spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধবিভ্রান্তির কালোমেঘ বনাম রাসুলুল্লাহর বংশমহিমা

লিখেছেন : মুসা আল হাফিজ

বিভ্রান্তির কালোমেঘ বনাম রাসুলুল্লাহর [সা] বংশমহিমা


মুসা আল হাফিজ

অনুমানের মেঘ :
বংশীয় মহিমা নবীদের সম্মানের বিশেষ দিক। একে অবজ্ঞা করার চেষ্টায় নিয়োজিত থেকেছে বহু পশ্চিমা মেধা।এই ধারার প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেছে হযরত মুহাম্মদ সা.কে। মধ্যযুগের আক্রমণগুলো এতো উদ্ভট, যা কোনো জবাবেরও যোগ্য নয়। আধুনিক কালপর্বে প্রাচ্যবিদ অনেকে মহানবীর সা. বংশধারা নিয়ে তৈরী করেছেন বহু অনুমান। একটি বিখ্যাত হাইপোথিসিস তৈরী হয়েছে ইসমাইল (আ.)-এর সাথে নবীজির (সা.) সম্পর্ক নিয়ে । জোর দিয়ে তারা বলতে চেয়েছেন, ইসমাইল আ. এর সাথে মুহাম্মদ সা. এর রক্তসূত্রের সম্পর্ক প্রমাণিত নয়। এটা বরং নবীর (সা.) সম্মান বাড়াবার ইচ্ছায় তৈরী করা এক কারসাজি!

জোরালো সুরে তারা একে উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু আপত্তিগুলোর সারবস্তু কী? আমরা যদি বিষয়টার মর্মমূলে প্রবেশ করি, তাহলে লক্ষ্য করবো বিবিধ বুদ্ধিবৃত্তিক জোড়াতালির মধ্য দিয়ে এই সব অনুমানকে সামনে আনা হয়েছে।
জাহেলী আরবে বংশচিন্তা :
আরবদের জীবনে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। তারা নিমজ্জিত ছিলো অজ্ঞতা, বর্বরতা, পাপাচার ও অহংকারে পঙ্কিলতায়। কিন্তু অগুনতি ত্রুটি সত্ত্বেও কিছু গুণ ছিল তাদের। যা মানব ইতিহাসে তাদেরকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। সাহস ও বীরত্বে আরবরা ছিল অতুলনীয়। প্রকৃতিগতভাবে তারা ছিলো অনন্য স্মৃতিধর। নিজেদের ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের এমন সক্ষমতা তাদের ছিলো, যার নজির মিলে না।বাগ্মিতা ও উন্নত বাচিকতার অধিকারী আরবরা বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির সহায়তায় শব্দ -বাক্যের জাদু বিস্তারে ছিলো পারদর্শী। নিজেদের জীবন ও সংস্কৃতিতে এর প্রভাব ছিলো গভীর।প্রতিটি সামাজিক মজলিসে এর প্রভাব কথা বলতো। তাদের সাংস্কৃতিক জীবনে একে কেন্দ্র করে জারি থাকতো প্রতিযোগিতা।বংশ, বীরত্ব, নেতৃত্বগুণ ও ভাষিক অনন্যতার উৎকর্ষের ভিত্তিতেই সমাজে ব্যক্তি বা তার পরিবারের মর্যাদা নির্ধারিত হতো।
আরবরা খোদাপ্রদত্ত স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের নসবনামা বা বংশতালিকা মুখস্থ করত। প্রতিটি কবিলার প্রধানকে তার গোত্রের বংশতালিকা মুখস্ত রাখতে হতো। একই সাথে সম্প্রদায়ের আওতাধীন সমস্ত উপজাতির বংশতালিকাও মুখস্থ রাখাও তাদের জন্য ছিলো আবশ্যক। অপরদিকে যেসব গোত্রের সাথে তাদের সংঘাত ও মিত্রতা ছিলো, তাদের বংশলতিকাও মনে রাখতে হতো। আরবরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের কৃতিত্বকে বংশপরম্পরায় স্মৃতিতে ধারণ করতো। বিরোধীদের বংশবৃত্তান্তের দুর্বলতাগুলি খুটিয়ে খুটিয়ে সংরক্ষণ করতো। এর চর্চা করতো নিজেদের মধ্যে। এ নিয়ে রচিত হতো কাব্য। এক গোত্রের কবিতা প্রচারিত হলে অপর গোত্র লেখতো বিপরীত কাব্য। এসব কবিতার অন্যতম দায়িত্ব ছিলো বিরোধিদের বংশকে তাচ্ছিল্য করা এবং আপন বংশকে উচ্চতর প্রমাণ করা ।
পারিবারিক সম্মানের পাহারায় নিয়োজিত থাকতো জীবন ও তরবারি। বিভিন্ন কবিলার অস্ত্রগুলো জড়ো হতো এবং ব্যবহৃত হতো প্রধানত পরিবার ও কবিলার সম্মানের প্রয়োজনে। এরই জন্য সাধারণত যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠতো, সাহসী যোদ্ধারা বীরত্ব ও দক্ষতার চমক প্রদর্শন করত। এই বীরত্বের কীর্তিসমূহ তাদের ঐতিহ্য ও গরিমায় পরিণত হতো। প্রত্যেক প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের কীর্তিগুলি সংরক্ষণ করতো স্মৃতিতে, আবৃত্তি করতো কাব্যে, পুনরাবৃত্তি করতো অভিভাষণে। এতে কোথাও কোনো ত্রুটি হলে অন্যান্য কবিলার কাছে হাসির পাত্র হতে হতো।জ্ঞানীদের জন্য এর চেয়ে লজ্জা ও অপমানের বিষয় আর থাকতো না।

আরবের গ্রাম ও শহরে বংশধারা সংরক্ষণের রীতি অন্যান্য রীতির কেন্দ্রে ছিলো। আরব রক্ত অনারব রক্তের সাথে যের না মিশে, সেটা তারা একান্তভাবে চাইতেন। ফলে অনারবদেরকে বিয়ে করা তাদের কাছে রীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি । একে বরং আরবরা অপছন্দ করতো। নোমান বিন মুনজিরের কন্যাকে বিয়ে করতে চাইলেন পারস্যের সম্রাট কিসরা। কিন্তু স্বয়ং সম্রাটের তরফে প্রস্তাব আসার পরেও নোমান তার কন্যাকে বিবাহ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। এর পেছনে বিশুদ্ধ আরব বংশরক্ষার ব্যাপারটা ছিলো মুখ্য। বংশলতিকা তাদেরকে দম্ভ সরবরাহ করতো। এসবের পেছনে তারা সময় ব্যয় করতো বিস্তর। আল কোরআন তাদের এই প্রবণতার স্পষ্ট সমালোচনা করেছে। একে অন্যের উপর আধিক্য ও প্রাধান্য লাভের প্রতিযোগিতাকে তাকাসুর বলে আল কুরআন নিন্দা করেছে। এই প্রতিযোগিতার প্রধান এক খাত ছিলো বংশীয় শ্রেষ্ঠত্বনেশা।আল্লাহর রাসুল সা. আরবদের এই প্রবণতাকে সমালোচনা করেন।বংশীয় অহং ও দম্ভকে তিনি জাহেলিয়্যাতের বৈশিষ্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।[1]
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُوْنَ بِآبَائِهِمْ الَّذِيْنَ مَاتُوْا، إِنَّمَا هُمْ فَحْمُ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُوْنُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللهِ مِنَ الْجُعْلِ الَّذِيْ يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ، إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِليَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ، إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، أَوْ فَاجِرٌ شَقِيٌّ، النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُوْ آدَمَ، وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍ.
‘‘নিজেদের মৃত বাপ-দাদাদেরকে নিয়ে গর্বকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত তারা যেন তা দ্বিতীয়বার না করে। কারণ, তারা তো মূলতঃ জাহান্নামের কয়লা। অন্যথায় তারা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মলকীটের চাইতেও অধিক মূল্যহীন বলে বিবেচিত হবে। আরে মলকীটের কাজই তো শুধু নাক দিয়ে মলখন্ড ঠেলে নেয়া। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে জাহিলী যুগের হঠকারিতা তথা নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে নিয়ে গর্ব করা থেকে পবিত্র করেছেন। মূলতঃ মানুষ তো শুধুমাত্র দু’ প্রকার: মুত্তাকী ঈমানদার অথবা দুর্ভাগা ফাসিক। সকল মানুষই তো আদম সন্তান। আর আদম (আঃ) কে তো মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং এতে একের উপর অন্যের গর্বের কীই বা রয়েছে ?! [2]
জাহেলী যুগের কঠোর সমালোচনা জরুরী ছিলো। বংশগরিমাকে দেবতাসমান গুরুত্ব দিতো তারা। মানুষ তো বটেই, আরবরা তাদের উট ঘোড়া ইত্যাদির বংশনামাও মুখস্ত রাখত। কে স্বাধীন নারীর গর্ভজাত আর কে বাদীর গর্ভে জন্ম গ্রহণকারী, এই বিবরণী তারা সংরক্ষণ করতো। কে সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোকের দুধ পান করেছে আর কে নিম্ন কৃষ্টির বা নিম্ন বংশীয় নারীর দুধ পান করেছে, এটাও ছিলো তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধকালে সালমা ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য থেকেও ব্যাপারটা অনুভব করা যায়। তিনি বলেছিলেন – أَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ
আমি আকওয়ার পুত্র আর আজ বোঝা যাবে যে, কে সম্ভ্রান্ত স্বাধীন রমণীর দুগ্ধপান করেছে আর কে পান করেছে দাসীর দুধ। [3] বংশসম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যচর্চার জন্য একদল বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর সৃষ্টি হয়, যাদের কদর ছিলো অনেক বেশি। আরবরা তাদেরকে বলতো নাসসাবুন বা বংশলতিকা বিশেষজ্ঞ। কোথাও বংশধারা নিয়ে কোনো সংশয়ী ব্যাপার বা জিজ্ঞাসা হাজির হলে সত্য-তথ্যের জন্য তাদের শরণ নিতো মানুষ।
বংশলতিকা সাজানোর বিপদ :
এই যখন পরিস্থিতি, তখন কার পক্ষে সম্ভব হতো আরবদের ঐতিহ্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা? কার পক্ষে সম্ভব হতো আরবদের কোনো বংশধারাকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সজ্জিত করা? আরবদের বংশ দূরে থাক, নিজের গোত্র বা উপগোত্রের বংশধারাকেও ইচ্ছেমতো সাজিয়ে নেবার কোনো অবকাশ ছিলো না কারো জন্য। বংশসূত্রের ঐতিহ্য আরবদের সম্মিলিত স্মৃতি ও মহিমার ঘোষক ছিলো। প্রত্যেকের ঐতিহ্যগুলি তাদের শত্রুদেরও মুখস্থ থাকত। এমতাবস্থায় এটি কল্পনা করাও অসম্ভব যে একজন ব্যক্তি নিজের বংশধারাকে হঠাত করে ভুলভাবে বর্ণনা করবেন এবং গোটা আরব তা মেনে নেবে। কেউ একে প্রত্যাখ্যান করবে না!
