spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধজুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী কবিগণ ও প্রাসঙ্গিক কথা

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী কবিগণ ও প্রাসঙ্গিক কথা


তাজ ইসলাম

৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে নতুন নাম ধারণ করল। ৫ আগস্ট
হয়ে গেল ৩৬ জুলাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এভাবেই চিহ্নিত থাকবে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট। এদিন পালিয়ে গিয়েছিল পনের বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। হাসিনার সাথে লাপাত্তা হয়েছিল তার সকল নেতাকর্মী, এমপি,মন্ত্রী সব। জুলাইয়ে শুরু হয় কোটা বিরোধী আন্দোলন। তা ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। এই আন্দোলন দমন করতে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামীলীগ হিংস্র ও বর্বর আচরণ শুরু করে। হাসিনা সরকার পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীকে লেলিয়ে দেয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। হামলে পড়ে আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী। নির্মম নির্যাতনে নিহত হতে থাকে ছাত্ররা। নিরস্ত্র ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে পুলিশ ও আওয়ামীবাহিনী। আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে। ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। বস্তুত দেশবাসী পনের বছর জিম্মি ছিল আওয়ামীলীগের হাতে। খুন,গুম,বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার লুট করে হাসিনা ছিল দেশের বুকে এক জগদ্দল পাথর। ছাত্রদের আন্দোলনে জনতা সহসাই একাত্ম হয়ে গেল। নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের উপর আওয়ামী গুণ্ডা ও পুলিশি বর্বরতায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতাও নেমে আসে রাজপথে। আন্দোলন শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় একদফায়। ফ্যাসিস্ট,স্বৈরাচার,জালেম হটাও আন্দোলনে বসে থাকেনি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সচেতন জনতা। এই আন্দোলনে তুমুল গতি এনে দেয় সোশ্যাল মিডিয়া। কবি, সাহিত্যিক,শিল্পী, সাংবাদিক মূহুর্তে তারা হয়ে যান একটিভিস্ট। তারা নিজ নিজ কর্ম ছাড়াও উদ্দীপনা মূলক পোস্ট দিতে থাকেন। ছাত্র জনতাকে উৎসাহ দেন,সরকারের বর্বরতার প্রতিবাদ করেন। সারাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে আওয়ামীলীগ,অপরপক্ষে সমগ্র বাংলাদেশ। এই আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে একজন গৃহিণী পানির বোতল নিয়ে,কোন এক মা রান্না করা খাবার নিয়ে।পিতা তার পুত্রের হাত ধরে যোগ দেন মিছিলে।ভাই চলে আসেন বোনের সাথে। সারা দেশ উত্তপ্ত। হাসিনা সরকার তার সকল বাহিনী নামিয়ে দেন দেশের জনতার বিপক্ষে। নিরস্ত্র নিরীহ বুকে চলতে থাকে বুলেট। জুলাই জুড়ে আহত নিহতে দেশ হয় এক অসহায় বাংলাদেশ।

দেশকে বাঁচাতে হবেই।
জুলাইয়ের আন্দোলন সকল শ্রেণী পেশার সর্বাত্মক আন্দোলন। সকল রাজনৈতিক দলের একাত্ম আন্দোলন। আন্দোলনের এই বিশাল শক্তির নাম ছাত্র জনতা। সবাই সবার অবস্থান থেকে সক্রিয় ছিলেন নিজের মতো করে।

আমরা এই আলোচনায় কথা বলব কবিদের নিয়ে।
কবিরা ছিলেন, সাহিত্যিক, সাংবাদিক,নাট্যকার,শিল্পী সবাই ছিলেন।শিল্পী জীবন বাজি রেখে কণ্ঠ ছেড়ে গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নাট্যকর্মী নাটকে,সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। সবাই ছিলেন ঝুঁকিতে। সরকারের চোখে সবাই ছিলেন শত্রু।কাউকে অনিরাপদ মনে করেনি সরকার। যে কোন কথা বলা ছিল প্রাণ নাশের হুমকি স্বরূপ। কবিতা লেখাও ছিল অনিরাপদ। কবিতার জন্যও বাসায় হামলা হত,মামলা হত।উঠিয়ে নিয়ে যেত অজ্ঞাত লোকেরা। কবিরা তবু থেমে থাকেনি।সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা নিজেদের কথা,কবিতা পোস্ট দিয়েছে।শেষ পর্যন্ত বহু কবি কলম রেখে নেমে গেছেন রাজপথে। স্লোগানে,মিছিলে কাঁপিয়েছেন রাজপথ। কবিতায় উদ্দীপ্ত করেই ক্ষান্ত হননি, তারা সশরীরে লড়াইয়ে ছিলেন রাজপথে। সারাদেশের শত শত কবি ছিলেন এই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।

আন্দোলনে বিজয় হয়েছে ছাত্র জনতার। বিজয় পরবর্তী প্রাপ্তি কি? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতে। ৫ আগস্টে বিজয় না হলে পরিনতি কি হত তার জবাব খুব স্পষ্ট। আন্দোলনরত কবিদের লিস্ট স্বয়ং পলাতক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দফতরে পৌছে গিয়েছিল তা খুব জোরালোভাবে প্রচারিত। বহুজনের পরিণতি গুম, খুন,মামলা, নিপীড়ন,নির্যাতন বা নির্মম আরও কিছু অপেক্ষা করেছিল।
৫ আগস্টের পর সুযোগ বুঝে অনেকে রাতারাতি বিপ্লবী সেজে গেছে।আবার অনেকের আলোচনায় অনেকে আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এটা নানা কারণে এমনটা হতে পারে।
বিষয়টি ইতিহাসের অংশ।কি হবে,কি হবে না সে প্রশ্ন উত্তরে যাচ্ছি না।যার যার অবস্থানটা পরিস্কার থাকলে ভবিষ্যতে ধোঁয়াশা তৈরীর পথ রূদ্ধ হবে।
আড়ালে পড়ে যাওয়ার কিছু কারণ থাকে। যিনি আলোচনা করেন তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় প্রথমত এই পরিস্থিতি।
আলোচক রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন হলে এমন হতে পারে।তিনি তার রাজনৈতিক মতবাদকে প্রাধান্য দিয়ে কেবলমাত্র নিজেদের লোকদের আলোচনায় নিয়ে আসলেন।
সাংগঠনিক লোকেরা কেবল তার সংগঠনের লোকদের নিয়ে আলোচনা করেন।
ব্যক্তি তার চেনাজানার গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকেন। কোনটাকেই আমরা দোষারোপের দৃষ্টিতে দেখছি না। আলোচক আলোচনায় নিজেদের লোকদের তুলে ধরবেন এটাই স্বভাবসিদ্ধ। নিজের জানাশোনা,নিজের পরিচিতজনদের পরিচিত করবেন।মানুষের জানার পরিধিরও একটা সীমা থাকে।সীমার বাইরে যার অবস্থান তিনি তার আলোচনায় অনুপস্থিত থাকবেন। আলোচনা হোক।লিখিত হোক।মিথ্যা থেকে দূরে থাকলেই হল। কেউ যেন বন্ধুত্বের খাতিরে গাদ্দারকে দেশপ্রেমিক না বানায়। ফ্যাসিস্টের দোসরকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী না বানায়।একজন তার মতো করে লিখে রাখলে সত্য ও তথ্য সংরক্ষিত হয়ে যায়।একজন করে বহুজন লিখে রাখলে এক সময় বহুজনের তথ্য একত্র হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ভাণ্ডার হাজির হয় জাতীর সামনে।
আমরা এই আলোচনা কবির অন্য কোন পরিচয়কে প্রাধান্য দিব না। অন্য কোন বিষয়ের কথা বলে বিভেদ তৈরী করব না।জুলাইয়ে যারা এক্টিভ ছিলেন তাদের কথাই বলে যাব।তার রাজনৈতিক পরিচয়,বিশ্বাস,চিন্তা,দর্শন এখানে বিবেচ্য না।তার পরিচয় তিনি চব্বিশের লড়াকু সৈনিক। দৃষ্টির সীমা আমাদেরও সীমিত। জানাশোনার পরিধি আমাদেরও সীমিত। আমরা আমাদের পরিসরেই কথা বলছি।যতজন আমাদের সামনে ছিলেন,যতজন সম্পর্কে জানতে পেরেছি তাদের যুক্ত করব।বাদ পড়াদের নিয়ে অন্যরা কথা বলবেন,কথা বললে,যুক্ত হয়ে গেলেই সার্থকতা।

ঢাকা ছিল কেন্দ্র। কেন্দ্র আবর্তিত ছিল সারাদেশ। ঢাকার শিল্পী সাহিত্যিকদের মতো দেশের সর্বত্রই ছিল শিল্পী সাহিত্যিক কবিদের সরব উপস্থিতি। সোশ্যাল মিডিয়া ছিল সকলের কথা বলার মাধ্যম।একসময় সরকার নেট বন্ধ করে দেয়।বন্ধ করে দেয় সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম। ১৬ জুলাই থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।

এই আন্দোলন শুরু হলে ক্রমশ তার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কবিদেরকে একটু বিশ্লেষণ করা যায়। বিপ্লবী কবিদের একটা অংশ আছে যারা বিগত পনের বছরই আন্দোলন সংগ্রাম,মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় ছিলেন।তারা রাজপথে ছিলেন আগে থেকেই।কবিতাতেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন সময়ে সময়ে।
একপক্ষ ছিলেন নিরীহ টাইপের।তারা শিল্প সাহিত্যে মনোযোগী ছিলেন।এরাও এবার ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন।কবিতায়তো বটেই,রাজপথেও নামতে বাধ্য হলেন।আরেক পক্ষ ছিলেন সুবিধা পন্থী।শুনতে রূঢ় হলেও এটাই সত্য। এরা সবসময় সরকারের আনুকুল্যে থাকতে পছন্দ করতেন।এদের মাঝে দুই পক্ষ হয়ে গেল। একপক্ষ রয়ে গেলেন সরকারের পক্ষে।আরেক পক্ষ সরকারের চরম অত্যাচারে,ছাত্রদের ন্যায্য দাবীর প্রতি সরকারের জুলুমে বিক্ষুব্ধ হলেন।নেমে এলেন ছাত্র জনতার পক্ষে। আমরা কাউকে চিহ্নিত করছি না নাম উল্লেখ করে।শুধু বিষয়টি বলে গেলাম। বিপুল সংখক কবি আন্দোলনে ছিলেন সশরীরে।

বিপ্লবী কবিগণ :

……….
ফরহাদ মজহার
……….

