তাজ ইসলাম
‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আমাকে এক ধাক্কায় ওই যে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লিখতে সাহায্য করে। ধরো, এই ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান না হলে এই কবিতাটি আমার মাথায় আসত না’ জব্বার আল নাঈমের সাথে এভাবেই কথার জাল বিস্তার করেছেন বহুল আলোচিত কবি হেলাল হাফিজ। হেলাল হাফিজ’ র সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে লিটলম্যাগ ‘ অনুরণনে’। ‘অনুরণন’ একটি সমৃদ্ধ লিটলম্যাগ। লিটলম্যাগের চরিত্র ধারণ করতে সক্ষম ‘অনুরণন’। সমকালের তারুণ্য ও তাদের সাহিত্য চর্চাকে পরিচিত করাতে সক্ষম অনুরণন। হেলাল হাফিজ ছাড়াও আরও দু’জন গুণীজনের সাক্ষাৎকার আছে এ সংখ্যায়। এটি দশম সংখ্যায় পদার্পণ করেছে।
একটি লিটলম্যাগ দশম সংখ্যায় পৌঁছা আনন্দের সংবাদ। সাহিত্যের একটি কাগজ নিজেকে দশম সংখ্যায় পৌঁছানো সাহিত্যের জন্য ইতিবাচক খবর। সাধারণত সাহিত্যের কাগজের অকালমৃত্যু হয়। অনুরণন সে অর্থে মুদ্রণ আয়ু প্রাপ্ত সাহিত্য কাগজ।
অনুরণনের চলতি সংখ্যার প্রথমেই আছে সাক্ষাৎকার। স্বপ্না গুহ ঠাকুরতা সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রোকাইয়া হাসিনা নীলি’র। বহুল আলোচিত কবি হেলাল হাফিজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জব্বার আল নাঈম। জব্বার আল নাঈম হায়াৎ মামুদ’র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
কবিতা আছে এক ঝাঁক কবির। কবি তাজ ইসলাম, অরিন্দম চচট্টোপাধ্যায়, সাজ্জাদ বিপ্লব, জাকারীয়া প্রীণনসহ আরও অনেক কবির কবিতা পাবেন পাঠক। গুচ্ছ কবিতা,অনুবাদ কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ ও স্মৃতিগদ্যে সম্বৃদ্ধ অনুরণনের সংখ্যাটি পাওয়া যায় বইমেলা ২০২৫ এর লিটলম্যাগ চত্তরে ‘অনুরণনের স্টলে। সম্পাদক রেজা নুর।
ফিরোজ আশরাফ,সাব্বির জাদিদ,খালিদা খানুম,জয় নারায়ণ সরকার,অমর নন্দীর ছোটগল্পের পর প্রবন্ধ লিখেছেন আইভি চট্টোপাধ্যায় ,জব্বার আল নাঈম,কামরুল আহসান।
‘ পাঁচ তলার শেষ সিঁড়িটা পার হয়ে বড় করে একটা দম নিলেন আখলাকুর রহমান। সকালে হাঁটাহাঁটি করতে তিনি আর নিচে নামবেন না।এখন থেকে বাসায়ই হাঁটবেন। হায়াত যতদিন আছে তার বেশি তিনি বাঁচতে পারবেন না।সারাদিন হাঁটলেও না।” ‘ভিজিট ‘ ফিরোজ আশরাফের গল্প। সাবলীল ভাষায় এগিয়ে গেছে গল্প। তারপর কী? কি করলেন আখলাকুর রহমান? কেন এমন সীদ্ধান্ত নিলেন? এসব জানার আগ্রহ মিটাতে হলে পাঠ করতে হবে পুরো গল্পটি। এই গল্পের পিঠেই শুরু হবে সাব্বির জাদিদের গল্প। সাব্বির জাদিদ এই সময়ের আলোচিত গল্পকার। তার গল্পের শিরোনাম ‘অনুপ্রবেশকারী’। তার গল্পে কে অনুপ্রবপশকারী সে জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া যাবে গল্পের ভেতর।
শাকুর মাজিদ ‘র ভ্রমণ গদ্যে বিবৃত হয়েছে সক্রেটিসের শহরের গলি গুপছির কথা।
সম্পাদকীয়তে ওঠে এসেছে লিটলম্যাগ করার আনন্দ বেদনা মিশ্রিত সম্পাদকের স্মৃতি অভিজ্ঞতা।
গুচ্ছ কবিতা যাদের ছাপা হয়েছে তাদের আবার সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতিও তুলে ধরা হয়েছে।
লিটলম্যাগের পৃষ্ঠা মেলে সমকালের কবি সাহিত্যিকদের লেখাগুলো এক মলাটে পেয়ে থাকেন পাঠক।
‘বসন্তের এই দৃশ্যবহুল জীবন/ একটি মায়াবী কবর।/ যেন হ্যাঙারে ঝোলানো শিথিল চাঁদ;(জাকারিয়া প্রীণন)’।
‘মানুষকিতাব পাঠ করো মানুষ।/ ওরাকা বিন নওফেলের প্রাজ্ঞতায়/ হেসে উঠবে বিজ্ঞ চোখদ্বয়।( তাজ ইসলাম)।
” কষ্ট কেন / বুকের মাঝে?/ কষ্টগুলো নীল।/ কষ্টগুলো হঠাৎ করেই/ যায় হয়ে যায় / চিল।(সাজ্জাদ বিপ্লব)”
কবিতা পাঠ করতে করতে একজন পাঠক হঠাৎ এভাবেই হতে পারবেন চিল। গল্পের বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে জীবন ও বাস্তবতার অভিজ্ঞতা। একজন সাহিত্য রসিকের জন্য লিটলম্যাগ অপরিহার্য অনুসঙ্গ। লিটলম্যাগ মূলত ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। একজন রেজা নুর আনন্দ চিত্তে করে যাচ্ছেন সেকাজ। অনুরণের দশম সংখ্যা এখন বাজারে। প্রচ্ছদ শিল্পী হলেন মোমিন উদ্দীন খালেদ। বিনিময় ধরা হয়েছে ২০০ টাকা।১৭৬ পৃষ্ঠার চকচকে ঝকঝকে ছাপার কাগজটি সংগ্রহে রাখা বলতে পারি আবশ্যিক। আমরা অনুরণনের দীর্ঘায়ু কামনা করি।