নয়ন আহমেদ
……………
আঠারো কোটি নজরুল
……………
আমরা বাংলাদেশ। আমরা আঠারো কোটি নজরুল।
আজকের জন্ম নেয়া শিশুটির নাম কাজী নজরুল ইসলাম।
আগামীকাল জন্ম নেয় শিশুটির নামও কাজী নজরুল ইসলাম।
ভবিষ্যতে, কোনও দূরাগত কালে জন্ম নেয়া শিশুটিরও নাম হবে কাজী নজরুল ইসলাম।
নজরুল মানেই — লাথি মার ভাঙরে তালা;
যতসব বন্দিশালায় আগুন জ্বালা। আগুন জ্বালা ।
নজরুল মানেই বৈষম্য আর অপশাসনের শেকড় উপড়ে ফেলা।
আমরা আঠারো কোটি নজরুল।
এই বঙ্গোপসাগর-বিধৌত উপকূলে আমরা উড়াই সবুজ আর লাল রঙ শোভিত পতাকা —
যার ভূমিষ্ঠ হয়েছে আমাদেরই রক্তে।
আমাদের হৃৎপিণ্ড থেকে উৎসারিত আবেগ আমাদের ভাষা আর দেশের জন্ম দিয়েছে।
এই দেশের জন্য, মায়ের মতো ভাষার জন্য আমরা যে বীজ লাগিয়েছি তার নাম রক্তবীজ।
রক্ত ছাড়া দেশ আসে না।
আমরা প্রেম ও প্রার্থনার যুগ্ম বেণীত ঝুলে আছি ।
আমরা নজরুল।
স্বৈরাচার খতম করতে করতে ভোর নিয়ে বাড়ি যাবো, ইনশাআল্লাহ।
পাকা ধানের মতো ভোর।
ফ্যাসিবাদের গোড়া কেটে কেটে লাল ঘোড়ার মতোন দৌড় আনবো, ইনশাআল্লাহ।
পোড়াবো সব কালো কারুকাজ।
পোড়াবো। ভেঙে দেবো।
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির সুন্দর।
আমরা বিদ্রোহী। চির উন্নত শির।
আমরা জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি।
আমরা চির বিদ্রোহী বীর।
একটা চিহ্নও রাখবো না ফ্যাসিবাদ আর রাক্ষসদের।
একটা কেশও অবশিষ্ট রাখবো না নৈরাজ্য আর অন্যায়ের।
আমরা আঠারো কোটি নজরুল।
সূর্য হয়ে জ্বলে উঠি বারবার।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
………………
বিদ্যালয়
……………….
একটা গাছ দেখতে দেখতে সকাল পেরিয়ে গেলো।
নির্বিবাদে একটা পাতা ঋজু হয়ে মন্ত্র পাঠ করছে- ভালোবাসা ও প্রীতির-
তার সাথে যোগ দিয়েছে সহস্র কণ্ঠের উচ্ছ্বাস- তারপর রোদ ছড়িয়ে পড়েছে।
বহু-প্রজ দুটি ঘৃণা তা দেখতে দেখতে ভালোবাসায় রূপ নিলো।
অপরিতৃপ্ত হিংসুটে-গোটাপাঁচেক ভোঁতা অনুভূতি নিজেদের হৃৎপিণ্ড থেকে
ঝরিয়ে ফেললো পরিণামদর্শী কৃষ্ণকায় দুর্গন্ধ।
ছ’টা মনোযোগী অথচ বদমাশের মতো ক্লেদ সুফির পোশাক পরে
হয়ে গেলো মহল্লার মসজিদের মুসল্লি। তারপর
একে একে সবাই মুসাফা করলো।
আমি গাছদের পাঠশালায় এসে ভাবি-জীবনকে আরও প্রলম্বিত
করে দেবো। কিছুই দেখা হয়নি আমার।
একটা গাছ দেখতে দেখতে সকাল পেরিয়ে গেলো।
অনৃজু একটা প্রত্যয় নিজেকে আবার গোছগাছ করে নিলো।
কয়েকটা বাচাল উচ্চাশা নিজেদের শুধরে নিয়ে মিতভাষীদের মতো
একই কাতারে দাঁড়ালো।
যাবতীয় কদর্য ও কুশ্রী অশ্রুপাতেরা চোখ মুছে
পাতাদের মতো হেসে উঠলো অদৃষ্টপূর্ব আনন্দে।
জমির আইলে বসা আবদুর রব হাওলাদারের গামছার মতো হাহাকারেরা
সুখী হয়ে উঠলো মুহূর্তেই।
আমি ভেবে দেখেছি-জীবনকে আরও ঢলঢল মাধুর্যে
পূর্ণ করে তুলবো।
একটা পাতার মতোন স্বকীয়তায় অন্যূন বাস্তু বানাবো।
আমি গাছদের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হবো।
………….
শাস্ত্রশিক্ষা
…………..
শাস্ত্রশিক্ষা করতে যাবো ;
নিজেকে রোপণ করেছি একবার।
শাস্ত্রশিক্ষা করতে যাবো ;
এসেছি হৃদয় রেখে সূর্যের কাঁধে।
শাস্ত্রশিক্ষা করতে যাবো ;
নক্ষত্রের হৃৎপিণ্ডে আকাঙ্ক্ষা বসিয়ে দিয়েছি।
শাস্ত্রশিক্ষা করতে যাবো ;
সংসার-বাগানে চোখজোড়া পুঁতে দিয়েছি বারবার।
শাস্ত্রশিক্ষা করতে যাবো ;
আঙুলগুলোকে আমি গাছ ভেবে লাগিয়ে দিয়েছি।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা— কবি – সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব।
ভালোলাগা রেখে গেলাম।