মহিবুর রহিম
………….
আল আকসা ফ্লাড
………….
যারা মৃত দৃশ্যের ভিতর জীবন্ত এই দৃশ্যের জন্মদাতা
যেন খয়বার যুদ্ধের সৈনিকদের মতোই মরণ জয়ী তারা!
যেন বদর খন্দক থেকে প্রতিটি যুগের পদক্ষেপ ধরে গড়ে উঠেছে এই সাহসের টানেল
পৃথিবীর জীবন্ত ইমান
অক্ষয় সম্ভ্রম
দুর্জয় চেতনা
মানুষের চিরকালের সংগ্রাম স্বাধীনতা পুঞ্জীভূত হয়ে ভরে উঠেছে যে মুঠো
আর কী অদ্ভূত সাহস, অকুতোভয় প্রত্যয়, স্বচ্ছ হৃদয়জয়ী মানবিক জিহাদ!
দুনিয়ার সব দৃশ্যেকে হার মানায়,
সব ঘটনা ম্লান হয়ে যায়
অনমনীয় রক্তরঞ্জিত গাজা উপত্যকায়
বিধ্বস্ত খান ইউনুসের নির্ভয় প্রতিরোধে
মৃত সত্তাকেও চিনিয়ে দেয়
এই হচ্ছে হামাস, এই হচ্ছে ফিলিস্তিন
মানব মুক্তির কেন্দ্রবিন্দু, বিশ্বাসের হৃদয়
পশ্চিমের গাত্রদাহ
মুনাফেকের অস্বস্তি
কাপুরুষের ভীতি
যুগান্তের বিস্ময় নিয়ে অবাক পৃথিবী
প্রতিদিন সম্মুখে যার অজস্র উন্মত্ত মারকাভা
আগ্রাসী বুলডোজার
সভ্যতার পেট ফেঁপে বেড়ে উঠা মারণাস্ত্রের পাহাড়
প্রতিটি ওয়াক্তে ছড়ানো এই বিষফোড়ার যন্ত্রণা
তবু এই উপত্যকার শিশুদের হাসিতে থাকে বায়তুল মোকাদ্দাসের পবিত্র প্রভাত
বুলডোজার সভ্যতার কুৎসিত দানব
লানতের ধূলো উড়িয়ে
মুহূর্তের জন্য ম্লান করতে পারে না তার সাহস ও গৌরব
তার ইন্তিফাদা, মরণজয়ী সংগ্রাম
পৃথিবীর সব প্রতিবাদ গর্জে উঠে ফিলিস্তিনের রক্তে
গাজার শিশু নারী বৃদ্ধ প্রতিদিন শাহাদাতের পেয়ালা পান করে মৃত্যুঞ্জয়ী পদ্মফুল হয়ে ফোটে
তারা কখনো হারে না
মুখোশ পরা খল সভ্যতা হেরে যায়
তারা মানুষকে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার আলো দেখায়
আর পৃথিবীর মহৎ হৃদয়ে পৌঁছে দেয় আল আকসা ফ্লাড
প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি
……………..
মোহাম্মদ দেইফ
…………….
হকদার শহিদের মিছিলে ফিলিস্তিনি শহিদের মর্যাদা নিশ্চিত অনেক অনেক উপরে
আমি যতবার অনুধাবনের সাম্রাজ্য পার হয়ে নির্মোহ সত্য বিশ্লেষণে ব্রতী হই
একটা সুপারন্যাচারাল মনিটরে দেখি অগণিত ফিলিস্তিনিদের নাম
অলৌকিক আলোর সাইনে উদ্ভাসিত, মনুষ্যত্বের মর্ম নিয়ে বিস্ময়কর ভাবে দীপ্ত
মোহাম্মদ দেইফ, বীরের জগতে মহাবীর, প্রাণ স্পর্ধী মানব কাহিনির মহানায়ক
শুধু মানব পাঠের বিশুদ্ধ জ্ঞান জানে,
সাম্রাজ্যবাদ অধ্যুষিত প্রোপাগাণ্ডার ধোয়ার কুন্ডলী পেরিয়ে
সেই সবুজ সত্যের বাড়ি, স্পর্ধার প্রাসাদ, জীবন জয়ের গম্বুজ
সেই ইনসানিয়াতের উন্মুক্ত মাঠের পাশে
অলৌকিক স্কুলে
মানব প্রেমের ফুলে
শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত
মোহাম্মদ দেইফ, ইয়াহিয়া সিনাওয়ার, ইসমাইল হানিয়া, ফাদি আবু সালাহ, আরও শত সহস্র নাম
তারা গড়ে তুলেছে অন্য এক ইস্টিশন
অন্য এক সুরের অধ্যায়, মানব তন্ত্রের জয়গান
সেখানে ইতিহাসের হৃদয়ে ফিলিস্তিন
অনুধাবনের চূড়ায় ফিলিস্তিন
শিক্ষা, সহমর্মিতা ও বীরত্বে ফিলিস্তিন
মানবতার মর্মে ফিলিস্তিন
এই মহা সত্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে অবিচল মোহাম্মদ দেইফ
না, সেখানে কোনো সংশয় নেই
সেখানে কোনো মৃত্যু নেই
সেখানে কোনো ভনিতা নেই
সব প্রোপাগান্ডা ভনিতা ভন্ডামী মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মোহাম্মদ দেইফের পায়ের কাছে!
……………..
আল মাহমুদের কবরে
……………..
কবি আল মাহমুদের কবরে মৌনতামেঘের আচ্ছাদনে
আলো আর পাতার সৌন্দর্যে তৈরি হয়েছে অপার্থিব এক পরিবেশ
এখানে দাঁড়িয়ে সত্যি অনুভব করা যায় ভরা মৌসুম আর নিঃস্ব সংক্রান্তির ভেদরেখা
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, কবি আল মাহমুদের মহা প্রয়াণ দিবস
সকাল থেকেই মনে হল দিনটি অন্য রকম
আমি কবি আল মাহমুদের করব জিয়ারতে পা বাড়ালাম
ঠিকানা সেই স্টেশন লাগোয়া দক্ষিণ মৌড়াইল
ভীষণ নির্জনতায় আচ্ছাদিত এই প্রাচীন কবরস্তান
আমি আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কাবুর বলে হাজির হলাম
মনে হল হঠাৎ উন্মুক্ত হয়ে গেছে সেই নির্জনতার সব আচ্ছাদন
একটা হলুদ পাখি উড়ে এসে নিজের মত ডাকতে শুরু করেছে
কী বিস্ময়কর তার ডাক!
আমি তো অবাক, কবি আল মাহমুদ
তার অনেক কবিতায় এই পাখিটার কথাই তো লিখেছিলেন
তাঁর কবিতার যাদুকরী শব্দের মতোই এর কণ্ঠস্বর
অনেক রহস্যের রঙে ও রূপে ঢাকা
আর চির প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা
সেগুন গাছগুলো অশ্রু ঝরানোর মতো কয়েকটি পাতা ঝরালো
করবের বাম প্রান্তে দাঁড়ানো ঐতিহাসিক খেজুর গাছটি
এখনো কবির পিতার স্মৃতি বহন করে চলেছে
জীবদ্দশায় কবি আমাকে নিয়ে কয়েকবার এখানে এসেছিলেন
খেজুর গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে স্মরণ করে ছিলেন তাঁর প্রয়াত পিতাকে
আর নিজের রক্তধারার গন্ধ শুঁকে শুঁকে
উচ্চারণ করে ছিলেন অদ্ভুত কিছু পঙক্তিমালা
সেই স্মৃতি কিছুতেই ভোলা যায় না
মৌড়াইল মোল্লাবাড়ির কত ঘটনা
শিল্পের মোড়কে ঢাকা কত জীবন কাহিনি
দিশাহারা তিতাসের জলও জানে না
কী তরঙ্গে ভরা তার কবিতার রহস্য উপমা
বিমূঢ় বিভ্রান্ত ইতিহাস জানে না
একজন আল মাহমুদ শতবর্ষেও আসে না
এমনই দুর্লভ ক্ষণজন্মা প্রতিভা ছিলেন তিনি
কী আশ্চর্য, আজ যেন
চারদিকে নির্জনতার গহীন পাহাড়
শহর জুড়ে জীবন্ত কবরের হাহাকার
বিকৃতির অবিমৃশ্য হাওয়া খেলে ভনিতার খেলা
আমি তার করবের এপিটাফ পাঠ করলাম-
‘আমার যাওয়ার কালে খোলা থাক জানালা দুয়ার
যদি হয় ভোরবেলা স্বপ্নাচ্ছন্ন শুভ শুক্রবার’
কী আশ্চর্য আজও সেই পবিত্রতম শুভ শুক্রবার
কবির বিদায় ধ্বনি মিশে আছে প্রভাতের সব শুভ্রতায়
মহাকাল লিখে গেছে তাঁর সেই কাহিনি বিস্তার
ভালো লাগলো কবিতা তিনটি।