ফরহাদ মজহার কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক,ভাবুক,দার্শনিক। সমাজ, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়। বিগত দিনগুলোতে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রনায়কের আসনে।বিভিন্ন সভা,সেমিনার,আলোচনা,বক্তৃতা,মিছিল, মিটিংয়ে তার ছিল অভিভাবকতুল্য উপস্থিতি। আন্দোলনে তার কথা,পরামর্শ পথ দেখিয়েছে ছাত্র জনতাকে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশী কবিদের গুরুস্থানে থাকবে তার নাম। তিনি প্রধানতম কবি। জুলাইর আন্দোলন ছাড়াও ফ্যাসিবাদের পুরো সময়ই তার লড়াই ছিল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। জনগণের পক্ষে তিনি লড়ে গেছেন বিরামহীন। জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে ফরহাদ মজহার ছিলেন আশার আশ্রয়স্থল। সাহসের বাতিঘর।

…………
আবদুল হাই শিকদার
………….

আবদুল হাই শিকদার কবি। কবি ছাড়াও তার পরিচয় সাংবাদিক নেতা,অধ্যাপক,রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশের সকল মাধ্যমে একটি উচ্চকিত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কবি আবদুল হাই শিকদার। বিগত পনের বছর স্বৈরহাসিনার রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলে গেছেন তিনি। সংবাদপত্রের কলামে,টিভি টকশোতে,সভা সেমিনারে,সাক্ষাৎকারে,বক্তব্যে কবিতায় সর্বত্র তিনি ছিলেন সেনানায়কের ভূমিকায়। বলতে দ্বিধা নেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সকল কণ্ঠের মাঝে বলিষ্ঠ ছিল তার কণ্ঠস্বর। তারুণ্যের আইডল তিনি।জুলাইয়ের বিপ্লবে তিনি ছিলেন লড়াইয়ের এক তুর্কী ঘোড়সওয়ার। প্রেসক্লাবে,শহীদ মিনারে,শাহবাগের মিছিলে তিনি সবার আগে।সেমিনারে,ভাষণে জ্বালাময়ী বক্তব্য।কবিতায় রক্ত গরম করা পঙক্তি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার উপস্থিতি প্রেরণা জুগিয়েছে প্রাণে প্রাণে।তার উপস্থিতি আমাদের সাহসকে করেছে বহুগুণ। একই দিনে একাধিক প্রোগ্রামেও তার ছিল না কোন ক্লান্তি। জুলাইয়ে লেখা ও জুলাইকে ধারণ করে লেখা কবিতা দিয়ে তার একটি কবিতার বই ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। পাঠক ইচ্ছে করলে তার সে সব কবিতা পাঠ করতে পারেন বই সংগ্রহ করে।আমরা এখানে একটি কবিতার নাম যুক্ত করে দিলাম ” আমরা মানুষ আমরা এসেছি”। এটি একটি দীর্ঘ কবিতা।

…………
সোলায়মান আহসান
…………

আমাদের লড়াইটা শেষ হয়নি/ যতোদিন আকাশে উড়বে শকুন চিন/ যতোদিন সীমান্তে ঠা-ঠা গুলিতে লাশ পড়বে/ যতোদিন মানুষের অহেতুক মৃত্যুর মিছিল বড় হবে/….
আমাদের লড়াই চলবে।/ আমরা রাজপথে গলি উপগলি ক্যাম্পাসে সর্বত্র হাজির থাকব/ আবার বলছি – আমাদের লড়াইটা শেষ হয়নি। সোলায়মান আহসান।
সোলায়মান আহসান কবি ও কথাসাহিত্যিক। লড়াইয়ে ছিলেন,এখনও আছেন। থাকবেন সতর্ক সেনাপতি হয়ে।

……………
মুজতাহিদ ফারুকী
……………

তিনি কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তার ক্ষুরধার লেখা সবসময় উৎসাহমূলক ছিল। সময়োপযোগী পোস্টের মাধ্যমে তিনি ছিলেন আন্দোলনের উৎসাহ দাতা। আমরা উদ্ধৃত করি তার কবিতা পঙক্তি,
” গোধূলিধূসর এই অধীকৃত ভূঁইয়ে / দূঃসাহসী যারা আজ রুয়ে দিলে/ সুরের মত লালটকটকে তাজা রক্ত- বীজ/তাদের সালাম/।”

…………..
মাহবুব হাসান
…………..

তার কবিতায় তিনি কথা বলেছেন। মাহবুব হাসান বাংলাদেশের পরিচিত কবি মুখ। সরকারের কার্যকলাপ তার কবিতায় একবাক্যে এমন,” ক্ষমতার নগ্নতা বেরিয়ে এসে বন্দুক তাক করে।”

…………..
হাসান আলীম
……………

গত শতকের আশির দশকের উল্লেখযোগ্য কবিদের একজন। তিনি ছাত্র জনতার আন্দোলনকে উল্লেখ করেছেন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে। কবিতায় ফিরে গেছেন ইতিহাসে। তার কবিতার শিরোনাম ” সতেরো সওয়ারী: দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
হাসান আলীম পুরো জুলাই আগস্টে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। তিনি বিপ্লবোত্তর সময়ে স্পষ্ট করে বলেন,অপ্রতিরোধ্য গনঅভ্যুত্থানের/ জোয়ারে ভেসে গেলো নব্য ফেরাউন/”।

………….
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
………….

কত- না মানুষ মারলা বুবু
কত- না মানুষ খাইলা
প্রতিশোধ নিতে আইসা দেশে
ছারখার কইরা ছাড়লা।

কথাও কবিতায় এভাবেই জেগে ছিলেন কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ।

…………
মোশাররফ হোসেন খান
…………..

কবি, সম্পাদক।

তার লেখালেখির বিশাল অংশই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বয়সের ভারে হাঁপিয়ে পড়েননি। প্রবীণ হয়েও লিখেছেন সাহসের কবিতা।

আবু তা‌হের বেলাল,
মাহমুদ মেঘ,
আমিনুল ইসলাম হুসাইনী,
ডা. ইয়াহ্ইয়া মান্নান,
কাজী মারুফ এরা সময়ের সাহসী সন্তান। কাজ করেছেন স্ব স্ব অবস্থানে।

……………
লতিফুল ইসলাম শিবলী
……………

জুলাইয়ে আলোচিত কবিদের একজন। সাহসিকতার সাথে কথা বলেছেন। কবিতা লিখেছেন। পালন করেছেন সংগঠকের দায়িত্ব।

সাদাত হোসাইন,
সালমান হাবিব,
আরিফ আজাদ,
তোরাব আল হাবীব,
এরাও সক্রিয় ছিলেন।

…………..
সায়ীদ আবুবকর
…………..

কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ।

জুলাইয়ের আন্দোলনে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। ছিলেন রাজপথের মিছিলে।
সায়ীদ আবুবকর জুলাই কেন্দ্রিক অনেক কবিতা লিখেছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশ হচ্ছে অনেক ছড়া কবিতা।
তিনি এক কবিতায় লিখেন,

” আবু সাঈদের রক্তে লাল হয়ে ঈগলের মতো উড়ছে আকাশে আমাদের / প্রাণের পতাকা আর বিশ কোটি বাঙালি……./ থরথর করে কাঁপছে স্বৈরাচার;/(ঝরা পাতার নৃত্য)।

………….
ফজলুল হক তুহিন
………….

কবি,সম্পাদক,গবেষক।

তিনি আওয়ামী রেজিমের বিরুদ্ধে লড়াইরত ছিলেন বিগত পনের বছর। হয়েছেন জেল জুলুমের শিকার। জুলাই বিপ্লবে রাজপথের লড়াইয়ে ছিলেন নেতৃস্থানীয় অবস্থানে। সভা,সেমিনার,বক্তব্য,মিছিলে ছিলেন ছাত্র জনতার পক্ষে। ফেসবুকেও ছিলেন সরব। পোস্ট ও কবিতায় সাহস জুগিয়েছেন আন্দোলনকারীদের। কবি এই আন্দোলনকে অভিহিত করেছেন ‘গণজোয়ার’ বলে। আর বর্ণনা করেছেন এভাবে ,’ সব ভুলে আবু সাঈদের হাত দুটি/ হয়ে গেছে দোয়েলের ডানা– অলৌকিক ডানার উড়াল/ বুক তার বাংলাদেশের রক্তাক্ত পতাকা!/(গণজোয়ার)।’

……………
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব
……………

তোমরা জুলুম করো/
জুলুম করতে করতে চিম্বুক পাহাড় বানাও/ মারতে মারতে খুনের অতল দরিয়া বানাও/.. তারপর / এ মাটিরও প্রতিটি মুখ খুবলে খাবে/ তোমাদের চোখ,/ হাত/ মাথা,/ সমস্ত শরীর/”

শিহাব কবি। কবিতা তার অস্ত্র, অস্ত্র নিক্ষেপ করেছেন অবিরাম।

………….
হাসান রোবায়েত
………….

কবি।

তিনি জুলাই আন্দোলন শুরুর আগে থেকেই আওয়ামী রেজিমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন ছোট ছোট স্লোগানধর্মী পঙক্তিতে সময়কে ধারণ করতে সক্ষম ছিলেন। এসব স্লোগান তার ওয়ালে পোস্ট দিলে তা ঢাকার ওয়ালে গ্রাফিতি বা দেওয়াল লিখন হিসেবে শোভা পেত। তার স্লোগান দ্রোহ, প্রেরণা, শ্লেষ প্রকাশ পেত। আন্দোলন চলাকালীন তার একাধিক কবিতা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে পাঠক পাঠ করতে পেরেছে।

………….
রিগ্যান এস্কান্দার
…………

কবি।

তার কবিতায় বরাবরই প্রকাশ করেছেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী বক্তব্য। জুলাইয়ের আন্দোলনেও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। সরকারের জুলুম,নিপীড়ন, স্বৈর আচরণের বিরুদ্ধে লিখেছেন কবিতা। কবিতায় ছাত্র জনতার পক্ষে ছিল তার দৃঢ় অবস্থান। তিনি একজন সংগঠকও। কবিতা তার মহৎ হাতিয়ার। তিনি তার সতীর্থদের স্মরণ করাতে বলেন,’মনে রেখো–/স্টেনগানের বিরুদ্ধে একটি কবিতা দাঁড়াতে পারে।( মিছিল প্রিয় একটি কবিতা)।’

………….
রহমান হেনরী
………….

কবি।

সংগ্রামী কবি। কবিতা লিখে রাজরোষে হারান চাকরি। স্বভাবতই আন্দাজ করা যায় তার সাহসিকতা। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন। জুলাই বিপ্লবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বাত্মক কাজ চালিয়ে গেছেন। কবিতা তো তার প্রধান হাতিয়ার। তা নিক্ষেপ করেছেন হাসিনা ও তার দোসরদের বুক বরাবর।

……….
মাহফুজুর রহমান আকন্দ
……….

কবি,গবেষক, শিক্ষাবিদ।

কবিতা লিখেছেন,আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ছাত্রদের রক্ষার্থে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন পুলিশ ও আওয়ামী গুণ্ডাদের মুখোমুখি ।
তিনি লাল জুলাইয়ের কবিতা লিখেছেন,গান লিখেছেন। উত্তপ্ত সময়ে লিখেছেন ছড়া। অসংখ্য কবিতা ছড়া তার আন্দোলনের দিনগুলোতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এখানে তার অংশ বিশেষ।
‘ অরুণ বরুণ তরুণ সমাজ জেগেছে/সব মানুষের রক্তে আগুন লেগেছে।’

………..
নয়ন আহমেদ
……….

কবি।

উল্লেখযোগ্য কবি। কবিতা চর্চা তার ধ্যান। কবিতায় তিনি বলেন তার মনের সব কথা। জুলাই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান একদম স্পষ্ট। তিনি সবসময় ফ্যাসিস্টের বিপক্ষে। স্বৈরাচার,ভোট ডাকাতদের বিপক্ষে তিনি তার কলমের মাধ্যমে জারি রেখেছেন লড়াই। জুলাইয়েও সে লড়াই চালিয়ে গেছেন কবিতায় কবিতায়। জুলাইয়ে বিপ্লবী কবিদের তালিকায় নয়ন আহমেদ উজ্জ্বল এক কবি নাম।

‘অগ্নিগর্ভ এই দেশকে জিগ্যেস করো– আমরা কারা।/… আমরাই সূর্যসেন/ আমরাই প্রীতিলতা/ আমরাই তিতুমীর/–এই কথা জানে মহামান্য বঙ্গোপসাগর।…. জানে বাংলাভাষার পঞ্চাশ বর্ণমালা/( আমরা)।’

……….
ফরিদ ভূঁইয়া
……….

কবি।

তার তৎপরতা ছিল ঈর্ষণীয়। কবিতায় কবিতায় ঘৃণাবান নিক্ষেপ করেছেন নিকৃষ্ট আওয়ামী দস্যুদের বুকে ।

……….
ওমর বিশ্বাস
……….

কবি, গল্পকার,প্রাবন্ধিক।

…আমাদের কখনো কখনো থমকে দাঁড়াতে হলেও/ থেমে থাকতে হয়নি/ এই দাঁড়াবার মাটিই সাহস জুগিয়ে এসেছে এ পর্যন্ত। ( দাঁড়াবার মাটি)

এই মাটির সাহসী সন্তানেরাই হলেন

জুলফিকার শাহাদাৎ,
শাহাদাৎ সরকার।

তারা ছিলেন কলম যোদ্ধা হিসেবে ছাত্র জনতার পক্ষে,ছিলেন রাজপথের লড়াইয়ে ।

……….
সাইদ উজ্জ্বল
……….
কবি ও রাজনৈতিক নেতা।

আন্দোলনে ছিলেন সমন্বয়ক, সংগঠক। জুলাইয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন সরাসরি রাজপথে। মানুষের ভোটের অধিকার,খুন গুমের প্রতিবাদ,বাকস্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে তিনি রাজপথে আছেন দীর্ঘ কাল যাবৎ। জুলাইয়ে আওয়ামী দস্যুদের বুলেট,হামলা,মামলাকে উপেক্ষা করে ছিলেন মিছিলের সামনে। তিনি কবিতায় বলেন,’ হে ফ্যাসিস্ট! আজ হেঁটে যাব তোমার সিনা বরাবর।/ সমস্ত ব্যারিকেড ভেঙে/ ঢুকে পড়েছি দেখো নির্ভয়ে।’

………..
এহসান হাবিব
………..

এহসান হাবিব বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন জুলাইয়ে শুরুর আগেই নেতৃত্ব দিয়েছেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী কবিতা বা এ জাতীয় শব্দবন্ধনী মূলক আয়োজনের। বিভিন্ন জেলায় তার নেতৃত্বে বা তার সংগঠনের ব্যানারে কবিগণ পাঠ করেছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কবিতা। জুলাইয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। কবিতা পাঠের আয়োজন করেছেন আন্দোলনের মাঠে। মানব বন্ধনে দাঁড়িয়েছেন ছাত্র জনতার পক্ষে।

……….
মুহাম্মদ আবদুল বাতেন
……….

কবি ও সাংবাদিক।

জুলাইয়ে তার পরিচিতি দিতে গিয়ে সোজা চলে যাই আমরা তার কবিতায়। কবিতা কথা বলুক।

কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছি

রক্ত আর কান্নাভেজা একটা অন্ধকার প্রান্তরে
আমরা উষ্ণ জুলাইয়ের ভোরের অপেক্ষায় ছিলাম।
আমরা সেদিন কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছি।

দরোজা খুলেছে মৃত্যুকুপের,বিসর্জনের ভারে ;
পরাগায়ন হইতেছে,পুষ্পরেণু বাতাসে উড়িতেছে —
নাকি–সমুদ্রে ধাবমান পাথর–নিঃসৃত রক্তজল!
এই অক্ষাংশে এখনো-রক্তের নহর পাড় হইতেছে।

সব কিছু লুপ্ত ও অতীত থেকে জেগে ওঠে
সময়ের চিহ্ন কিছু রইলো ভাষায় মৃত্যুহীন।
জুলাই এখনো শেষ হয়নি,খবিশের বিকৃত-উন্মাদ
জিহ্বা ঝুলে আছে,আরো মৃত্যুর পিপাসা নিয়ে।

পৃথিবীতে এই এক ঋতু এসেছিল,ঘুম নেই-আজো,
শহিদেরা জোতিষ্ক হয়ে জেগে আছে আকাশে আকাশে।
এটাই কাজ,এটাই যুদ্ধ।

………
সোহেল হাসান গালিব
……….

কবি।

পেশায় তিনি সরকারি কর্মকর্তা।
কবিতা লিখে সরব ছিলেন জুলাই বিপ্লবে। কবিতা ছাড়াও তীর্যক কথার পোস্টে আলোচনা সমালোচনা করে উৎসাহ দিয়েছেন ছাত্র জনতাকে। বিরোধিতা করেছেন হাসিনার ফ্যাসিবাদী আচরণের। “

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি রাইফেল/ এর সামনে যে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়/ সেই হল রাজাকার/ যে বুলেট এসে তাকে বিদ্ধ করে / তার নাম উন্নয়ন,/”।

……….
মনসুর আজিজ
……….

কবি, শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক।

গণআন্দোলনে তিনি কবি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবিতা নিয়ে। সম্পাদনা করেছেন বিপ্লবী কবিদের কবিতা সংকলন। তার সম্পাদিত ‘আড্ডাপত্রে’ কবিদের কবিতা ধারাবাহিক প্রকাশ করছেন। লিখছেন অনেক কবিতা। তিনি বিপ্লবীদের উৎসাহ কিংবা দিকনির্দেশনায় বলেন,’ বিক্ষুব্ধ অন্তরগুলো আজ তোমরা মিছিল করো/ মিছিল করো/ মিছিল করো/(বিক্ষুব্ধ অন্তরগুলো মিছিল করবে)”।

মহিবুর রহিম
মীর ইসরাত জাহান,
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন,

জাহিদ জাবের, ওয়াজেদ বাঙালী,
মীম মিজান,আব্দুল্লাহ আল মহসীন,ফজলুল হক মিলন,আব্দুল্লাহ শাহজাহান প্রমুখ কবিগণও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন ছাত্র জনতার সাথে, আন্দোলনের স্রোতে ।

ইয়াসিন মাহমুদ,
হেলাল উদ্দিন,
ওয়াহিদ জামান,
ওয়াহিদ আল হাসান,
শাহীন পরদেশী এরা ছিলেন কাব্যের মাঠে ও মিছিলের ময়দানে সমানতালে।

……….
শান্তা মারিয়া
……….

