তাজ ইসলাম
‘আমি হীরার বদলে কাঁচ কুড়াতে
পারবো না।
আমি দাদীকে দিদা বলতে পারবো
না।
আমি পানির বদলে জলপান করতে
পারবো না।
আমি কপোতাক্ষের বদলে ময়ূরাক্ষীকে
আপন করতে পারবো না
আমি লালবাগের দূর্গের বদলে ফোর্ট
ইউলিয়ামকে নিতে পারবো না।
আমি ষাটগুম্বুজের বদলে ভিক্টোরিয়া
মেমোরিয়াল নিতে পারবো না।
আমি পল্টনের বদলে গড়ের মাঠ নিতে
পারবো না।
আমি প্রবীর মিত্রের বদলে
প্রসেনজিতকে নিতে পারবো না।
আমি ভাই গিরিশ সেনের বদলে
গয়াকাশি নিতে পারবো না।
আমি নজরুলের বদলে নরেন্দ্র মোদীকে
নিতে পারবো না।
আমি শেরে বাংলার বদলে মহাত্মা
গান্ধিকে নিতে পারবো না।
আমি ভাসানীর বদলে ভক্ত প্রহল্লাদ
সাজতে পারবো না।
আমি হোসেনী দালানের বদলে
হাওড়া ব্রিজ দেখতে পারবো না।’
উদ্ধৃত কবিতাংশ কবি আবদুল হাই শিকদার’ র বহুল আলোচিত ‘কসম’ কবিতাংশ।
আবদুল হাই শিকদার বাংলাদেশের,বাংলাভাষার উল্লেখযোগ্য কবিদের একজন। বর্তমান সময়ে আলোচিত,সরব কবিকণ্ঠস্বর কবি আবদুল হাই শিকদার।
চব্বিশের বিপ্লবে রাজপথে ছিলেন অগ্রনায়ক হিসেবে, সম্মুখ সারিতে ছিলেন সেনানায়ক। ছিলেন স্বৈরহাসিনার বুলেটের সামনে বুক পেতে সাহসী কবিকণ্ঠ।
মিছিলে,স্লোগানে,ভাষণে, নির্দেশনায় আবদুল হাই শিকদার পালন করেছেন রণাঙ্গনের সেনাপতির ভূমিকা। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০২৪ এ তিনি রণনায়ক। প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনার, সচিবালয় থেকে মতিঝিল,শাপলা চত্তর, সারা ঢাকায় ছিল আবদুল হাই শিকদারের পদচারণা। বয়সে র বার্ধক্য তার ধারেকাছেও নাই।কথায়,বক্তৃতায় একজন টগবগে তরুণ।তার তারুণ্যে কাচুমাচু হয়ে যায় তরুণ, যুবক। লাল ক্যাপ আর বর্ণিল পোশাকেও স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে সবসময়।
আবদুল হাই শিকদার কবি। কবি পরিচয়েই আটকে থাকেননি।নিজের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে আরও একাধিক বিশেষণ। তার কর্ম পরিধি ব্যপক। সবগুলো বিশেষণেই তিনি উজ্জ্বল।
তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন ০১ জানুয়ারি ১৯৫৭ সালে।
কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদীর তীরে দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রাম তার জন্মস্থান। পিতা ওয়াজেদ আলী এবং মা হালিমা খাতুন। তার পিতা ছিলেন একজন কৃষিবিদ। তার পিতা-মাতা দুজনই ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আসাম জীবনের ছাত্র।ভাসানী কবির রাজনৈতিক গুরু।
প্রথম প্রকাশিত বই প্রথম সন্তানের মতো। জনক জননী প্রথম সন্তানের নামে পরিচিতি পায় পরিচিত মহলে।কবি মহলেও একজন কবি পরিচিতি পান প্রথম কিতাবের সূত্রধরে। আবদুল হাই শিকদারের প্রথম প্রকাশিত কবিতা কিতাব
