spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাক্ষাৎকারসাক্ষাৎকার : কামরুজ্জামান

গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব

সাক্ষাৎকার : কামরুজ্জামান

১.জীবন কি? আপনার বর্তমান জীবন, অবস্থান– যা হতে চেয়েছিলেন বা যা হয়েছেন–এসব নিয়ে কোন আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব হয়?

১. উত্তর : জীবন হলো আত্মার প্রতিরূপ কিংবা মহান আল্লাহ পাকের আদেশ। তিনি যে রুহ ফুঁকে দিয়েছেন মাটির পিঞ্জিরায় জীবন হলো তাই। কোন কোন জায়গায় বলা হয়েছে আত্মার স্বরূপ হলো আলো যার বিনাশ নেই।

২. আপনার শৈশব-কৈশোর কোথায় কেটেছে? কীভাবে কেটেছে? কোন অব্যক্ত কথা বা স্মৃতি কি মনে পরে? তাড়িত করে?

২. উত্তর : আমার শৈশব কেটেছে এই ঢাকা মহানগরীতে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা নগরীতে আমার বেড়ে ওঠা। আমার মনে আছে তখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিলো যুদ্ধে ব্যবহার করা সামরিক সাঁজোয়া যান। আমরা ঐ সকল যানের উপর উঠে খেলায় মেতেছি। জানিনা সেই সময়ের কোন ফটোগ্রাফি কেউ করেছে কি না, আমি অনেক অনুসন্ধান করি কিন্তু সেই ধরনের কোন কাজ দেখি না। আরো একটা স্মৃতি মনে আছে আমরা বুলেট দিয়ে কলম তৈরি করতাম, বুলেটের অগ্রভাগ ঘষে ছিদ্র করে কলমের নিব বের করে কলম বানাতাম। তখন একটা বুলেটের কলম নিজের কাছে থাকাটা ছিলো বেশ আনন্দের।

৩. সাহিত্যে এলেন কেন? কীভাবে এলেন? অর্থাৎ শুরুটা কীভাবে? কোথায়?

৩. উত্তর : পারিবারিক আবহের মধ্যে সাহিত্য ছিলো, বড় হয়ে দেখেছি আমি একটা গ্রন্থ জগতের মধ্যে জন্মেছি। ঘর ভর্তি বই আর বই সিনেমা পত্রিকা থেকে শুরু করে বিবিধ বিষয়ে বই আর বই। আব্বা এই গ্রন্থ সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন। আমার মাতা পিতা চাইতেন আমি লেখক হয়ে গড়ে উঠি, আমরা ভাই বোন দুজনেই লেখি। শৈশব থেকেই আমার মধ্যে এক ধরনের তাড়না তৈরি করা হয়েছে নানা ভঙ্গিতে বিবিধ কৌশলে লেখক হয়ে উঠতে।

৪. বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ যেমন : ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবিদ আজাদ প্রমুখ– তাদের সাহিত্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আর কার-কার সঙ্গে আপনার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিলো বা আছে? তাদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা তাদের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

৪. উত্তর : কবি ফররুখ আহমদ কে আমি পাইনি এছাড়া যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদের আমি পেয়েছি, কবি সৈয়দ আলী আহসানের অনেক বক্তৃতা কাছ থেকে শুনবার সৌভাগ্য হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানকে বহুবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখেছি একবার বিরল সুযোগ ঘটেছিলো কবি আল মাহমুদ, কবি ফজল শাহাবুদ্দীন এবং আমি কবি শামসুর রাহমানের বাসায় নিবিড় আড্ডা দেবার, সে কথা কবি ফজল শাহাবুদ্দীন তাঁর ‘কবিকণ্ঠ’ পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে বিস্তারিত উল্লেখ করছেন। কবি শহীদ কাদরীকে তো পাওয়া যায়নি, তিনি প্রবাসে। এ ছাড়া বাকী সকলের সাথে আমার আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁদের অকৃত্রিম স্নেহ ভালোবাসা সমর্থন প্রশ্রয় ভাল পেয়েছি। তাঁদের সাহিত্য নিয়ে বলতে গেলে এ কথাই বলবো তাঁরা আমাদের অনিবার্য সাহিত্য প্রতিভা তাঁদের সাহিত্য পাঠ থেকে বঞ্চিত থাকলে নিজেরই ক্ষতি।

৫. আপনি একাধারে একজন কবি ও সাহিত্য বিশ্লেষক–অর্থাৎ বহুমাত্রিক। আপনার অভিজ্ঞতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বর্ণিল। বিচিত্র। এই সামগ্রিক সত্তাকে কিভাবে দেখেন? কিভাবে উপভোগ করেন?

