spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাএ কে আজাদ এর কবিতা

এ কে আজাদ এর কবিতা

নন্দিনী ও শ্রাবণ দুপুর

তুমি এলেই কেমন বৃষ্টি নামে, দেখেছো নন্দিনী!

তপ্ত দুপুর ভিজে যায়, ভিজে যায় গোধূলী রঙ,

সন্ধ্যার জোনাকি ভিজে, ভিজে স্মৃতির পলেস্তরা!

প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় কেমন জ্বলে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলো!

দেশলাইয়ের কাঠির মতই জ্বলে ওঠে বুকের ভেতর!

সেই তুমি….!  তোমার সেই আসমুদ্র চোখ, 

আকাশ জোড়া দৃষ্টি, আর এক শ্রাবণ বৃষ্টি – 

এই নিয়েই তো বেঁচে আছি কতদিন!

সময়ের কাছে কত ঋণ, বল তো ! 

জীবনের কাছে কত ঋণ!

তুমি এলে তোমার চোখের এক ফোঁটা বৃষ্টি 

কেমন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হয়ে 

বলকে ওঠে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে!

অথচ সেই আগুনে পুড়তেই সাধ জাগে বারবার!

তোমার এই ছোট্ট শহর, শহরের প্রতিটি অলিগলি 

আজও সেই বৃষ্টি খুঁজে ফিরে এক অশান্ত পৃথিবী!

এক ফোঁটা বৃষ্টি দাও নন্দিনী, এক বুক আগ্নেয়গিরি দাও,

জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে ছারখার হোক 

আশাহত সময়ের বিমর্ষ লোকালয়।

আবার এসো নন্দিনী! আবার তুমি এসো 

কোন এক পড়ন্ত দুপুরে,

নিয়ে এসো দুচোখ ভরা রিমিঝিম বৃষ্টির এক শ্রাবণ!

আবার এসো তুমি। 

মুখোমুখি বসবে দুটি বিরহী শালিক।

একটা অচেনা বজ্রপাতে সবার অলক্ষ্যেই 

কেঁপে উঠবে দুটো বিড়াল-হৃদয়,

আচমকা বিদ্যুতের ঝলকানিতে তটস্থ 

কিছু সময়ের বুকে 

কান পেতে আমরা শুনবো সমীপস্থ হৃদয়ের ধুকপুক।

আর দুচোখের শান্ত শূন্য মাঠে অঝোর ধারায় ঝরে 

যাবে অন্য রকম এক আবেশী শ্রাবণ।

আবার তুমি এসো নন্দিনী! আবার তুমি এসো।

আষাঢ়ের বৃষ্টি ভেজা কদম ফুল

এক ফালি স্বপ্নের চাঁদ টুকরো টুকরো করে

একটা মৃত জোনাকী তুলে দিলে আমার দু’হাত ভরে। 

নন্দিনী! তবুও তোমাকে ঘিরে স্বপ্নের ঘোরে জেগে ওঠে রতির উৎসব।

ভেঙে যাওয়া বাঁশিতে সুর তুলতে নুয়ে পড়ে স্বরলিপি’র প্রতিটি ধ্বনি।

দেহের হারমোনিয়ামে বেজে ওঠে বেজায় বেসুরো গান।

এই কদম ফুলের কপালে লাগে না আষাঢ়ে বৃষ্টির ফোটা।

নন্দিনী! এভাবে কি গান শোনালে রাত্রির কানে?

আজ আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ধুয়ে দিলে হৃদয়ের দেয়ালে ছিল যত স্বপ্নের আঁকিবুঁকি।

আজকের আষাঢ়ই তবে হয়ে গেল কবির চোখ!

এক পশলা মেঘ হয়ে তুমি উড়ে গেলে এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে। 

হৃদয়ের জমিনে বড় অবহেলায় পড়ে রইল ক’ফোঁটা বৃষ্টির জল।

আজ তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই নন্দিনী;

নেই কোন প্রতিবাদ।

আজ তবে বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলই হৃদয়ের খাতায় হয়ে থাক ভালবাসার শ্রেষ্ঠ কবিতা। 

কবির জন্মদিনে কফির উৎস

কফির কাপে জমে ওঠা সন্ধ্যার কপালে চুমু দেয় ভাপ ওঠা হেমন্তকাল। 

সময়ের গায়ে মিশে যাওয়া রাত্রির ঘুম কেড়ে নিয়ে একাকী জেগে থাকে নন্দিনী।

হুরপরী নেমে আসা এই দিনটাকে ভরিয়ে দিলাম কবিতার আল্পনায়।

ও রাত্রি তুমি জেগে থাকো, চেয়ে থাকুক চাঁদনী।

ঊর্মির দোলাতে দুলতে দুলতে ভেঙে যায় বাধার দেয়াল।

আর কত দিন এমন নীরবে চেয়ে রবে আশার পুতুল?

এই ঠোঁট জোড়াতে দিয়েছি যুগের সেলাই। 

তবু্ও বুকের ভেতরে কেমন খলবল করে  নেচে ওঠে এক উড়ুক্কু কই মাছ।

চোখের ভেতরে ডেকে ওঠে এক নরম বিড়াল।

উদগ্র আলোতে হেসে ওঠে  কার যেন ঠোঁট! 

আলো-আঁধারিতে কথা কয় চোখ, ভ্রু, এমনকি মাথার কেশ।

নিশিথের ইশারায় ভেঙে যায় নীরবতার প্রাচীর, 

জেগে ওঠে কবি, কবিতার কথন, ভেঙে যায় ছন্দের ঘুম।

ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে এক কাপ কফির পরশ। জন্মদিনের উষ্ণতায় ভরে থাকে সারাটি ক্ষণ।

সন্ধ্যার কামড়ে রক্তাক্ত সূর্য

সন্ধ্যার কামড়ে অস্তগামী লাল সূর্যের মতো 

প্রতিদিন রক্তাক্ত হয় আমার সমস্ত দিন।

আমার ভেজা স্বপ্নেরা অন্ধকারের বালিশে 

মাথা রেখে নিদ্রা যায় রোজ।

শব্দের কারুকাজে দহনের জ্বালা,

কী দিয়ে সাজাবো তারাদের বাসর?

প্রাত্যহিক সকালে ঘাসের ডগায় কোন মতে 

বাঁচিয়ে রেখেছি প্রত্যাশার শিশির।

আবার কি উঠে দাঁড়াতে পারবে –

আমার আহত স্বপ্নের বাবুই পাখিটা?

নিকষ কালো অন্ধকার করেছে সূর্যগ্রহন। 

আহা! সময়ের ভাঙা দেয়ালে বড়ই কষ্টে আজও 

বেঁচে আছে জীবনের পরগাছা। 

অশ্বত্থ গাছ হয়ে বেড়ে উঠবে কি কাঙ্খিত 

সুদিনের চারা গাছ?

নিজের কাছেই নিজে কেবল গত হই

একবিংশ শতাব্দীর আমি এক কবিতা-শ্রমিক।

শব্দের জাল বুনি, স্বপ্নের ফেরি করি, 

মৎস শিকারীর মতন সারা রাত ধরে বসে থাকি আলোকের সন্ধানে।

আমি তো অন্ধকারের খোঁপায়

গুঁজে দিতে জানি জোনাকির ফুল,

অথচ বিরল অমাবস্যার এক সর্পিনী প্রতিনিয়ত দংশন করে আমাকে।

কালো ভ্রমেরর দল সারাক্ষণ আমার নরম শরীরে ফোটায় বিষাক্ত হুল।

আমি কি করে খুঁজে আনি জোনাকির ফুল?

আমার অসহায় বুকের ভেতরে আমি কেবল 

খরস্রোতা একটা নদী বানাই, বিশাল এক নোনা সাগর বানাই;

আর চিরন্তনী আলোর উৎসমূলের কাছে 

প্রতিদিন বারে বারে নত হই,

এভাবেই প্রতিদিন নিজের কাছেই নিজে কেবল গত হই।

০৯.০৮.২০২৩

শোকের ভাষা

কখনো কখনো শোকের বাতাস ছড়িয়ে পড়ে 

জমিন থেকে আসমান অবধি,

চোখের জল জমতে জমতে বরফের হিমালয় হয়ে

দাঁড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। 

স্বপ্নময়ী পাখিদের চোখ থেকে ঝরে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগর,

ভুমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশ থেকে মহাদেশ।

শোকের সেই মিছিলে দ্রোহের কোন স্লোগান থাকে না,

কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাইক্লোন থাকে,

নির্বাক কবিদের কলমে তখন কোন ভাষা থাকে না,

চিত্রশিল্পীরা সমস্ত মানচিত্র জুড়ে কেবল  

লক্ষ লক্ষ অশ্রুসজল চোখ আঁকে।

কৃষকের লাঙ্গল থেমে যায় আমন ধানের জমিতে,

হালের বলদ অলস হয়ে শুয়ে থাকে কিষাণীর গোয়ালে,

ঘরণীর হাতের থালাবাসন থমকে দাঁড়ায় পুকুরের ঘাটে,

তারাও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে চোখের জলে পথ খোঁজে,

যারা বিকিকিনি করে হাটে;

এ কী কান্নার সুর শুনি আজ পাখিদের গানে!

