spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েঅন্তরাত্মার প্রশান্তির কবিতা

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

অন্তরাত্মার প্রশান্তির কবিতা


| মাহমুদ নোমান |

কিছু কিছু কবিতা মনের ওপর ধুলোর আস্তরণ সরানোর মতো নির্ভেজাল সুর বাজিয়ে দিয়ে অনুরণিত করে আপনার মনের চারপাশ, আপনাকে প্রশান্তির বাতাসে পরিচর্যায় আন্তরিক ভাষায় অনুশাসনের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেইরকম কবিতাই হলো রেজা নুরের কবিতা; আপনাকে কোনো রকম চাপ বইতে হবে না রেজা নুরের কবিতা পড়লে; মানুষ বুঝি এইজন্যই কবিতা পড়ে,কবিতার মাঝে নিজেদের সমর্পিত সত্যি করে প্রথমে এ-সবে কবিই শান্তি খুঁজে পায়; আমি বুঝি যাঁর নিজের মধ্যে শান্তি নেই সে অন্যকে শান্তি দিতে পারে না,এজন্যই কবিকে বিভিন্ন টানাপোড়েনে জর্জরিত ও মর্মরিত হয়েও ত্যাগ আর ক্ষমার সৌন্দর্য সাধন করতে হয় নিজের মধ্যে নয়তো কবিতার মতো মহৎকর্ম সাধিত হয় না। এজন্যই বলি কবি বলতে শান্তির দূত; অন্তত কবিতা যতক্ষণ লিখে নিজের মধ্যে অশান্তিকে হটিয়ে দেয়। এজন্যই বুঝি রেজা নুর কবিতা বইয়ের নাম রেখেছেন ‘আদমের আগের পৃথিবী’… এই নামকরণের ভাবনায় আসল কবির চমক জাহির; এই ব্যাপারে আমার কিছু কথা যোগ করছি এই বইয়ের নামকরণের উপর, আমার প্রশ্ন হলো- রেজা নুর নিশ্চয় আদমের সন্তান, হাওয়ার সন্তান তাহলে আদমের আগের পৃথিবী বললেন যে? তাহলে একজন কবি নিজের জন্মের এমনকি সৃষ্টির জনকের আগের কথাও ভাবতে পারেন? আমি বলি একশ ভাগ পারে, এজন্যই কবি,কবি আপনার মতো নন, এজন্যই কবি,কবি মানে ভেতরকার কেউ বলি ক’বি( বলবি)…
তাহলে, আদম সৃষ্টির আগেই স্বয়ং বিধাতা শান্তি খুঁজে পেয়েছেন, তাহলে আদম সৃষ্টিই বিধাতার কবিতা, শান্তি ছাড়া সৃষ্টি হয় না, এইসব তো মারেফতের কথা আর মারেফত হলো মায়ের পথ অর্থাৎ মায়ের পথ দিয়ে আপনি এলেন কিন্তু মায়ের পথ আপনি দেখাতে পারবেন না,কিন্তু ভক্তি বিশ্বাসে জররা পরিমাণ কমতি নেই, এটাই তো কবিতা,এটাই কবিতার উৎস…
রেজা নুর নিজের কবিতা’কে শান্তির মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন,মারেফতে উত্তীর্ণ করতে পেরেছেন, উনার কবিতার বই ‘আদমের আগের পৃথিবী’ পাঠপরবর্তী আমার যাচিত বোধ, এই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা ‘জানালা’ পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন,আমার তো মনে হয় এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর একটা ‘জানালা’-

বন্ধ বা খোলা পর্দায়
নারাজ হয় না হাওয়া,
যেকোনো ছলে এসে পড়ে ঘরে।
বহতা শরীর মেলে বসে থাকে কার্নিশে,
পালঙ্কেম,বিছানার ফুলে।

বাতাস দেখবার আশায় খুলে রেখেছি জানালাটা,
বার বার তবু দূরে চলে যায় চির ছলনায়।

শূন্য বিছানো চোখে
মেঘের সঙ্গে আকাশ ওড়ে…
দূর গ্রহরা ডাকে ইশারায়,
অসীমে,আলোর ফুলেরা
ফুটে থাকে নানারঙে,

  • তাদের অঙ্গনে যাবার মোহে
    আকাশটা নীল হয়ে যায়।

অদেখা তুলির আঁচড়ে
কত রং খেলা করে সৃষ্টির ভেতর!
পাতা, ফুল, তৃণ,প্রাণি- যেদিকে তাকাই
সবই,ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ছবি!

