spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকঢা.বি কর্মচারী হযরত অর্ণব, ক্রিমনলজি ও ছাত্রদের রাজনীতি

লিখেছেন : আবু তাহের তারেক

ঢা.বি কর্মচারী হযরত অর্ণব, ক্রিমনলজি ও ছাত্রদের রাজনীতি

আবু তাহের তারেক 

ক্লাসিকাল ক্রিমনলজিতে অপরাধীরে অপরাধ অনুসারে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হইছে (বেন্থাম, ২০০৭)। এইটারে রেশনাল চয়েস থিওরি বলা হয়। 

আধুনিক সময়ে, অপরাধবিদ্যায় পজিটিভিস্ট, সাইকোলজিকাল ও সোশলজিকাল ইন্টারভেনশন তৈয়ার করা গেছে। এর ফলে, সাইকোলজিতে, অপরাধের সাইকোডাইনামিক থিওরি, পারসোনালিটি থিওরি, কগনিটিভ থিওরি, ডেভেলপমেন্টাল থিওরি, সোশাল আইডেন্টিটি থিওরির উদয় হইছে। সমাজবিদ্যায়, ফাংশনালিস্ট ও মার্ক্সিস্ট থিওরির উদয় হইছে। 

এইসব থিওরির কারণে, অপরাধের চাইতে, অপরাধীরে বেশী গুরুত্ব দিয়া দেখার চল শুরু হইছে। ক্লাসিকাল ক্রিমনলজিতে শাস্তি দেওয়ার চল আছিল। এখনকার সময়ে, সংশোধন করার পন্থা আবিস্কার করা হইতেছে। 

এমনই একটা সংশোধনমূলক লেখা লরা বলগের নামের একজন রিসার্চারের। টাইটেল, ‘গ্যাংস- হোয়াট ক্যান সাইকোলজি অফার’। এই লেখায় ভায়োলেন্সরে ডিজিজ হিসাবে দেখার কুশিশ আছে। তিনটা থিওরি, যথাক্রমে সোশাল আইডেন্টিটি থিওরি, আইডেন্টিটি থিওরি এবং কনসেপ্ট অফ রুল ট্রানজিশনস এর মিশেলে, মনোবিজ্ঞানী কোলবার্গের ‘মোরাল রিজনিং’ থিওরির ফ্রেমওয়ার্কে, তিনি একটা হেলথ আইডেনটিটি ইন্টারভেনশনের পথ খুজছেন (HII)। 

তিনি দেখাইছেন, এই উপায়ে স্কটল্যান্ডের কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ অর্ধেকে আনা সম্ভব হইছিল (Scotland’s Violence Reduction Unit). SVRU এর সাফল্যে উজ্জীবীত হইয়া, লন্ডনের মেয়র হজরত সাদিক খান কসমোপলিটান শহর লন্ডনের জন্য একই প্রকারের, কিন্তুক, আরো ফুল ফ্লেজেড কর্মসূচি হাতে নেন। 

উপরের লেখাটা অপরাধ ও অপরাধীরে ট্রিট করার একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলাম। হজরত লরা বেলগের অপরাধ দমনের কৌশল হিসাবে অপরাধীদের লগে একটা কো-অপারেটিভ সম্পর্ক স্থাপনের উপর জোর দিছেন। এছাড়া, আমরা আগেই বললাম, তিনি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেওয়ার চাইতে, তাদেরকে সুস্থ করার উপর বেশী জোর দিছেন। তার কাছে অপরাধ একটা ডিজিজ।

এতটুকু কথা বললাম, ঢাবির একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঢাবির ছাত্রদের ‘শাস্তি’ চাওয়ার রূপ দেইখা। কর্মচারিটির নাম অর্ণব বইলা জানলাম। ছাত্ররা শাস্তি হিসাবে উনারে চাকরিচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ হইতেছেন। এইটারে আপনে ক্লাসিকাল পকরিতির অপরাধবিদ্যা ফলানি হিসাবে দেখতে পারেন। উনার অপরাধ, উনি একজন মহিলা ছাত্ররে উত্যক্ত করছেন। 

জানা গেল, এই ঘটনার পরে উনি ০১. মাফ চাইছেন। ০২. জেলে গেছেন। ০৩. উনার ফোন ছাত্ররা কাইড়া নিছে। ০৪. উনার পারসোনাল কর্মকান্ড ভাইরাল হইছে। (এইগুলা অনেক ঘটনার কিছু সামারি। এতে, মোল্লাতান্ত্রিকদের ইন্টারভেনশনের অংশটা আনলাম না। আলাপ বড় হইবে, তাই।)

আমার অপরাধবিদ্যার সামান্য পাঠ এতটুকু বলে, যে, যেই মেয়ের প্রতি জুলুম করা হইছে, তার লগে একটা ‘রেস্টোরেটিভ জাস্টিস সিস্টেমের’ মধ্য দিয়া এনগেইজ  যাইত। কিন্তুক, ছাত্ররা অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণের পথই বাইছা নিছেন, মনে হইল। তারা হযরত অর্ণবের চাকরিচ্যুতি চাইতেছেন। একটা প্রতিষ্ঠানে কাম করলে, তার কৌড অফ কন্ডাক্ট থাকে। সেই অনুযায়ী কুনু পতিষ্টান কর্মচারীর চাকরি, কিছু ক্রাইটেরিয়া মাফিক, চ্যুত করতে পারে। তো, ছাত্ররা ভার্সিটির কৌড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী উনার বিচার না চাইয়া, উনারে বরখাস্ত দেখতে চাইতেছেন। বেপারটা আমাদেরকে ‘১৩ সনের শাহবাগের কথা মনে করাইয়া দেয়। উনারা তখন বিচার চান নাই, কল্লা চাইছিলেন। 