এ কেমন মাতম শুনি আজ হাওয়ার কানে?

আচ্ছা, শোকের কি কোন ভাষা থাকে?

নাকি বুকের ভেতরে হাই রিকটার স্কেলের ভূ-কম্পনই শোকের সব থেকে বড় ভাষা?

সাত আসমান থেকে অবিরাম ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাই

কি শোকের একমাত্র ভাষা?

নাকি নির্ঘুম রাতের প্রতিটি তারাই একেকটি শোকের পিরামিড?

না কি শোকের কোন ভাষা থাকে না?

কলমের ডগায় কোন শব্দ থাকে না?

কেবল অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাই বুঝি

শোকের একমাত্র ভাষা!

সীমাহীন সাগরের পাশে দাঁড়িয়ে 

সমস্ত নোনা জল চোখের ভেতরে ধরে রাখাই বুঝি

শোকের একমাত্র ভাষা!

১৪.০৮.২০২৩

রাত ১১টা ৪৭ মি.

এ কে আজাদ : কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক। 

১৯৭৮ সালের ২৮ শে নভেম্বর। পড়াশুনা করেছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে; বি.এ. (অনার্স) এম.এ.

প্রকাশিত সৃষ্টিসমূহ :

একক

১. মায়ের আঁচল গাঁয়ের ছায়া  (কিশোরকাব্য-২০০৯)

২. মৃত্যু তোমাকেই বলছি (কবিতা-২০১০)

৩. তুই কি আমার দুঃখ হবি (কবিতা-২০১০)

৪. ইষ্টি ছড়া মিষ্টি ছড়া (শিশুতোষ ছড়া- ২০১১)

৫. রক্তে লেখা সূর্য-হাসি (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিশোরকাব্য- ২০১২)

৬.  টিন টিনা টিন টিন (শিশুতোষ ছড়া-২০১৩)

৭. নদী নারী মাটির কাব্য (কবিতা-২০১৫)

৮. কালো রোদ্দুর লাল বৃষ্টি (কবিতা-২০১৫)

৯. বিমর্ষ ল্যাম্পপোস্ট (কবিতা- ২০১৯)

যৌথ

১. ছড়ামাইট (যৌথ ব্যঙ্গ ছড়া-২০১১)

২. কাঁটাতার (যৌথ ব্যঙ্গ ছড়া-২০১১)

৩. স্বনির্বাচিত কবিতা (কবি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত যৌথ কাব্য ২০১৮)

সম্পাদনা:

১. স্বদেশ (সাহিত্য সাময়িকী, ফেব্রুয়ারি- ২০০১)

২. কলম চলবে- ২য় খণ্ড (ভারত-বাংলাদেশের কবিদের যৌথ কাব্য সংকলন-২০১৮)

৩. সাধের খাতা (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাভাষী কবিদের যৌথ অণু কবিতা সংকলন -২০১৯)

৪. ওয়ারিদ (সংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন, সিয়াম সংখ্যা ২০১৯)

৫. দর্পণ, কবিতা সংকলন-বইমেলা -২০২০

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছেন :

১. শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরষ্কার -২০১০, 

২. সৃষ্টিশীল লেখক সংঘ সম্মাননা-২০১১, 

৩. বগুড়া সংস্কৃতিকেন্দ্র এ্যাওয়ার্ড-২০১২,  

৪. রংপুর বিজয় উৎসব ও গুণীজন সম্মাননা-২০১২,

৫. ডিসিএল গুণীজন সম্মাননা-২০১৩,

৬. রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯ (ভারত)

৭. ধূমকেতু সাহিত্য পদক-২০১৯। 

৮. কাব্যমঞ্জরি সম্মাননা – ২০২১।

৯. কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি সম্মাননা (বাংলাদেশ কালচারাল কল্যাণ পরিষদ)-২০২২।

ই-মেইল: akazadkobi@gmail.com

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