা বুকের জমি।
– ক্লান্তির নোঙর; ১৮ পৃ.)

এতোকিছুর পরেও সাইয়্যিদ মঞ্জু একজন সুপ্রীত রোমান্টিসিজমের কাব্যপ্রতিভা। ভালোলাগাকে সৌন্দর্যের প্রলেপে নান্দনিকতার রূপদান দারুণ অর্থবহ –
প্রাণটারে তুই জমা রাখিস বুকের গহীনে
ফিরে আসি যদি তবে ফেরত চেয়ে নিব
বাঁকখালী তোর বুকে।
– চুম্বনচিহ্ন; ৩১ পৃ.)

আমার তো কেবল ফিরে ফিরে আসে হলদে হাগে
অকস্মাৎ স্পর্শ হয়ে যাওয়া তৃষ্ণা।
– অস্পর্শী বিস্মৃতি ; ৪০ পৃ.)

সবশেষের কথাটি হলো,সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতা উপরোল্লিখিত শেষ লাইন – ‘অকস্মাৎ স্পর্শ হয়ে যাওয়া তৃষ্ণা’ যেন… কবিতার সংজ্ঞাও অনেকটা তেমনি, তবুও যে তৃষ্ণা বাড়ে,বাড়ন্ত তৃষ্ণার মোজেজা আত্মস্থ করতে হলেও পড়তে হবে সাইয়্যিদ মঞ্জুর ‘আমার সমুদ্রশিরা’…

||
আমার সমুদ্রশিরা
কাব্যগ্রন্থ
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশক : প্রতিবুদ্বিজীবী
মূল্য : ২০০টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