spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যআজকের দিনেই চলে গেছেন বাংলা ভাষার প্রধান কবি আল মাহমুদ

লিখেছেন : তৈমুর খান

আজকের দিনেই চলে গেছেন বাংলা ভাষার প্রধান কবি আল মাহমুদ


তৈমুর খান

যাঁর কবিতা প্রথম পাঠেই ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলাম, যাঁর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল এরকম কবিতা তো আর কোথাও পড়িনি! কিন্তু কোথায় পাব এঁর কবিতার বই? হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর বাসায় পেয়েও গেলাম। বললাম বইটি আমার চাই। আবার ফেরত দেব। কিন্তু কথা রাখিনি। সেই বইটি আর ফেরত দিইনি। এমন বই কি ফেরত দেওয়া যায়? সেই ‘নির্বাচিত কবিতা’ আমার শ্রেষ্ঠ সংগ্রহের মধ্যেই পড়ে। বন্ধুটি অকালে একটা এক্সিডেন্টে পড়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু বইটি আমার কাছে রয়ে গেছে আজও। মাঝে মাঝে বইটি খুলে পড়ি। ভাবি, এমন কবি বাংলা সাহিত্যে কজন আছেন? প্রথম জীবনে তিনি নাস্তিক বলে নিজেকে ঘোষণা করেছেন, কিন্তু পরবর্তী জীবনে তিনি একশভাগ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ঈশ্বরমুখী হয়ে। হ্যাঁ সেই কবির নাম আল মাহমুদ(জন্ম:১১ জুলাই ১৯৩৬)।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। আজ ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। তাঁর পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিকও ছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্‌ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রচলিত জীবনবোধ,দৈনন্দিনের পারিবারিক জীবন ও সম্পর্ক, প্রেম,সৌন্দর্য ও প্রকৃতি তাঁর কবিতায় নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বিখ্যাত কয়েকটি বই আজও ভুলতে পারি না:
কালের কলস, সোনালী কাবিন,মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো,আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া,অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না এবং কাবিলের বোন (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস),দ্বিতীয় ভাঙ্গন,একটি পাখি লেজ ঝোলা,পাখির কাছে ফুলের কাছে, পানকৌড়ির রক্ত (কথা সাহিত্য) ইত্যাদি। অনেক পুরস্কারের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হল: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার,একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক,ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার,ভানুসিংহ সম্মাননা পদক,লালন পুরস্কার,বাসাসপ কাব্যরত্ন ইত্যাদি।
কবিতা কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে তাঁর যে কবিতাটি পাই তা হল:

“কবিতা এমন

কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন
আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া–
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!
কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী
কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন
পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ
মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠানে ছড়ানো জাল আর
বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।
কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর
ইস্কুল পালানো সভা, স্বাধীনতা, মিছিল, নিশান
চতুর্দিকে হতবাক দাঙ্গার আগুনে
নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা অগ্রজের কাতর বর্ণনা।
কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম, গন্ধভরা ঘাস
ম্লান মুখ বউটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর
গোপন চিঠির প্যাডে নীল খামে সাজানো অক্ষর
কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।”

এই মৃত্যু দিনে কবিকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

১৫ জানুয়ারী ২০২৫

Author

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা