রেজাউল করিম রনি
গরীবের কথা বাসি হলে ফলে : প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, “মনে রাখতে হবে– বাংলাদেশে আগামী দিনে রাজনীতি তৈরি হবে আওয়ামী লীগ বিষয়ে কে কি অবস্থান গ্রহণ করছেন মানে– আওয়ামী লীগ প্রশ্নটিকে কে কতোটা কার্যকর ভাবে ডিল করছেন – তার উপরই আগামীর রাজনীতি নির্ভর করবে।”
এ কান্ট্রি উইথ-আউট আওয়ামী লীগ — এই অবস্থায় পৌছার পরে বাংরাদেশের রাজনীতির বিকাশ শুরু হবে। এখনও আমরা একটা লীগের পরিমন্ডলে বাস করি। এই জন্য আমি এটাকে বলছিলাম, লেট ফ্যাসিজম।
এখন যারা বলছেন, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স।তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।”
যারা এখন ভালো আওয়ামী লীগ খুঁজেতেছেন তারা স্বৈরাচারী রাজনীতির ব্যাসিক কথাটা ভুলে গেছেন। ভালো আওয়ামী লীগ হিসেবে বামদলগুলা তো ছিল এতোদিন দেশে। এরা সবাই মিলে শাহবাগে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েমের ঝাপিয়ে পড়েছিল। সো সেই মডেল তো আমরা দেখেছি।
এর বাইরে তারা যে বেসিক কথাটা ভুলে যাচ্ছেন সেই ব্যাসিক কথাটা হলো–
“Politically, the weakness of the argument has always been that those who choose the lesser evil forget very quickly that they chose evil.”
–Hannah Arendt.
মানে আপনি যখন কম খারপ বা শয়তান খুঁজেন , সেটা চুজ করতে গিয়ে, এই জিনিসটা ভুলে যাচ্ছেন যে, আপনি আসলে শয়তানই চুজ করতেছেন। ফলে ভালো লীগর বলে কোন কথা নাই। এর চেয়ে ফালতু কথা আর হয় না। হান্না কিন্তু আপনাদের মতোন ফালতু বুদ্ধিজিবি না। দুনিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সেরা রাজনৈতিক দার্শনিক। অরিজিন অব টোটালেটিরিয়ানিজম– বইটার লেখক।
অন্যদিকে লীগকে ডিল করার জন্য নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধের চেয়ে আরও কার্যকর কিছু পথ আছে। বরং নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ কোন কাজে আসবে না। তাতে বিচার হয় না। আপনাকে বিচার করতে হবে। লীগের পথে হেটে লীগ দমন করা যাবে না।
আপনার স্বভাব যদি শত্রুর মতো হয়ে যায় আপনি শত্রুকে পরাজিত করার পরেও আপনার শত্রুই বিজয়ী হয়– এটা মনে রাখতে হবে।
২.
গণহত্যার সিদ্ধান্তটি ছিল লীগের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। ফলে সব লোক হত্যায় অংশ না নিলেও সংগঠন হিসেবে এটার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিচার করতে পারে। এ জন্য সঠিক আইন না থাকলে আইনও করতে পারে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে কিন্তু সংগঠন হিসেবে লীগের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। এটা দেশে ও বিদেশে উভয় জায়গায় শুরু হতে পারে। রাষ্ট্র বা যে কোন দল বা ব্যক্তি সংগঠন হিসেবে লীগের বিচার চাইতে পারে। সেই পথ খুলে দিতে হবে।
৩.
লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনগন নিবে। তো জনগন কিভাবে নিবে? এই জন্য একটা রেফারেন্ডাম দেয়া যেতে পারে। এক মাসের মধ্যেই এটা দেয়া সম্ভব। গণভোটে লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
৪.
