spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাআমিও এসে দাঁড়িয়েছি সায়াহ্নবেলায় ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : কাজল সেন

আমিও এসে দাঁড়িয়েছি সায়াহ্নবেলায় ও অন্যান্য কবিতা


কাজল সেন

……………..
অপেক্ষায় আছি শুধু শীতেরই জন্য
…………….

পা পিছলে গাড্ডায় হাতি পড়লে ইঁদুরও নাকি হাসে
হাসতেই পারে হাসার অধিকার তার হয়তো আছে
যেমন তুমি অপেক্ষা করে আছ কবে আমি গড়াব কাদায়
আর তুমি আমাকে তুলে ধরার জন্য হাত বাড়াবে এতটা দূরত্বে
যা আমি চেষ্টা করেও ধরতে পারব না আসলে নাগাল পাব না

এবছর শীতঋতু একেবারেই জমল না যেন
কোথায় সেই হাড়কাঁপানো ঠান্ডা
অথচ পাতাঝরা শুরু হলো গাছ ন্যাড়া হলো বসন্ত এসে গেল
একটা শহরতলি বেকুবের মতো ঘুমিয়ে পড়ল রাতের প্রথম প্রহরেই

আমার কোনো গঙ্গাস্নান ঘটেনি সকাল দুপুর বিকেল
কোনো সন্ধ্যাতেই ছিল না কোনো আচমন
আধুনিকতার সব দ্বন্দ্ব বোঝার ছিল না কোনো দম
আমি যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম ভোরে চিনতে পারিনি তাকে সন্ধ্যায়
একটা সুদৃশ চেয়ার একটা অনবদ্য টেবিল একটা হারমোনিয়াম

আমি হারমোনিয়াম বাজাতে জানি না নেহাতই আনাড়ি তুমি জান
তুমি জান আমি তবলায় একান্তই তালকানা
তবু কেন যে তুমি আজও বসে আছ আমারই পথ চেয়ে
কেন যে বুঝতে চাও না আমি শুধু অপেক্ষায় আছি শুধু শীতেরই জন্য

……………..
আমি আমার জন্মের কথা ভাবি
……………..

আবার হয়তো দেখা হবে কোনো নাটকীয় সময় আর পরিবেশে
আপাতত কেটে যাচ্ছে জীবন ফুটপাথে নাটুদার চায়ের দোকানে
মেঘ কখনও ঘনিয়ে আসে কখনও স্কুলের বান্ধবী অলক্তিকা কয়াল
বিজন মাঝে মাঝে আসে খিস্তি ঝাড়ে শালা হেগেমুতেই গেল এজীবন

আবার হয়তো দেখা হবার প্রসঙ্গে মনে পড়ে নিবারণদার কথা
নিবারণদা নামে যার কোনো বারণ ছিল না আমাকে বলেছিল
আর আমাদের দেখা হবে না নিবারণদা মারা গেছিল পুলিশ-এনকাউন্টারে
সুজয় বলেছিল একটা বিপ্লবী দলের সদস্য ছিল পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছিল

যে গানই গাও না কেন তুমি সব গানই তোমাকে বেশ মানায়
এই ধর রবীন্দ্রসঙ্গীত বা দ্বিজেন্দ্রগীতি অথবা কোরাসে গণসঙ্গীত
তুমি গরম চায়ের সঙ্গে বিস্কুট খেতে চাও না তোমার ভালোলাগে ডালমুট
দাড়িয়াবান্ধা খেলায় তোমাকে ধরে রাখা দায় কীভাবে যে অতিক্রম কর সীমানা

কী যে হয় আমি জানালার পাল্লা হাট করে দিই যখন বৃষ্টির কণারা ধেয়ে আসে
আমি ভিজি ভিজে যায় আমার পোশাক ঠান্ডা লাগে সর্দি হয় বাড়ে গায়ের উষ্ণতা
বিকট শব্দ করে মেঘ ফুঁড়ে চলে যায় বিমান আমি দেখতে পাই না শুধু শব্দ শুনি
আমি আমার জন্মের কথা ভাবি কেন এই জন্ম সারাটা রাত কেটে যায় গাড়িবারান্দায়

…………..
গভীর অরণ্যের অতিথিনিবাসের বারান্দায়
…………..

আমার হাত ছেড়ে তুমি এগিয়ে গেছিলে
কিছুটা এগোতেই শুনেছিলে বাঘের গর্জন
তুমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে এসে
আবার ধরেছিলে আমার হাত
ভেবেছিলে আমার হাতে হাত রাখলেই
আর বুঝি কোনো ভয় নেই
আমিও তোমাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম
ভয় কী আমি তো আছি
কথাটা কত যে মিথ্যে তা আমি জানতাম
তুনিও নিশ্চয়ই জানতে
সত্যিই যদি আমরা বাঘের মুখোমুখি হতাম
কেউই বাঁচতাম না
তবু মনে হয় কিছু কিছু মিথ্যাচার ভালো
যেমন ভালো কিছু কিছু মিথ্যে আশ্বাস

গভীর অরণ্যের অতিথিনিবাসের বারান্দায়
দাঁড়িয়েছিলাম আমরা মধ্যরাতে
নিকষ কালো অন্ধকারে দেখা যাচ্ছিল না কিছুই
শুধু ভেসে আসছিল প্রাণীদের পায়ের সতর্ক চলাফেরা
নিশ্চুপ নিঃশব্দ আমরা সেই প্রাণীদের স্পন্দনে
মিশিয়ে দিচ্ছিলাম আমাদের মগ্নচৈতন্যের ধুকপুক

…………….
আমিও এসে দাঁড়িয়েছি সায়াহ্নবেলায়
…………….

বাজারে প্রবেশ করতেই মনে করতে হলো আমি কেন এলাম বাজারে
মনে পড়ল হ্যাঁ পাঁচফোরন কালোজিরে শুকনোলঙ্কা আর তেজপাতা
কেনার কথা বারবার সে বলেছিল রীতিমতো গোটা গোটা উচ্চারণে
আসলে আমি যে ভুলে যাই প্রায়শই ভুলে যাওয়াটাই আমার অর্জিত অভ্যাস
যদিও কখনও বা মনে পড়ে যায় অনেক অপ্রয়োজনীয় ঘটনা আর সংবাদ
এই যেমন কখনও কখনও আচমকা মনে পড়ে যায় সেই কিশোরীর কথা
অথচ কিছুতেই মনে পড়ে না তার মুখ ভাবি কী হবে সেই অমলিন মুখ মনে করে
মুখ তো বদলে যায় প্রতিদিন প্রতিরাতে নতুন মুখে ঢেকে পুরনো মুখের কারিকুরি
আমার মনে পড়ে না মৃত্যুশয্যায় শায়িত সেই বুড়ো মানুষের গঠন অবয়ব
শুধু মনে পড়ে চলে যাবার আগে আমাকে ডেকে কানে কানে বলেছিল দাদুভাই আমার
ভুলে যাবি না তো আমাকে মনে রাখিস সারাজীবন আমি ছিলাম তোর খেলার সাথী
জীবনে যে কত সাথীর আনাগোনা হলো কত বান্ধবের ঘটল আগমন বিসর্জন
কাকেই বা মনে রেখেছি কতটা মনে রাখা যায় যখন আমিও এসে দাঁড়িয়েছি সায়াহ্নবেলায়
তবু কিছু মনে রাখতে হয় পাঁচফোরন কালোজিরে শুকনোলঙ্কা আর তেজপাতার কথা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on দু’টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on পাখিমানুষ