ফজলুল হক তুহিন
১. রক্তমাখা জুলাই
……………..
যুগ চলে যায় আঁধার থাকে-ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে
মানুষ বাঁচে মানুষ মরে রক্ত ঝরে দেও-দানো সব হল্লা করে-হাউ মাউ খাউ হাউ মাউ খাউ!
স্বপ্ন উধাও মানুষ উধাও-কেঁদে মরে নগর-গাঁও।
মায়ের ঘরে আহাজারি
রক্তখেকো অত্যাচারীর অট্টহাসি পলাশ রঙে হৃদয় ভাঙে কালবোশেখির শক্তি জমে আকাশ গাঙে মৃত্যু ভুলে যুগের মিছিল এগিয়ে যায় বিজয় পথে কোটি বুকে ক্ষোভের বারুদ জ্বালিয়ে দেয় আবু সাঈদ!
তিতুমীরের ভাই হয়ে সব মতিউরের বোন হয়ে সব অকাতরে জীবন দিয়ে হলো শহিদ বুকের মাঝে রক্তনদী–
তবু আসে পূর্ণ ঈদ!
দানো পালায় আঁধার পালায়
রক্তভেজা আসে জুলাই!
রক্তমাখা জুলাই।
২. রক্তের উৎস
………………
কোন্ উৎস থেকে ফিরে আসে পলাশ রঙের ধারা? প্রবল উজানে ছুটে যায় সাহসের ক্ষুব্ধ পদক্ষেপ কোন্ উৎস থেকে রণরক্তে বীর হয়ে যায় আজ জনতা বহু দিনের দানব বধে শিশুরাও ভুলে যায় অজানা আতঙ্ক সেই উৎসের ঠিকানা আমি ঠিক জানি না আজও!
কীভাবে কোত্থেকে পিঁপড়ার মতো পিলপিল করে মেঠোপথ গলিপথ থেকে রাজপথ ছেয়ে গেলো তারা স্লোগানে মিছিলে কণ্ঠস্বরে ফেটে পড়ে বিপ্লবের প্রতিধ্বনি যূথবদ্ধ প্রতিরোধে ভেঙে পড়ে দানবের কারাগার রক্তনদী আর বারুদের ধ্বংস থেকে জন্ম নেয় স্বপ্নময় নয়া ইতিহাস!
আমি বুঝে উঠতে পারিনি কীভাবে মানুষ মরতে মরতে মৃত্যুকে আপন করে হয়ে যায় অমর শহীদ
দুঃশাসন থেকে দুঃসাহস
গণহত্যা থেকে গণ-অভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদ থেকে গণবিপ্লবের পরিসর কীভাবে বিস্তৃত হতে হতে ছেয়ে যায় তেরোশ নদীর বাংলাদেশ
আমি আজও বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি সেই উৎসের উন্মেষ।
৩. গণজোয়ার
………………
পূঞ্জীভূত মেঘের ভেতর অনেক খরার ক্ষোভ গর্জনের জন্য একত্রে প্রস্তুত
পৃথিবী কাঁপিয়ে বাঁক ফেরার বর্ষণে আজ প্লাবনের নতুন আশ্বাস
তাই বুঝি চারদিক আগ্নেয় লাভার মতো সুনামির মতো গণজোয়ারের বাঁধভাঙা ঢেউ
আছড়ে পড়েছে রাজপথে ফুটপাতে অলিতে গলিতে
মায়ের আদর সবুজের সমারোহ বন্ধুদের আড্ডা-
সব ভুলে আবু সাঈদের হাত দুটি
হয়ে গেছে দোয়েলের ডানা– অলৌকিক ডানার উড়াল
বুক তার বাংলাদেশের রক্তাক্ত পতাকা!
চেয়ে দেখো সমস্ত সড়ক এভিনিউ গণমিছিলের পদভারে শ্লোগানমুখর
আগামীর আলোক রেখায় চোখ রেখে প্রতিটি কিশোর তরুণ যুবক নারী শিশু বৃদ্ধ- জনতা-হৃদয়ে উন্মুখ বারুদ
পদাতিক দাবানল হয়ে জ্বলে উঠেছে আবার!
পলাশ বিছানো ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে
রুদ্ধশ্বাস আবহে বাঁচার অসম লড়াই করতে করতে
খাঁচার জীবন গ্লানির আঁধারে বইতে বইতে
যখন দেয়ালে পিঠ বিষাক্ত পেরেকে বিদ্ধ
তখন হঠাৎ যুবজোয়ারের স্রোতে জনরোষে অধিকার ফিরে পাওয়ার গগনবিদারি শ্লোগান যেন বিপ্লবের পদধ্বনি!
অতঃপর রাক্ষুসের নখের বিস্তার–
লেফট রাইট ফায়ার বুলেট রক্ত গণহত্যা ধ্বংস কান্না শোক
বিধবার শাড়ি আর কাফনের রঙ একাকার হয়ে স্তব্ধতা এসেছে নেমে–
রাজপথ থেকে গণমানুষের নগরে বন্দরে গঞ্জে গ্রামে।
মায়ের কান্নার সুর দূরে শোনা যায়
ক্ষোভের বারুদে জানি আবার জ্বলবে দেশলাই।
৪. উড়াউড়ি
………………
আমার আছে বিশাল আকাশ
শান্ত গাছের নীড়
উড়াউড়ি সকাল-বিকাল
স্বপ্ন করে ভিড়।
তোমার ইচ্ছে খাঁচার জীবন
বরণ করি আমি
বাঁধন আমার ভাল্ লাগে না
উড়াল ঊর্ধ্বগামী।
স্বাধীনতা স্বাধীনতা
তোমার ভীষণ ভয়
শিকল ভেঙে দুয়ার খুলে
জীবন করি জয়।
যতোই মারো টিয়ার বুলেট
অসীম সাহস বুকে
তোমার মতো দানবকে আজ
আমরা দিবো রুখে।
৫. মুক্তির দিন
………………..
আবার এসেছে মুক্তির দিন
অনেক দুখের শেষে
খাঁচার দেয়াল ভেঙেছে আবার
আকাশ উঠেছে হেসে।
দৈত্য দানোর মরণ ছোবলে
ঝরেছে অনেক রক্ত
অনেক লড়াই সংগ্রাম করে
আমরা বিজয়ী শক্ত।
যুগে যুগে আসে সাহসী ও বীর
বাংলার রাজপথ গ্রামে অনিয়ম অন্যায় দূরে ঠেলে
স্লোগান মিছিল নামে।
জুলাই এসেছে আবার এখানে
নতুন পতাকা হাতে পুরাতন যতো জঞ্জাল আছে পালায়
দিনে ও রাতে।
ভালো লাগলো তুহিন ভাইয়ের কবিতা ।
জুলাই-অভ্যুত্থানের ওপর একত্রে কবিতাগুলো পড়তে পারলাম