সাদ আব্দুল ওয়ালী
০১.
শিশির ভেজানো ভাপ
…………
বুক পকেটে শূণ্য খাম
শত শত শব্দের রেখাসমূহ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কেমন,
শীতের রাতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম!
রাতের গভীর নিরবতার মাঝেও ঘুম ভেঙে
চোখ মেলতেই দেখি
কুয়াশায় আচ্ছাদিত চারিপাশ,
অথচ
অঘোরে ঘুমোচ্ছে শহর ও তার বাসিন্দা
কতক্ষণ পায়চারি জানি না, তীব্র বেখেয়াল
“আসসালাতু খাইরুম মিনানা নাউম…”
ততক্ষণে সম্বিৎ ফিরে আসে
সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকি মুগ্ধতার টানে
শিশির ঝরে,
ঝরতে থাকে বৃষ্টির মতোন
সারা দেহে যেনো শিশির ভেজানো ভাপ!
০২.
আধাঁর নেমেছে আলো আসবে ঠিকই
……………
শব্দহীন এক আলো-আঁধারের খেলা
দূরে উড়ে যায় এক ঝাঁক পাখিদের মেলা
নদী তীরে বসে বসে
ঢেউ গুনি বাতাসের…
নিরবে কান পেতে শুনি
শব্দহীন এক কান্নার ঢেউ!
আযানের সুমধূর সুর ভেসে আসে!
আচমকা টান পড়ে ভেতরে
শূণ্যতার পাখা মেলে কেবল
হারিয়ে যাই নীল অরণ্যের আধারে
একে একে পাখিরাও ফিরে যায় ঘরে
সান্ধ্যকালীন উৎসবে ঘরে ফেরা হয় না বুঝি!
কেনো তার দুঃখ, তার কষ্ট আমি বুঝি না?
অনুভবে এঁকে যাই তারই বিমূর্ত ছবি
নিরন্তর এক আফসোসের সীমারেখা
না বোঝার কী যে কষ্ট, কী যে দুঃখ!
শব্দহীন এক আলো-আঁধারের খেলা
যদিও এই আঁধার নেমেছে ঘিরে
ঘোমটা পড়ে রাত্রি আসছে এই শহরে…
আলো আসবে ঠিকই
দেখে নিও তুমি
একদিন আলো আসবে তোমার শহরে!
০৩.
নির্জন রাতের প্রহরে
………….
এক নির্জন রাতের প্রহরে
পাখির ঠোঁট
রাখি তোমারই ঠোঁটে
আকাশ কেঁপে ওঠে
কেঁপে ওঠে জমিনের নিরব প্রকৃতি
কেঁপে ওঠে নদীর ঢেউ
অনুরণিত হই
এক অপূর্ব শিহরনে,
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আস্বাদন করি
এক বিহ্বল সুরের মায়াজাল!
সেই সুর ও ছন্দের ইশারায়
তোমারই ভালোলাগা থেকে
সৃষ্টি করি
ভালোবাসার এক মহাকাব্য
পাখির ঠোঁট
রাখি তোমারই ঠোঁটে।
এই নীল আসমান ও
জমিনের অপরূপ প্রকৃতি,
নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে
পাঠরত সেই মহাকাব্যের শ্লোক!
০৪.
ঘুমহীন রাতের চিঠি
…………..
মাঝরাতে রহস্যের ইন্দ্রজাল মেখে জেগে উঠি
জেগে ওঠি নৈশব্দের ঘুমচোখ থেকে।
শূন্যতার ডানা ভেঙ্গে জেগে উঠি
ঘুমহীন সফরে নিমগ্ন আমি
মায়াবী যাদুতে বুঁদ হয়ে তোমাকে খুঁজি…
কেমন হারায়ে খুঁজি নিজেকে
মায়াবী গোলাপী আভাতে নিজেকে রাঙি
স্বপ্নীল ছুঁয়ে যাওয়া আমার একি সর্বনাশ!
সুনসান নীরবতা ও রাতজাগা জোনাকির ঝিঁ ঝিঁ
ডেকে নেয় নিবিড় প্রার্থনার অবগুন্ঠনে
কী বলে ডাকবো নির্জন রাতের গুঞ্জনে?
হৃদয়ে জ্বলে ওঠে এক রঙিন পারদ
কোথায় যেনো হারিয়ে যাই সেই আমি
ভেসে আসে রাত জাগা সুরের ছন্দে!
হাস্নাহেনার সুবাস মেখে জেগে উঠি
দূর থেকে এক বিহ্বল বাতাসে
মরি মরি আমি এ কোন্ মরণে?
ভেতর থেকে জ্বলে উঠা এক রহস্যের আধাঁরে
মায়াবী স্পর্শের আহ্বান – কেমন আছো সাদ?
০৫.
লজ্জাবতী
…………
টুকরো টুকরো পাথর, তারই মাঝে দৃষ্টি কাড়ে
সজীব শোভিত আহা কি অপূর্ব সম্মোহন তার!
অদ্ভূত ইশারায় দৃষ্টির আড়ালে কাছে টানে
ছুটে যাই খুব কাছে
চোখে পড়ে তারই এক অদৃশ্য নেকাব!
স্পর্শ করতে গিয়ে ফিরে এসেছি বারেবারে
নির্জীব অহংকার ক্ষমা করেনি আমায়;
অবশেষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করি সংকীর্ণতার আবরণ
যন্ত্রণাবিদ্ধ আমি খুলে ফেলি বোধের অর্গল।
যেনো তাবৎ অহংকার নুয়ে পড়েছে আমার
প্রথাগত অহংকার ছুড়ে ফেলে
আমিও হয়েছি নিরহংকার এক সুবোধ
পিছুটান নেই কোনোকিছুতে রাগ-অনুরাগের।
তাই বলে ভেবো না পরাজিত আমি
ভেবো না আত্মসমর্পণ করেছি
বরং তাকে আবিষ্কার করেছি
বোধের অর্গল খুলে কাছাকাছি যেতে।
……………
সাদ আব্দুল ওয়ালী
একজন বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও কবি হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ ও ভারত থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে সাহিত্য বিষয়ক লেখালেখির সূত্রপাত ঘটে। এছাড়া বগুড়া থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় লেখালেখি চলতে থাকে। এর মাঝে ঢাকা বেতার থেকে “উত্তরণ” ম্যাগাজিন এবং খুলনা বেতার থেকে কবিতা উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা থেকে সাহিত্য বিষয়ক মাসিক “অনুক্ত”, কিশোরকন্ঠ, মাসিক অঙ্গীকার ডাইজেস্ট ইত্যাদিতে লেখা প্রকাশিত হয়।
ক্যারিয়ার জীবনের দু’এক বছর আগে লেখালেখির গতি ছিলো, ছিলো স্বপ্ন ছোঁয়ার আবেগ। একজন তরুণের কাছে এটা গতি বলা যেতে পারে। তারপর আইটি পেশায় ক্যারিয়ার শুরুর পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে সচেষ্ট। ঢাকাতে অবস্থানরত অবস্থায় লেখালেখিতে এ ধারা বিকশিত হয়। এক্ষেত্রে দৈনিক ইত্তেফাক পরিবারে মাসিক ‘ই-বিজ’, কম্পিউটার টুমরো, কম্পিউটার বার্তা ছাড়াও দৈনিক প্রথম আলোতে কিছু লেখা ও দৈনিক আমারদেশ এ নিয়মিত লেখা ছাপা হতো। এর পরে তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ক মাসিক ‘টেকনোলজি টুডে’ তে বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন কয়েক বছর যাবত। এরপরে বাংলাভাষী বিজ্ঞান মনস্ক ও বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা বিজ্ঞানী.অর্গ (https:\biggani.org) এ বিভাগীয় সম্পাদক।
কিছুদিন বিজ্ঞানীদের জীবনী নিয়ে LearnTime ইউটিউব চ্যানেলে ধারাবাহিক ভাবে একটি ভিডিও সিরিজে অংশ গ্রহণ। এছাড়া জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও নদী ঘোরাও নদীর পথে আয়োজিত নদীকেন্দ্রিক কবিতা-আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় কবিতার বই “নদীকন্যার জলে” যা ছড়িয়ে পড়ে পাঠকদের মাঝে। দেশের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা সিসটেক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত আরো বইগুলো হচ্ছে, ”বিজ্ঞান-মনীষা”, ”আবিষ্কারের ইতিকথা”, ”ডেটাবেজ প্রোগ্রামঃ এসকিউএল সার্ভার”, ”ওরাকল ও ডেভেলপার”।
আমুদিত হলাম! শুভ হোক এই পথ চলা।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে ভালো লাগার জন্য।
লেখার হাত আছে ।
যদিও অনিয়মিত, তবুও চেষ্টা করবো লেখা চালিয়ে যেতে। আপনার মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
Nice. Really this poem is outstanding. Hope it will be a great inspiration for poem loving person. Best of luck saad abdul wali. Hope you will continue your thoughts through your poem.
লেখালেখিটা এমনই, মনোভাবনার মাঝে একটা নিজস্ব জগত তৈরি করতে হয়, পড়াশোনা, চিন্তা-ভাবনা, চর্চা-অনুশীলন অব্যাহত রাখতে হয়। সেদিক থেকে আমি পিছিয়ে। তারপরও মাঝে মাঝে লিখছি, লেখার চেষ্টা করছি। তবে আপনার মতামত আমাকে নিঃসন্দেহে প্রেরণা জোগাবে, অনুপ্রাণিত হবো লেখালেখিতে।
বাহ্ সুন্দর লেখা
ধন্যবাদ