spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাআমার প্রতীক্ষা ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : কামরুজ্জামান

আমার প্রতীক্ষা ও অন্যান্য কবিতা

কামরুজ্জামান

[ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তিনি রাষ্ট্রপতি হবার পর ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, গ্রাম গঞ্জ পাড়া মহল্লায় তখন একবার তাঁর খুব কাছে এসে কর স্পর্শ করার বিরল অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমার। আবার তাঁর শাহাদাৎ বরণে দেখেছি সারা দেশের মানুষের হৃদয় নি:সৃত অকৃত্রিম ভালোবাসা, ইতিহাসের নজির বিহীন বিশাল জানাজা, অসামান্য অশ্রু ভেজা বিদায় সংবর্ধনা। তাঁর কফিনের কাছ পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছিলাম, দেখেছি শুধু মানুষের পায়ের ধূলায় উইঢিবির মতো মাটির স্তর জমে উঁচু হয়ে গিয়েছিল। তখন কতবার ছুটে-ছুটে গিয়েছি তাঁর সমাধির কাছে বাসা কাছে থাকার কারণে, দেখেছি দেশের গ্রামগঞ্জ থেকে ছুটে আসা মানুষের ঢল, কত অজস্র কবিতা, কত গানের বাণী, কত অগণিত ফুলের তোড়ায় তোড়ায় ভরে যেতো তাঁর সমাধির চারপাশে… সেই অভিজ্ঞতা স্মৃতি স্মরণ করে আমার এই কবিতা, এই শ্রদ্ধা নিবেদন। ]

…………….
কমল করস্পর্শে
…………….

শৈশবের দিনকালে আপনার স্পর্শ পেয়েছিলো
আমারই করকমল, শহর নগর গ্রাম থেকে গ্রামে
যখন আপনি ছুটে বেরিয়েছেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত
এই বিস্তৃত সবুজ স্বদেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লা
এক উজ্জ্বল সন্ধ্যায় এতো কাছে এসেছিলাম—
ভাগক্রমে মানুষের ভীড় ঠেলে কিভাবে তখন!
সেই প্রথম কোনো রাষ্ট্রনায়কের অবয়ব দর্শন…

বহুদিন পর জেনেছি এখন, কত অমূল্য ছিলো এই
আপনার সবুজ বিপ্লব, ফসলের মাঠ মাঠে ধান শীষে
কৃষকের মুখে মুখে চেয়েছিলেন অফুরান হাসি
মানুষের জীবন যন্ত্রণায় মুক্তির দিশা দিতে চেয়ে
জনপদ থেকে জনপদে অক্লান্ত শ্রমের ঘামে ঘামে
নির্মাণ বিনির্মাণের শিল্পে, সৃজনে শৈলীতে সাজিয়ে—
তুলেছিলেন ভগ্ন রিক্ত ভূমির নতুন ভুবন…

আপনার বিদায় যে কত ব্যথাতুর করে তুলেছিলো
এই বাংলার মায়াভরা পথে পথে ঘরে ঘরে প্রতিটি হৃদয়
এতো শোক এতো অশ্রু, বুক ভেঙে দিয়ে গিয়েছিলো—
যেনো সীমাহীন দুঃখ ভরা এক রক্তে লাল সরোবর।

সেই করস্পর্শে করকমলে এখনও বুঝি অনুভবে
শোণিতে কণিকায় তোলে ভালোবাসার তীব্র অনুরণন।

…..
হাতির ঝিল রামপুরা ঢাকা

…………
আমি
…………

প্রতি প্রত্যুষে আমার আমি থেকে একটি একটি করে
অহংকারের পালক খুলে খুলে নিক্ষেপ করি–
কামারশালার হাপরের নীলাভ শিখার অগ্নিকুণ্ডে
পুড়ে পুড়ে ছাই ভস্ম হয়ে মিশে যায় আকাশে বাতাসে
আবার আমি-কে নিয়ে যাই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কর্মের বিবরে
মানুষ কত অসহায় পড়ে আছে রাত্রির উদরে।

দিন শেষে আবার ভেতরে ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠে
বহু বর্ণীল অহমের লতাগুল্ম বৃক্ষ ডালপালা
মোহ মায়াজাল ফেলে চৈতন্যে নিয়ে আসে
কাম ক্রোধ মাৎসর্য বিত্ত বৈভব যাবতীয় লিপ্সা।

ছুটে আসে স্বপ্নের ঘোড়া, সোনালী মায়ামৃগ
একটি করে ডিম দেয় সোনার রাজহাঁস —
রাজকন্যা, ডালিমকুমার, লাইলী মজনু
ইউসুফ জুলেখা, মারমেইড, রোমিও জুলিয়েট
ঝলমল করে ওঠে স্বর্ণাভ রাজপ্রাসাদ রাজপুত্র
সিংহাসন যুদ্ধবিদ্যা রণকৌশলী রক্তপিপাসা…

অন্ধকার থেকে আমার আমি -কে নিয়ে আসি
আপন ঘরে আবার এক এক করে পালক
বিচ্ছিন্ন করে ছুঁড়ে দেই লেলিহান শিখায়
ছাই ভস্ম হয়ে উড়ে মিসে যায় বাতাসের কণায়

তারপর আমি -কে নিয়ে যেতে থাকি আলোর দিকে…

……
হাতির ঝিল রামপুরা ঢাকা

……………
আমার প্রতীক্ষা
……………

একটা অচেনা ছোট্ট রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে
জনশূন্য লবি কেউ কারো জন্য নেই পথ চেয়ে
চড়ুই, পায়রা গুলো হাওয়ায় ভর করে আসে নেমে
আহার সন্ধানে, খুঁটে খুঁটে তুলে নেয় শস্য কণা
প্রাচীন বৃক্ষের সবুজ পাতার ছায়া মায়া হয়ে
জড়িয়েছে আমাকে, আমি বসে আছি আমার প্রতীক্ষায়…

ফেলে আসা কত প্রিয় মুখ মুছে গ্যাছে স্মৃতি থেকে
আনন্দ বেদনা সুখ দুঃখ ভরা পদচিহ্ন গুলো
কোথায় নিঃসঙ্গ একা পড়ে আছে অজনায় –
পরিচিত অপরিচিত অবয়বে ফুটে ওঠে যে হাসি কান্না
আড়াল থেকে প্রত্যক্ষ করি নিপুণ ইচ্ছায়,
কত বিদায়, আগমনে পূর্ণ শূন্য ক্ষুদ্র জীবন…

রঙ চায়ের পেয়ালা ওষ্ঠে স্পর্শ করে দেখি দূর থেকে
রিমঝিম শব্দের ছোট্ট লোকাল রেলগাড়ি আসে
কত নানাবিধ প্রয়োজন তৈরি হয়ে ওঠে অনুক্ষণ
কিছু ওঠা নামার হাঁক ডাকের চাঞ্চল্য বাড়ে কিচ্ছুক্ষণ…

সন্ধ্যা শেষে রাত্রি নামে, মৃদুমন্দ বায়ু ছুঁয়ে যায় তনুমন
বসে আছি একা, আরো একা হবো ছিন্ন করে সকল বন্ধন…

…….
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
হাতির ঝিল রামপুরা ঢাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি