মাসুদুল হক
……………..
তিতির কান্না
………………
পাতাদের পথ চলা দেখে নিয়ে
এখানে তিতির কান্নায়
ঢানা ঝাপটায় শেখ ফরিদ
নদীর বুকে আঁকা মানচিত্র
ডাহুক চোখের গভীরে
হাওয়ার সমুদ্রে ঘন্টা বাজায়
নিহত দেবদারু বনে
পাখিদের সভাশেষে রব ওঠে
মানুষে নেই আর অরণ্য
………………
জন্মনিয়ন্ত্রণ
………………
আমাদের পড়ালেখার খেত ছিল
অনেক চেয়ারটেবিল চাষ করে
উচ্চ ফলনশীল কনক্রিটের গাছে
শিশুরা বাংলা মিডিয়ামে পড়তো
সেই বাংলা মিডিয়ামে অকেজো বোঝা
চাপাতে চাপাতে খেতের মাটি
নষ্ট করে আমরা এখন ইংরেজি পড়ি
ভেবে দেখুন বাংলা মিডিয়ামে
আমাদের আর শিশু জন্ম হবে না
…………….
কবি
.……………
আমি এক রাতে কবি হয়ে উঠেছিলাম
যে রাতে চাঁদ
পড়ে গিয়েছিল বিস্মৃতির কূপে
আমার কল্পনার চিকন সুতোয় বেঁধে
সে রাতে
আমি চাঁদটাকে তুলে আনি
……………….
একটা নদীর প্রার্থনা
……………….
বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়া একটা নদী
ঢেউ তুলে বুকে ছুটছে নিরবধি
হঠাৎ বন্দরে এসে দেখা পায় নদের
দামাল সে নদ লজ্জার নাই বালাই
কাছে এসে বলে চলো কিছুটা পথ পালাই
তারপর পাশাপাশি শুয়ে পড়ি
আমার উপর তুমি উঠে বসলেও কাঁদবো না
জলে ভেজা চোখ কেউ তা দেখবেও না
উফ! এতো শক্ত করে চেপে ধরো না আমায়
আমি যে ছোট্ট নদী সবে হয়েছি যৌবনা
দেখো চেয়ে আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ!
আজ খোদার প্রেমের রাত
এমন নগ্ন আলোয় আমরা শুধু দুজন
প্রার্থনা করি খোদা অন্ধ করে দিও না
……………..
সুখ-দু্ঃখ
……………..
১.
আমি প্রতিটি সুখের ভেতর
ফুলের গন্ধ পাই
নিরাকার সে ফুল;
গন্ধ বিলিয়ে হারিয়ে যায়।
২.
প্রতিটি দুঃখের ভেতর
বেদনার ধ্বনি পাই
করুন সুরে বেজে চলে
হৃদয়ের তানপুরায়।
…………….
একটি সম্পূরক অর্ধচ্ছেদের কবিতা
……………..
তুমি আসলে রেগে ছিলে;
ভেতরে তোমার ভীষণ ক্রোধ
লাভার মত টগবগিয়ে ওঠে
আমি একটা মাছির মতন
তোমাকে উত্তেজিত করছিলাম;
আর তুমি ওৎ পাতা বাঘের মতন
গর্জে পড়তে চাইছিলে
কিন্তু তুমি কোর্ট পড়া ভদ্রলোক
স্নাতক করেছো কলেজ থেকে;
যদিও নদীভাঙা চরে তোমার জীবন
অথচ এখন নদী নেই কোথাও
তোমার আপাদখতিয়ানে
বন্ধুর গাড়িতে সামনে বসে;
তুমি খুব হিংসের কথা
মিষ্টি মধুর প্রলেপে বকে যাচ্ছিলে
আমি বুঝতে পারলেও মাছির মতন
তোমার ক্ষোভের চারপাশে ঘুরছিলাম;
তুমি পঁচিশ আর তিরিশের মাঝে
ক্রোধে রাগে আমার বিনাশের দাগ
খুঁজে খুঁজে চুল পাকিয়ে নিলে
আর আমি নদীর চরে ঘুরতে এসে
তোমাকে চিনে নিলাম;
আসলে জলের দাগ মুছে
তোমার অন্তর শুকিয়ে নিতে
চলে যাবে আরো কয়েক যুগ
…………….
একটু হিউমার
…………….
প্রেমিকার আঙুলে অদৃশ্য আদরে
লেগে আছে কাঁচি ও ব্লেডের ধার
আমি কাছে গেলেও গোপনে ভয়ে থাকি
মনের ভেতর কাজ করে হিউমার
সুন্দরী প্রেমিকা গভীর কৌতুহলবশত
ভেবে নেয় আমি খুব সুবোধ
কী বলি আবেগের কথা
বোকা বলে আমি নই অন্ধ
ব্লেডের ধারে শ্মশ্রু হারালেও
পকেটের প্রজ্ঞায়
কাঁচির ভার লাগতে দিইনি আজও
যদিও বিস্ফার চোখে
তাকিয়ে থাকি অবুঝ প্রেমিকার দিকে
অনন্য অনুভূতি প্রতিটা কবিতায়