‘ আশি লক্ষ ভোর’।
তার সুহৃদেরা তাকে তাই অভিহিত করেন ‘আশি লক্ষ ভোরের কবি’ বলে। ১৯৮৭ সালে তার এই কিতাব প্রকাশ হয়। তারপর প্রকাশ হতে থাকে একের পর এক কিতাব। শতাধিক কিতাবের জনক তিনি।
আবদুল হাই শিকদার বহুমাত্রিক লেখক।তিনি কবি,প্রাবন্ধিক, গবেষক,শিক্ষাবিদ,সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ। বহু গুণের অধিকারী তিনি। অনলবর্ষী বক্তা । স্বৈরাচার,ফ্যাসিবাদের তুমুল বিরোধী। বাংলাদেশের কবিদের মাঝে অসীম সাহসী কবিকণ্ঠ। তার আগুন ঝরা বক্তব্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্বৈরাচার ও তার দোসরচক্র।
কবি কথা বলেন বক্তৃতায়,কথা বলেন গদ্যে,কথা বলেন কবিতায়। রণাঙ্গনে একাই লড়ে যান চতুর্মাত্রিক কানুনে। সব দিক সামাল দেওয়ার মতো বিরল দক্ষতা তার।কবিতায় যেমন শব্দ,বাক্য,উপমা,উৎপ্রেক্ষার মিশ্রণে নির্মাণ করেন কাব্য কামান, বক্তৃতার মজলিশেও শ্রোতাদের সামনে ছড়িয়ে দেন দ্রোহের কথামালা, উদ্দীপনার মন্ত্র তিনি বপন করেন নিপুণ কারিগরের মতো।শ্রোতাগণ তার বক্তব্যের সময় থাকেন তন্ময়াবিষ্ট হয়ে।
আবদুল হাই শিকদার কবি এ কথা বারবার বলতে হয়। কবিতা ছাড়াও তার আবির্ভাব ঘটে বর্ণিল রঙে। কবিতার মাঠে আসেন কবিতার বুলেট নিয়ে, মিছিলেও থাকেন সেনাপতি হয়ে। এ এক বিরলপ্রজ প্রতিভা।
বর্তমান বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি।
আশি লক্ষ ভোর- প্রকাশ হয় ১৯৮৭ সালে।তারপর :
আগুন আমার ভাই- ১৯৯১
রেলিঙ ধরা নদী- ১৯৯২
যুগলবন্দী ভূগোলময় (যৌথ)- ১৯৯২
মানব বিজয় কাব্য- ১৯৯২
এই বধ্যভূমি একদিন স্বদেশ ছিলো- ১৯৯৭
লোডশেডিং নামিয়াছে- ২০০১
দুধকুমারের জানালাগুলি-২০০১
কবিতা সমগ্র- ২০০২
সুন্দরবন গাথা- ২০০৩
মেঘমাতৃক ধাতুতান্ত্রিক- ২০০৪
শ্রেষ্ঠ কবিতা- ২০০৬.
তার প্রকাশের ধারাবাহিকতা থেমে থাকেনি, অব্যহত আছে সেই স্রোত।
কবিতা ছাড়াও আছে তার মূল্যবান বহু প্রবন্ধগ্রন্থ। তা প্রকাশ হতে থাকে যথাক্রমে।
বাংলাদেশের পথ- (২০০১),
জানা অজানা মওলানা ভাসানী-(২০০১),
বাংলা সাহিত্যে: নক্ষত্রের নায়কেরা-(২০০৩)
সময় ও সমাজ স্বদেশের প্রচ্ছদ- (২০১১)
সচল বাংলাদেশ: আবর্তনের স্থিরচিত্র- (২০০৮)
ঢাকার ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশের শত্রুভাগ্য- (২০০৮)
জ্যোতির্ময় জিয়া এবং কালো মেঘের দল-( ২০১১)
বাংলা সাহিত্য: কোলাহলের বাইরে দাঁড়িয়ে
সৈয়দ আলী আহসান : মনীষার মুখ (২০০৩)
জিয়া উচ্ছেদ প্রকল্প (২০১০)
আওয়ামী লীগের চার বছর (২০১৩)
হারিয়ে যাওয়া হায়দারাবাদ (২০১৩)
সন্ত্রস্ত বাংলাদেশ : লন্ডনে লাবণ্য (২০১৩)
হুমায়ূন তীর্থ নুহাস পল্লী ডট কম (২০১৩)
ইউনুস বধ কাব্য : বাই এ্যান এক্সপার্ট প্রাইম মিনিস্টার (২০১৩)
বাংলাদেশের অলি আহাদ (২০১৩)
