খান কাওসার কবির
…………….
চব্বিশের গ্রাফিতি
……………..
খুন পিয়াসীর দাঁত দু’টো খুব খাঁড়া
তিরিশটা দিন জ্বালাইতো সে পাড়া
রাত্রি দিনে মানুষ ধরে
পাঠিয়ে দিত আয়নাঘরে
বিচারবিহীন কাটিয়ে দিত তাঁরা।
ডাইনি বুড়ির ঝুলছে গলায় জুতো
শিং দুটো দে’ মারতো জোরে গুঁতো
চতুর্দিকে জমছে ঘৃণা
নরপশু কি মানুষ? জ্বি না
লিকলিকে জিভ ঠিক যেন এক ভুতো।
নরপিচাশের পায়ের হাতের নখ তো
হিংস্র পশুর মতন ভীষণ শক্ত
প্রতিবেশী সঙ্গি ছিল
কত্তো নাটক ভঙ্গি ছিল
কান্না ছিল সবার কাছে টক্ তো।
ফ্যাসিস্ট রাণীর চোখ দু’টো ঠিক লাল
নাম ছিল তার কাল নাগিনী কাল
টাটকা মধুর রক্ত খেতে
রাত্রি দিনে থাকতো মেতে
শান্ত সুবোধ লোক ছিল তার ঢাল।
৩১/১২/২০২৪
এ্যালিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
………………
নির্বাচনী চা
………………
গভীর রাত্রে বনের ভেতর যা
দেখবি বনে শকুন কাকের ছা
শকুন কাকে গান করে
জোটবেঁধে সব পান করে
বাঘ মামাদের নির্বাচনী চা ।
২৫/ডিসেম্বর/২০২৩
এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
………………
জাতিসংঘের ঘুম
………………
জাতিসংঘের ডাক
বাকুম বাকুম বাক ।
মিটিং করে ইটিং করে
মিটিং ইটিং চিটিং করে
ফিলিস্তিনের জন্যে ওদের
নাই কোন হাঁকডাক।
বাকুম বাকুম কুম
মাত্রারিক্ত ওষুধ খেয়ে
জাতিসংঘের ঘুম
বিশ্ব মোড়ল বাদ্যি বাজায়
ঢুম ঢুমাঢুম ঢুম।
২২/ সেপ্টেম্বর /২০২৩
উত্তরা, ঢাকা।
…………….
আয়নাঘর
…………….
আমার তখন বয়সটি ছিল ছয়
ভয় ছিল ভয়-ভয়
কোত্থেকে কে আসলো হঠাৎ করে
গভীর রাত্রে ঘরে
সঙ্গে ছিল মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি
সাদা পোশাকধারী
নাম জানি না কে যে
জোরছে টেনে নিল বাবাকে যে
আম্মু দাদুর দাদার সে কী কান্না
বাবাটাকে কেউ দিতে তো চান না !
দৌড়ে গেলাম ফ্ল্যাটটির অই নিচে
গাড়ির পিছে পিছে
গাড়িটাতো ছুটলো অনেক দূরে
বাবাটা কি গেল দূরের ট্যুরে ?
আমার বাবাকে যে
কে নিল রে ডিবি পুলিশ সেজে!
বাবার সঙ্গে সখ্য ছিল খুব
মেঘের রাজ্যে স্বপ্নে দিতাম ডুব
হারিয়ে যেতাম গহীন কোন বনে
বাবার কথা খুব যে পড়ে মনে
বাবা ছিল দুষ্ট
অল্পতে সে তুষ্ট
বাবা ছিল শান্ত মিষ্টভাষী
বাবাটাকে অ-নে-ক ভালবাসি।
আমি এখন অনেক-অনেক বড়
চিন্তাতে আর নেইকো জড়োসড়ো
প্রেসক্লাবে সকাল সন্ধ্যা আসি
মুখে তো নেই হাসি
ব্যানার ফেস্টুন আরো কত্ত কী যে
টানিয়ে রাখি নিজে
আগুন ঝরার ফুলকি ফুটাই মুখে
দিতে পারি দুর্বৃত্তকে রুখে
ক্যান হলো যে আমার বাবা গুম ?
ক্যান কেড়েছিস আমার রাতের ঘুম?
সেদিন আমি কিচ্ছু বুঝিনি তো
আজ আমি আর কক্ষনো নই ভীত।
কত্তদিন যে পরে এলো বাবা
বাবাটারে কে দিল রে থাবা ?
পেলাম তাঁরে আজ
কপালে তাঁর বিষন্নতার ভাঁজ
বাবা নাকি থাকতো ঘরে একা
রক্ত দিয়ে লিখতো কত লেখা !
চোখের নিচে কালো
রক্ত জমাট দেখে দাদুর
হৃদয়টা চমকালো
হাত পা পিঠে কত্ত রকম দাগ
শক্তি দিয়ে ঝাড়লো ওদের রাগ
হাত পাগুলো বাঁকা
রক্ত জমাট মাখা
কষ্টে দারুণ কাঁপছে থরে থরে
আমার বাবা ছিল নাকি
ছোট্ট আয়নাঘরে।
আমরা এখন ভয় করি না বাবা
নর পিশাচের হিংস্র কোন থাবা।
০২/আগস্ট/২০২৪
এ্যালিফ্যান্ট রোড, ঢাকা ।
দারুন সব কবিতা।
অসাধারণ।