spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েএ কে এম আব্দুল্লাহ : নিজস্ব আলোর কবি

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

এ কে এম আব্দুল্লাহ : নিজস্ব আলোর কবি


| মাহমুদ নোমান|

কিছু কবিতা আপনাকে ভাবনার সড়কে হাঁটতে নিয়ে যায় আপনার ভাবিত আলো দিয়ে; ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকুক সেখানে, আলো এসে জাহির করে ভাবনার মসনদ; আপনি নিজেকে সঁপে দিলে জাদু-বাস্তবতার অভিযাত্রায় নিজেকে আবিস্কার করবেন যে, এমন সম্মোহনী স্তরে বিন্যস্ত কবিতার কবি এ কে এম আব্দুল্লাহ; কবির সাথে আমার সশরীরে দেখা হয়নি অথচ সৃষ্টির সাথে আমার আত্মিক সংযোগে উনার ইশারা-আশকারা এমনকি নতুন করে ভাবনার কল্পনাকে আন্তরিক মনে হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত এ কে এম আব্দুল্লাহ-এর কবিতা পড়ার সুযোগ হলেও আমি মনে করি একজন কবিকে বুঝতে হলে পুরো একটা কবিতার বই পাঠ জরুরি, আবার এমনও হয় একজন কবি জীবদ্দশায় একেকটা বইয়ে একেকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন ; সম্প্রতি ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত এ কে এম আব্দুল্লাহ-এর ‘সার্কাস গ্যালারি থেকে মি. আবদুল্লাহর বয়ান’ পড়ে এতটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছি কবি নিজস্ব ভাবিত আন্দোলনে উদ্দীপ্ত মেধাবী কবি। শব্দচয়নে ইংরেজি শব্দের চাদরে ঢেকে দিতে গিয়েও রক্তে বহমান বাংলা ভাষার প্রতি টান, সেটি আন্তরিক বৈভবে চমৎকার টিউনিং; এ কে এম আব্দুল্লাহর কবিতায় একটা চমৎকার বোধ ও বিশ্বাস আছে, রাষ্ট্রের বিনির্মানে সমাজের ত্রুটিবিচ্যুতি দেখিয়ে দিতে পারেন সহজে এবং দৈনন্দিন বিজ্ঞান প্রযুক্তির চেতনা চৈতন্যে সত্যি হওয়ার আলো এনে দিতে চায়; এটাই বুঝি বাংলা সাহিত্য পাঠে অন্যরকম আনন্দ প্রোথিত করে যে- একেক কবি একেকভাবে নিজেদের উপস্থিত করতে চাচ্ছে, কেননা দিনশেষে একেকজন আলাদা ব্যক্তিসত্তায় নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিতে চায়-

আমাদের দীর্ঘশ্বাস ভেঙে ওড়ে যায় আধুনিক শহর। আর আমরা ডুবে থাকি একফোঁটা শিশিরকণায়। আমাদের হাত পা নড়ে ওঠে এক অদ্ভুত বিকলাঙ্গ প্রজন্মের মতো। আমরা মাপজোখ করতে পারি না সময়ের ব্লাডপ্রেসার। আমরা উচ্চারণ করতে পারি না হৃদয়ের ভাষা। আমাদের মুখ দিয়ে বের হয় কেবল নিরীহ গোঙানি। আর মাথার ওপর দিয়ে ওড়ে যায় ফাইটার জেটের মতো জীবনের ব্যাকুল দৃশ্য। একসময় আমাদের গোঙানি পড়ে যায় বুড়িগঙ্গা কিংবা ব্ল্যাক-সির চরে। আর কভিড-১৯ এর মতো স্তব্ধ করে দেয় আমাদের কণ্ঠ।

  • দীর্ঘশ্বাসের স্লাইড’শো; ৯পৃ.)
    খ.
    আজকাল পদ্মার জল ভেঙে বেরিয়ে আসে যে কালো রং ইলিশ। আমরা তার পেটির পাশে শুইয়ে দিয়ে বিদেশ রঙের কাঁচলংকা- চিনামাটির প্লেটে সাজিয়ে দিই পান্তার তালি। এই দৃশ্য দেখে আমাদের দিদিরা- সংস্কৃতির টিপ লেপটে কপালে- বারিধারার ক্যানভাসে অঙ্কন করে সিজন্যাল আলপনা। আর আপলোড করে দেয় নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।
  • কালো রং ইলিশ ও বিদেশ রং কাঁচলংকা:২০পৃ.)
    গ.
    মৃত্যুর পরে, এবং লাশ হবার ঠিক আগমুহূর্তে আমাদের দৃষ্টির টেবিলে মানুষটি কাটাছেঁড়া হচ্ছে। আর সসিয়েল হেডলাইনসের ফাঁকফোকরে লাশটি,হাইপারসোনিক মিসাইলে পরিণত হয়ে যাচ্ছে –

আমরা এখন তাকে ঘিরে আছি। আর আমাদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যাহ্ন ভেঙে – ফেইসবুক ইনস্ট্রাগ্রামে ফটো আপলোডিং শেষ হলে- টিব্রেকের কাপ থেকে আমাদের মেধার ধ্যান ভেঙে লাশটি এখন একটি বিধ্বস্ত মিসাইল।

  • একটি লাশের বায়োডাটা; ২১পৃ.)

এ কে এম আব্দুল্লাহ রাজনীতি সচেতন কবি তদুপরি মার্জিত শব্দে খুলে দিয়ে চায় ভাবনার দুয়ার। সাধারণত বক্তব্য- সংজ্ঞায়িত কবিতার চম্বুক অংশ উল্লেখ করে পাঠ আলোচনার খাতিরে এ কে এম আব্দুল্লাহর কবিতা’কে একটা টেবিলে এনে উপস্থাপন সহজতর নয়; কেননা এ কে এম আব্দুল্লাহর কবিতার ক্যানভাস বিস্তৃত, বলে দেওয়ার পরেও আরো বলার মেসেজ দিয়ে যায়। এ কে এম আব্দুল্লাহর কবিতায় ভাষার কিংবা নিরীক্ষার নামে টানাহেঁচড়া নেই এমনকি তথাকথিত ছন্দ নিয়েও হাপিত্যেশ নেই, যতটুকু আছে আন্তরিক বলনে সহজতর উপায়ে নিজের বোধ-উৎস উপস্থাপন এবং সেটির মধ্যে রিদ্মিক দোলন চমৎকার-

মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে দেখি-
পদ্মার সব জল উড়ে গেছে আকাশে
আর ইলিশগুলো কাতার ধরে উঠে আসছে আমার উঠোনে
তাদের আঁশ বেয়ে নেমে যাচ্ছে মগ্নময় স্বপ্ন।

এই দৃশ্য দেখে আমি ঠাঙিয়ে দিই শামিয়ানা
আর সমবেত প্রার্থনায় হই মগ্ন-
পবিত্র ঈশ্বরের কাছে।
এরপর প্রার্থনা ভঙিতে মাথাগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যায়।

এখন সেখান থেকে কাতার ধরা মৃত ইলিশের সাথে
ভিউ এক্সচেঞ্জ মিটিং চলছে।

  • ভিউ এক্সচেঞ্জ মিটিং;২৬পৃ.)

এ কে এম আব্দুল্লাহর কবিতা আপনাকে নতুনত্বের ক্যানভাসের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে এবং সে দাঁড় করানোর মধ্যে আপনি খুঁজে পাবেন নির্ভেজাল আকুতিভরা বোধবিজ্ঞান, একইসাথে পরিশীলিত একটা বলনে আন্তরিকতার ছবক দেবে সুনিশ্চিত;

|||

সার্কাস গ্যালারি থেকে মি. আবদুল্লাহর বয়ান
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
প্রচ্ছদ: নাওয়াজ মারজান
মূল্য: ২২০টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on কবিতার স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গের কবিতা