তিনি বহুবিধ সম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন নিজের কর্মতৎপরতা।
তার গল্প গ্রন্থ :
শুকুর মামুদের চুয়াত্তর ঘাট- (২০০২)
তার প্রকাশিত বইয়ের তালিকায়
আরও যুক্ত হয়েছে, ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ।
পলাশী ট্রাজেডীর ২৩৪ বছর পর: সিরাজদৌলা মুর্শিদাবাদ- (১৯৯২),
কবিতার্থ চুরুলিয়া- (১৯৯৭),
নিপ্পন নি সাসাগু- (২০০০),
সোনার গাঁও: অন্তরে বাহিরে তুমি রূপকথা- (২০০১),
ফিরে ফিরে আসি-( ২০০৩),
ভ্রমণ সমগ্র- (২০০৬) সালে।
এছাড়াও শিশু সাহিত্যে আছে তার বিরাট অবদান।মৌলিক ও সম্পাদনার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বিরাট সাহিত্য ভাণ্ডার।
শিশু সাহিত্যের অমূল্য গ্রন্থাবলীর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল,
কিশোর মওলানা ভাসানী- (১৯৯০),
গান পাখিদের দিন- (২০০১),
ইউলিয়ারা পথ হারালো-(২০০১),
মওলানা ভাসানী- (১৯৯৫),
বাঘ বাহাদুর- (২০০২),
এ্যাডভেনচার কচিখালী ও পরম প্রকৃতি- (২০০২),
কাঁথা বাঘের রহস্য- (২০০৩)
বাঘের মহান দড়িস্মৃতি- (২০০৩),
পাখিবন্ধু অনীক উদ্যান- (২০০৪),
দাদীর বনের গাছ বিরিক্ষি- (২০০৫),
দারুণ সুন্দর সুন্দরবন- (২০০৫),
শ্রাবন্তীর মনের মায়াবাড়ী- (২০০২),
ফুলপরীর সব মনে আছে- (২০০২),
সময় ছিল দুপুর- (২০০২),
ভ্যাসপার ক্যাসপার- (২০০৩),
আমাদের দাদী- (২০০৩),
আমাদের টম কে জানো (২০১৩),
টম একাত্তর (২০১৩),
হাচিকো (২০১২),
এ্যাডভেঞ্চার সেন্ট মার্টিনস্,
ছড়া সমগ্র ।
অনেক জীবনী গ্রন্থও সম্পাদনায় লেগেছে তার হাতের ছোঁয়া। তিনি সম্পাদনা করেছেন
মনিরউদ্দীন ইউসুফ- (১৯৯২) গ্রন্থ।
চল্লিশ বছরের প্রেমের কবিতা- (১৯৮৪),
আমাদের মিলিত সংগ্রাম মওলানা ভাসানীর নাম- (১৯৮৬),
আলমগীর কবির- (১৯৮৯),
মনিরউদ্দীন ইউসুফের অগ্রন্থিত কবিতা- (১৯৯১),
যে আগুন ছড়িয়ে দিলে- (১৯৯৩),
বাংলা কবিতার দেশ নেত্রী- (২০০৩) এসব কিতাবেও তার দক্ষ সম্পাদনার স্পর্শ লেগে আছে।
তার প্রকাশ থেমে নেই। চব্বিশের বইমেলাতেও প্রকাশ হয়েছে একাধিক বই। সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে তার কবিতার বই ‘ আমরা মানুষ,আমরা এসেছি ‘ গ্রন্থ।
কবি আবদুল হাই শিকদার বরাবরই উচ্চ কণ্ঠ। তিনি
মানবতা, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক ও বাহক। জুলুমের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিপক্ষে, ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে কথা বলে আসছেন শুরু থেকেই।এজন্য তার উপর নেমে এসেছে শাসকের জুলুমের খড়গ। ১৯৯৬ সালে কবি আক্রান্ত হন সন্ত্রাসী কর্তৃক।তবু তাকে থামানো যায়নি।কাজ করে গেছেন শিল্প সাহিত্যের সকল অঙ্গনে।
