সুমন সৈকত
………….
দ্রষ্টব্য
………….
(দুঃখবোধের সারস পক্ষি প্রিয় বাংলাদেশ)
দুঃখিত!!! আড়িয়াল খাঁ,
হত্যাযজ্ঞের মহাউৎসবে
ক্রমশ বিলিন হওয়া সারস পক্ষির ঠোঁট
শেফালির ফেলা আসা নদী
আবুল মিঞার দূর্বাঘাসে বসে আসরের প্রার্থনারত মগ্নবিকেল
মুক্ত বিহঙ্গের ঘরে ফেরা
এসবই খুন হবে।।
দুঃখিত!!! চলনবিল ;
হত্যাযজ্ঞের মহাউৎসবে
ক্রমশ বিলিন হওয়া বনলতা সেনের ঝাপসা চোখ
বকের সারি, গাঙচিলের লবনাক্ত ডানা
রুপালি মাছের সাঁতার , সোনালি ধানের নুয়েপড়া
পোয়াতি শ্বাস
কৃষাণীর গীত
এসবই খুন হবে।।
দুঃখিত!!! বিল ডাকাতিয়া
হত্যাযজ্ঞের মহাউৎসবে
ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া পাতি সরালির সুবর্ণ পালকের ঘ্রাণ
কাস্তে চড়া আর বালিহাঁসের সারি বেধে মেঘকন্যার সাথে সাথে পাড়ি দেয়া সাত সমুদ্র বিলাস সরপুঁটি টেংরা শিং বোয়াল চিতলের দস্যিপনা আর অভিমান
কলমি লতা কচুরিপানা শালুকের ঝিরিঝিরি বাতাসে নন্দিত চপলতা
নগেণ মাঝির নৌকা, বৈঠা, ছেঁড়া মাস্তুল
কুমার পাড়ার মাটির কলস হাঁড়ি পাতিল
শীতের বিকেল, রতন গেছোর খেজুর রস,
কুঁড়ে ঘর, গাঙ
এসবই খুন হবে।।
দুঃখিত!!! দীঘলি বিল
হত্যাযজ্ঞের মহাউৎসবে
ক্রমশ বিলিন হওয়া আমির খলিফার বাউন্ডলেপনা ছন্নছাড়া যাপিত জীবনের পাঠশালা ,আয়জান বিবির শিকায় সাজানো থরে থরে হাঁড়ি ভর্তি ক্রোধ
হাজের, আঃ রহমান, আনো,মনোকে জাপ্টে ধরে
কলার ভেলায় পাড়ি দেওয়া
বাবার বেড়ে উঠা চিকচিকে আলো আঁধারি শৈশব
মায়ের হেঁসেলে পড়ে থাকা পোড়া দুধের সর
গাঙে ভাসা পানশি নাও, খলুই ভরা মাছ
আউশের পল হেমন্তের কুয়াশা
এসবই খুন হবে।। নিশ্চয়ই খুন হবে।
দু:খিত, শ্রাবণের শোনিতে রক্তাক্ত রাজপথ!!
সাঈদের এ প্রশস্ত বুক পাটাতনই যেন, খুন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ
দু:খিত, বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধে পিচঢালা রাজপথ!!
মুগ্ধের পিপাসার্ত ওষ্ঠই যেন, খুন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ
দু:খিত, মুক্তির আহ্লাদে পাগলপ্রায়
ইয়েমিনের কেঁপে কেঁপে ওঠা শরীর,
যেন আজ খুন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ!!
এইসব হত্যাযজ্ঞের মহাউৎসবে
একটি সকাল খুন হবে
একটি সত্য খুন হবে
একটি মানচিত্র খুন হবে
খুন হবে
খুন হবে
সব সুন্দর খুন হবে
সব শুভ্র খুন হবে…
……………..
নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো
……………..
তোর চলে যাবার দিনটি অবহেলা দিবস হিসেবে উয্যাপিত হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া পাড়ায় ফলাও করে প্রচারিত হবে
কম্পমান পায়ের স্থিরচিত্রে দেখা যাবে
তুই চলে যাচ্ছিস, হুইসেল দিচ্ছে ট্রেন
কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ যেন, কোন কৈশোরীয় এলোমেলো কেশ…
তোর চলে যাবার দিনটি অবহেলা দিবস হিসেবে উয্যাপিত হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া পাড়ায় ফলাও করে প্রচারিত হবে
সুগন্ধি আতব চালের উবে যাওয়া গন্ধের মতো নিস্প্রভ সম্পর্কের ক্ষীণ কলতান
দূর গাঙে ভাসবে,
আমাদের আয়ুস্মান সময়ের চৌকাঠে খোদাই করা প্রতিশ্রুতির মলাটবদ্ধ গোধূলির আলো,
মুখ লুকিয়ে থাকবে রাত্রির মায়ায়। পরিহাসের হাঁস উড়াল দিবে দূর হতে দূরে
আর তোর প্রস্থান থাকবে
কম্পাসের কাটার কম্পাংকের মতো নির্ভার নিরুদবিগ্ন
তোর চলে যাবার দিনটি অবহেলা দিবস হিসেবে নিশ্চয় পালিত হবে
আর ভগ্নহৃদয় নিয়ে, চৌরাস্তা মাড়িয়ে ধীর পায়ে ঘরে ফিরবো, আমি ঘরে ফিরবো
এক ঝুরি অপমান আর ঘৃণার উষ্ণতা নিয়ে…
আমি ঘরে ফিরবো
বিষন্নতার নদী নিয়ে,
আমি ঘরে ফিরবো
মুক্ত ভোরের ক্রন্দন নিয়ে, উদ্বাস্তু সময়ের পরাজিত চোখ নিয়ে…
তোর চলে যাবার দিনটি অবহেলা দিবস হিসেবে ফলাও করে প্রচারিত হবে মিডিয়া পাড়ায়
ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে তুই চলে যাচ্ছিস
ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে
স্টেশন, কুলির ডাক, হুইসেল, কালো ধোঁয়া
ছিন্নমূল মানুষের পাথরদৃষ্টি
তুই চলে যাচ্ছিস, নির্ভার তোর চোখ
ক্রমশ ঝাপসা হয়ে উঠছে
তোর মুখাবয়ব..