কবি ও সাংবাদিক।

আবু সাইদ ডেকে বলে ‘ জাগো বাহে’/ আর রংপুরের মাটি রঞ্জিত হয় তার রক্ত।( নতুন ইকারুস আবু সাইদ)’। শান্তা মারিয়া কবি ও সাংবাদিক। আন্দোলনে একজন কবি হিসেবে তিনি ছিলেন তুমুল সক্রিয়। স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিদিন প্রতিবাদ জারি রেখেছিলেন।

…………
জগলুল হায়দার
…………

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিপুল কাব্য শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ছড়া-কবিতা লিখেন বিরামহীন প্রায় প্রতিদিন। তিনি প্রবাসে বসবাস করেও সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন বিশেষ সক্রিয়।

………..
কাজী জহিরুল ইসলাম
……….

কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক।

তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি কবি। জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। জুলাইয়ের বিপ্লবে সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি ছিলেন তুমুল সক্রিয়। প্রতি মূহুর্তে দিতেন ছাত্র- জনতার পক্ষে সময়োপযোগী পোস্ট। সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। লিখেছেন ছাত্র – জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করে জ্বালাময়ী কবিতা। কাজী জহিরুল ইসলাম প্রবাসে থেকেও ছিলেন আন্দোলনের একজন সাহসী যোদ্ধা।

তিনি লেখেন,’ধীরে ধীরে শুয়ে পড়লো নতুন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ,/ আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদ/( শহীদ আবু সাঈদ)’।

………..
শাহীন রেজা
………..

কবি।

প্রতিবাদী কবিতা,ছাত্র জনতার উপর আওয়ামী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে প্রতিবাদী পোস্ট, ছাত্র জনতার ন্যায্য দাবীর প্রতি একাত্মতায় শাহীন রেজা ছিলেন অকুতোভয়। নিরীহ ছাত্র জনতার উপর আওয়ামী গুণ্ডাদের নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন তিনি। এক দফা দাবীতেও ছিলেন একাত্ম।

…………
জাকির আবু জাফর
…………

কবি,সম্পাদক।

নিজের কবিতা,গান,আলোচনা, বক্তব্যে অনন্য অবস্থান তৈরী করেছেন তিনি। লাল জুলাইয়ে তার ছিল বর্ণাঢ্য কর্মকাণ্ড।
৩ আগস্ট কবি লেখক ও পেশাজীবীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রেসক্লাবে। সেখান থেকে জাতীয় শহীদ মিনার। কোটি জনতার মিছিলে মিশে গেল কবিদের একটি মিছিল।সে মিছিলে ছিল শতাধিক কবি।অন্য একটি লেখায় তাদের নাম উল্লেখ করেছি। কবি লেখেন,

‘জাগ্রত করো নব সূর্যের রেষ/ তুমি জাগলেই জাগবে বাংলাদেশ”।

………….
কামরুজ্জামান কামু
………….

কবি।

জুলাইয়ের আগেই তার ফ্যাসিবাদ বিরোধী কবিতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। উত্তপ্ত জুলাইয়ে কবি কামরুজ্জামান কামুও ক্ষুব্ধ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদগুলো স্ট্যাটাস বা কবিতা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

…………
সাজ্জাদ বিপ্লব
………….

কবি ও সম্পাদক।

আজীবন বিপ্লবী। জুলাইয়ের ঘটনা যেন তার জীবনেরই ধারাবাহিক অংশ। অবিচ্ছেদ্য অংশ। জুলাইয়ে তিনি লিখেছেন কবিতা। করেছেন সম্পাদনা। বিপ্লবী কবিদের কবিতা নানা শিরোনামে, বিভিন্ন পর্বে প্রচার করেছেন। ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রমোট করেছেন। চরম উত্তপ্ত সময়ে প্রকাশ করেছেন অগ্নিগর্ভ কবিতা। এগুলো দলিল হয়ে থাকবে।

বিপ্লবের রঙ লাল।
পৃথিবী জুড়ে যত বিপ্লব, যত বিদ্রোহ, যত আন্দোলন/ সবকিছু লেখা থাকে লাল রঙে।
বিপ্লবীর রঙে। তোমার রঙে। আমার রঙে। আমাদের রঙে।
আমরা যুগ যুগ বেঁচে থাকি বিপ্লবীর ধমনিতে। ধ্বনিতে।( বিপ্লবের রঙ)’।

কবি মাঈন উদ্দিন জাহেদ,
আবুল খায়ের নাইমুদ্দীন,
এরশাদ জাহান,
আশরাফ চঞ্চল,শেখ বিপ্লব হোসেন, বিপ্লবী কবিদের কাতারেই ছিলেন তারা, তারা সম্মুখসারির যোদ্ধা। যুদ্ধ করেছেন অবিরাম।

………
আফসার নিজাম
………

কবি ও সংগঠক।

কবিতা লিখেছেন। কবিতা যুদ্ধের বাইরে তিনি একজন সংগঠক। কবি, সাহিত্যিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংগঠিত করে আন্দোলনকে বেগবান করতে ছিলেন সক্রিয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিভিন্ন ব্যানারে হাজির থেকেছেন আন্দোলনের দিনগুলোতে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছিলেন সোচ্চার। কবিতা ও কথায় তিনি প্রকাশ করতেন নিজের একাত্মতা। জুলাই বিপ্লব শুরুর আগে থেকেই হাসিনা সরকারের খুন, গুম,জুলুমের বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসী সৈনিক হিসেবে। জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে তার ব্যতিক্রমী কবিতা ‘ খন্দোকার আয়েশা খাতুন মা আমার’।

………
রি হোসাইন
………

কবি।

জুলাইয়ে ছিলেন রাজপথের কবি,মিছিল ও স্লোগানের কবি। রাজপথে থেকে মিছিলের কবিতায় তিনি নিজের আওয়াজকে ছড়িয়ে দিতেন জালিম শাহীর বিরুদ্ধে। কবিতা,পোস্ট, মিছিল, স্লোগান, সভা, সমাবেশ সহ নানা রকম কর্মতৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন আন্দোলনের পুরো সময়।

জাহিদ মাহবুর,
মোল্লা আলী আছগার,
আহমাদ স্বাধীন,
মোস্তফা হায়দার,
জয়নব জোনাকি,
সুমন রায়হান,
গোলাপ আ‌মিন,
নূর মোহাম্মদ,
আন্দোলনের দিনগুলোতে এসব নামের সাহস ছড়িয়ে পড়তো তাদের ওয়ালে সাহসী স্ট্যাটাসে। দ্যুতি ছড়াতো তাদের কবিতার পঙক্তি।

……….
জানে আলম
……….

কবি,ছড়াকার,শিক্ষক।

আন্দোলনকে ধারণ করেছেন কবিতায়। জুলাইয়ের উত্তপ্ত দিনগুলোতে তিনি প্রতিবাদী কবিতা লিখে পোস্ট করতেন। উদ্দীপনামূলক কথা বলতেন।

……….
সোয়েব মাহমুদ
……….

কবি।

২৪ এর আন্দোলনে কবি সোয়েব মাহমুদ ছিলেন আলোচিত নাম। তার সরব উপস্থিতি আন্দোলনরত কবিদের তুমুল সাহস জুগিয়েছে। তার ফেসবুক ওয়াল ছিল আন্দোলনরত কবিদের পক্ষে,ছাত্র জনতার পক্ষে সাহসী পোস্টে ভরপুর। রাজপথেও ছিলেন তিনি সোচ্চার। স্বৈরহাসিনা ও আওয়ামীলীগবাহিনীকে তিনি আক্রমণ করেছেন নানা পোস্টে। তিনি প্রতিবাদী কবি। আন্দোলনের সময় ব্যয় করেছেন মিছিলে, স্লোগানে। কবিতা হয়ত লেখা হয়ে ওঠেনি তখন। কিন্তু কবি ছিলেন আন্দোলনের সক্রিয় সৈনিক হয়ে মাঠে ময়দানে।

………..
আমিন আল আসাদ
……….

কবি,ছড়াকার।

তিনি সবসময় ফ্যাসিবাদ ও জালেমের বিপক্ষে। তার ছড়া কবিতা উদ্দীপনাপূর্ণ ছোট-ছোট ছড়ায় নিজের দ্রোহ প্রকাশ করেন নিজের টাইমলাইনে। তিনি ছাত্র জনতার পক্ষে কথা বলেন উচ্চকিত কণ্ঠে।

………..
রহমান মাজিদ
……….

কবি,গল্পকার।

৫ আগস্টে গণভবন ঘেরাওয়ের মিছিলে ছিলেন কবি। মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে যে জনজোয়ার গণভবনে প্রবেশ করে তিনি ছিলেন সে মিছিলের একজন। তার আগে ৩ তারিখে ‘ বিক্ষুব্ধ কবি লেখক সমাজে ‘ র ব্যানারে প্রেসক্লাবের সমাবেশ শেষে কবি আবদুল হাই শিকদার ও কবি ফরহাদ মজহারের নেতৃত্বে শতাধিক কবি লেখক মিছিলসহ যোগ দেন শহীদ মিনারে।
সে মিছিলের আয়োজক ছিলেন কবি জাকির আবু জাফর,আফসার নিজাম প্রমুখ। সেদিন উপস্থিত ছিলেন আরও কবি ফরিদ সাইদ, তাজ ইসলাম, তাসনীম মাহমুদ, সীমান্ত আকরামসহ অনেকেই।

তার একটি কবিতা–

আগুন লেগেছে নদীতে

প্রথমে গর্ভবতী হল আমাদের শহরটা
ধীরে ধীরে গ্রাম গর্ভবতী হল– পাড়া মহল্লা
এইভাবে গর্ভবতী হয়ে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ।

তোমরা হয়তো ভাবছো কে সেই সামর্থ পুরুষ!
নাহ! তিনি কোন পুরুষ নন– একজন বন্ধ্যা বৃদ্ধা
পোয়াতি করে দিয়েছে পুরো বাংলাদেশ।

পনেরো বছর ধরে পেটে পেটে ভরে দিয়েছেন তিনি
আতঙ্কের বিদঘুটে ভ্রূণ, বুনেছেন মাফিয়ার বীজ
ঠোঁটে ঠোঁটে শাটডাউন, মস্তিষ্কে ওয়ান ফোরটি ফোর।

তিল, তিসী কিংবা শস্যের বীজ নয়
বেতের বনে পুঁতে দেয়া গুমের বীজ
দ্যাখো ছুঁয়ে গেছে লড়েলের মাথা।

নদীতে আগুন জ্বেলে ফুঁসে উঠেছে নিন্মবর্গ- মধ্যবর্গ
আজ বৈষম্যের বীর্য থেকে জন্ম নেয়া ক্রোধ ও ক্ষোভে
মনে হচ্ছে ১৮ কোটি গর্ভ খসে পড়বে রাজপথে।

………
সাইয়েদ জামিল
……..

কবি।

তারুণ্য, দ্রোহ, স্পষ্টবাদীতার উজ্জ্বল প্রতিনিধি সাইয়েদ জামিল। সাইয়েদ জামিল তীব্র ভাষায় কথার লড়াইরত আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ব্যাপী। জুলাই আন্দোলনে সাইয়েদ জামিল কবিতায় নিক্ষেপ করেন বারুদমিশ্রিত তীব্র প্রতিবাদী পঙক্তি। আওয়ামী হিস্রতা, ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন উপেক্ষা করে মাঠে ময়দানে লড়াই চালিয়ে গেছেন কবি ও নেতা হিসেবে। মিছিল মিটিংয়ে ছিলেন এক বুক সাহস নিয়ে। বিজয় না হলে তাদের জীবন ছিল নিশ্চিত অনিরাপদ। আন্দোলনে সাইয়েদ জামিলের সংগঠকের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। আন্দোলনের উত্তপ্ত সময়ে পোস্ট করেন সরাসরি শব্দ বোমা। তিনি লেখেন, “দিনলিপি:১৭.০৭.২০২৪” চব্বিশকে ধারণ করা অন্যতম কবিতা।

………..
মোহাম্মদ ইসমাঈল
………..

কবি,গল্পকার, প্রাবন্ধিক।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি সাহসিকতার সাথে তার ফেসবুক ওয়ালে দিয়েছেন ছাত্র জনতার পক্ষে বিরামহীন পোস্ট। লিখেছেন কবিতা। ছিলেন রাজপথে। ফ্যাসিবাদ বিষয়ক অনেক কবিতা তিনি লিখেছেন। ছিলেন রাজপথে।

………
জুননু রাইন
………

কবি,সাংবাদিক।

ছাত্র জনতার আন্দোলনে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকম এক্টিভিটির মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন।

………
ফরিদ সাইদ
………

মূলত ছড়াকার। ছড়াই তার প্রতিবাদের হাতিয়ার। ছড়ায় তিনি প্রতিবাদ করে গেছেন অবিরাম। আন্দোলনের মাঠেও তার অবস্থান ছিল।

…………
মাহফুজা অনন্যা
…………

কবি, কথাসাহিত্যিক।

ছাত্র জনতার আন্দোলনে মাহফুজা অনন্যার মাতৃমন ও কবি মন একাকার হয়ে গিয়েছিল। সরকারের বর্বরতায় কবি ক্ষুব্ধ -বিক্ষুব্ধ মন নিয়ে কথা বলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমগ্র ভয়কে উপেক্ষা করে ছাত্র জনতার মিছিলে ছিলেন কবি। লিখেছেন দ্রোহী কবিতা। অনন্যা জুলাইয়ের বিপ্লবের মাঠে, ময়দানে, লড়াইয়ে, সংগ্রামে, পোস্টে, স্লোগানে, কবিতায় অনন্য অবস্থানে ছিলেন।

………….
সাইফ সিরাজ
…………

কবি,চিন্তক।

তার আরও অনেক উজ্জ্বল পরিচয় আছে। চিন্তক,আলেম,গল্পকার। ফ্যাসিবাদ বিরোধী অবস্থানে তিনি অগ্রগণ্যদের একজন। জুলুমের প্রতিবাদে মাঠে ময়দানে তিনি আওয়ামী শাসনের পুরো সময়ে। চব্বিশে তার কবিতা গর্জে ওঠে জালেমের বিরুদ্ধে। জুলাই বিপ্লবে কবিতা বুলেটে বিদ্ধ করেন ফ্যাসিস্টের দোসরদের। নেমে আসেন রাজপথে। বুক চিতিয়ে স্লোগান তুলেন দুঃসাশনের বিরুদ্ধে। কবিতা তো আছেই। পোস্টেও দেন দিকনির্দেশনা।

………
দীপ্র হাসান
………

এটি তার লেখক নাম। প্রকৃত নাম অজ্ঞাত। এই নামেই লিখছেন। তুমুল সাহসী শব্দযোদ্ধা। তার কবিতা,কথা,স্ট্যাটাস সবসময় সাহস ও প্রেরণামূলক ছিল। তিনি দীর্ঘ কাল যাবৎ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে।

…………
রফিক লিটন
…………

তরুণ কবি,সাংবাদিক ও তরুণ সাংবাদিক নেতা। প্রেসক্লাবে আছে তার স্বতন্ত্র পরিচয়। তার লেখালেখি,এক্টিভিজম ফ্যাসিস্ট বিরোধী কার্যক্রমে সোচ্চার ছিলেন আওয়ামী রেজিমকালে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে তিনি রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিটিং মিছিলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিল তার সক্রিয় কার্যক্রম। কবিতায় ছিলেন কালের স্বাক্ষী হয়ে। ‘স্বাধীনতার উজ্জ্বল ঊরুতে লিখে দিয়েছিলাম/বঞ্চিত মানুষের কৈফিয়ত/ আর স্পষ্ট হয়ে উঠে দেয়াল লিখন/ আর গ্রাফিতির শোভন আলেখ্য/ আমাদের চোখ আর মুখ।’

………..
বাপ্পা আজিজুল
………..

চিকিৎসক ও কবি।

কবি কবিতা হাতিয়ার নিয়ে মোকাবেলা করেছেন জুলাই শত্রুদের। শব্দের তীরে আক্রমণ ঘৃণ্যতম ফ্যাসিস্টদের।
কবি কবিতায় তুলে ধরেন সময় ও নৃশংসতা। তার কবিতা,

এ শহরে আর সন্ধ্যা হয় না। সুনসান বিকেলকে খেদিয়ে জেঁকে বসেছে কারফিউ রাত।ঘরে ঘরে সন্তর্পণে হানা দেয় ড্রাকুলা।শোকের মাতমে সূর্যোদয় হয় এখানে। দৈনিকে বের হয় নপুংসকদের আষাঢ়ের গপ্পো।

………..
ইমরান মাহফুজ
………..

কবি,সাংবাদিক।

কবিতায়, বক্তব্যে, মিটিং,মিছিলে সবসময় সরব। ইমরান মাহফুজ কবি,গবেষক, সাংবাদিক। চব্বিশে তিনি একজন কাব্যযোদ্ধা। তিনি জনগণের পক্ষে সরকারে কাজের নিন্দায় কবিতায় প্রশ্ন রেখে লেখেন,

‘চৌদ্দ কোটির ঠাঁই কি হবে তাতে?বাংলাদেশটা আজকে কার/ভীত সরকার গণগ্রেফতারে মাতে।’

……….
কামরুল আলম
……….

জুলাইয়ে ১৭ তারিখ পোস্ট করেন
‘লাশের মিছিল’

পুলিশ তোমার বুকের মাঝে
মানবতার লেশ নেই
লাশ হয়েছি, জেনে রেখো
এই মিছিলের শেষ নেই।

………….
মুন্সি বোরহান মাহমুদ
…………

কবি, গীতিকার।

ফ্যাসিবাদের কারাগার তাকে আটকে রাখতে পারেনি। কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। জুলাইয়ে ছিলেন সরকারের রক্তচক্ষুর আওতায়। এসব উপেক্ষা করে ছিলেন রাজপথে। কবিতা তো ছিলই। নিজে মিছিলে যেতেন। নিয়ে যেতেন সাথীদের। সব পরিচয়ের আগে তিনি কবি।আন্দোলনে কবির কবিতা আমাদের ধর্তব্য। তার ভাষায়,” আমরা তো আর ডরাই না/ বুলেট গ্রেনেড দমন – পীড়ন/ হত্যা গুম ও লাশ/ বাদ রাখোনি ছাত্র,শিশু/ রক্ত ঝরা ত্রাস/…..(ডরাই না)।

কবিরা ফেসবুকে ছিলেন। রাজপথে ছিলেন। তখন প্রতিদিন কে কোথায় কি করছে? কেমন আছে এসব খবর রাখতাম। রাখা হত সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে।
তারা ছাত্র জনতার পক্ষে কথা বলতেন।কেউ মিছিলে যেতেন। কেউ ছড়াকার,কেউ কবি। এমন বহু নাম স্মরণে আসে।

আহমদ আমিন,
আজিজ বিন নুর,
শাহীন শাহেদ,
ইসমাইল মুফিজী, মাহমুদুল হাসান নিজামী,
জুলফিকার শাহাদাৎ,জিসান মেহবুব,কিঙ্কর আহসান,আলাউদ্দিন আদর,
নূরুজ্জামান শাহ্, বিলাল হোসাইন নুরী,এবিএম সোহেল রশিদ,
নূরুজ্জামান ফিরোজ,
দালান জাহান,
নাঈমুল ইসলাম গুলজার,
আতিফ আবু বকর,
আজিজ হাকিম,
আতিক হেলাল,
শামীম শাহাবুদ্দীন,
রাকিবুল এহছান মিনার,
জুবায়ের বিন ইয়াছিন,
আরমান জিহাদ,
আকরাম সাবিত,
কিরমানী লিটন,
কুতুব রাহমান,
আবদুল হাই ইদ্রিছী প্রমুখ।

জান্নাতুল বাকি,রেজা কারিম,ফকির ওলি মুনশি,সুমন আমিন,আমিন আফসারী তারাও সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনের পুরো সময় ।

………..
শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
……….