তার মুখে সবসময় ধ্বনিত হয়েছে শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের কথা , বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদের কথা।
দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে কবি সবসময় আপোষহীন। তার লেখায়,কথায়,বক্তব্যে উচ্চারিত হয় জাতিসত্ত্বার কথা।
অনায়াসে কবি আবদুল হাই শিকদারকে ‘জাতিসত্ত্বার কবি’ বলে চিহ্নিত করা যায়।
তিন শেকড় সন্ধানী লেখক।
ইতিহাস – ঐতিহ্য অণুসন্ধানে গণমাধ্যমে আছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত শিকড় সন্ধানী ম্যাগাজিন অণুষ্ঠান “কথামালা” তাকে এনে দেয় দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তুলে ধরেছেন তার লেখার মাধ্যমে।অজানা নজরুলকে জানিয়ে দিয়েছেন গবেষণার মাধ্যমে। নজরুল গবেষক হিসেবেও আছে তার সুনাম। নজরুল বিষয়ক নানা গ্রন্থ,পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছেন আন্তরিকভাবে।
আবদুল হাই শিকদার বাংলাদেশের কবি,বাংলাভাষার দ্রোহী কবি। তার বক্তব্য স্পষ্ট। মাথা উঁচু করে নিজের কথা স্পষ্ট বক্তব্যে প্রকাশ করা তার বৈশিষ্ট্য। তিনি সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কসম করে বলেন,
‘আমি সিরাতুল মুসতাকিমের ভাষায়
বলছি
আমি কোরআন, বেদ, বাইবেল ,
ত্রিপিটকের উপর হাত রেখে বলছি,
আমি আমাদের শস্যক্ষেত্র, নিসর্গ
নিলাকাশের নামে বলছি,
আমি উত্তরের একলা নদী দুধকুমারকে স্পর্শ
করে, বলছি,
আমি আমাদের মহান পূর্বপূরুষদের ত্যাগ ও
সংগ্রামের শপথ করে বলছি
আমি আমার সকল সামর্থকে একত্র করে
বলছি,
আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতার নাম আমি
বদলাতে পারবো না।’
কবি বিরামহীন বলে যান সকল সত্য। বলতে বলতেই বলেন,
আমি শেরে বাংলার বদলে মহাত্মা
গান্ধিকে নিতে পারবো না।
আমি ভাসানীর বদলে ভক্ত প্রহল্লাদ
সাজতে পারবো না।
আমি হোসেনী দালানের বদলে
হাওড়া ব্রিজ দেখতে পারবো না।
আমি সোনারগাঁয়ের বদলে
সোনাগাছি যেতে পারবো না।
শরীয়ুতুল্লাহর বদলে শিয়ালদা, কিছুতেই
নয়।
শমশের গাজীর বদলে শরীর, কিছুতেই নয়।
শাহজালালের বদলে শবরমতী কিছুতেই
নয়।
রমনার বদলে রাজঘাট কিছুতেই নয়।
কুমিল্লার বদলে কলকাতা নিতে
পারবো না।
আমি ঢাকার বদলে দিল্লিকে প্রণাম
করতে পারবো না।’
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী।সে রাজধানীতে সাহসী এক কবিকণ্ঠ,কালের দুঃসাহসিক সেনাপতি আবদুল হাই শিকদার।
নতজানু ঘসেটিরা যখন হিল্লিদিল্লির পায়ে লুটিয়ে দেয় নিজের মাথা, তখন আবদুল হাই শিকদার ছাপান্ন হাজার প্রসারিত সাহসের বক্ষ নিয়ে সগৌরবে বলেন,’আমি ঢাকার বদলে দিল্লিকে প্রণাম
করতে পারবো না।’
তিনি বিপ্লবী কবি,বিপ্লব তার শিরায় শিরায়। মুক্তির মন্ত্রে কবি ও কবিতা একসঙ্গে গেয়ে ওঠে ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