. তুই চলে যাচ্ছিস,
তুই যাচ্ছিস চলে…
………..
মাঝি
………..
দুঃখ পাথরটাকে জড়িয়ে নেই হাতের মুঠোয়। ঝর্ণার কলতান তবু্ও ভেসে আসে ইথারে। দৃষ্টির ভূগোল উল্টিয়ে পড়ে নেই তোমার অহংকারের লাল ভাঁজগুলো…নারী! তোমাকে এভাবেই পড়ি। পাঠ্যসূচিতে নামটা টুকে রাখি। আজন্ম কৈশোর বিহ্বল দৃষ্টিকে সযত্নে রাখি ফ্রেমে বন্দী।ইতিহাসের দস্যিপনার ভেলায় চড়ে আমি শমশের মাঝি, পৌঁছে যাই রাণী ইসাবেলার রাজদরবারে..
দু’ চোখ অগ্নিগর্ভা অহংকারে বলে ওঠে “” প্রহরী!!
এ বেটা কে…?””
: মহামান্য রাজ- মাতা!!!
জানিনে, তবে মনে হয় মরিস্ক কৃতদাসের ‘প্রেতাত্মা’।
প্রহরী!! বন্দী করো।
: নিক্ষিপ্ত করো ঐ নীলাভ উন্মুক্ত জলে…
সে-ই থেকে নারী! আমি শমশের “মাঝি” মহাকালের ডিঙি করি, দরিয়া থেকে দরিয়া চষে ফিরি…
মৃত্তিকার মতো শাদা মুখে আজ ফাঙ্গাসের বসতি…
দু’ চোখ পুড়ে থাকে উদ্বাস্ত শিবির। শুধু কবিতার মতো ভোর হয়ে জেগে আছি আজবধি।
…………
পোট্রেট
…………
নিঃসঙ্গতা আর রূপকথা জমজ দু’বোন
সেদিন বেড়াতে এসেছিলেন
আমার অগোছালো পৈত্রিক নিবাসে
আমাকে নিয়ে সে কি উৎকণ্ঠা তাদের…
আমার মূর্খতার আর বোকামি নিয়ে হাঁসাহাসি করলেন। গালমন্দও করলেন বেশ…
তারা ভেঙ্গে পরা পুঁই শাকের মাচার কথা বললেন ; আমি নিরুত্তর
তারা সজনে গাছে দোয়েলের ভাসার কথা বললেন ; আমি নিরুত্তর
তারা মাছে ভরা পুকুরের কথাবললেন ;
আমি নিরুত্তর
পিতৃব্যর রোপন করা নিম গাছের কথা বললেন ; আমি নিরুত্তর
আমি তাদের দিকে বিষন্ন পৃথিবীর গন্থিতে লটকানো “চড়ুইপাখির স্বপ্ন মোড়ানো শস্যদানা ঠোঁটের পোট্রেট” ধরিয়ে দিলাম
অনুচ্চারিত কণ্ঠে তারা পুঁথি পাঠের মতো
পড়তে থাকলো…
“বঞ্চিত মানুষের অভিশাপে জ্বলছে,
প্রতারকের জালে জড়িয়ে,ঝুলন্ত পৃথিবীর আত্মা.. “
……………
অপারেশন সার্চলাইট
……….……
নৃ
শ
ং
স
ত
ম
হত্যাযজ্ঞের পর
প্রতারিত মুখে
বাঙালি!!
বুকে বুনেছিলো রক্ত গোলাপ…
……………..
“বাংলাদেশ “
……………..
(লাল মোরগের ডানায় ভোরের আর্তি; “মাওলানা ভাসানী আপনাকে”)
দাসখত লেখাহয়
প্রজন্মের উঠানে
ভোরের আলোয় চাষ হয় রোদের সোনালি সোনালি ক্রন্দন
উদ্বাস্তু চোখে বাস্তুহারানোর ভীষন কষ্ট….
………….
সুমন সৈকত
আটচালা সাহিত্য আড্ডা, নওগাঁ।
মেইল- sumonsaikatboal@gmail.com
ইথার-০১৭১০-১৪০৪৫৬
মুগ্ধতা