৫. উত্তর : সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে বিশেষ মূল্য দেয়া হয়েছে, কেননা এর বিকল্প নেই। একজন লেখক একটি লেখার জন্য যে কোন সময়ে যে কোন ভাবেই অনুপ্রাণিত হতে পারেন। যখন তার সাহিত্য কর্মটির সাথে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সংযুক্ত হবে তখন সেই সাহিত্য নানা দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। আমি আমার কবিতার মধ্যে প্রথম থেকেই অভিজ্ঞতার নির্যাস মেশাতে চেয়েছি। যারা আমার কবিতা নিবিষ্ট ভাবে পাঠ করেছেন তারা সে বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম। আমার কাছে ব্যক্তিগত উপভোগের জায়গাটি তৃপ্তিদায়ক, এই কারণে যে আমিও তো আমার সাথে আমার অভিজ্ঞতার সাথে পথ চলে আসছি এতদূর।

৬. আদি বাংলা তথা চর্যাপদ থেকে আজ অবধি বাংলা সাহিত্য কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে–আপনার বর্ণনা ও বিশ্লেষণে?

৬. উত্তর : যে কোন ভাষার প্রাণশক্তিই ভাষাকে জীবন্ত থাকতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের ভাষার নানাবিধ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে অবগত হয়েছি যে বাংলা ভাষার প্রতিটি অক্ষরের গঠন এবং উচ্চারণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত বিজ্ঞান সম্মত। স্রোতস্বিনীর মতো ভাষাও তার আপন গতিতে প্রবহমান, একটা গতির সঞ্চারের মধ্যে যেমন আবর্জনা সরে সরে যায় তেমনি ভাষার চলমানতায়ও তাই ঘটে এটা সর্ব অর্থে। একটি বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাটি চার নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। সুদীর্ঘ পথযাত্রায় অসংখ্য কবি, গীতিকার, কথাশিল্পী, সাহিত্যিকের রচনা সম্ভারে বাংলা ভাষা ক্রমাগত সমৃদ্ধি লাভ করেছে ।

৭. সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, শিল্প-সাহিত্যচর্চায় কোন-কোন চ্যালেঞ্জ বা সুবিধা-অসুবিধা আছে বলে আপনার মনে হয়? কীভাবে এগুলি মোকাবিলা করেন?

৭. : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে শিল্প সাহিত্য চর্চায় যে অশুভ প্রথার উদ্ভব ঘটেছে এটা হতাশাব্যঞ্জক। আর সেটা হচ্ছে লেখকদের সম্মানী দেয়া হচ্ছে না, এটা ভীষণ অসভ্যতা বলে আমি চিহ্নিত করতে চাই। সকল কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সৃজনশীলতার মূল্য কমেছে এটা কি একটা দেশে হতে পারে? পত্রিকার মালিকরা তো সকল ক্ষেত্রে টাকা পয়সা দিচ্ছেন শুধু লেখকদের বেলায় এসে এই অসভ্য আচরণ করছেন। দেশের প্রথম সারির দু-চারটি পত্রিকা লেখার জন্য যে সম্মানী দিচ্ছেন তা অপমানের সামিল। এই অপসংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে, তা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। একজন সৃজনশীল মানুষের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা জরুরি , এতে সৃজনশীলতায় গতির সঞ্চার হবে, প্রশান্ত চিত্তে নতুন বাঁক বদলের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হবে। এই ক্ষেত্রে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ভূমিকা রাখবার প্রয়োজন আছে। লেখক শিল্পী কবিগণের আর্থিক সঙ্গতির উন্নয়নে সরকারের এবং বেসরকারি সকল সেক্টর কে এগিয়ে আসতে হবে অবশ্য অবশ্যই।

৮. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?

৮. উত্তর : আমার প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘ ঝরনার কাছে একদিন ‘ এটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে, শতদল প্রকাশনী, বাংলা বাজার থেকে। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি ছিলো অসামান্য।

৯. সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?