একজন কবিকে জানতে হলে তার সমগ্র সৃষ্টিকে পাঠ করতে হয়।করতে হয় পর্যালোচনা। কখনও কখনও একটি কবিতাই সমগ্র কবিকে সংক্ষিপ্তভাবে জানার সূত্র বা ভূমিকা হিসেবে হাজির হয়। কবির ‘ কসম ‘কবিতাটি কবিকে জানা, বুঝার সংক্ষিপ্ত ইশতেহার। এই কবিতার প্রতিটা লাইন বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এবং পঙক্তি ভিত্তিক আলোচনা করলে কবির আত্মপরিচয় উপলব্ধি করতে সহজ হয়।কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকায় আমরা বিস্তৃত আলোচনা থেকে বিরত রইলাম।
তবে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাখলাম সময় সুযোগে পূর্ণ কবিতার তাফসির নিয়ে হাজির হব কোন এক সময়।
আজ পাঠক সমীপে পূর্ণ কবিতাটি পেশ করে রাখলাম। তার আগে আবারও বলি ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
কসম
………
আমি সিরাতুল মুসতাকিমের ভাষায
বলছি
আমি কোরআন, বেদ, বাইবেল ,
ত্রিপিটকের উপর হাত রেখে বলছি,
আমি আমাদের শস্যক্ষেত্র, নিসর্গ
নিলাকাশের নামে বলছি,
আমি উত্তরের একলা নদী দুধকুমারকে স্পর্শ
করে, বলছি,
আমি আমাদের মহান পূর্বপূরুষদের ত্যাগ ও
সংগ্রামের শপথ করে বলছি
আমি আমার সকল সামর্থকে একত্র করে
বলছি,
আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতার নাম আমি
বদলাতে পারবো না।
আমার মমতাময়ী মায়ের নাম আমি
বদলাতে পারবো না।
আমার শৈশবের গ্রামের নাম আমি
বদলাতে পারব না।
আমার প্রিয়তম নারীর নাম আমি
বদলাতে পারব না।
আমার শীশুর তুলতুলে গাল আমি বদলাতে
পারবো না।
যারা আমার মার্তৃভূমিকে ব্যর্থ ও
অকার্যকর করার জন্য বিছিয়েছে
মাকড়সার জাল,
যারা পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা
করেছে,
যারা ক্ষত-বিক্ষত লাশের উপর হিংস্র
উল্লাসে বর্বর নৃত্য করেছে,
যারা ড্রাকুলার মত পান করেছে
মানুষের রক্ত,
বিশ্বময় পাঠিয়েছে ভুল ও বিভতস
বার্তা,
তাদের কথায় আমি বদলাতে পারি না।
আমি উত্তরের ভাওয়াইয়ার গানকে
বদলাতে পারবো না।
জালালের ভাটিয়ালি গানকে
বদলাতে পারবো না।
লালনের একতারা বদলাতে পারবো
না।
হাছন রাজার নেশার ঘোর আমি
বদলাতে পারবো না।
আমি আব্বাস উদ্দিনের বদলে আদভানিকে
ভালোবাসতে পারবো না।
আমি পাগলা কানাইয়ের বদলে পবন
দাশকে নিতে পারবো না।
আমি মায়ের বদলে মাসি কিনতে
পারবো না।
আমি হীরার বদলে কাঁচ কুড়াতে
পারবো না।
আমি দাদীকে দিদা বলতে পারবো
না।
আমি পানির বদলে জলপান করতে
পারবো না।
আমি কপোতাক্ষের বদলে ময়ূরাক্ষীকে
আপন করতে পারবো না
আমি লালবাগের দূর্গের বদলে ফোর্ট
ইউলিয়ামকে নিতে পারবো না।
আমি ষাটগুম্বুজের বদলে ভিক্টোরিয়া
মেমোরিয়াল নিতে পারবো না।
আমি পল্টনের বদলে গড়ের মাঠ নিতে
পারবো না।
আমি প্রবীর মিত্রের বদলে
প্রসেনজিতকে নিতে পারবো না।
আমি ভাই গিরিশ সেনের বদলে
গয়াকাশি নিতে পারবো না।
আমি নজরুলের বদলে নরেন্দ্র মোদীকে
নিতে পারবো না।
আমি শেরে বাংলার বদলে মহাত্মা
গান্ধিকে নিতে পারবো না।
আমি ভাসানীর বদলে ভক্ত প্রহল্লাদ
সাজতে পারবো না।
আমি হোসেনী দালানের বদলে
হাওড়া ব্রিজ দেখতে পারবো না।
আমি সোনারগাঁয়ের বদলে
সোনাগাছি যেতে পারবো না।
শরীয়ুতুল্লাহর বদলে শিয়ালদা, কিছুতেই
নয়।
শমশের গাজীর বদলে শরীর, কিছুতেই নয়।
শাহজালালের বদলে শবরমতী কিছুতেই
নয়।
রমনার বদলে রাজঘাট কিছুতেই নয়।
কুমিল্লার বদলে কলকাতা নিতে
পারবো না।
আমি ঢাকার বদলে দিল্লিকে প্রণাম
করতে পারবো না।
আমি ”পদ্মা, মেঘনা, যমুনার” বদলে ”সেই
সময়” নিতে পারবো না।
আমি আবু জাফর শামশুদ্দিনের বদলে
সুনীলকে নিতে পারবো না।
আমি বিষাদ সিন্ধুর বদলে সুধা সিন্ধু
নিতে পারবো না।
আমি মৈমনসিংহ গীতিকার বদলে
গাদ্দার নিতে পারবো না।
আমি দীনেশ সেনের বদলে মূর্তিমান
প্রলোভন নিতে পারবো না।
আমি শালগাছের বদলে শালা
বানচোতদের নিতে পারবো না।
আমি সুন্দরবনের বদলে সুমুন্ধির পুতকে বুকে
নিতে পারবো না।
আমি “ দাবায়ে রাখতে পারবা না”র
বদলে “ দাবিয়ে রাখতে পারবেনা”
বলতে পারবো না।
আমি স্বাধীনতার ঘোষকের বদলে
আদালত পাড়ার দৈ বড়া খেতে পারবো
না।
আমি পরিস্কারভাবে বলছি,
আমি সকল পবিত্রতার অঙ্গ হয়ে বলছি,
আমি কাজলরেখার বদলে রেখাকে
নিযে ঘর বাঁধতে পারবো না।
আমাদের ঐতিহ্যকে ফেলে ঐশ্বরিয়া
রায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবো না।
যারা আমার পদ্মাকে শুষ্কো বালুতে
পরিনত করেছে,
যারা টিপায়মুখ দিয়ে আমার
কল্লোলিনী মেঘনাকে হত্যা করতে
চাচ্ছে,
যারা আমার তারুণ্যকে মাদকাসক্ত
করেছে,
যারা আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে
দিয়েছে নৃশংস শান্তিবাহিনী,
যারা আমার হৃদয়কে করেছে বিভেদ ও
হানাহানিতে নিক্ষেপ,
যারা আমার ভাইকে করেছে আমার
ভাইয়ের ঘাতক,
যারা আমার ডান হাতকে লাগিয়েছে
বাম হাতের বিরুদ্ধে,
-তাদের কথায় আমি বদলে যেতে পারি
না।
আমি আমার লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা
নিশানকে ধুলোয় গড়াতে দিতে পারি
না।
আমি আমার শহীদ ভাইদের রক্ত চিহ্ন
ফেলে শ্বাপদ সঙ্কুল পথে যেতে পারি
না।
আমি আমার স্বাধীনতার বদলে সোনার
শিকল গলায় পরতে পারি না।
আমি আমার সেনাবাহিনীকে ভাড়া
খাটা বেশ্যায় পরিণত করতে পারি
না।
আমি অভিশপ্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি
দিতে পারি না।
আমি ওয়াশিংটনের মাস্তানির নিচে
মাথা পেতে দিতে পারি না।
আমি তেলআবিবের টাকায়
মানবাধিকার পাচার করতে পারি
না।
আমি আমেরিকাকে আল্লাহর উপর স্থান