বিচার না চাইয়া, শাস্তি চাইবার রীতিরে আমরা শাহবাগপন্থা বলতে পারি। শাহবাগপন্থার আরও একটা দিক আছে। তারা সিলেক্টেড বিষয়রে ডিল করে। ‘১৩ সালে শাহবাগপন্থীরা বিরোধী দলীয় প্রতিপক্ষরে শায়েস্তা করতে চাইছিল। ‘২৫য়ে এইটা হইল নারী হেনস্থাকারী।

কিন্তুক, দেখবেন, অর্ণব কান্ডের কাছাকাছি সময়ে, ২০২২-২৩ সেশনের বাংলা বিভাগের ছাত্র, তাহমিনা তামান্নাকে নিকাব পরার কারণে হ্যারাস করা হইছে। উনার শিক্ষকই তা করছেন। এখন, তাহমিনার শিক্ষকের বেপারে ছাত্ররা, সেই অর্থে, কঠিন অবস্থান নেন নাই।

লাল জুলাইয়ের পরে বাংলাদেশের অবস্থা, বিশেষত, আইন ব্যবস্থা চরম অবনতি লাভ করে। যে যারে ইচ্ছামত হয়রান করতেছে। আমার আপন ভাইরে মিথ্যা মামলায় ফাসানো হইছে। ফাসানো হইছে আমার আপন চাচাত ভাইরেও। ওরা আইজ অনেকদিন হয়, ঘরবাড়ি ছাড়া। যেই ছাত্র সম্প্রদায় জনতারে লইয়া দেশ বাকশালমুক্ত করল, তারা আইজ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তারা দেশ গড়ার কথা বললেও, তাদের প্রায়োরিটি লিস্টে সুশাসন ও বিচারের কথা ঠিক তেমন করে উপস্থিত না। বাকশালরে যেমন দমন করা হইতেছে না, তেমন, বাকশালের নামে নিরপরাধ মানুষকে হয়রান করা হইতেছে। নতুন লুটেরা শ্রেণীর উৎপাত শুরু হইছে। 

এই অবস্থায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ হইতে অর্ণবের বহিস্কারাদেশ দাবী বিভিন্ন রকম প্রশ্নের উদ্রেক করে। কয়েকটা প্রশ্ন করাই যায়- ০১. ঢাবির যেই ছাত্ররা লাল জুলাই ঘটাইল, তারা কি দেশ বলতে ঢাবিকেই মনে করে? ০২. ঢাবিতে একই সময়ে দুইটা হ্যারাসমেন্টের ঘটনা ঘটছে। একটা ঢাবি কর্মকর্তা অর্ণবের মাধ্যমে, ঢাবির এক স্টুডেন্টের উপরে। অন্যটা, ঢাবির টিচারের মাধ্যমে, ঢাবির আরেক স্টুডেন্ট তাহমিনা তামান্নার উপরে। প্রশ্ন হইল, কেন অর্ণবের কেইস এমন হইল, যে উনার চাকরিই খাইতে হইব, কিন্তুক, তাহমিনার টিচারের বেলায় তেমন কিছুই হইল না! ( উনি, এমনকি, দু:খ প্রকাশ করছেন, সেই নিউজও আমরা পাই নাই)। ০৩. ছাত্ররা অর্ণবের বিচার না চাইয়া, চাকরিচ্যুতি চাইতেছে কেন! 

লাল জুলাইয়ের পরে ছাত্রদের সামনে একটা সুযোগ আসছিল, দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিবার। এতে জনগনের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনও আছিল। দেখতে দেখতে, আরেকটা জুলাই আইসা যাইতেছে। ছাত্ররা জুলাইয়ে হতাহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে পারে নাই। বাকশালের বিচার ও নাগরিক হয়রানি রোধ নিশ্চিত করতে পারে নাই। এমনকি, অনেকের এই অভিযোগও আছে, দীর্ঘদিন পরে ছাত্রদের যে দল গঠিত হইল, তাতে জনতার নেতৃত্ব নিশ্চিত করা হয় নাই। ঢাবি ছাড়া, অন্যান্য ভার্সিটি, বিশেষ করে, প্রাইভেট ইউনিগুলার প্রোপরশনাল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় নাই। 

এমতাবস্তায়, লাল জুলাইয়ে অংশ নেওয়া ছাত্রদের অর্ণব ঘটনায় চরম অবস্থান নেওয়া সন্দেহজনক। তারা আইনের প্রপার ইউজের দিকে শক্তিব্যয় না কইরা, ঢাবির কম শক্তিমান কর্মকর্তার পিছনে একটা ‘ফোর্সফুল’, ‘পপুলিস্ট’ রাজনৈতিক মিশন বাস্তবায়নে নামছেন। 

আমরা কি এই ছাত্রশক্তির উপর আস্থা রাখতে পারব দীর্ঘদিন! এরা কি আমার আপন ভাইয়ের উপর হওয়া মিথ্যা মামলার সুরাহা করতে পারবে- বাকশালীদের সঠিক, দুর্নীতিহীন বিচার চাওয়ার মাধ্যমে! 

নাকি, তারা শাহবাগের মতই, বড় কুনু শক্তির পুতুল হইয়াই এক্ট করতে পছন্দ করবে!

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো