spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকসেনাপ্রধানের ভাষণ, আওয়ামী শিবিরে উল্লাস ও অন্যান্য

লিখেছেন : আবু জাফর সিকদার

সেনাপ্রধানের ভাষণ, আওয়ামী শিবিরে উল্লাস ও অন্যান্য

আবু জাফর সিকদার

ক.
শেষমেশ কী ঘটতে যাচ্ছে এদেশের ভাগ্যে! আমরা যে ডাল ধরি সেই ডালটিই যেন ভেঙ্গে পড়ে। বিগত ৫৩ বছর কিংবা তারও পূর্ব থেকে হিসাব কষলে আমাদের দুর্ভাগ্যের রোজনামচাটা ভেসে ওঠে।
রাজনীতির নামে, জনসেবার নামে কিংবা দেশরক্ষার নামে যেসব বায়োস্কোপ দেখতে দেখতে এই বদ্বীপের মানুষগুলো ত্যক্তবিরক্ত আর হতাশাগ্রস্ত হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে এমন পরিস্থিতির দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই! স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য, ন্যায় বিচার কিংবা মানবিক মর্যদার লড়াইয়ে এত রক্ত ও জীবন বিসর্জন আর কোন কোন দেশে এমন অকাতরে দিতে হয়েছে তারও নজির বোধ হয় আর নেই।
তবুও মুক্তি সুদূরপরাহত। বারবার আমরা প্রতারিত হই। যাকে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে!
এদেশে আসলে কাদের সংখ্যা বেশি- দেশপ্রেমিক, নাকি বিশ্বাসঘাতক?

খ.
রাজনৈতিক এই বেশ্যাপনা নিয়ে কথা বলতেও আর ইচ্ছে হয় না!
কিন্তু না বলেই বা উপায় কী?
কারণ এসব রাজনৈতিক নেতাদের ভেতর, আমলা কামলাদের ভেতর, দেশ রক্ষার সৈনিক কিংবা অফিসার কিংবা বিচার ও শৃঙ্খলা বিধানের নিয়োজিত অর্গানগুলোর কর্মযজ্ঞ দেখে শুনে চুপ করে থাকাটাও একধরনের জঘন্য হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাই বিবেকের তাড়নায় কথা বলতেই হয়! আমার দেখা রাজনীতির যে সময়কাল তা মূলত গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে এই শতাব্দীর ২ দশক প্লাস! আবদুস সাত্তার,হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা এবং চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কালটি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসাবে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে এসেছি। এছাড়া ঐ একই আগ্রহ থেকে রাজনীতির পেছনের ইতিহাসকেও পাঠ করার চেষ্টা করেছি নৈর্ব্যক্তিকভাবে।
যা দেখলাম ও বুঝলাম- শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়ার মতই হয়েছে এদেশের মানুষের!
হ্যাঁ আমরা হুজুগে বাঙালি বটে, নেতা ও দল নির্বাচনে আমরা বারবার প্রতারিত হই, যে যায় লঙ্কায় সেই হয়ে ওঠে রাবণ!
এ কে এম ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, মৌলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান এর মতো নেতাদের হাত ধরে বেড়ে ওঠা এই পলিমাটির উর্বরতা, দিনে দিনে সাহারা মরুভূমির মতো রুক্ষ ও নির্বীজ হয়ে গেছে,”ঘরের শত্রু বিভীষণ ” এর বাম্পার ফলনে।

গ.
দুই সতিনের সংসারের মতই আমাদের রাজনীতির রান্নাঘর।
হিংসা নির্মূলের মূলমন্ত্রই হলো পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই এর মৌলিক হাতিয়ার‌। এটাকে পুঁজি করেই শাসকগোষ্ঠী দেশকে নিজের বাপের তালুকদারি মনে করে এবং জনগণকে সেই তালুকদারির অনুগত প্রজা সাব্যস্ত করে রাজনৈতিক দর্শন ও এজেন্ডা সাজিয়ে শোষণ ও শাসনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করে রেখেছে। এটারই সর্বশেষ আইকনিক প্রডাক্ট ছিলেন শেখ হাসিনা! শেখ হাসিনা তাই নিজে নিজে তৈরি হয়নি, চলমান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দিনে দিনে তাকে তৈরি করেছে। তিনি যে পদ্ধতি তৈরি করেছেন বা তিনি যে পদ্ধতির বাই প্রোডাক্ট এরা পরস্পর পরিপূরক, ঠিক ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটানোর মতো।

ঘ.
শেখ হাসিনার এত বড় রাজনৈতিক দানব হয়ে ওঠাকে যারা খোলা চোখে দেখে না, এমন কি মাইক্রোস্কোপ দিয়েও তার কোন ভুল দেখতে পায় না, তাদের রাজনৈতিক দর্শনটা একবার ভাবুন। গত ষোল বছর তাদের লেখায়, কথায়, আচরণে, বডি ল্যাঙ্গুইজে একধরনের পরিতৃপ্তির ভাব ও নির্লিপ্ততা ভর করেছিলো, এখন তারা ‘আগেই ভালো ছিলাম’ হা-পিত্যেশ মার্কা মনোভাব প্রকাশে বেশ সক্রিয়। কারও কোন অনুশোচনা নেই, হাজার মানুষ পাখির মতো গুলি করে মারার পরও ওরা কেউ কিচ্ছু দেখেনি! রাজনীতির এমন দেউলিয়াপনা সারা বিশ্বে বিরল।

ঙ.
সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক ভাষণে কী এমন মধু আছে যে আওয়ামী শিবির এমন উল্লাস করছে?
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ ঘোষণা উপলক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এর ভাষণকে ঘিরে যে নানা রকম জল্পনা কল্পনার ডালপালা বিস্তার হচ্ছে তার কতটুকু সত্য মিথ্যা আমরা বলতে পারি না। সময়ের ব্যবধানে হয়তো আরও পরিস্কার হবে। তবে পরিস্থিতি যে বেশ নাজুক, জুলাই বিপ্লব বেহাত করার যে গভীর ষড়যন্ত্র চলমান তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই কারণে সেনাপ্রধানের হুশিয়ারি, আহ্বান, মতামত সবকিছুকেই আমলে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে সব স্টেকহোল্ডারদের সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে।
সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ, বিএনপি, জামায়াত, নতুন দল সহ সবাই অনেক বেশি বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে, সেনাপ্রধান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর যে আঘাতের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন– তার দায়দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বয়ং সেনাপ্রধানও সেই দায় থেকে বাঁচতে পারবেন কি? সবাইকে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে বিদেশী প্রভুরা দিন শেষ লর্ড ক্লাইভের মতই আচরণ করবে, এর চেয়ে ভাল কিছু প্রত্যাশা না করে জিল্লতির শেষ ধাপের জন্যই প্রস্তুত থাকুন।

২৭ ফেব্রুয়ারি২০২৫

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো