রেজা তানভীর
৮ ই আগস্ট ২০২৪ ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনেকগুলো ভালো কাজ করেছেন। যা তাঁকে মানুষের কাছে আরো বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
সম্প্রতি ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফাতার করেন এবং বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে আনার পেছনে ছিলো ড. ইউনূসের ভূমিকা।
ড. ইউনূস যদি না থাকতেন তাহলে জাতিসংঘ মহাসচিব কখনো রোহিঙ্গাদের সাথে দেখা করতে আসতেন না। কারণ, আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গারা অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। শেখ হাসিনাও অনেক বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলো, কিন্তু শেখ হাসিনা তো জাতিসংঘের কোনো মহাসচিবকে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে আসতে পারলেন না, ইফতার তো দূরের কথা। এখানেই ড. ইউনূসের সফলতা। তিনি পেরেছেন। ড. ইউনূস রোহিঙ্গাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী ঈদ যেন রোহিঙ্গারা তাদের দেশে করতে পারে। ইউনূস যদি রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠাতে পারেন তাহলে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ড. ইউনূস আগের স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মত ঢাকঢোল পেটাতে পছন্দ করেন না। কথা বলেন পরিমিত। দরকারী যা বলার তাই বলেন। তাঁর সামান্য ছোট ছোট কথার মধ্যে থাকে দরকারী ম্যাসেজ। তিনি ঘন ঘন ঘন টেলিভিশনের সামনে আসেন না। অনেক দিন পর হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য টিভিতে আসেন। ড. ইউনূসের সাথে যেকোনো উপদেষ্টা খুব সহজেই কথা বলে পরামর্শ নিতে পারেন। আগের প্রধানমন্ত্রীর মত সব বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করতে যান না। যার দায়িত্ব তাকে সেটা পালন করতে বলেন। তিনি সবকিছুতে অযাচিত হস্তক্ষেপও করেন না। বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব কীভাবে প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মিডিয়ার সামনে, ড. ইউনূসই এই সংস্কৃতি চালু করলেন।
ড. ইউনূস দেখালেন, তিনি এই সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়েই চলতে চান। কারো উপর খবরদারি করতে চান না। তিনি মনে করেন, টিম ওয়ার্কের মাধ্যমেই প্রশাসনে গতি আনা সম্ভব। তিনি দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার পাশে থাকার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের জনগণ ড. ইউনূসের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ। ড. ইউনূস দেখালেন সম্মিলিত শক্তিতে কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেখেছি, ড. ইউনূস জাতিসংঘ গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধানদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক করেন ও কথা বলেন। তাঁর এই সফর বাংলাদেশকে উচ্চমাত্রা দিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানকে বিশ্বের পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর প্রধানদের সাথে এত নিকটবর্তী হয়ে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়নি। বিশ্ববাসীর কাছে একটা বার্তা গেল, ইউনূসের মত একজন মহৎ মানুষ ধ্বজভঙ্গ বাংলাদেশের হাল ধরেছেন।
ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বিশাল। ভারত এত অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা করেও ইন্টেরিম সরকারকে টলাতে পারছে না শুধুমাত্র ইউনূসের কারণে।
ড. ইউনূস সরকারের সাফল্যের মধ্যে আছে–
সর্বশেষ ৬ মাসে দেশী বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ১৮.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি।
দেশের রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে হ্যান্ডেল করেছে ইন্টেরিম।
হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা।
দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে।
ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো৷ বাফুফের উপর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে।
স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে।
এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা।
ড. ইউনূস দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন আছে মহান এই মানুষটির উপর। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ড. ইউনূসকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা।