spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

‘মিহির’ এর পথচলা

তাজ ইসলাম 

‘প্রস্রাবের রাস্তায় নল ঢুকিয়ে,বৈদ্যুতিক স্পার্ক দিয়ে,প্রস্রাব না করতে বাধ্য করে,শরীরের অনুভূতির স্থানে বিপদজনক স্পর্শ দিয়ে ধ্বংসাত্মক আবেদন তীব্র করতে মানুষিক নির্যাতন অব্যাহত রাখল।’ এভাবেই বিভৎস নির্যাতন,নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে গেছেন  রাফি আল আহনাফ। আহনাফ আরও বলেন, ‘ অনেক পরে হলেও জানতে পেরেছি প্রাথমিক এ পৈশাচিক নির্যাতনটা ছিল আয়নাঘরে।’

আয়নাঘর হল জালিম হাসিনার ‘গুয়ান্তানামো বে’। ভয়াবহ নির্যাতনের গোপন কক্ষ। শত শত মানুষ হাসিনার আমলে গুম হত। গুম হওয়া মানুষের কেউ কেউ হারিয়ে যেত চিরতরে।তাদের লাশের হদিসও মিলতো না। স্বজনরা  জানতেও পারতেন না তাদের খবর। কাউকে ছাড়া হত ব্যপক জুলুমের পর। বহু মানুষ নিখোঁজ ছিল বছরের পর বছর।  

হাসিনা সরকার পৃথিবীর ইতিহাসে ফ্যাসিস্টের এক উদাহরণ হয়ে থাকল।তার অত্যাচারের কথা কেউ মুখেও উচ্চারণ করেনি ভয়ে। 

জুলাইয়ে শুরু হয় ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলন।আন্দোলন দমনে  খুনি চরিত্র নিয়ে হাজির হয় হাসিনা ও তার পেটুয়া বাহিনী। রাজপথে রক্তের বন্যা বহে। তরতাজা প্রাণ কেড়ে নেয় স্বৈরশাসক হাসিনা।শত শত মায়ের বুক খালি হয়।হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক সময় রাজপথ থেকে বিতাড়িত হয় আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী।ছাত্র জনতার সামনে দাঁড়াতে পারেনি হাসিনার পুলিশ। হাসিনা উপায় না পেয়ে পালিয়ে যায়। আয়নাঘর ভেঙে বেরিয়ে আসে গুম হওয়া মানুষেরা। তারই অভিজ্ঞতার বয়ান রাফি আল আহনাফের ‘ আয়নাঘর’ শীর্ষক লেখায়। গা ছমছম করা কাহিনী।  

বিপ্লবকে তরান্বিত করেছিল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ছাত্রজনতা যার যার অবস্থান থেকে ছিল সক্রিয়। লেখক,বুদ্ধিজীবী,শিল্পী,অধ্যাপক সবাই ছিল সক্রিয়। রাজপথে,শহরের দেওয়াল ছেয়ে গিয়েছিল গ্রাফিতিতে।গ্রাফিতি চব্বিশের আন্দোলনের নতুন প্রাণ সঞ্চারি সংযোজন। উসাইদ মুহাম্মদ লিখেছেন ‘ গ্রাফিতিবিপ্লব’ নামক লেখা।সাক্ষাৎকার ভিত্তিক লেখায় জানা যায় শিল্প ও শিল্পীর অনেক অজানা কাহিনী। 

বিজয় পরবর্তীতে কবি সাহিত্যিকদের কলমে রচিত হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কথা। প্রকাশ হয়েছে নানা নামে লিটলম্যাগ। অনেকে করেছে জুলাই সংখ্যা। 

মিহির : একটি সাহিত্য পত্রিকা। কলেবর ছোট।ছোট পরিসরেই তারা তাদের কাজটুকু আঞ্জাম দিয়েছেন।

তাদের এই সংখ্যায় আছে বিধ্বস্ত গাজা নিয়ে লেখা,আছে শাপলা ট্রাজেডি বিষয়ক লেখা। জুলাই বিপ্লবসহ অন্যান্য লেখায় সম্বৃদ্ধ সাহিত্যের কাগজ ‘ মিহির’। ‘যোগ্য উত্তরসূরী বাঁচিয়ে রাখে কর্মবীরদের: জহির উদ্দিন বাবর, ৩১ আগস্ট,২০২৪: আতিক ফারুক,গাজায় বিভীষিকাময় এক রাত: নুর আব্দুল কাইয়ুম।এছাড়াও আরও যারা লিখেছেন তারা হলেন,হাবীবুল্লাহ সিরাজ,রহমতুল্লাহ শিহাব,মুহাম্মদ ইউসুফ খন্দকার,আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ উসমান প্রমুখ। কবিতা লিখেছেন,তালহা বিন আশরাফ,মোঃ তাসনীম হোসেন,মুজাহিদ সন্দ্বীপী,সাজিদ বিন আওলাদ,গোলাম মাহমুদ সৌরভ,শেখ মামুন,ইসমাঈল হাবীব,মোঃ রুবায়েত রহমান রাফি প্রমুখ।

লেখক তালিকায় আরও আছেন যথাক্রমে, 

কালিমুল্লাহ বিন ইব্রাহিম, 

নাজমুল হাসান,আরিফ বিল্লাহ হামজা,মাইনুল ইসলাম মাহাদী,আমীরুল ইসলাম ফুআদ, রবিউল ইসলাম মানিক,মাহমুদা আক্তার রাখি, মুহাম্মদ সরকার।

হাম্মাদ সাদিক তার লেখায় তুলে এনেছেন রক্তমাখা স্মৃতি।এই স্মৃতিতে আছে ৫ মে ২০১৩ সালের শাপলার নির্মমতা,লিখেছেন জুলাইয়ের নৃশংসতার কথা।তার লেখার শিরোনাম ‘ রক্তমাখা অধ্যায়ের পর ফুটলো নতুন ভোর’।

‘মিহির ‘ বর্ষ ১।সংখ্যা ০৪। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২৪। সম্পাদক : হাম্মাদ সাদিক।শুভেচ্ছা মূল্য:৬০ টাকা।

লেখকেরা সমাজের সচেতন মহলের মধ্যে অন্যতম। ইতিহাসকে,সময়কে নিজেদের লেখায় ধরে রাখা তাদের দায়িত্ব।সেই বোধ থেকেই কাজ করেন অনেকে। কাজ না করলে ইতিহাস বিকৃত হয়।বিকৃতি রোধে লেখকদের যথাসময়ে যথাসম্ভব দায়িত্ব পালন করা কর্তব্য।মিহির সম্পাদনা পরিষদ তাদের সাধ্যের মধ্যে কাজ করে গেছেন।আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।আগামীতে আরও বিস্তৃত পরিসরে সুপরিকল্পিত কাজ করবে এই আশা অবশ্যই রাখলাম।তারা তাদের একটি সংখ্যাকে সাজাতে পারতো একটি বিষয়ে।তাহলে আরও উত্তম হত। শাপলা,গাজা,জুলাই তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।প্রত্যেকটাই বিশাল ঘটনাবহুল। মিহিরের মতো আরও বিরাট কলেবরও একটি বিষয়কে ধারণ করা অসম্ভব। সেখানে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত দায়সারা দায়সারা মনে হয়। তাও ভালো তারা তিনটি বিষয়কেই চিন্তায় রেখেছে।আমরা মিহিরের ব্যপক প্রচার কামনা করি।সাহিত্য সেবায় তাদের যাত্রা চলতে থাকুক।চলতে থাকুক.…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on কবিতার স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গের কবিতা