কবি, সাংবাদিক।

লেখেন অনেক ছড়া কবিতা।
২ আগস্টে একটি কবিতা পোস্ট করেন তা এই,

একটা কুকুর পাগল
সামলে রাখো আগল
সামলে রাখো দেশের জমিন
কুকুরটাকে তাড়াও।

কুকুর, সে তো দাঁতাল
গদির নেশায় মাতাল
প্রয়োজনে ‘সাঈদ’ হয়ে
বুকের ছাতি বাড়াও।

আন্দোলনের পক্ষে বহু পরিচিতজন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের কথা কবিতা, ছড়া,স্ট্যাটাসে ছড়িয়ে দিতেন। কত নাম এ মূহুর্তে হয়তো বিস্মৃত। দিন যত যাবে তত আড়ালে চলে যাবে অনেক নাম। এখনও যাদের স্মরণ করতে পারছি তাদের অনেকের মাঝে তারা হলেন,

পথিক ইদ্রিস,
জালাল জাবির,
ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী,
রিতা ফারিয়া রিচি,
স্বরেআ কাদির,
শফিকুর রহমান সবুজ,
মুস্তাফা ইসলাহী,
আব্দুস সামাদ আজিজ,
রেদওয়ানুল হক,
আরিফ বখতিয়ার,
নোমান শায়েরী প্রমুখ।

………
শামশাম তাজিল
……….

কবি।

টগবগে তারণ্য তার বয়সের পিঁড়িতে। সাহস ও বিশ্বাসের উষ্ণতায় লিখেছেন বিপ্লবের কবিতা। কবিতার খাতায় কেবল মুখ গুঁজে পড়ে থাকেননি তাজিল। রাজপথে তার সাথীদের নিয়ে ফ্যাসিস্টের বুলেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ভয় পাননি। তারা ছিলেন মুক্তিকামী জনতার প্রেরণা।
কবি লেখেন,’ তোমার দিকে ছুড়ে দেব মাথা)।সে কবিতায় কবি বলেন,” বন্দুকের নলকে গুঁড়িয়ে দেব,ঘুরিয়েও দেব।”

………..
জহির সাদাত
………..

কবি।

তিনি প্রবাসী। প্রবাসে থেকে আন্দোলনকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। লিখেছেন কবিতা। আন্দোলনের আপডেটে ছিলেন সক্রিয়। সংবাদ ছড়িয়ে দিতেন নিজের ওয়ালে।

………..
মোস্তফা মাহাথীর
………..

কবি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সত্যের পক্ষে লড়াকু কবি তিনি। আওয়ামী জুলুমের বিরুদ্ধে তার ছিল সবসময় প্রতিবাদী অবস্থান। জুলাই বিপ্লবে সরাসরি ছিলেন রাজপথে। কবিতা লিখেছেন,গদ্য লিখেছেন। রাজপথে থেকে ছাত্র জনতার পক্ষে কথা বলেছেন।মিছিল করেছেন,স্লোগান তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের ও আওয়ামী জালেম বাহিনীর প্রতিটি কাজের করেছেন তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ। বিপ্লবকে ধারণ করে লিখেছেন অনেক কবিতা।

………
জব্বার আল নাঈম
……….

কবি।

জুলাইয়ের আগেই বসে গেলেন আগুনের মজলিশে। ভয়কে জয় করা তারা শিখেছিলেন হাসিনার দীর্ঘ নিপীড়িত জনতার আর্তনাদ শুনে শুনে। জুলাইয়ে তারা সৈনিক ও সেনাপতি দুই ফর্মেই চালিয়েছেন যুদ্ধ। তিনি তার বন্ধুদের ডেকে বলেন,” হে আমার রাজপথের বন্ধু,/ তুমি কখনোই ঘুমাতে পারোনি,পারবেও না…..”।
অর্থাৎ বিজয় কিংবা শাহাদাৎ।

………..
শাদমান শাহীদ
……….

গল্পকার,কবি।

নিজে কবিতা লিখেছেন। জুলাই দিনের কবিদের লিখিত কবিতা নিয়ে প্রকাশ করলেন ইতিহাসের দলিল।
কবির কবিতাংশ ” গোলামীর জিঞ্জির ছেঁড়ার জন্যে এই জনরোষ।”

…………
হাসনাইন ইকবাল
………..

কবি,সংগঠক।

সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি সোচ্চার একজন কবি। লেখালেখিতেও প্রতিবাদী। আন্দোলনে রাজপথের জানবাজ কবি। নেতৃত্ব দিয়েছেন মিছিলের।তার সোশ্যাল এক্টিভিটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী। কবিতায় প্রকাশ করেছেন তার দ্রোহকে। জীবনের তোয়াক্কা না করে খুনি হাসিনার অপকর্মের বিরুদ্ধে লিখেছেন সাহসী কবিতা।

তার একটি কবিতা–

অভিশাপ দিচ্ছি

যে পুলিশ আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে,
অভিশাপ দিচ্ছি—আবু সাঈদের মতো কোন সাহসী সন্তান যেন না আসে ঔরসে তার,
ভীরু কাপুরুষ ও নপুংসকে ফুলে ফেঁপে উঠুক উত্তর প্রজন্ম!
আজন্ম থাকুক নিকৃষ্ট কোন ডাকাতের লাঠিয়াল হয়ে,
জীবিত ও মৃত শরীরে তাদের মানুষেরা ছিটাক ঘৃণার থুতু!

যে সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও আনসার—
আইনের উর্দি পরে হত্যা করেছে কোমলমতি ছাত্রদের,
মুহুর্মুহু কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে ভীতি ছড়িয়েছে জনপদে,
হেলিকপ্টার থেকে যারা ঘুরে ঘুরে ফেলেছে বোমা নিরীহ মানুষের প’রে
অভিশাপ দিচ্ছি—তাদের স্ত্রীরা বন্ধ্যা হয়ে যাক,
সন্তান না আসুক জঠরে তাদের,
সন্তানের জন্য আমৃত্যু তাদের হাহাকার দেখুক—
নিপীড়িত বাংলার সন্তানহারা প্রতিটি মা-বাবা, ভাই-বোন ও সহপাঠিরা।

রাজনৈতিক দলের যে লাঠিয়াল বাহিনী—
কোন রকম ব্যাক্তিগত শত্রুতা ছাড়াই
নেতাদের নির্দেশে ভাইসম সহপাঠীদের
পিটিয়ে হত্যা করেছে সাপের মতো,
আপন বোনের মতো সহপাঠিনীকে করেছে হেনস্থা,
অভিশাপ দিচ্ছি— কলেরা, করোনা বা যে কোন মহামারীতে তাদের ঘর বিরাণ হয়ে যাক,
ভাই বা বোনের আদর যেন না জোটে কপালে তাদের,
মুগ্ধ, সৈকত বা তানভীনের মায়েদের মতো আমৃত্যু বিলাপ করে মরুক তাদের পিতা-মাতা৷

যে নেতা নির্দেশ দিয়ে খুন করিয়েছে বাংলার দামাল সন্তানদের,
অভিশাপ দিচ্ছি—শিগগিরই যেন গণপিটুনিতে মরে সে,
অথবা উন্মাদ পাগল হয়ে যাক সে—
শাহবাগের সিগনালে যেন দেখি বিবস্ত্র পাগল বেশে!

যে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, কবি ও শিল্পী—
চোখের সামনে জুলুম, হত্যা এবং রোমহষর্ক ধর্ষণ দেখেও
উটপাখির মতো মাথাগুঁজে পড়ে থাকে উন্নয়নের ঢিবিতে,
অভিশাপ দিচ্ছি ইডিপাসের মতো— আপন মায়ের শয্যাসঙ্গী হয় যেন তারা,
সহোদরের জন্মদাতা বাপ হোক যুগ যুগ ধরে
এবং
অন্তরঙ্গ পাপ প্রকাশিত হবার ভয়ে
কলমের নিবে খুচিয়ে নষ্ট করুক নিজেদের চোখ!

অভিশাপ দিচ্ছি—
এ মাটি যেন না নেয় খুনিদের,
আগুন এসে গ্রাস করুক অথবা
ফেরাউনের মতো সলীলে সমাধি হউক তাদের—
অভিশাপ দিচ্ছি!

……….
রাসেল রায়হান
……….

কবি।

জুলাই আন্দোলন বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে কবিতা নিয়ে বা কবিতা দিয়ে যারা নিজেদের প্রতিবাদ জারি রেখেছেন এমন অপরিহার্য কিছু নাম স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। কবি হিসেবে আন্দোলনে ছিলেন,ফ্যাসিস্ট তাড়ানো যাদের ধ্যানজ্ঞান হয়েছিল রাসেল রায়হান তাদের একজন।

[রাসেল রায়হানের ( একটি মৃত দেয়ালঘড়ি) প্রথম আলোতে প্রকাশ হয় ২ আগস্ট।]

সে দলে আছেন–

………
সাম্য শাহ
………

কবি।

সাম্য শাহ দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রামে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।হাসিনা সরকারের যৌবনে খেয়েছেন পুলিশের দাবড়ানি।রক্ত ঝড়িয়েছেন।স্লোগান ও কবিতার হাত ধরাধরি করে এগিয়েছেন সাম্য শাহ।জুলাইয়ে সেসব অভিজ্ঞতার বাস্তবায়ন ক্ষেত্র ছিল সাম্যর।জুলাই আন্দোলনের প্রতি মূহুর্তে সাম্য ও তার বন্ধু চক্র চষে বেড়িয়েছেন মাঠ। কবিতা সব অভিজ্ঞতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সাম্য শাহের কাছে চুমোর নাম বিপ্লব,বিপ্লবের নাম চুমো।

………..
জাকারীয়া প্রীণন
……….
কবি।

আন্দোলনের দিনগুলোতে তুমুল উত্তেজিত ছিলেন। তখন কবিতা লেখার চেয়ে আন্দোলন নিয়ে কথা বলাটাই জরুরি ছিল। নানা বিষয়ে কথা বলতেন। সরকারের জুলুমের প্রতিবাদ করতেন।আগামীকালের কর্মসূচির খবর দিতেন। ছাত্র জনতার উপর সরকারের আক্রমণে জানাতেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

……….
আবিদ আজম
………

ছড়াকার,গল্পকার ও সাংবাদিক।

সংগঠক হিসাবেও তার সুনাম আছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তার কর্মে। কবিগণ বিচ্ছিন্ন বা এককভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছিলেন। ২ আগস্ট তারা সংঘবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। যারা দাঁড়ায়নি,রাস্তায় নামেনি তাদের উদ্দেশ্য করে কবি বলেন,’ ভাইয়ের খুনে দেশ ভেসে যায়,দ্রোহের আগুন মর্ত্যে/ তখন তুমি কোন ছলনায় লুকিয়ে কবি– গর্তে?’

…………
সালেহীন শিপ্রা,
…………

কবি।

উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদী কবি। ডরভয়কে উপেক্ষা করে সালেহীন শিপ্রা কথা বলেন জুলাই ও আগস্টের সেইসব ভীতিবিহ্বল দিনে। লিখেন প্রতিবাদী কবিতা। তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী কবিতা পাঠক ও লেখক হিসেবে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন সচেতন মহলের। তার অন্যতম কবিতা ( রক্তবাগান)। ত্রস্ত সময় ও সময়কে ধারণ করা কবিতা।

…………
নকিব মুকশি
…………

কবি ও সাংবাদিক।

জুলাইয়ে তার পরিচয় হয়ে ওঠে একজন দ্রোহী কবি হিসেবে। তারা কেবল ফেসবুক ফাইটার ছিলেন না।রাজপথের লড়াকু সৈনিক তারা। তারা ক’ জন কবি সেদিন কবি প্রতিনিধি হয়ে রাজপথে গুলির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এভাবেই কবিরা কবিতার লিখতে লিখতেই হয়ে যান বিপ্লবী।
নকিব মুকশি চব্বিশে একজন বিপ্লবী কবি।

………..
রুদ্রাক্ষ রায়হান
………..

রুদ্রাক্ষ রায়হান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে পরিচিত প্রতিবাদী কবিকণ্ঠ। তিনি কবি ও আইনজীবী। তার কবিতার ভাষা প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দিয়েছেন আইনি সেবা।ফেসবুকে ছিলেন সরব। কবিতায় ছিলেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

………..
সীমান্ত আকরাম
……….

রাজপথের লড়াকু কবি। সম্পাদনা করেছেন তুমুল উত্তাপের দিনে রক্তাক্ত জুলাইয়ের কবিতা।

…………
আবু হেনা আবদুল আউয়াল
……….

‘এক চোখে ঘুমাই,আরেক চোখে/ দেই রূহানি পাহারা,…সান্ত্রী-প্রহরীর/ মতো বুকটান করে দাঁড়াই একাকী/ চাইলেই কি কেউ ভুলিয়ে দিতে পারে/ পূর্বপুরুষের বীরগাথা আর স্বরিত স্লোগান।( জেগে আছি)। ‘
কবিরা জেগে থাকেন।

…………
পলিয়ার ওয়াহিদ
…………

কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক।

জুলাইয়ের গণহত্যা তাকে দারুণভাবে আহত করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মর্মাহত হাহাকারে মন ভারাক্রান্ত হয়। তিনি নিরপরাধ ছাত্র – জনতার তাজা রক্তদানে খুবই ব্যথিত হন। নিজের ব্যথিত মনকে সঁপে দেন আন্দোলনে। সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন সর্বাত্মকভাবে। সংবাদ সংগ্রহের নিমিত্তে চষে বেড়ান বিভিন্ন স্পট। আহতদের পাশে ছিলেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জারি রেখেছেন তার কাজ। বিক্ষুব্ধ কবি লেখক সমাজের ব্যানারে তারা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ছিলেন রাজপথে। আন্দোলনের আপডেট দিতেন প্রতি মূহুর্তে। মিছিল,স্লোগান,প্রতিবাদে ছিলেন সোচ্চার। বজ্রকণ্ঠে সরকারকে দিতেন হুশিয়ারি। আন্দোলনে পলিয়ার একাত্ম হয়ে লড়েছেন জুলাইমাস জুড়ে। লিখেছেন অনেক কবিতা। জুলাই আন্দোলনে পলিয়ার ওয়াহিদের নাম উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম।
পলিয়ার ওয়াহিদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাহসীকতা জারি ছিল জুলাইয়ের আগে থেকেই। জুলাইয়ে তার ধারাবিকতারই বিস্ফোরিত প্রতিক্রিয়া। জুলাই আগস্টের কবিতা নিয়ে আসছে তার বই ‘ গুলি ও গাদ্দার’।

……….
রওশন আরা মুক্তা
……….

কবি।

আন্দোলনকে ধারণ করেছিলেন কবিতায়। মানুষ খুন হচ্ছিল,খুনিরা মেকি কান্নায় ক্যামেরা মাতাচ্ছিল মেট্রোরেলের মায়া। সে স্বভাব ও বাস্তবতাকে হাজির করেছিলেন তার কবিতায়। কবিতা তখন তুমুল ভাইরাল।

……….
সানোয়ার রাসেল
………

কবি।

সরকারী চাকুরি করেন। জেল,জুলুম,চাকুরির মায়াকে উপেক্ষা করে তিনি সংগ্রাম করেছেন। সোচ্চার অবস্থান জারি রেখেছেন। কবিতা কম লিখেছেন। কিন্তু কবি হিসেবে ছিলেন দায়িত্বশীল।

………
আহমেদ ইসহাক
……….

তিনি মূলত ছড়াকার। আন্দোলনে জীবনবাজি রাখা তরুণ তুর্কী। বুলেটে সামনে বিলিয়ে দিতে প্রস্তত রাজপথের কবি। লাশের সারির উপর দাঁড়িয়ে তুলেছেন মুষ্টিবদ্ধ হাত। স্লোগানের কবিতা মুখে তুলতে তুলতে হয়তো ভুলে ছিলেন, অথবা সময়ই ছিল না লেখার। তার পরিচয় ছাত্র,সমন্বয়ক।তার পরিচয় কবি।

………..
তাজ ইসলাম
………..

কবি, প্রাবন্ধিক।

জুলাইয়ের আমার কথা,কাজ, এক্টিভিটি ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি ‘ ছাত্র জনতার ৩৬জুলাই : শেখ হাসিনার পলায়নের আগস্ট’ প্রবন্ধে। যা প্রকাশ ও প্রচার করেছে ‘বাংলা রিভিউ’ ওয়েবজিন ও প্রিন্ট সংখ্যায়। একাধিক কবিতা লিখেছি জুলাই আগস্টে। যা তখন ফেসবুকে নিজের ওয়ালে পোস্ট করেছি। অন্যান্য পত্রপত্রিকাতেও প্রকাশ হয়েছে। ২৯ জুলাই আমার দীর্ঘ কবিতা বাংলা বসন্ত প্রকাশ করেছে ‘ বাংলা রিভিউ’। তখন ভয় ও আতংক কাজ করতো। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা যুদ্ধই করেছি। মিছিল, মিটিংয়ে গিয়েছি। ২ আগস্ট আমরা প্রেসক্লাবে দাঁড়িয়েছি কবি সাহিত্যিকদের প্রতিনিধি হয়ে। নেতৃত্বে ছিলেন কবি ফরহাদ মজহার,কবি আবদুল হাই শিকদারসহ শতাধিক কবি। সেদিন ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। আমরা প্রেসক্লাব থেকে গেলাম শহীদ মিনারে। ৫ আগস্টে আমাদের মিছিলই প্রথম প্রবেশ করে গণভবনে। গণভবন থেকে আমরা রওয়ানা দিই শাহবাগের উদ্দেশ্যে।ফার্মগেট গিয়ে আমরা একত্র হই। তার আগে আমাদের মিছিল আগারগাঁও থাকাবস্থায় খবর আসে শেখ হাসিনা পালাচ্ছে। ৫ আগস্ট মনে মনে নিজের মৃত্যুকে বরণ করেই রওয়ানা দিয়েছিলাম গণভবন অভিমুখে। সেসব কথা উল্লেখিত প্রবন্ধ ছাড়াও নানা গদ্যে উল্লেখ করেছি। জুলাইয়ে গ্রেফতার আতংক ছিল সবসময়। সেসব দিনের কথা স্মরণ হলে নিজের কাজে নিজেই বিস্মিত হই। অবাক হই নিজের সাহসের কথা মনে করে। তখন দেশ ছাড়া আর কোন চিন্তা ছিল না। কেবল মনে হত এদেশের মুক্তির জন্য আমার রক্তের প্রয়োজন হলে দিতে প্রস্তত।

জুলাই বিপ্লব
……………

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান কোন শব্দে অভিহিত করা যায়? অভ্যুত্থান না বিপ্লব? এর সমাধানের উদ্দেশ্য এই আলোচনা না। আমাদের আলোচ্য বিষয় কবি ও কবিতা। সংস্কৃতির বিশাল ক্যানভাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে পরিসর বিশাল ও বিস্তৃত হয়ে যাবে।এই আন্দোলনে ভূমিকা ছিল শিল্প সাহিত্যের সকল অংশেরই। গ্রাফিতি আন্দোলনের বেগবান অংশ।ছড়া ভূমিকা রেখেছে কল্পনাতীত। স্লোগান মূলত স্বতঃস্ফূর্ত ছড়ার অংশ।দেওয়াল লিখনে ঠাঁই পেয়েছে ছড়া।এই আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে ফেসবুক স্ট্যাটাস।একটা স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়েছে ওয়ালে ওয়ালে।জন্ম দিয়েছে আরেকটি স্ট্যাটাস।এই স্ট্যাটাসগুলো ছিল হুশিয়ার,সাবধানতা,পরিকল্পনা,সংবাদ,প্রেরণার অংশ।কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনা কেন? কবিতা ইতিহাস,ঘটনা,সময়কে ধারণ করে।কবিরা সময় ও শাসককে শাসন করে।কবিরা রাজপথে সহজে নামেন না।তারা কাব্যে নিয়োজিত থাকেন।যখন নামেন তখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে নামেন।জুলাই বা চব্বিশের বিপ্লবে অবিশ্বাস্য সংখ্যায়, শক্তিতে,একতায় তারা নেমে ছিলেন রাজপথে।কবিতায় প্রকাশ করেছেন মনের কথা।রাজপথে থেকে দিয়েছেন স্লোগান। মত প্রকাশ করেছেন।মিছিলে জুগিয়েছেন শক্তি। কবি ও কবিতার সত্যকে ইতিহাসে অক্ষত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে সময়ের সন্তানদের। ফায়দা বা কল্যাণের সবচেয়ে বড় সত্য ইতিহাসে যেন মিথ্যা মিশ্রিত না হয়,বিকৃত না হয় ইতিহাস। আজ যারা বিপ্লবের পক্ষে ছিল ৫ আগস্টে তারা পরাজিত হলে জীবন অন্য রকম হত। সময়ের এই অধ্যায়েও কবিদের একটা অংশ ছিল অমানুষের দোসর।ফ্যাসিস্টের সহযোগী। আমরা শত্রুকে চিহ্নিত করে তার জীবন দুর্বিষহ করার পক্ষে নই।তবে কোন দোসর যেন ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখা অযৌক্তিক কিছু না।
এই আলোচনা করতে গিয়ে আমরা আমাদের জানাশোনার সীমাবদ্ধতা মেনে নিচ্ছি। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের অগণিত কবি সাহিত্যিক অংশ নিয়েছিলেন মুক্তির মিছিলে। সবার নাম আমরা নিতে পারিনি।সবার কথা আমাদের চোখ কানের সীমায় পৌছেনি।আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি ততটুকুরও সব স্মরণ করতে গিয়ে অনেক বিস্মৃতির ফাঁদে পড়ে গিয়েছি।হয়তো অনেকেই মিসটেকে পড়েছেন। তবে আশার কথা হল এমন খণ্ড খণ্ড স্মৃতি বা শ্রুতি একত্র হলেই শেষ পর্যন্ত হয়ে যাবে অখণ্ড ইতিহাস।

কৈফিয়ত
………..

আমরা নাম উল্লেখ করতে গিয়ে কোন নিয়মকে মান্য করিনি। কে কোন দশকের,কে কি, কার বয়স কত এসব কোন হিসাবই মান্য করিনি। আমাদের কাছে কেবল গণ্য ছিল তারা চব্বিশের বিপ্লবী কবি। বিপ্লবীদের নাম যখন যার নাম মগজে এসেছে যুক্ত করে দিয়েছি। যারা নিয়ম ও সৌন্দর্য পিপাসু তারা এখান থেকে ধারাবাহিকতায় নিয়ে আসবেন।
এইটা বুঝি এমন করে সারাদেশের মুক্তিকামী কবিদের কথা নিজ নিজ পরিসর থেকে গ্রন্থিত হওয়া জরুরি।
কবিরা, সাহিত্যিকেরা শব্দবন্ধে ইতিহাসের নাম নির্ধারণ করতে সহায়ক হন। যেমন কবি হাসান আলীম এই বিজয়কে উল্লেখ করেছেন ‘ দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে। কাজী জহিরুল ইসলাম চিহ্নিত করেছেন ‘ নতুন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ’ বলে। তাজ ইসলাম এই আন্দোলনকে বলেছেন ‘ বাংলা বসন্ত’ ‘ গণজোয়ার বলেছেন ফজলুল হক তুহিন,জনযুদ্ধ কবি সাইদ উজ্জ্বলের ভাষায়।

কবিতার ভাষা ধারণ করে সময় ও ইতিহাসকে। যাত্রাবাড়ি জুলাই গণহত্যার মর্মান্তিক স্পট। সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব যখন লিখেন তার কবিতায় যাত্রাবাড়ি,কাঁচপুরের কথা তখন তা কালের স্বাক্ষী হয়ে যায়। প্রতিরোধ,প্রতিবাদ, সাহস,সংগ্রাম,মুক্তির নতুন শব্দ সংযুক্ত হয়েছে কবিদের কবিতায়। নানাবিধ কারণে কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনা করা সময়ের দাবী। বিপ্লবী সময়ের কবিতা,প্রতিবাদের কবিতা অনেক সময় প্রকৃত কবিতার দাবি বা কবিতার সব শর্ত মেটাতে ব্যর্থ হয়। সোজা কথায় প্রতিক্রিয়া সব সময় সত্যিকারের কবিতা হয়ে ওঠে না। তবু তার গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলো কালের দলিল।
কবির কাছে প্রতিবাদ, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার প্রথম ও উত্তম পন্থা কবিতা। সুতরাং এসময়ের কবিতাগুলো সময়ের দলিল। ইতিহাসের দলিল যারা রচনা করেন তাদের কথা সুগ্রন্থিত রাখার কোন বিকল্প নাই। আমরা মূলত এই আলোচনায় ইতিহাসের সেই সব শব্দযোদ্ধাদের নিজেদের স্মৃতি থেকে হরফের কাছে সমর্পণ করলাম। তাদের কবিতার ব্যবচ্ছেদ অন্য পর্বে করব।

বিপ্লবী কবিদের কর্মতৎপরতা
………….

কবিদের কাজ কবিতা চর্চা করা। নিজের যাবতীয় কথা বলেন একজন কবি তার কবিতায়। চব্বিশের জুলাইয়ে কবিগণ কবিতা চর্চার পাশাপাশি নেমেছেন রাজপথে। ২ আগস্ট ঐক্যবদ্ধভাবে কবি বা সংস্কৃতজনদের একাধিক গ্রুপ,একাধিক স্পটে রাজপথে নেমে যান আন্দোলনের পক্ষে একাত্ম হয়ে। একটি গ্রুপ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলামটরে। আরেকটি গ্রুপ দাঁড়ায় ধানমন্ডি আবাহনি মাঠের কাছে। আবিদ আজম,ইমরান মাহফুজ,নকিব মুকশি, সাদাত হোসাইন,সাইয়েদ জামিল,পলিয়ার ওয়াহিদ,শহিদুল্লা ফরায়েজিসহ অনেকেই ছিলেন।
৩ আগস্ট কবিদের আরেকটি পক্ষ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে দাঁড়ান প্রেসক্লাবে। সেখানে কবি ফরহাদ মজহার, আবদুল হাই শিকদার, জাকির আবু জাফর, আফসার নিজাম,তাজ ইসলাম,রহমান মাজিদ ,ফরিদ সাইদ,তাসনীম মাহমুদ নুরুজ্জামান ফিরোজসহ শতাধিক কবি উপস্থিত হন।
সেখান থেকে তারা মিছিল করে পৌছেন জাতীয় শহীদ মিনারে।

৫ আগস্ট গণভবন ঘেরাওয়ে হাজির হন রাজধানীর অসংখ্য কবি সাহিত্যিক। সারাদেশের অসংখ্য কবি সাহিত্যিকগণই আন্দোলনের পক্ষে জীবন বাজি রাখেন। সামগ্রিক বিবেচনায় এই আলোচনাটি সারাদেশের প্রেক্ষাপটে অপূর্ণাঙ্গ একটি আলোচনা। পূর্ণতার জন্য অবশিষ্ট অংশ যুক্ত করুন আপনি, আপনার পরিচিতজনদের কার্যক্রম লিপিবদ্ধ করে। কে করবে? যে পারবে সে। আমরা আমাদের সীমা ও সীমাবদ্ধতার মাঝে এতটুকু করলাম।

আরও পড়তে পারেন

5 COMMENTS

  1. জুলাই বিপ্লবের টোটাল ছবি ফুটে উঠেছে এই গদ্যে।

  2. যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। একটা অসাধারণ অর্কাইভ হয়ে থাকলো। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। জাতিরও কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।

  3. বেশ কম্প্রিহেন্সিভ লেখা। তবে দুটো ভাগ করা দরকার ছিল। প্রথম ভাগে যারা আন্দোলন চলাকালে এমন কী তারও আগে থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, সরব ছিল, তারাই প্রকৃত যোদ্ধা। আরেক ভাগে যারা ৫ আগস্টের পরে সোচ্চার হয়েছেন, অভ্যুত্থান নিয়ে লিখেছেন তাদের কথা। কে কখন কোন রচনাটি লিখেছেন সেইসবও উল্লেখ করে ভবিষ্যতে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ এই বিষয়ে তাজ ইসলাম লিখতে পারেন। তবে কলমটা হতে হবে সত্যানুসন্ধানী এবং নিরপেক্ষ।

  4. সারা বাংলাদেশ নিয়ে লিখতে হলে লেখকের কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকবেই। তবুও লেখককে ধন্যবাদ। অনেক লেখকের লেখা একত্রিত করলে হয়তো সামগ্রিক একটি চিত্র পাওয়া যাবে। তারপরও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম বাদ পড়ে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া আমরা বিপ্লবী খুঁজে পাই না। তাতেও সমস্যা নাই। এখন কিছুটা কথা বলতে পারতেসি তাতেই আমরা খুশি। ৭১ এর পর যুদ্ধে না গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ অনেকেই নিয়েছেন, আবার যুদ্ধে গিয়েও কেউ কেউ সনদ নেন নাই। তাতে করে যুদ্ধ হওয়াটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই। সবার নাম হয়তো কোন না কোন জায়গায় আছে। কেউ বিচলিত হবেন না। আমাদেরকে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য দর্শন করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

খান কাওসার on দীর্ঘ কবিতা : কসম
মেজু আহমেদ খান on দীর্ঘ কবিতা : কসম