spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকতারুণ্যের দল 'এনসিপি' : সামনে সাফল্যের সম্ভাবনা

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

তারুণ্যের দল ‘এনসিপি’ : সামনে সাফল্যের সম্ভাবনা

 

তাজ ইসলাম 

২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করল নতুন একটি রাজনৈতিক দল। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ তার নাম। জানাপ বা এনসিপি নামে পরিচিত হচ্ছে। ইতোপূর্বে আরও অনেক রাজনৈতিক দলই গঠন হয়েছে। বড় কয়েকটি দল ছাড়া অন্যরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বহু দল এক নেতার দল হয়ে নাম জারি রেখেছে। কোন-কোন দল সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে বেঁচে আছে। রাজনৈতিক দলগুলো শুরুতেই গড়ে ওঠে ডান, বাম, সেকুলার, ইসলামপন্থী পরিচয়ে। কতক দলের জন্ম অন্য আরেকটি দলের ভাঙনের সূত্র ধরে। নতুন রাজনৈতিক দল প্রকাশ হওয়ায় অনেক সময় তাই চমকহীন বিষয়ই বটে। কিন্তু এনসিপি’র বেলায় ভিন্নতা আছে। এ জন্যই এই দল নিয়ে কথা। কথা বলতে একজন নাগরিক হিসেবে নিজের ভাবনা। কি হতে পারে, কি হবে এইসব চিন্তা-চেতনা।

এনসিপি’র গঠন বা মূল বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক মাত্রই জ্ঞাত। এটি গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে।

যাদের নেতৃত্বে উৎখাত হয়েছে হাসিনার স্বৈরশাসন। এই জন্যই এর গুরুত্ব অন্যরকম।

নাহিদ, সারজিস, হাসনাত, আকতার বৃহৎ পরিসরে বলতে গেলে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনে পালিয়ে গেছে হাসিনা।এই ছাত্রদের নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছে এনসিপি। আমাদের বা জনতার আশা আকাঙ্খা তাদের প্রতি একটু বেশি থাকাই স্বাভাবিক।

রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে চলমান অবস্থা ও অতীতকে ধর্তব্যে রাখতে হবে।

আওয়ামীলীগ বিগত পনের বছর লাগাতার ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রয়ে গেছে তাদের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। আওয়ামীলীগের থাকতে পারে দুটো গ্রুপ।একটা কট্টর  আরেকটা সফট ও সুবিধাবাদী গ্রুপ। আওয়ামীলীগের সীমাহীন জুলুম অত্যাচারে দ্বিতীয় পক্ষটা হয়তো তাদের আওয়ামী প্রীতি হতে সরে আসতে পারে। কিন্তু কট্টরপন্থীরা আওয়ামী মতবাদে অটল থাকবে। এবং এদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। এরা অন্তরে আওয়ামীলীগ থেকে বাহিরে নানা বর্ণ ধারণ করে নতুন দলের বাধার কারণ হবে। এই হিসাটা নির্বাচনী হিসাব। দল যেহেতু গঠন হয়েছে লক্ষ তাদের নির্বাচন ও ক্ষমতা হওয়াই স্বাভাবিক। এই কথাগুলো পরের ধাপের। আগে চলে আসছে, আগেই বলে ফেলি।

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, দলীয় প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতেও ভয় পাবে। তবু নিষিদ্ধ না হলে তারা নির্বাচনে দাঁড়াবে। দলীয় প্রতীক ছাড়াও দাঁড়াবে। ভোটের হিসাবে অনেকগুলো আসনও পেয়ে যাবে।

এনসিপির যারা নেতৃত্বে তারা কিছু হিসাব চুকিয়ে নিতে পারত ৫ আগস্ট ২০২৪ এ। তারা গঠন করতে পারত বিপ্লবী সরকার। তাৎক্ষণিক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারত আওয়ামী দস্যুদের। বিচার করতে পারত জুলাই আগস্টের গণহত্যাকারীদের। আইন করে নিষিদ্ধও করা যেত আওয়ামীলীগকে। আগস্টের ৫ তারিখে আন্দোলনের নায়করা ধরে নেওয়া যায় কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে, হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল কর্তৃত্ব। এরই ফলশ্রুতিতে তাদের গঠন করতে হল দল। বলা যায় ফসকে যাওয়া কাজের কাফফারা আদায় করতে হবে দল গঠন করে।

তারা সারা দেশবাসীর সহানুভূতি প্রাপ্ত ছিল। তখন ক্ষমতায় গেলেও সমান সহানুভূতি পেত। এখন দল গঠন করায় আগের সহানুভূতি থেকে অবশ্যই দূরে সরে আসছে। এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে অন্যসব রাজনৈতিক দলের মতোই নানা রকম বাঁধা ও বিপত্তি। জনতার চোখেও তারা এখন রাজনীতিবিদই। আওয়ামীলীগের বিদায়ের পর তাদের সামনে আছে অন্যন্য দলগুলো। জাতীয় পার্টিকে এক বাক্যে বলা যায় আগামীর বাংলাদেশে গুরুত্বহীন দল। ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। স্বপ্ন অমূলক নয়। স্বপ্নের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন বাংলাদেশের নতুন দল এনসিপি। কাজেই এনসিপিকে একটি প্রতিষ্ঠিত দল যতভাবে আটকানো যায় তার চেষ্টার ত্রুটি করবে না। বিএনপির সাথে এনসিপির সকল রকমের খেলাই খেলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আরেকটি প্রতিষ্ঠিত দল। রাজনীতিতে তারাও দক্ষ। ক্ষমতার স্বপ্ন তাদের সামনেও। এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়া হয়তো জামায়াতের পক্ষে সম্ভব না।

ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের গ্যাপ আছে। বহুবিধ অভিযোগ ও বিতর্কের কারণে জামায়াত জনবান্ধব দল হতে পারেনি। খোলাসা করে বললে সংসদীয় আসন উদ্ধারের মতো ভোট তারা তৈরী করতে পারেনি। জনসভায় কর্মী সমর্থকের উপস্থিতি আর ভোটের রাজনীতির মাঝে একটু ফারাক আছে। একটা জনসমাবেশে একাধিক আসনের কর্মীর উপস্থিতি দলের সমাবেশকে সফল প্রদর্শন করতে সহায়তা করে। অপরপক্ষে সংসদীয় আসন উদ্ধারের জন্য নির্ধারিত সীমানার ভোটারদের প্রয়োজন। তিক্ত সত্য হল ৫৪ বছরে জামায়াত তা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। বিএনপি সারাদেশে যেভাবে নিজেদের আসনে বিজয়ী হওয়ার মতো ভোটার তৈরী করতে পেরেছে জামায়াতের তা নাই। এখন পর্যন্ত বাস্তবতা এমনই। জামায়াত যদি মনে করে এ বাস্তবতা থেকে তাদের উত্তরণ ঘটেছে তাহলে আমরা তর্কে যাব না। সামনের দিনের জন্য অপেক্ষা করব। ধারণা করা যায় তারা আগের অবস্থায় নাই। জনসমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে, ভোটার ও কর্মী সংখ্যাও বেড়েছে। কি পরিমাণ বেড়েছে, সংখ্যা গরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌছেছে কি না?  তার জন্য ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

এনসিপির সামনে এই দুই দলই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামীলীগ এই তিন দলের শত্রু।আওয়ামীলীগের শত্রু তালিকার শীর্ষে এনসিপি। সুতরাং এনসিপিকে আওয়ামীলীগের শত্রুতা ও অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করেই সামনে এগুতে হবে। বিষয়টি মোটেই সহজ না।

এনসিপির সামনে সফলতার সম্ভাবনা আছে। তারা যদি সাংগঠনিক দক্ষতায় সারাদেশে যোগ্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ত করতে পারে। নানা পেশার দক্ষ লোকদের দলে ভিড়াতে পারে। আন্দোলনের সফলতাকে ক্যাশ করে জনগণের কাছে পৌছতে পারে তাহলে জনগণও তাদের গ্রহণ করবে। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ, বিএনপির পর তৃতীয় শক্তি হিসেবে তারা পরীক্ষামূলক প্রথম টার্গেটে থাকতে পারে এনসিপি। এনসিপিকে গ্রহণ করবে মনে করা যায়। এই গ্রহণ যোগ্যতা অর্জনের পথের যে বিপত্তি তা ডিঙ্গিয়ে যেতে পারলেই তারা সফল।তবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হয়ে গেলে বিজয়ী শক্তি তাদের পথকে করে দিবে কঠিন। জেল জুলুম ও দল ভাঙনের খেলায় পড়ার সম্ভাবনায় থেকে যায়। ভবিষ্যতে এনসিপি ভাঙনে পড়ে গেলে তারা আবারও হোঁচট খাবে। একটা কথা বলা যায় এনসিপি দল থাকবে কি থাকবে না এটি বলে দেওয়া একটু জটিল। কিন্তু একটি কথা বলা যায় এনসিপিকে ঘিরে যে নেতৃত্ব তৈরী হবে আগামীর বাংলাদেশে ক্ষমতার বলয়ে এইসব নেতৃত্বের অনেকেই থাকবে। এবং রাজনীতি তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। নিকটতম নির্বাচনে বিএনপি একক ক্ষমতার জন্যই চেষ্টা করবে।এনসিপি তখন জোটবদ্ধ হয়ে গেলে হিসাব অন্যরকমও হতে পারে। রাজনীতির এই গেইমে তখন তারাও হতে পারে বিজয়ী পক্ষ। নির্বাচনের আগের সময়টাই তাদের মূল সময়। এই সময় নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারলে, দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌছতে পারলে পথ চলা তাদের সহজ হয়ে যাবে। আমরা মনে করি সরকারী আনুকূল্য এখনও এনসিপির পক্ষে, জনতার সুদৃষ্টিও এনসিপির পক্ষেই থাকবে। 

তবে চূড়ান্ত কথা বলে কোন কথা নাই।সম্ভবনা, সময়, সুযোগ, আনুকূল্যের সফল সমন্বয় তাদের পথকে সহজ করতে সহায়ক। আমরা নতুনকে বরণ করতে প্রস্তুত। তারুণ্যের জয় চায় বাংলাদেশ।

তোমরা তৈরী হও। তোমরা জয় কর ও শাসন কর। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো