spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাআত্ম প্রশ্বাসের লংমার্চ ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

আত্ম প্রশ্বাসের লংমার্চ ও অন্যান্য কবিতা

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

…………..
দীর্ঘ শ্বাসের খাণ্ডব
…………..

এবার এক নাবাল কলঙ্কের সাথে দেখা, হঠাৎই পা পিছলে যাওয়া থেকে আটকে দিল পায়েরই নখ, বড্ড নরম এই সীমানার দীনতায় অনাবিল মিলনের ডাক, আদুল শরীরে বেড়ে ওঠে দীর্ঘশ্বাসের খাণ্ডব – জ্বরা আর পিপাসিত অরূপে উড়তে থাকে দখিন হাওয়া; ওরা কি সময়ের কোনো ডানা দেখতে পায়?

এ ধাত্রীকাল আমার, আমি ঈশ্বর হয়ে প্রতিধ্বনি পাঠিয়ে দিই শূন্যে, সাথে সাথে জঙ্ঘার উপর কাপড় তুলে দিব্যি কথা কয় আহ্নিক সময়, আর ঝরঝর ঝরে পড়ে পচা ভাদ্রের কেলি কদম

কোথাও সেই রক্তজল আর ঘামের উঠোনে বসে ভাত খাচ্ছিল শ্যওলা রঙের প্রাক দুপুর

…………….
সব অপকর্ষ নিয়ে
……………..

বেলপাতা গাছের নিচেই ফিঙে পাখিটির লেজ ছুঁয়েছে মাটিতে, সে তো বিশ্রাম চায় নি এই মৎস মিথের কম্পিত জলতলের শরৎবেলায়, আর বাকি সময় আকাশ উড়িয়ে নিচ্ছে মুনি পাড়ার অলাত প্রসব, দূরত্বে যারা ছিল তারা সব কৌতূহলী, তারা সব অপকর্ষ নিয়ে এখনও সাঁতার শিখছে – অনতিদূরে ঘন ঝোপে অসাড় যাবৎ জীবন

পাটাতন ভেঙে গেছে অশোক গাছের তলায় – মালিটির দুঃস্থ নিয়ে বসে আছি আমি আর সে – ক্ষতমুখ ছুঁয়েছে সবুজ ধানখেত

এই দীর্ঘায়ু অপমেরুর কাছেই বিষাক্ত সাপেরা বীজ পুঁতে রাখে

……………
আত্ম প্রশ্বাসের লংমার্চ
……………

একদিন আত্ম প্রশ্বাসের লংমার্চগুলো বিস্তীর্ণ হতে হতে হারিয়ে ফেলে শীতভাব, যদিও হাওয়া আসে মাঝে মাঝে – তার কোনো দিক নেই, শিকড়ের কাছে ছিপ ফেলে বসে আছে সুজোধন, দূরত্বের গাছপালাগুলি অবাকবিন্দু যোগ করতে করতে নিজের নাম হারিয়ে ফেলে, রেখাটি ইচ্ছেমতো মেঘ ও এবড়ো খেবড়ো ধাক্কার বিপন্ন পদাবলি
বৃশ্চিকচিহ্নের এই আয়নায় প্রতিবিম্বটি কার
বিশল্যকরণী গুল্মের মাঝখানে জেগে থাকে এ পরম প্রানিপাত; ভাত ও মদের গন্ধ নিয়ে ক্রমশ সরু রাস্তাটি মিশে যায় বিষমকাম উঠোনে

আমার ছায়া ভেঙে দেয় উত্তপ্ত বাস্পের প্রতিসরণ

………….
পীত বৃত্তাকার দিন
………….

গাছেদের জন্মলাভের পর শুকনো দুপুর বিলিয়ে যাচ্ছে একাকীত্বে – একটা বেড়াল নেমে যাচ্ছে ঈশান কোনের চালাঘরে, সত্যিই জানি না ফুল অথবা কাঁটা; এ সব যেন ঠাকুরের মতো জেগে থাকে মচমচে ছায়ার ভিতর, দীর্ঘ নিশ্বাস সহ একটি কঙ্কালসার রক্ত পলাশ গাছটি এখনো সবুজ: এখনো আঙরা খাওয়া জন্মেজয় পুরুষ
তারপর লতাগুল্ম ঘুরে ঘুরে কাকে যেন খোঁজ করি – আর আমার বৃষ্টি পায়

তুচ্ছ হতে হতে খরামুখ, ফাটা জমি গিলে নেয় পীত বৃত্তাকার দিন, রাস্তা ও শিথিলতার ক্রমশ সর্পিলে হলুদ রমনীটি ঘর্মাক্ত বুক আগলাতে আগলাতে ঝাঁট দিতে থাকে বিবর্ণ মায়া

দিতি তার নাম

………….
কুমড়ো ফুলে জলবিম্ব
…………..

কুমড়ো ফুলের জলবিম্বে জেগে আছে সূর্যের ঠোঁট, সেদিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হলুদ শাড়ি পড়া দিতি নাকের ঘাম মুছতে থাকে আর আধভেজা পাতাগুলি ঝাঁট দিয়ে পরিস্কার করছে ছায়া, তারপর দখিনা বাতাস আসে – এবং ইচ্ছে মতো তৃষ্ণারা হেঁটে যায় কলতলায়
বে-রোজগার অসুখ আর কালো কালো অস্থি নিয়ে সেভাবেই সাজিয়ে যাচ্ছে ইতস্তত সুখ; কেউ করো নয় আকন্দ, তোমার কাছেই খুক খুক কাশতে কাশতে আমার নাভিতে মাস মরে যায়

বুড়ো বটের বাকলের বলিরেখায় কয়েকটি নিঃশব্দ ছুরির দাগ, আর্দ্র ঝিঝিঁ পোকা সেও কি ঘুমঘুম আজ – তাকিয়ে থাকে ইতিউতি মুষড়ে পড়া টালির ঘরের দিকে

…………..
জলাশ্রেণির আকণ্ঠ জল
…………..

বাঁধে ওঠেই বাঁক নিতে হয় হঠাৎই, আকষ্মিক বিভ্রম অথবা বিভা থেকে ঘাম ঝরতে শুরু করে, এখানে কোনো সোজা রাস্তা নেই – ঘুমকাল নিয়ে হিজল বাইপাসে এগিয়ে যায় লতাপাতা, জমাট গৃহস্থের কাছ দিয়ে ভেজা কাপড় মেলা থাকে দ্বিধাহীন রূগ্নতায়; পচে যাওয়া কদম ফুলের প্যাচপ্যাচে কাদায় লাল কালো কেন্নোর চাপ, শুরু ও শেষ সময়টুকু টের পায় না কিছুতেই, অথচ নম্র হৃদয়ে প্রদক্ষিণ করে জলাশ্রেণির আকণ্ঠ জল, ধস নামা ছাড়া কোনো প্রভাব নেই কায়ক্লেশে

যদিও স্তূপীকৃত পচনের কাছে শালুক ফুটে আছে, যদিও দিতির উনুন থেকে ভাত ফোটার শব্দ আসে আর দামনের পেশী থেকে আলো ছিটকে পড়ে, শরীর থেকে উড়ে যায় পাখিগুলো, ঘাসপাতা বেড়ে ওঠে অগাধ স্বভাবে

আমার ভেতরে নেশাতুর কাটাছেঁড়া বাজে

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি