কাজী রহিম শাহরিয়ার
…………
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ
…………
তোমাকে কত্তো বার বলেছি, তোমার স্বপ্নের সীমানা বাড়াও।
লিমিটেড কোম্পানীর মতো টেনে দিও না তার সীমারেখা।
কেননা, স্বপ্ন তো অসীম।
এই বিশ্বাসকে হৃদয়ে প্রোথিত করে তোমার স্বপ্নকে অসীমের পানে ছড়িয়ে দাও।
কাল থেকে কালে তোমার স্বপ্নের ফুলগুলো ঘ্রাণ ছড়াবে, বিশ্বাস ছড়াবে দ্যুতি।
আমি তোমাকে কত্তো বার বলেছি, যেও না কো বনানীর পথে।
এ পথে এখন কেবল নষ্টদের আনাগোনা।
যারা সাময়িক সুখের নেশায় ভুলে যায় আত্মপরিচয়;
ভুলে যায় নীতি ও আবেগের সীমানা।
আর তুমি নিজের সীমানা ভুলে গেয়ে চলেছো এ কোন আনন্দগান?
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ’র নিয়নবাতির আলো-আঁধারিতে কতটা দ্যুতি ছড়াবে তুমি?
এখানে রঙিন পানীয়-জলে বুঁদ হয়ে থাকা স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষগুলোকে
কতটা আলো দেখাবে? রাত গভীর হতে হতে তুর্কি বণিকের মতো
করে চলে ওরা রমনীয় বিকিকিনি!
আমি তোমাকে কত্তো বার বলেছি, নদীর মতো বয়ে চলো।
নদীর স্রোত যেমন বাধাপ্রাপ্ত হলে বাঁক বদল করে, তুমিও নানান বাঁকে
সঞ্চয় করো নানান মূল্যবান মণিকাঞ্চন!
আমি জানি, তুমি এক জ্যোতির্ময় সত্ত্বা। তোমার নিজস্ব রঙ আছে, আছে ঔজ্জ্বল্য।
তুমি তোমার বিশ্বাসের আলোকবর্তিকা হও।
কেননা, মানুষ মরে গেলেও বেঁচে থাকে তার বিশ্বাস।
মনে রেখো,
কাল থেকে কালে তোমার বিশ্বাসের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে সবখানে।
বনানীর পথে নয়, ফিরে এসো বিমূর্ত বিশ্বাসের মহাসড়কে
তুমি ফিরে এসো…।
………….
ফিলিস্তিনি শিশুর আত্মকথা
………….
আমরা আমাদের ভূমি ছেড়ে যাবো না কোথাও
ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে ফেলতেই ওরা
আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিতে চায়
গাজার জনগণ ভয়াবহ গণহত্যার মধ্যেই বাঁচতে শিখেছে
আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার অধিকার নেই
আমাদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য জাগিয়ে তুলতে হবে
এবং আমাদেরকে বলতেই হবে, আমরা এখানে আছি,
থাকবো এবং আমাদেরকে মুছে ফেলার
সব প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করব।
আমরা কালের কাব্যগাঁথা নয়, আমরা এ ভূমি’র আদি ও বর্তমান
এটি ফিলিস্তিনি জাতির এক জীবন্ত বাস্তবতা
যখন আমাদের জিজ্ঞেস করা হয়-
তোমরা চলে যাচ্ছো না কেন?’
আমাদের উত্তর একটাই-কেন আমরা যাবো?
এটি আমাদের পবিত্র ভূমি
প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের রক্ত ও চোখের পানিতে
চাষ করে চলেছি এই ভূমি;
ছেড়ে যাওয়া মানেই সর্বহারা হয়ে যাওয়া;
চলে যাওয়া মানেই আমাদের ইতিহাস,
আমাদের সম্মিলিত অস্তিত্বকে মুছে ফেলার অনুমতি দেওয়া;
অবিরাম গণহত্যার পরও ফিলিস্তিনিরা রয়ে গেছে
কারণ আমাদের যে থাকতেই হবে…!
…………….
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই
…………….
কোনো কিছু দিব্য দৃষ্টিতে না দেখার মানেই কি তার না থাকা?
ব্যথা কিংবা কষ্টকে দেখি না বলে কি তার অস্তিত্ব থাকতে নেই?
নদীর প্রবাহমান ধারা, ফুলের স্ফুটন
উদ্ভিদের উদ্ভব, শস্যের বীজের থেকে অঙ্কুরোদগমন আর
নক্ষত্রের নিয়ত আবর্তনের মাঝে
আমি এক পরম সত্যকে উপলব্দি করি!
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই।
অন্ধ মানুষের হাতি দেখার মতন আমিতো সংশয়বাদী নই।
আমিতো আমার হৃদয়ের সব ক’টি দরোজা জানালা খুলে
বিবেক বোধ আর অনুভূতির সকল শক্তি ও শিরাকে সজাগ ও সচল রেখেছি;
আপাত: অদৃশ্য বিষয়াদি-
বিশেষত: বিশ্বজাহানের যিনি নিপুণ নিয়ন্তা
তাঁর অপার শক্তি ও সামর্থের আমি যেনো সুনিশ্চিত সাক্ষ্য দিতে পারি।
না। না। আমি কোনো অবিশ্বাসী নই!
বরাবরই আমি দিয়ে এসেছি নিগুঢ় সত্যের সুদৃঢ় সাক্ষ্য।
কেননা, সত্যের স্বীকৃতি না দেয়ার অর্থই হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব অস্বীকার করা
সত্যকে না জানার অর্থই হচ্ছে নিজেকে না জানা।
আর নিজেকে না জানার মানেই হচ্ছে
স্রষ্টা ও সৃষ্টির অপার রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা!
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই।
আমার মাঝেই আমি এক পরম সত্যকে খুঁজে পাই!
আমার এ অস্তিত্বের প্রতিটি শিরা-উপশিরা
এক বিজ্ঞানময় প্রকৌশলীর নিপুণ শিল্পের সাক্ষ্য দিয়ে যায়!
উড়ন্ত পাখির কলকাকলি ও বিচিত্র সুরের গুঞ্জরণে
আমি এক প্রেমময়ের অনন্ত সুর ও সিম্ফনি অনূভব করি!
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই।
এই শহরের প্রতিটি মসজিদ সাক্ষী
এই দেশের, এই গাঁয়ের প্রতিটি ইবাদতগাহ আমাকে নিশ্চিতভাবে জানে
আমি কোনো অবিশ্বাসী-জড়বাদী নই!
এই পৃথিবীর প্রতিটি পাহাড় সাগর নদী ও জনপদ সাক্ষী
সাক্ষী এই আকাশ বাতাস, গ্রহ-তারা সবই!
আমিতো নৈরাশ্যবাদী নই।
আশার পাখিকে দোলাতে দোলাতে আমি স্বপ্নের সৈকতে নিয়ে যাই।
এই একই সাক্ষ্যই কি আমি রুহের জগতে দিয়ে আসিনি? এসেছি বটে!
মায়ের পেটের অন্ধকারে আমি কি এহেন সাক্ষ্য ঘোষণা করিনি?
এখন, এ পৃথিবীর আলো-ছায়া
দিন ও রাত্রির আবর্তনে অবিরাম আমি কার মহাশক্তি আর সামর্থের সাক্ষ্য দিয়ে যাবো?
আমার সমস্ত আবর্তনের প্রতিটি ধাপে আমি এক
পরম ও চরম সত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে উপনীত হই!
বিশ্বাস করুন, আমি কোনো অবিশ্বাসী নই।
গ্রহানুপুঞ্জের পরতে পরতে ঘুরে ঘুরে
বিবর্তনবাদ কিংবা সংশয়বাদের বিবরে নিমগ্ন হয়ে
আরাধ্য সত্যকে আমি হারাইনি কখনো!
আরেকটি নিশ্চিত জগত সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত ও সচেতন।
লোকে যেটাকে বলে ‘পূনরুত্থান’। যেখানে আমার সমস্ত কর্মের
প্রতিদান কিংবা প্রতিফল দেয়া হবে!
বিশ্বাসের বাহনে চড়েই আমি সেই সর্বশেষ গন্তব্যে পৌঁছুতে চাই।
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই, ভাই সব!
আমি কোনো অবিশ্বাসী নই!
…………….
রোড টু ফ্রিডম
…………….
তুমি স্বাধীনতার কথা বলছো,
অথচ দাসপাড়ায় বসবাস তোমার!
স্বচ্ছন্দ, স্বচ্ছলতা আর স্বপ্নময়তার নামে লোভের খুদকুঁড়ো দিয়ে তোমায়
দাস করে রেখেছে ওপাড়ার গুরুমশায়!
কতবার বলেছি, এই খুদকুঁড়োয় ক্ষুধা মেটে না, মেলে না মুক্তি।
অথচ আমি তো দিতে চেয়েছি তোমায় মুক্তির স্বাদ, স্থায়ী স্বাধীনতা।
তুমি স্বপ্নপূরণের নামে একের পর এক বদল করে চলেছো ‘দাসপাড়া’।
তবে কি দাসপাড়াই নিয়তি তোমার?
আমি কততো বার বলেছি তোমায়-
এসো, হাত ধরো। চলো, মুক্তির মিছিলে।
যদিও মুক্তির আরেক নাম নিরন্তর সংগ্রাম, কষ্টের কাঁকর বিছানো পথ!
জেনে রেখো,
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি!
ইংলিশ রোডে আজ স্বস্তি নেই, নেই শান্তি, নেই নিরাপত্তা।
চোখ ফেরাও ইতিহাসের বাঁকে-
দেখবে,
কত নিপীড়িত নর ও নারীর নিঃশ্বাস বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এখনো
কান পেতে শোনো, কাঁদছে কালের কলঙ্কিত কত যৌনদাসী!
উড়ছে কি কোনো পাখি পল্টন কিংবা ভিআইপি রোডে?
তোপখানা রোডেও পাখি শিকারের হরেক রকম মহড়া!
পিৎজা কিংবা পাগলকরা ঘ্রাণের নানা উপাদেয় খানাপিনা
ফেরি করে ফিরছে ওঁতপেতে থাকা দানবীর দাদাবাবুরা!
তবে কি খাঁচার জীবনই আরাধ্য তোমার?
কালের হে অরণ্যবিলাসী,
তোমায় তো প্রয়োজন ‘রোড টু ফ্রিডম’
কেননা, এ পথেই রয়েছে মুক্তি, এ পথেই প্রিয় স্বাধীনতা।
………….
সময় সিরিজ-১
………..….
জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা।
তারপর পেরিয়েছি অনেকটা পথ।
গণিত বুঝি না আমি।
বুঝি না জীবনের সমীকরণ…
আঠারো সংখ্যাতত্ত্বের ঘোর কাটাতে পারিনি আজও।
এমনই এক দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিতভাবেই
রিভিউ দিতে হয় জীবনের সমীকরণ।
হৃদয়ের থার্মোমিটার কি কখনো ভুল তথ্য দেয়?
সেতো এক নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করেছে সম্মুখে আমার।
ফলাফল বলছে, আমরা জিরো আওয়ারে অবস্থান করছি এখনও।
সময় বয়ে চলে।
শূন্য থেকে যোগফল আর এগোয় না।
বটবৃক্ষ হতে হলে যেভাবে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হয়
আমি তার কতটা পেরেছি?
হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখি-
জীবনের অঙ্কে বরাবরের মতোই কাঁচা রয়ে গেছি আমি।
আমি কি তবে বৃক্ষটির শেকড়ে পানি দিতে ভুলে গেছি?
সার-ই বা দিয়েছি কতটুকু?
ভাবনার করিডোরে দাঁড়িয়ে আবারও বৃক্ষটির দিকে তাকাই
তবে কি এখন বাঁক বদলের দিন?
নাকি নতুন করে জীবনের হিসেব মেলাবার ক্ষণ?
নাকি চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে জীবনকে অসাধারণ করে তোলার প্রত্যয়ের প্রহর এখন?
কবিতাগুলো সুন্দর ।
পাঠে আনন্দ পেলাম।