spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকশাহবাগী শব্দটা কীভাবে এলো

লিখেছেন : আনিসুর রহমান

শাহবাগী শব্দটা কীভাবে এলো

আনিসুর রহমান

জামাত নেতা কাদের মোল্লাকে ৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তে মানবতা বিরোধী অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার রায় প্রদান করে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পছন্দ হয়নি তখনকার সময়ের নাস্তিক ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের। তারা শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং সাধারণ জনতাকে শাহবাগে শামিল হওয়ার আহবান জানায়। ব্লগার ও এক্টিভিস্টরা দাবি করে তারা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে না, কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে হবে।

শাহবাগের ধাত্রীরা সেখানে দিনের পর দিন পুলিশি প্রহরায় অবস্থান করে, রাস্তা বন্ধ করে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, সারাক্ষণ মাইক বাজাত যেখানে দুটো বড় হাসপাতাল ছিলো, স্কুল ছাত্রছাত্রীদের সেখানে জমায়েত হতে বাধ্য করা হত এবং নিরাপত্তা বাহিনী শাহবাগের নেতাদের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ব্যয় করত।

এটা ছিলো এমন এক আন্দোলন যেখানে সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো।

শাহবাগের ধাত্রী ব্লগার ও এক্টিভিস্টরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করে। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা প্রগতিশীল তারা সবসময় ফাঁসির বিরোধিতা করে। উন্নত দেশগুলোতে সর্বোচ্চ অপরাধীকেও ফাঁসি দেয়া হয় না। কিন্তু আমরা দেখলাম শাহবাগে বিচারের বদলে ফাঁসির দাবি তোলা হয়েছিল। যেটা ছিলো একটা মব। সরকার আয়োজিত মবের মাধ্যমে আদালতকে ফাঁসির রায় দিতে বাধ্য করেছিল।

যারা নিজেদের প্রগতিশীল মানবতাবাদী দাবি করে, তারাই শ্লোগান তুলেছিল, ‘একটা দুইটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর।’ সভ্যতার উৎকর্ষতার এই সময়ে তাদের এসব শ্লোগান ছিলো চরম সভ্যতা ও মানবতা বিরোধী।

শাহবাগে কোমলমতি শিশুদের দিয়েও বিভিন্ন রাজনৈতিক শ্লোগান দেয়া হয়। 

শাহবাগ চত্ত্বরের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যার হুমকি ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হতো। দাড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকসমূহের অবমাননা করা হয়েছিল।

শাহবাগের বিক্ষোভকারীরা ইসলামী ব্যাংক ও হাসপাতালএবং রেটিনা কোচিং সেন্টারসহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভাঙচুর চালায় এবং আক্রমণ করে।

গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিক্রিয়ায় ২০১৩ সালের ৫ ই মে হেফাজত ইসলাম একটি কর্মসূচীর ঘোষণা করে। হেফাজতের এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিলো, ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ স: সম্পর্কে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্লগারদের অশালীন লেখালেখি, গণজাগরণ মঞ্চে আলেম ওলামাদের নিয়ে কটূক্তি, অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড এবং ইসলামের বিভিন্ন প্রতীকের অবমানার প্রতিবাদ। তারা ঢাকায় মহাসমাবেশের ঢাক দেয়। মহাসমাবেশ শেষে সে রাতে পুলিশ গুলি করে অসংখ্য ঘুমন্ত হেফাজত কর্মীকে হত্যা করে। হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিশীল গোষ্ঠী মনে করে, এই হামলায় ১-৩ হাজার হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে, সরকারের দাবি ১০-১২ জন এবং নিরপেক্ষ সূত্রের দাবি ৫০-৬০ জন।

শাহবাগ আন্দোলনে প্রথমে অনেকই না বুঝে গিয়েছিল কিন্তু জনতা যখন দেখল, সেখানে ইসলাম অবমাননা করা হচ্ছে তখন তারা সেখান থেকে সরে আসে।

শাহবাগী শব্দটা কীভাবে এলো?

শাহবাগ থেকেই শাহবাগী শব্দটা এসেছে। শাহবাগী শাহবাগ আন্দোলনের আগেও ছিলো,  পরেও থাকবে। শাহবাগ হচ্ছে একটা বর্গ। যারা  এদেশের মুসলমানদের মনে করে অশিক্ষিত, ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। শাহবাগীরা তাদের মতের সাথে মিল না হলেই তাদেরকে ধর্মান্ধ হিসেবে ট্যাগ দেয়।

শাহবাগীদের সবচেয়ে বড় লক্ষণটি দেখা যায়, তারা সবসময় মুসলিম আইডেন্টিটিকে নাই করে দিতে চায়, তারা এমন এক সেক্যুলারের কথা বলে যেটা মূলত হিন্দুত্ববাদী। 

কেউ যখন শুদ্ধ করে সালাম দেয় শাহবাগীরা তাকে জঙ্গি সন্দেহ করে। কেউ যখন কেমন আছোর বিপরীতে আলহামদুলিল্লাহ বলে বা কথার মধ্যে ইনশাল্লাহ, মাশাল্লাহ ব্যবহার করে তখন তাদের কাছে মনে হয় লোকটি মৌলবাদী।

কুরবানের সময় এলে পশুর প্রতি শাহবাগীদের মায়াকান্না বেড়ে যায়, অথচ তারা সারাবছর তারা গরু,খাসি সবই খায়। এটা তাদের এক ধরনের ভণ্ডামি এবং মুসলিম ঘৃণা।

শাহবাগীরা এদেশে সমকামিতার প্রসার চায়। তারা সমকামিতাকে মনে করে মানুষের চয়েস ও জৈবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু আমরা দেখি, সব ধর্মেই সমকামিতাকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়ে আসছে। তাছাড়া সমকামিতা একটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ, কিন্তু তারা সেটা মানতে চায় না। তাদেরকে যখন বলা হয়, কোনো ধর্মেই এটাকে সমর্থন করে না, তখন তারা ধর্মকেই গালাগালি করে।

ধূমপান নরনারী উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরোধিতা করায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। এমনকি রমজান মাসে শাহবাগী নারীরা শত শত ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে ধূমপান করে এবং ঘোষণা দেয় তাদেরকে প্রকাশ্যে ধূমপান করার অধিকার দিতে হবে।

যা কিছু বাংলাদেশের জনগণ পালন করে তার বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায় শাহবাগীদের।

মুসলমানরা রমজানে হোটেল রেস্তোরা খোলা রাখা পছন্দ করে না। অনেক হোটেল রেস্তোরার মালিকই ইচ্ছে করে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ রাখেন। কিন্তু শাহবাগীরা মনে করে, এতে করে নাকি মানুষের কষ্ট হয়। কিন্তু তারা কী জানে না, মানুষ কী শুধু হোটেল রেম্তোরায়ই খায়? ঘরে কি রান্না করে না?  রমজানের শুরুর দিকে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ করে দেয়ার কারণে শাহবাগীরা অনলাইনে একটা ক্যাচাল বাঁধায়।

শাহবাগীদের সবসময় এদেশের মুসলমান এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে হাসি তামাশা করতে দেখা যায়।

আমি এক বই পড়ুয়াকে চিনি, যে সবসময় বই নিয়ে পোস্ট দিত, কিন্তু চিন্ময় কৃষ্ণকে যেদিন গ্রেফতার করা হলো সেদিন ছেলেটি চিন্ময়ের গ্রেফতার ইস্যুতে প্রতিবাদ করে একটি পোস্ট দেয়। কিন্তু পরদিন বিকেলে যখন এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার খবর আসে তখন তাকে আর হত্যাকাণ্ডটির প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। ওই সময় ছেলেটি আবার বই নিয়ে মেতে থাকে। কিন্তু কেন তার এই দ্বিচারিতা? ছেলেটির নাম কিন্তু মুসলমানী। সে মূলত এদেশে হিন্দুত্ববাদের অনুশীলন করে। আর উপরে সেক্যুলারের ভান ধরে। এই ছেলেকে কী বলা যেতে পারে? এই হচ্ছে শাহবাগীর অন্যতম উদাহরণ।

শাহবাগীরা হচ্ছে এমন এক বর্গ যারা ইসলামকে শুধু অস্বীকারই করে না একেবারে নি:শেষ করে দিতে চায় সেটা হত্যাকাণ্ড কিংবা গুমের মাধ্যমে হলেও, তারা চায় না এদেশে কোনো ইসলামী চিহ্ন থাকুক। সেটির আনুষ্ঠানিকভাবে তারা যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে।

আমাদের তাই শাহবাগীদের চিনতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প
কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন