উই ওয়ান্ট জাস্টিস
শাহীন রেজা
[ আছিয়া: বোন আমার ]
ছোট্ট দেহটা হাসাপাতালের বেডের উপর
কেঁপে কেঁপে উঠছে
নির্বাক ঠোঁট যেন বেতস লতা
শুধু চোখদুটো মাঝেমধ্যে ভিজে যাচ্ছে জলে আবার আবার জেগে উঠছে সে তীব্র
ঘৃণা আর ক্রোধে –-
তাকে শান্তনা দিতে পারছে না কেউ
না কোনো আত্মীয় না সেনাবাহিনী
না সরকার না কোনো সাংবাদিক
সে তাকিয়ে আছে একটি ঘন অন্ধকারের দিকে
একটি রাতের দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে
সময়ের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
মেয়ে হয়ে জন্মানো কি পাপ
মেয়ে মানেই কি ক্রমশ নির্যাতিত, ধর্ষিত হওয়া?
তার কিশোরী শরীর জুড়ে হায়েনার ক্লেদ
ক্ষতবিক্ষত ক্লান্ত অবসন্ন দিনে
মৃত্যুর মুখে টর্চ জ্বেলে ধ্বনিত একটিই শব্দ, একটি উচ্চারণ -–
“আই ওয়ান্ট জাস্টিস”
আছিয়া জাস্টিস চায়–-
একটি অমানবিক অত্যাচারের ;
ফুল খেলবার দিনে ঘটে যাওয়া একটি
অসভ্য ও নির্মম বর্বরতার
জেগে উঠুক মানবতা
ফুঁসে উঠুক রুখে উঠুক
বিশ্ববিবেক
আছিয়ার কণ্ঠ ছেড়া চিৎকার
ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হোক সর্বত্র
মাঠে ঘাটে শহরে বন্দরে
ইথারে ইথারে পথে ও পর্বতে–-
“এন্ড ফাইনালি উই ওয়ান্ট জাস্টিস”।
১১ মার্চ ২০২৫
……………
আছিয়া চলে গেল
মাসুদুল হক
……………
ছি!
আ ছি য়া
ঠিক মেলানো যাচ্ছে না;
আমি মেলাতে পারছি না
ছি! কোথায় বসাব!
মেয়েটা শিশু
মেয়েটা ঘৃণায় ভরা পৃথিবীর দিকে
তাকিয়ে চলে গেল
আ ছি য়া
চলে গেল। চলে গেল!
রক্তগঙ্গায় ভাসতে
ভাসতে
আ
ছি
য়া
চলে গেল। পালকে বীর্যের ভার
নিয়ে চলে গেল!
বীর্যবানেরা
এখন শৌর্যবীর্যের উল্লাস করো!
আ ছি য়া
চলে গেল। পাপীদের
পথ
দেখিয়ে চলে গেল!
………….
আছিয়ারা মা হয়েই জন্মায়
পথিক মোস্তফা
………….
বুকের কাছে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করছিলাম–
ধুকপুকানি টের পেলাম না; তবে কি আমি লাশ!
লোভাতুর জিহ্বার মতোই লকলক করছিলো
আজানু পৃথিবী। তবে কি আমি এখানেই আছি!
আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো বয়সের কথা, প্রেমের উলম্ফন
আমি গুলিয়ে ফেললাম প্রেম এবং বয়স; উভলিঙ্গে
সমান ভাগ হয়ে গেলাম। আমার মস্তিষ্কে
ঢুকলো এক গুহাবাসী সাপ। জানিয়ে দেয়া হলো
মাতৃজঠরে তোর ডায়েরি লেখা চলছে; তবে কি
আমি আছিয়ার গর্ভে জন্ম নেয়া পৃথিবী, আমি কি আজানু
মাথা নত করা নির্বাক শিশু?
শুনতে পাই– বাতাসের ওপাশ থেকে ডেকে ওঠে
মা আছিয়া, নিশ্বাস ফেলতে গিয়ে বুকের মাঠে থমকে
দাঁড়ায় এক বৃহন্নলা। আছিয়ারা জন্ম নিয়েই মা হয়ে যায়
ওদের বুকে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে রক্তাক্ত পৃথিবী
ওরা তবু মা হয়েই জন্মায়।
স্নেহের সূর্যকে জাগিয়ে তুলি, কাফনে মোড়া
এক টুকরো মাকে দেখে এতিম হয়ে যাই–
তবুও আছিয়া শুভ্রবসনা একগুচ্ছ
গোলাপ হয়ে ফোটে, আমি বলি–
তুই জেগে উঠিস মা।
আছিয়া, তুই এক টুকরো জ্বলন্ত প্রতিবাদ
তুই মায়ের অধ্যাদেশ।
১৩ মার্চ ২০২৫
তিনটে কবিতাই ভালো হয়েছে।