তাজ ইসলাম
‘ইটির মিটির টিটির ছানা
কয়টি পা আর কয়টি ডানা
কোথায় থাকে খায় কী খানা
বলতে পারো থাকলে জানা।’
(ইটির মিটির টিটির ছানা)’।
কী চমৎকার! তুলতুলে শব্দে,শব্দের ভিতরে অনুপ্রাসের দ্যোতনায় ছন্দ টেনে নেয় মাথা দুলাতে দুলাতে পরের পর্বে। পর্ব থেকে পরের ছড়ায়।
ছড়া পাঠ করতে করতে ‘টুপুর নাচে নুপূর পায়ে’ ছড়াকারের ছন্দের তালে তালে।
‘ছোট্ট মেয়ে টুপুর
পায়ে দিয়ে নূপুর
ক্যাসেটে সে গান ছেড়ে
নাচে সকাল দুপুর।’
এখন এই যে, ‘ ক্যাসেটে সে গান ছেড়ে’ এই পঙক্তি মাত্রা গোনায় ঠিক আছে।কিন্ত ‘ক্যাসেটে সে’ চারটা মাত্রা মুক্তদলের পর ‘ গান ছেড়ে’ পড়তে মনে হয় যেন একটু গলতি আছে।এই গলতিটা মাত্রার না বাক গতির।এই কথা বলা ছন্দ, মাত্রা,অন্তমিলে বিজ্ঞজনের জন্য। এরশাদ জাহান এই সময়ের তার বহু সতীর্থের তুলনায় অগ্রসর ছড়াকার। ছড়ার পাঠক তার কাছ থেকে আরও উত্তম সব ছড়াই কামনা করে।
এরশাদ জাহান সমসাময়িক ছড়াকারদের মাঝে উজ্জ্বলতা ছড়ানো মুখ।তিনি কবি ও ছড়াকার। বোদ্ধা গ্রন্থালোচকও।
এবারের মেলায় তার ছড়ার বই ‘ বোকা ফড়িং’ নিয়ে আসছে প্রকাশনা জগতের নাম করা প্রতিষ্ঠান ‘ পাপড়ি’।
এই বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী মোমিন উদ্দীন খালেদ।অলংকরণ কবির আশরাফ।
বইয়ের সবগুলো ছড়াই পাঠকের জন্য সুখপাঠ্য হয়ে হাজির হবে বইয়ের পাতায়।
ফড়িং তো হতে পারতো সুন্দরের প্রতীক,চঞ্চলতা থাকতে পারতো ফড়িং প্রতীকে।বোকা কেন হল? তার জবাব ও পরিণতি উপলব্ধি করতে পাঠ করতে হবে নাম ছড়াটি।
‘ছোট্ট ফড়িং তিড়িং বিড়িং
নাচছিলো সে সবুজ ঘাসে,
তাই না দেখে খুশি মেখে
একটি শালিক মুচকি হাসে।
ফড়িং ভাবে কাছেই যাবে
শালিক বুঝি বাসেই ভালো,
কিন্তু সেকি দুষ্ট শালিক
সেই সুযোগে ঘাড় মটকালো!
(বোকা ফড়িং)।
আমার কিন্ত ‘ সেই সুযোগে ঘাড় মটকালো!’ এই লাইন পড়তে ‘ ঘাড় মটকালো’তে বাধাগ্রস্ত বোধ হয় পাঠ।
এরশাদ জাহান মজবুত অন্তমিল সাবলীল ছন্দে ছড়া নির্মাণে মুন্সিয়ানার ছাপ রাখেন তার ছড়ায়।
‘ঝিঙে লতায় ফিঙে বসে
টিং টিঙে টিং ঢোল বাজায়
বেনে বউ আর শালিক মিলে
হারমোনি ও খোল বাজায়।’
তার এই বইটি ও বইয়ের ছড়া নিবেদন করা শিশু কিশোর পাঠকের উদ্দেশ্যে । বিষয় পরিচিত হলেও উপস্থাপনার মুন্সিয়ানায় অনন্য উচ্চতায় পৌছে তার ছড়া ।
‘রাত হয়েছে ভোর
আম্মু ডাকে উঠরে খোকা
খুল জানালা দোর।’
খুল জানালা দোর।মানে এখন বাইরে যাওয়ার সময়।এখন আলো এসেছে পৃথিবীতে।তাহলে ‘রাত হয়েছে ভোর’ বলে কি বুঝানো হয়েছে রাত শেষ হয়েছে। এবার দোর খোল।তখন ‘ভোর’ অর্থ হাজির করে অন্তত কবিতার পঙক্তির শর্ত মতে ভোর অর্থ শেষ। রাতের প্রেক্ষাপট অন্ধকার।ভোর আলো।রাত হয়েছে ভোর তো তাহলে সাংঘর্ষিক। ভোর বলে খোকাখুকুকে বা জাতিকে জাগ্রত করেছেন ‘ ভোর হল দোর খোল’। খাইয়া ফালছি,খায়া কেউ ফালাই না।এটা বাংলা ভাষার প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক রীতি।কথ্য প্রচলন।কবি হয়তো এভাবেই বলে চলে গেছেন ‘ রাত হয়েছে ভোর’।
অথচ হতে পারতো ‘ ভোর হয়েছে,ভোর।’ জোরদার হত,প্রশ্নহীনও হত।
রাত হয়েছে ভোর মানে কি তবে রাত সকাল হয়েছে? সকালই যদি হবে তবে রাত বলার কি দরকার। জাতি জাগরণেও সম্মুখ পানের কথা বলা উদ্দেশ্য হলে ভোরই কাম্য।রাত এখানে কোন কল্যাণবাহি না।ব্যাকরণিক বিষয়ও না।সমন্বয়ের সূত্র। ‘এবার দোর খোল ‘ আদেশই আলোর ইঙ্গিতবাহি। ‘রাত হয়েছে ভোর’ পাঠক হিসেবে আমাকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলে। ভাষাগত ত্রুটি সনাক্ত করে। আদেশ ইতিবাচক,শব্দ প্রয়োগ কি তাহলে অসতর্কতা।ভিন্নভাবে ভেবে অন্য পাঠক হয়তো ইতিবাচক ব্যাখ্যাই হাজির করবে।
পরের পর্ব খুব চমৎকার। সহজ চিত্রকল্প, সরল উপমায় শিশু মনকে আন্দোলিত করার মত সাবলীল বয়ান,
‘পূব আকাশে অই
সূর্য হাসে, পাখির ঠোঁটে
ফুটছে গানের খৈ।’
‘পাখিদের সংগীত ”নিতুল তুতুল ‘যেন গোলাপ ফুল ‘ ‘মাছরাঙা’ ‘আয় চাঁদ’ ‘আমার প্রিয়’ উল্লেখিত ছড়াগুলো শিশুদের মন জয় করবে।
‘আমার প্রিয়’ বলে কবি জানিয়ে দিয়েছেন তার প্রিয় প্রসঙ্গের কথা।সে কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন পারিপার্শ্বিক সবকিছু।
‘দাদির প্রিয় পানের বাটা
দাদুর কাছে লাঠি
কাকুর প্রিয় ডিজে গান আর
ফুপুর গয়নাগাটি।
আমার কাছে সবচে’ প্রিয়
বাংলাদেশের মাটি।’ এভাবেই শেষ হয়েছে এরশাদ জাহানের ছড়ার বইয়ের ছড়া র বই ‘ বোকা ফড়িং’ এর যাত্রা।
আমরা তুমুল আশাবাদী তার বইটি আসন্ন বইমেলায় ছড়া প্রেমিকদের ক্রয় তালিকায় স্থান করে নিবে। আমাদের আশার ঢেউ আছড়ে পড়ুক পাঠকের দহলিজে।দলে দলে সংগ্রহ করুক বইটি।মেলার সময় বইটি পাওয়া যাবে পাপড়ির স্টলে। বই কিনলে ১০০ টাকা,উৎসাহ দিতে যত খুশি বেশি বেশি দিন।তখন পাঠিয়ে দিবেন লেখকের বিকাশে।
বোকা ফড়িং
এরশাদ জাহান
প্রকাশকাল:বিপ্লবোত্তর বইমেলা ২০২৫
মূল্য:১০০ টাকা মাত্র
পাপড়ি স্টল নং ৭১৯