বি-আওয়ামী করণ। ট্রুথ এন্ড রিকনসিয়েলেশন প্রকৃয়ার মধ্যদিয়ে লীগের প্রশ্নটির চিরতরে সমাধান করা। যেভাবে নিনাজিফিকেশন হয়েছে জার্মানিতে। যে ভাবে সাউথ আফ্রিকাতে হয়েছে।
(এটা নিয়ে আমি বিস্তারিত লিখেছি)
আমি এই শেষের প্রস্তাবটি নিয়ে লীগ ক্ষমতায় থাকতে সময় থেকে কথা বলছি। লাগাতর বলে আসছি। এটা লাগবে। ইনসাফপূর্ণ সমাধান লাগবে। এটা কোন দল একক ভাবে করলে হবে না। সেনাবাহিনীতো এখানে কোন কথাই বলতে পারে না। এটা তাদের কাজ না। তাদের বুঝতে হবে লীগ বাই ন্যাচার এন্টি সেনা বাহিনী সংগঠন। তারা ১৫ আগস্টের জন্য সেনাদের ও মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘৃণা করে। তারা শুধু ভালোবাসে সোনাগাছির মুক্তিযোদ্ধাদের। বিষয়টা বুঝতে হবে। লীগ একটা ট্রাইবাল রাজনীতি করে। তার জন্য ন্যাশনাল সেনা একটা সমস্যা। মুজিব কোটের চেয়ে সেনারা বড় হোক –এটা সে কোন ভাবেই চায় না। চাইতে পারে না। কাজেই তাদের বিষয়ে সেনাদের পজিশন পরিষ্কার থাকার কথা। না থাকলে বিষয়টা দুঃখজনক হবে। সেনা বাহিনী রাষ্ট্রের । দেশের। জনগনের। কোন দলের না। কোন দলের বিষয়ে তার আলাদা দরদ ও ঘৃণা কিছুই দরকার নাই।
লীগের আমলে অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো এটারও সর্বনাশ করা হয়েছে। তাই সেনাবাহিনীর মধ্যেও সংস্কার বা পনুঃগঠন প্রকৃয়া হাতে নেয়া জরুরী। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া দরকার। সেনাদের নৈতিক মনোবল সংগত করা জরুরী।
আমাদের বুঝতে হবে, লীগ কোন রাজনৈতিক শক্তি না। এটাকে রাজনৈতিক দল মনে করে গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ার এর জন্য স্পেস দেয়া মানে জাতি হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া। অভ্যুত্থানের পরে দুনিয়ার কোন দেশে গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় ফ্যাসিস্টদের স্পেস রাখা হয় না। তাদের এক্সসেপশন হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
লীগের জন্য দরজা খোলা মানে ভারতকেও বাংলাদেশে মেনে নেয়া। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা আর থাকবে না। স্টাব্লিশমেন্ট বলতে এখানে লীগের মডেলই দাঁড়িয়েছে। ফলে এখানের বেশিল ভাগ ধনীরা করাপ্ট, জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না। যেই কারণে আমরা জাতি হিসেবে বিকশিতও হতে পারছি না।
এটাকে ভাঙতে না পারলে দেশে সংঘাত থামবে না। সব দলকে লীগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এবং জামায়াতকে নিয়ে যেমন সবাই খেলেছে এতোদিন, লীগকে তেমন ভাবে রেখে দিয়ে সুবিধার কথা চিন্তা করলে দুধ কলা দিয়া কালসাপ পোষার শামিল হবে।
লীগকে মোকাবেলার মধ্য দিয়ে, ট্রাইবাল ও উগ্র হিন্দুত্ববাদি এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসময় রাজনীতি পেরিয়ে বাংলাদেশে নাগরিক ভিত্তিক রাজনীতির সূচনা হবে। এর আগে হবে না। আর এটা এলিট চক্র চায় না। ফলে, জনতাকে বুঝতে হবে লীগ মুক্ত দেশ মানেই বাংলাদেশের বিকাশ শুরু। এর আগে না।