দিতে পারি না।
যারা আমার বি.ডি.আরকে ধ্বংস
করেছে,
যারা আমার সেনাবাহিনীকে হত্যা
করেছে পিলখানায়,
যারা আমার ভাইদের হত্যা করছে
প্রতিদিন সীমান্তে,
যারা আমার মাথার ভিতরে তৈরী
করেছে কালচারাল কলোনি,
যারা আমার স্বাধীন মানচিত্রকে
করেছে অরক্ষিত,
যারা ন্যায় ও সত্যকে হত্যা করছে
প্রতিদিন,
যারা আমার রাত্রির আকাশকে করেছে
চাঁদশূন্য,
যারা সূর্যের মুখে ছিটিয়েছে
নোংরা বর্জ্য,
যারা আমার জীবন থেকে উধাও করেছে
নিরাপত্তা,
যারা আমাদের নিক্ষেপ করেছে
অশ্রদ্ধা ও অসহিহুতায়,
যারা আমাদের প্রতিটি সূযোদয়কে
করেছে অস্থির ও টালমাটাল-
কসম পলাশীর আম্রকাননের,
কসম ঈশা খাঁর সমরজয়ী অমর তরবারীর,
-কসম আল্লাহর, তাদের কথায় আমরা বদলে
যেতে পারি না।
আমি মঙ্গাপিড়িত ধরলার ক্ষুধার্ত রোদন
ধ্বনীর শপথ করে বলছি,
আমি দক্ষিনে আছড়ে পড়া ক্ষুব্ধ সমুদ্রের
গর্জনের কসম খেয়ে বলছি,
আমি মেঘনা প্রতিটি ঢেউয়ের দোলকে
বক্ষে ধারণ করে বলছি,
যারা আমাদের বদলাতে চায়, আমরা
তাদের বদলে দিব।
মীরজাফর বিভীষণকে বানাবো মীর
মর্দন কিম্বা মেঘনাদ।
শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রয়কারিদের
দেনা শোধ করে,
এই মৃত্তিকায় ফিরিয়ে আনবো,- এই
মায়ের পায়ের কাছে।
তারপর বলবো, কেন তুমি আধিপত্যবাদের
কাছে হৃদয় বন্ধক দিয়েছিলে?
তারপর বলবো, কেন তুমি খ্যাতি ও
প্রতিপত্তির লোভী?
তারপর বলবো, কেন তুমি সিংহাসন ও
সিংহাসন?
দ্যাখো এই মাটি আমার মায়ের পবিত্র
জায়নামায।
দ্যাখো এই মাটি আমাদেও
প্রপিতামহদের ত্যাগের কথা বলে।
দ্যাখো এই মাটি তীতুমীরের মত
টকটকে লাল।
এবার বলো কেন তুমি তোমার ভাইকে
সাম্প্রদায়িক বলেছো?
এবার বলো কেন তুমি সমঝোতা ও
সম্প্রীতির বদলে
ঘৃনা এবং হানাহানিকে মোক্ষ জ্ঞান
করছো?
এবার বলো কেন তুমি তোমার মাকে
কালিমা মলিন করেছো?
তারপর আমারা আমাদের সম্মিলিত পাপ
যমুনা জলে বিসর্জন দেব।
ঘৃনায় ক্ষোভে যমুনা প্রত্যাখ্যান করলে,
এই পাপকে আমরা পাঠাব মৃত্তিকার
গহ্ববরে,
লাঞ্চিত মৃত্তিকা বমির মত উগরে দিলে,
নক্ষত্রলোক থেকে এই পাপ নামিয়ে
আনবো ধুলিতে।
তারপর এই পাপ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের
বাইরে পাঠাবো।
তারপর এই পাপ বস্তাবন্দি করো
পাঠিয়ে দেব আধিপত্যবাদের উঠানে।
তারপর বলবো এই পাপ ধারন করার জন্য
আমার মাতৃভূমি প্রস্তুত নয়।
কসম সালাম বরকত রফিক জব্বারের,
কসম ১৯৭১ সালের,
কসম কর্ণফুলীর তীরে অপেক্ষামান
আমাদের ভবিষ্যতের,
কসম শাহজালালের আজান ধ্বনীর,
কসম আমার মন্দির মসজিদ গির্জা
প্যাগোডার,
কসম লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রতি ফোঠা
রক্তের,
কসম কসম কসম আমরা এইসব করবো।
তারপর পানিতে ধুয়ে নেব মাতৃভূমির
শ্রান্ত ক্লান্ত ব্যথিত শরীর।