যে উদাস হাওয়া
সৃষ্টির বৈভবে বিহ্বল,
কবি হয়ে ফেরে
কালে কালে অন্ধ হোমার,
তার মুখেও মাখা ছিল হাওয়ার আদর।
জানালা খুলে বলতো কথা বাতাসের সাথে,
ভেসে আসতোন অচীন দেশের ফুলের সুবাস।

শীত বা অ-শীতে
খিড়কি খুলে রাখি:
ডালে, পাখি গানের সুরে কাঁদে,
পাখির গানের মানে, কে জানে?
যে জানে সে জানে।

মেঘের শিয়রে পূর্ণিমার চাঁদ
মাঝরাতের আকাশ মাতায়,
জোছনার কুচি ঝরে পড়ে রাতভর
আমার জানালায়-

পাখিটার গান বন মনে রাখে,
রাতের আকাশে ছবি-আঁকা চাঁদ
ফিরে আসে, জানালার পাশে।

  • জানালা; ১২,১৩পৃ.)

আদতে ‘জানালা’ কবিতাটি দিয়ে এই বইয়ের মাহাত্ম্য প্রচার করা যেতে পারে। সাবলীল, সহজবোধ্য ভাষায় সহজে মরমে পৌঁছে যায় রেজা নুরের কবিতা। নিরীক্ষার নামে বাড়াবাড়ি নেই, যথার্থ কল্পিত চিত্রে উপমার বন্ধন প্রীতি সম্মিলন বেশ চমক জাগানিয়া; কবিতা হয়ে গেলে সেটিই ছন্দ রেজা নুরের কবিতায় এইকথাটি বলতে পারি, রিদমিক দোলা পাঠককে নতুনতর বাস্তবতার দৃশ্যে মুখরিত করে আর মনের আনন্দে লিখে যাওয়া কবির নাম রেজা নুর –

ক.
আদম আসবার আগে
পৃথিবী কুমারী ছিল –
লাঙলের ফলা
ফালি ফালি করেনি
জমিনের যোনি।
বীজদানা যখনই
বিছিয়ে যেত
তুলতুলে জমিনের স্তনে…
নতুন প্রাণ উঁকি দিতো মাটির পরতে,
বৃক্ষ,লতা,ফুল,ফলে সাজত অনূঢ়া মৃত্তিকা।

  • আদমের আগের পৃথিবী;৩৭পৃ.)

খ.
ঘুমের মতো একদিন
আশাও ভেঙে যায়,
তড়পায় আজন্ম মোহ।

পথের বাঁক নির্বাক চেয়ে থাকে দূরে..
– আয়নায় ভেসে ওঠা দৃশ্য;২০পৃ.)

গ.
বুঝতে যদি সময় এখনই-
জেনে নিতে,
সাঁতার না জানা মানুষের কাছে
প্রশান্ত পুকুরও নিরেট খুনি।

  • নিঝুম৪১: জলরেখা;৫৬পৃ.)

রেজা নুর মাদারজাদ কবি। চাপ নিয়ে কবিতা লিখতে হয় না,বরঞ্চ বিবিধ কলাকৌশলে সৌন্দর্য চেতনায় কবিতা এসে ধরা দেয়, নিজেকে খোলাসা করে কবিতা রেজা নুরের কবিতায়….

|||
আদমের আগের পৃথিবী
রেজা নুর
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ্
রঙন প্রকাশ
মূল্য:৩০০টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

খান কাওসার on দীর্ঘ কবিতা : কসম
মেজু আহমেদ খান on দীর্ঘ কবিতা : কসম