রেজা নুর
………..
সমুদ্র
………..
সৈকতে গেলে
মন থির হয়ে আসে —
সমুদ্র,
প্রশান্ত-দীর্ঘ দূর
বিছিয়ে দেয় চোখে।
বুকজলে নেমে
ঢেউগুলো সরিয়ে দিই
যত দূরে,
আরও বহু ঢেউ
মৃদু হেসে
এগোয় থরে থরে ॥
………….
শিখা
………….
যে দু:খ
নিশ্বাসের মতো নিয়ে বেড়াও —
অদৃশ্য-উষ্ণ বাতাস
বোশেখের ঝড়।
শীতের বনেও
তুমি তপ্ত তরু —
এক মরু প্রেমে
অন্তর অনড় ॥
………….
ঝড়
………….
শুনবার সময় বাতাসের নেই,
বয়ে যাবার তাড়া শুধু —
ঝড় হয়ে ভাঙে বৃক্ষ, ঘর …
উসকে দেয় শান্ত ধুলো,
আনমনা ঢেউ ।
ভাববার সময় তার কই :
কোন্ শাখায় পাখির বাসা,
নতুন দেয়ালের ঘর নবীন তল্লাটে, —দূরের কোন্ নির্জন ধুলোয়
ফুল পড়ে আছে।
কোন্ নদীর নিরীহ জল ছায়ার সখা,
উদ্দাম হাওয়ার সে রাখেনি খবর !
……………
অন্য নিবাস
……………
সুখকর যাত্রা ছিল আমার…
ঘাসে ছাওয়া পথের পাশে বনফুল,
অজস্র সূর্য
সকালের শিশিরের চোখে।
কখনো, ঘুম-অভিমান রাতে
তীব্র তারার আলো আঁকতো আকাশে অতি জগতের আলপনা।
মেঘ
তারা
চাঁদ
এদের বিষাদ
বিচূর্ণ বৈভবে ঝরেছিল,
জোছনার ঘরে।
আমিও এই জমিনের নই,
অসীম আবাস রাখা
নিথর মন্থরে ॥
………..
অশ্রু
………..
বহুদিন আগে
কপোতাক্ষের তীরে
এক বৃদ্ধাকে কাঁদতে দেখেছিলাম।
চরের ঘাটের বালু থেকে সামান্য দূরে
ঘাসের ওপরে বসা ছিলেন।
রোদন-রুদ্ধ স্বরে
থমকে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ,
গাঁয়ের পরিচিত রমণী তিনি
চিনি তাকে ছোট্টবেলা থেকে।
ছেলেরা বড় হয়েছে, ভরা সংসার।
তবু কী এমন দু:খে
জলের নির্জনে,
নদের-ধীর-দীর্ঘ ধারায়
জানাতে হয় অধীর বেদনা !
কাদেরের মা,
পড়শী দাদী-মা’র কাছে জানতে
মন চেয়েছে কতবার,
জিজ্ঞেস আর করা হয়না ।
জগত-ভরা মানুষের সংগে
কথোপকথন হয়,
কত গল্প, হাসি বিনিময়…
তবু কে শোনে কার কান্না ?
কে রাখে মনে আর…
বেদনার রক্তিম দাগ !
শুধু নদী—- বহতা জলই আপন,
নিবিড় গোপন দু:খ বয়ে নেবার।
———**——