৯. উত্তর : আমি মনে করি আমি আমার সকল অগ্রজ কবিগণের উত্তরাধিকার বহন করি। এটা শুধু আমার নিজ ভাষার কবিগণের শুধু নয়, এটা সারা পৃথিবীর অগ্রজ কবিগণের নিকট আমার ঋণ রয়েছে যাদের পাঠ করে আমার বোধের পরিপুষ্টি অর্জন হয়েছে তাদের সকলের কাছে। আমি তাঁদেরই উত্তরাধিকার বহন করছি বলে মনে করি।

১০. এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোন-কোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?

১০. উত্তর : এখন পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তেরটি। আমার অতি সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘ আগুন আমি ভালোবাসি ‘ প্রেমের কবিতার জন্য উল্লেখযোগ্য মনে করি।

১১. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।

১১. উত্তর : আমার সর্বশেষ প্রকাশিত বই ‘ আগুন আমি ভালোবাসি ‘ এরপর আর কোন বই প্রকাশিত হয়নি। এই বইটি তে মূলতঃ প্রেমের কবিতার আধিক্য রয়েছে, আছে অন্য কবিতা ও বিগত ষোল বছরের ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের স্বৈরশাসনের চিত্র পাওয়া যাবে এর ভেতর। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ বই মেলায়। আমি আশা করি এ বইয়ের প্রেমের কবিতা গুলো দীর্ঘদিন নিবিষ্ট কবিতা পাঠকদের তৃপ্তি দিবে। অন্য কবিতা গুলোও পাঠকদের সামনে স্বৈরশাসক হাসিনা অবয়ব তুলে ধরবে।

১২. আপনি নিজেকে কোন দশকের কবি-লেখক বলেন? কেন?

১২. উত্তর : দশকের এই বিবেচনাটি শুরু হয়েছিলো বিগত শতাব্দীর সূচনালগ্নে পশ্চিম দুনিয়ায়। এটার কারণ হলো যে সাহিত্য কর্মের ফসল তুল্যমূল্য আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসার সুবিধার জন্য। তখন কিছু আলোচক একটা সময়ের সীমারেখা প্রবর্তন করলেন, এই জন্য যে তা না হলে বিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারা যাচ্ছে না। তাই একটা দশক এর আশ্রয় নেয়া হলো, যে এই সময় কালের মধ্যে যারা সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান রেখে বেড়ে উঠেছেন তাদের নিয়ে প্যারালাল স্টাডি করা। এটা হলো একটা শনাক্ত চিহ্নের মতো, আসলে কোন লেখক তো আর সেখানেই আটকে থাকেন না, আবার থাকেনও দেখা যায় একজন লেখকের ঐ দশক সীমানার মধ্যে ব্যাপক উত্থান ঘটে ছিলো কিন্তু দেখা গেলো তিনি পরবর্তী সময়ে আর সচল রইলেন না কিংবা মৃত্যু বরণ করলেন তখন তাঁকে ওখানে রেখেই আলোচনা অগ্রসর হবে। অনেক জনকে দেখছি বলতে আমি দশক মানি না, দশক আবার কি ইত্যাদি ইত্যাদি… আসলে তারা বিষয়টি বিস্তারিত জানেন না। আমি নব্বই দশকের একজন কবিতা কর্মী, নব্বইয়ের প্রারম্ভেই আমার আবির্ভাব। আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় নব্বই সালে। আমার অনেক লেখা নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে জাতীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিক গুলো তে ৮৫ সাল থেকে তাই অনেক জায়গায়, অনেক কবিতা সংকলনে আশির দশকের কবি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা ঠিক নয় ওটা ছিলো আমার প্রস্তুতি কাল। আমাকে শনাক্ত করতে হলে দেখতে হবে আমার বই কখন প্রকাশিত হলো তখন থেকে। বই প্রকাশের মধ্য দিয়েই একজন লেখকের প্রকৃত অভিযাত্রা শুরু হয়।

১৩. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।

১৩. উত্তর : আমি যে সময় কালের মধ্যে বেড়ে উঠেছি তা হচ্ছে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে, সকল জায়গায় দারিদ্র্যের চিহ্ন ঝুলছে। আমরা আমাদের ক্লাসের পাঠ্য পড়ছি আমরা খুব দরিদ্র, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় নেই, আমরা উৎপাদন করতে পারি না। রেশনের জন্য ভোরবেলা উঠে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। এক পাউন্ড পাউরুটির জন্য আমি বহুবার লাইনে দাঁড়িয়েছি। শিশু খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি, বাজারে কাঁকর মেশানো চাউল বিক্রি, চিনির সাথে লবণ মিশিয়ে ভেজাল করা হচ্ছে। ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিনি গম তেল ক্রয় বিক্রয় করছে, চিনি কিনতে এসে চিনি জিহ্বায় ফেলে পরীক্ষা করা হচ্ছে এতে কত শতাংশ লবণ মেশানো হয়েছে। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় খবর আসছে লুটপাট, হত্যা, গুম, খুন ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরি এই সব। সামাজিক অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। তখন একটা রংবাজ কালচারের উদ্ভব ঘটে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায়, পেশীশক্তি প্রদর্শন নিয়ে পাড়া মহল্লায় মারপিট খুনাখুনি অস্ত্র বাজী হরহামেশা চলতেই থাকতো। তখন সারারাত কোথাও না কোথাও গোলাগুলির শব্দ হতো। আশির দশকের শুরু থেকে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে যা যা ঘটে থাকে তাই ছিলো অবস্থা।

১৪. আপনি কবিতায় মিথ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ ব্যবহার করা বিষয়ে কি ভাবেন? বিশেষত ইসলামিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা বিষয়ে।

১৪. উত্তর : কবিতায় মিথ ব্যবহার কবিতাকে সমৃদ্ধ করে। যেনো মিথ একজন কবি তার পারঙ্গমতার মধ্য দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এখন আমাদের এই বাংলাদেশে কিছু অদ্ভূত মানসিক দীনতা তৈরি হয়েছে যে কোন কবি যদি কোন ইসলামিক মিথ ব্যবহার করেন তবে তাকে অনাধুনিক, পশ্চাৎপদ ইত্যাদি অভিধায় চিহ্নিত করা হচ্ছে এটা আমাদের এক ধরনের বৈকল্য বলে আমি মনে করি। কবিতার ভাব সম্পদ অঙ্গ সৌষ্ঠব ঠিক রেখে ধর্মীয় মিথ অবশ্য অবশ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে, স্মরণ রাখতে হবে এটা যেনো আরোপিত হয়ে কবিতার সৌন্দর্য নষ্ট না করে। পৃথিবীর বিখ্যাত কবিগণ তারা তাদের নিজ নিজ ধর্মের মিথ সাবলীলভাবে ব্যবহার করেছেন, ধর্ম তো যাপিত জীবনের কালচারের অংশ।

১৫. আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বাংলাদেশের কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

১৫. উত্তর : আধুনিকতা বলতে আমি বুঝি সমসময়িকতা। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক কবি তার কালে আধুনিক। সময় তো আর এক জায়গায় কোন কিছুর জন্য স্থির হয়ে থাকেনা, সময় বদলে যায় নতুন প্রযুক্তি এসে জায়গা দখল করে নেয়। মানুষের উপযোগিতা পূরণে সক্ষম হলে তা মানুষ তার প্রয়োজনে রেখে দেয়। সেজন্য কোন রূপ কসরতের প্রয়োজন পড়ে না। সব কিছু বদলে যাবার মতো ভাষাও বদলে যায়, ভাষা বদলে যাওয়ার অর্থ প্রকাশ ভঙ্গির পরিবর্তন, কিছু শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তন। এই সমস্তই এক সাথে জড়ো করে আমরা বলছি আধুনিকতা। একটা অভিধার প্রবর্তন করা। এখন যদি আমি প্রশ্ন উত্থাপিত করি তবে কেনো আমরা এখনো চর্যাপদের কাছে যাচ্ছি? কেনো রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কাছে যাচ্ছি? আমরা তো এখন আর তাঁদের মতো ভাষা ভঙ্গিতে লিখছি না। তারা যদি আধুনিকতার চৌহদ্দির মধ্যে এসে এখন দাঁড়াতে না পারেন তবে কোন আমরা তাঁদের পাঠ না করে সম্পূর্ণ হতে পারছি না? পারছি না এই কারণে যে এখনো তারা সমসাময়িক তাদের প্রয়োজন ঐতিহাসিক। আধুনিকতা এসে কি বল্লো না বল্লো তাতে তাদের কিছু এসে যায় না, ফকির লালন আধুনিকতার তোয়াক্কা করে? তারা তো সর্বাধুনিক। উত্তর আধুনিকতা নিয়ে যে দোলাচালের উদ্ভব তা নব্বই দশকের সূচনা লগ্নে। এ নিয়ে নানা আলোচনা পক্ষে-বিপক্ষে হয়েছে এখনো হচ্ছে। আসল কথা হলো কোন কবি লেখক তো আর সংজ্ঞা মাথায় নিয়ে সাহিত্য রচনা করতে বসে না। সকল সময়ই নতুন চিন্তার দোলা এসে লেগেছে , একটা নতুন চিন্তাকে জেনে দেখতে কোন দোষ নেই। গ্রহণ বর্জন সময়ের ব্যাপার বলে আমি মনে করি। এটা যদি সাহিত্য প্রেমীদের তৃষ্ণা নিবারনের শক্তি রাখে তবে থেকে যাবে। উত্তর আধুনিকতা সম্পর্কে আমার পাঠ রয়েছে বিস্তারিত, তবে আমি সকল সময়ই স্বাধীনতার পক্ষে কোন চিন্তার ভেতরে আবদ্ধ হয়ে থাকতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি।

১৬. আপনার লেখালেখিতে দেশি-বিদেশি কবি/ সাহিত্যিকদের কারো কোন প্রভাব কি আছে?

১৬. উত্তর : আমার লেখায় অবশ্য অবশ্যই দেশি-বিদেশি কবি লেখকদের প্রভাব আছে, কেননা তাদের কে পাঠ করেই তো আমার কাব্য বোধ সাহিত্য বিবেচনা তৈরি হয়েছে। লক্ষ অলক্ষ্যে তাঁদের কাছে আমার অনেক ঋণ। তবে যে কথাটি প্রশ্নের দ্বিতীয় ভাগে জানতে চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমি বলবো আমি আমার লেখার সূচনা লগ্নেই এই বিষয়ে সতর্ক ছিলাম কোন কবির প্রত্যক্ষ প্রভাব যেনো আমাকে আক্রান্ত না করে। আমি আমার মতো একটা আলাদা ভঙ্গি তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছি। আমি আনন্দিত যে এই ভঙ্গিটি আমার কবিতার পাঠকগণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। একধরনের শান্ত সমাহিত স্নিগ্ধতাকে আমি আমার কবিতায় সচেতন ভাবে প্রতিস্থাপন করতে চেষ্টা করছি।

১৭. কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।

১৭. উত্তর : আমার কোন বিত্ত- বৈভব নেই যা উল্লেখযোগ্য। আমি কবিতার মধ্যেই বিচরণ করি যখন লিখি তখন, যখন না লিখি তখনও কবিতাই আমার একান্ত আশ্রয়। বর্তমানে একা আছি। আমার এক কন্যা এক পুত্র সন্তান রয়েছে। রয়েছে আমার তিন নাতনি রুবাই, রাদিয়া, রাইসা।

১৮. আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।

১৮. উত্তর : আমি এ পর্যন্ত কোন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করিনি। তবে অচিরেই ‘ অন্যস্বর’ শিরোনামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতে যাচ্ছি।

১৯. লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।

১৯. উত্তর : লিটল ম্যাগাজিনের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মত নানা কথা রয়েছে, সরল রেখায় এটা ব্যক্ত করা যৌক্তিক নয় বলে আমি মনে করি। দেশে বিদেশে লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশের চর্চা রয়েছে, নিসন্দেহে এটা নতুন কবি লেখক তৈরীতে অসামান্য ভূমিকা রেখে আসছে।

২০. অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

২০. উত্তর : বর্তমান সময় ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের যাপিত জীবনের ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেছে প্রযুক্তির সাথে। ওয়েব ম্যাগাজিন কে আমি পজিটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করতে চাই। কেননা আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার এর সহায়তা নিতেই হবে। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশে এই মাধ্যমটি অসাধারণ। সীমিত সময়ের মধ্যে আমরা যে আমাদের বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারছি বা ছড়িয়ে যাচ্ছি এটা এক অসাধারণ সুযোগ।

২১. “বাংলা রিভিউ” পড়েন? কেমন লাগে বা কেমন দেখতে চান–আগামীতে?

২১. উত্তর : বাংলা রিভিউ নিসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে কনটেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে। আগামীতে ‘বাংলা রিভিউ’ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।

২২. ভবিষ্যতে কেমন পৃথিবী কল্পনা করেন?

২২. উত্তর : সামাজিক নিরাপত্তা, বৈষম্যহীন,শোষণমুক্ত নিরাপদ এক মানবিক পৃথিবীর কল্পনা করি।

…………..

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব
মার্চ ২০, ২০২৫

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on মরুভূমি