আরবরা সত্যিই মন্দের পঙ্কিলতায় ডুবন্ত ছিলো। মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিমজ্জিত ছিল অন্ধ অন্ধকারে। কিন্তু আত্মঘাতী বাস্তবতা সত্ত্বেও তারা মিথ্যাকে ঘৃণা করত। কেউ মিথ্যাবাদী হিসাবে জনগণের মধ্যে পরিচিত হবে, এটা ছিলো তাদের কাছে চূড়ান্ত অপমান। তাই তারা মিথ্যা বলতে ভয় পেত। এই ভয়েই আবু সুফিয়ান ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হিরাক্লিয়াসের দরবারে মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারেনি। [4]

নবীজি নবুওতের ঘোষণা দিলেন। গোটা আরবের কুসংস্কার তাঁর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করলো।নবীজির দাওয়াতকে দমানোর জন্য এমন কোনো উপায় নেই, যা তারা অবলম্বন করেনি।তাঁর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরণের অপবাধ দিয়েছে তারা। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য করতে পারেনি। কিন্তু তিনি যদি নিজের বংশধারায় কারসাজি করতেন, তাহলে এই বিষযে অভিযোগ উত্থাপনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতো না তারা। কিন্তু কেউই এমনতরো কোনো অভিযোগ উচ্চারণ করেনি। বরং তাদের নেতা আবু সুফিয়ান বাইজেন্টাইন রাজদরবারে স্বীকার করেছে, মুহাম্মদ সা.কে কখনো মিথ্যার জন্য অভিযুক্ত বা সন্দেহ করা হয়নি।[5]
কুরাইশদের আভিজাত্য :
আরবদের কাছে ঐতিহ্য ছিলো রক্তের চেয়েও মূল্যবান। বংশের অতীত সন্ধানের প্রথা আরবদের যেকোন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের চেয়ে বেশি জীবন্ত ছিলো । নিজেদের ঐতিহ্যের মূলে তারা নির্দেশ করতেন দ্বীনে হানিফ বা ইবরাহীম আ. প্রবর্তিত ধর্মকে। আরবদের সভ্যতা-সংস্কৃতি অনবরত ইবরাহীম আ. এর সাথে নিজেকে লগ্ন করেছে। আরবদের প্রধান অংশটিকে বলা হতো “আরবে মুসতারিবা”। তারা ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর বংশধর। কুরাইশরা ছিল সেই আরব গোত্র সমূহের অন্যতম প্রধান ও সম্মানিত গোত্র। যার একটি বিশিষ্ট শাখা ছিল বনু হাশিম।
সমস্ত আরব গোত্র কুরাইশদের সম্মান করত । সম্মানের মূলে ছিল আল্লাহর ঘর, কাবা। তারা কাবাঘরের রক্ষক ও সেবক ছিল । এই পবিত্র ঘর হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আ.) নির্মাণ করেছিলন। এখানে হজ্জ ও তাওয়াফের সিলসিলা তাদেরই শিক্ষা। হ্জ্জ -ওমরাহ ও হাজীদের ব্যবস্থাপনার মহান দায়িত্ব কুরাইশকে সম্মানিত করে তোলে। যখন দস্যুতা ও যুদ্ধমগ্ন মরুভূমিতে কোনো কাফেলার নিরাপত্তা থাকতো না, তখনো কুরাইশদের কাফেলাগুলো নির্ভয়ে বিচরণ করতো মরুভূমিতে, তারা ঘুরে বেড়াতো সিরিয়া ও ইয়েমেনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। আরবের সীমানা পেরিয়ে রোমান সীমান্ত অঞ্চলেও ছিলো তাদের প্রতি সমীহ ও স্বীকৃতি। পারস্যের সীমান্ত অঞ্চলও কুরাইশদের আভিজাত্য ও উচ্চবংশীয় মহিমাকে বরণ করতো। কুরাইশরা যে ইসমাইল আ. এর বংশধর, এই প্রশ্নে কেউ আপত্তি তোলেনি কখনো। না জাহেলী যুগে এমন আপত্তি উঠেছে, না ইসলাম পরবর্তী হাজার বছরে।
ম্যুর -ওয়াটের অনুমান :
হঠাৎ করে উনিশ শতকীয় কিছু প্রাচ্যবিদ কথাটা পাড়লেন। তারা না ছিলেন আরবের কেউ,না আরব ঐতিহ্যের কোনো ধারক। না আরবী ভাষা ও সংস্কৃতির মর্মমূলকে স্পর্শ করতে পেরেছেন তারা, না এর সাথে ছিলো কোনো নিবিড় বন্ধন।উল্টো বরং ইসলাম ও আরব ঐতিহ্যের সাথে দীর্ঘ শত্রুতার উত্তরাধিকার বহন করছিলেন তারা। তাদের চারপাশে ছিলো লজ্জাজনক অপব্যাখ্যা ও উদ্ভট দাবি-দাওয়ার স্তূপ। সেই স্তূপের উপর বসে মহাসমুদ্রের ওপার থেকে তারা সহসা উচ্চারণ করলেন কুরাইশরা ইসমাইলের বংশধর নয়। এই দাবির পেছনে কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি ছিলো না। কোনো প্রামাণ্যতার ধারও তারা ধারেননি। কেবলই গায়ের জোর। কেবলই অনুমান।

তাদের দাবির প্রাথমিক প্রবর্তকদের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হলেন উইলিয়াম ম্যুর (১৮১৯-১৯০৫) । তিনি দাবি করেন –
‘ইসলামের নবী (ﷺ)কে হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর হিসেবে গণ্য করা হোক এবং তিনি হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর বলে প্রমাণিত হোন, এই আকাঙ্খা তাঁর জীবনে জন্মেছিল… এ জন্য, রাসূল সা. এর আব্রাহামিক বংশধারার প্রাচীনতম ধারা উদ্ভাবন করা হলো । ইসমাঈল (আঃ) এবং বনী ইসরাঈলের অসংখ্য কাহিনী অর্ধেক ইহুদি এবং অর্ধেক আরবি ছাঁচে ঢালাই করা হলো।’ [6]
অদ্ভুত এক আবিষ্কার উইলিয়াম ম্যুরের৷ যিনি তার ‘লাইফ অব মুহাম্মদ’ গ্রন্থের ভূমিকায় এসব মত প্রকাশ করেছেন। ম্যুর দেখাতে চেয়েছেন আরব ঐতিহ্য আরবদের ইসমাইলী বংশের কথা জানতো না। মুহাম্মদ (সা.) এবং কুরাইশরা ইব্রাহীম (আ.) এবং ইসমাইলের (আ.) বংশধর ছিলেন, এটাও মানুষ জানতো না । এই বংশসূত্রের কথা তখনই প্রচারিত হলো, যখন রাসূল সা. এর মধ্যে বংশীয় আভিজাত্য ও পারিবারিক মর্যাদার আকাঙ্খার উদ্ভব হয়। তিনি তার বংশকে হযরত ইব্রাহিম (আ) এর সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করলেন। এজন্য এমন কল্পকথা তৈরি করা হয়, যা দ্বারা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে মুহাম্মদের (সা.) বংশগত সম্পর্ক প্রমাণিত হতে পারে।
উইলিয়াম ম্যুরের তৈরি অনুমানকে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া জরুরী । অতএব আরেক প্রাচ্যবিদ মন্টগোমারি ওয়াট এর উপর আরো জোর দিলেন । ওয়াট তার অনুমানে রং লাগাতে দলিলের জন্য অস্থির চেষ্টায় নিয়োজিত হলেন। এই অস্থিরতার প্রকাশ ঘটলো আল কুরআনকে দাবির পক্ষে খাড়া করবার মরিয়া চেষ্টায়। ওয়াট দাবি করেন, কুরআনের যে আয়াতগুলি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাথে মহানবীর (সা.) সংযোগ প্রমাণ করে, সেগুলি মাদানী যুগের। মক্কায় অবতীর্ণ কুরআনের অংশ এ ব্যাপারে নীরব। ওয়াট এ বিষয়ে বেশ কিছু অনুমান তৈরি করেছেন। তার একটি দীর্ঘ উদ্ধৃতি হাজির করা হলো :
In the polemics of the Quran against the Jews a prominent place is taken by the conception of the religion of Abraham. This is an idea which is not found in the Meccan revelations and is presumably not based on pre- Islamic Arab legends. During the Meccan Period more prominence was given to Moses than to Abraham among the Prophets as a forerunner of Muhammad. Abraham is simply one of many prophets, and the people to whom he is sent are not specified; indeed, it seems to be implied that he was not sent to the Arabs , since Muhammad is said to be sent to a people who had never had a warner . Likewize there is no mention of any connexion of Abraham and Ishmael with the Kabah ; Ishmael is named in lists of Prophets, but no details are given about him . The presumption is that at first the Muslims did not know about the connexion of Ishmael with Abraham and ( according to the Old Testament ) with the Arabs . At Medinah, however, in closer contact with the Jews they gained knowledge of such matters “
“কুরআন মজীদ ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে সব বক্তব্য দিয়েছে, তাতে ইব্রাহিমি ধর্মের ধারণা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করেছে। এটি এমন এক ধারণা, যা মক্কার কুরআনে পাওয়া যায় না। ফলে অনুমান করা যায় যে, এই ধারণা প্রাক-ইসলামী আরব ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে জন্মেনি। মক্কার সময়কালে মুহাম্মদের অগ্রদূত হিসাবে নবীদের মধ্যে আব্রাহামের চেয়ে মুসাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।
ইব্রাহীমের মর্যাদা শুধু এই যে, তিনি অনেক নবীর একজন এবং যে জাতির কাছে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন, তার কোনো উল্লেখ নেই। যাইহোক, এটা বলা যেতে পারে যে তিনি আরবদের কাছে প্রেরিত হননি। কারণ মুহাম্মদ (সা) কে এমন একটি জাতির কাছে প্রেরিত করা হয়েছিল, যাদের কাছে ইতোপূর্বে কোনো নবী আসেননি। একইভাবে কাবার সাথে ইব্রাহিম ও ইসমাঈলের সংযোগের কথাও উল্লেখ নেই। ধারণা এই যে শুরুতে মুসলমানরা জানত না যে ইসমাঈল- ইব্রাহিমের ( আ.) সাথে তাদের কী সম্পর্ক! তারা জানত না ইসমাঈল আরবদের সাথে কী সম্পর্ক। মদিনার ইহুদীদের সাথে যখন যোগাযোগ ঘটলো, তখনই তারা এটা জানতে পেরেছে।[7]

সত্য বিকৃতির পায়তারা :
মন্টগোমারি ওয়াটের এই দীর্ঘ বয়ান সত্যকে বিকৃত করার পায়তারার নজির। পায়তারাও একটা নয়, অনেকগুলো। যা বারবার রূপ বদলিয়েছে। প্রথমে তিনি দেখাতে চাইলেন, শুরুতে দ্বীনে ইবরাহিমী সম্পর্কে আরবদের কোনো ধারণা ছিলো না। এই দাবির কোনো প্রমাণ লাগবে না , তার অনুমান থেকেই দাবিটার জন্ম। এর উপর ভর করে তিনি আরেকটা দাবি হাজির করলেন। সেটা হলো ইব্রাহিমী ধর্মের যে ধারণা ইসলামী সাহিত্যে আছে, তা আরব ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। এরপর তিন নম্বর অনুমান হাজির করলেন। দাবি করে বসলেন, শুরুতে মুসলমানরা ইবরাহীমের আ. চেয়ে মুসাকে আ. বেশি মূল্য দেয়, প্রাধান্য দেয়।এই সব অনুমানের কাঁধে সওয়ার হয়ে তার আসল দাবি হাজির করলেন। এই উপসংহার তৈরী করলেন যে,
হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর চেয়ে হযরত মূসা (আ.)-কে বেশি গুরুত্ব দেওয়াই প্রমাণ করে যে মুসলমানরা হযরত ইব্রাহীমের সঙ্গে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক সম্পর্কে অবগত ছিল না। নতুবা তারা অবশ্যই হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে বেশি গুরুত্ব দিত!
যেহেতু ওয়াটের মনে হয়েছে, মুসলমানরা শুরুতে ইবরাহিমকে আ. আত্মীয় হিসেবে জানতো না, তাই তার মনে আরেকটা দাবির জন্ম হলো। দাবিটা হলো- হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আরবদের কাছে পাঠানো হয়নি। আরবদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। এরপর ওয়াটের আরেক অনুমান- ইব্রাহিম এবং ইসমাইল (আ.) দ্বারা কাবা নির্মাণের কথা আরবদের জানা ছিল না ।
তিনি তা কীভাবে নিশ্চিত হলেন? প্রমাণটা কী? প্রমাণ হলো তার মনে হওয়া। যেহেতু মক্কী কুরআনে এই কথার উল্লেখ নেই, তাই তার মনে হয়েছে। অতএব ওয়াট আমাদের জানাচ্ছেন- মুসলিম এবং আরবরা জানত না হযরত ইসমাইলের সাথে তাদের কী সম্পর্ক? তারা জানতো না, ইবরাহীম আ. এর সাথে তাদের আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে কি না?
উইলিয়াম ম্যুর এবং মন্টোগোমারি ওয়াটের অনুমানের ধরণ ও চরিত্র আমরা দেখলাম । ম্যুর ঘোষণা করছেন যে, মহানবী (সা.) হজরত ইব্রাহিম (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক মহত্ত্ব দেখানোর জন্য একটি সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন এবং তারপর এই সম্পর্ককে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন মিথ তৈরি করা হয়েছিল।অর্থাত ইব্রাহিম ও ইসমাঈল (আ.)-এর সাথে আরবদের কোনো বন্ধন ছিল না এবং তারা এই বন্ধন সম্পর্কে জানতও না। এই বন্ধন মুহাম্মদ সা. এর আকাঙ্খার উদ্ভাবন।
মন্টগোমারি ওয়াট এই সম্পর্ককে অস্বীকার করেন না, তবে তিনি বলেন যে আরবরা ইব্রাহিম এবং ইসমাইলের সাথে তাদের সম্পর্কের কথা জানত না । মুসলিমরাও হিজরতের আগে বিষয়গুলি সম্পর্কে জানত না। হিজরতের পর মুসলমানরা ইহুদিদের সংস্পর্শে এলে জানতে পারে যে, তারা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর।তখন তারা জানে, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ধর্ম ছিল সত্য ধর্ম, হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র এবং উভয়ে একসঙ্গে কাবা নির্মাণ করেন।
ওয়াট প্রকৃতপক্ষে উইলিয়াম ম্যুরের কথাটাই বলেছেন। কিন্তু এটা বলবার জন্য চাতুর্য মোতায়েন করেছেন। তিনি বলতে চান যে আরবরা তাদের স্মৃতি নিয়ে গর্বিত ছিল। নিজেদের বংশতালিকা মনে রাখা এবং গর্বিতভাবে উপস্থাপন করা ছিল তাদের প্রিয় বিনোদন। যদি তারা ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ) এর বংশধর হতো, তবে অবশ্যই তাদের জাতীয় ঐতিহ্যে এর উল্লেখ থাকতো । ওয়াটের দৃষ্টিতে আরবদের জাতীয় ঐতিহ্যে ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ. এর উল্লেখ যেহেতু নেই, এবং তাদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের কথা কোরআনের মক্কার সূরাগুলোতে যেহেতু নেই, ফলে প্রমাণিত হয় যে, ইবরাহীম আ. এর সাথে আরবদের কোনো রক্তসম্পর্ক নেই। মদীনায় গিয়ে ইহুদিদের কাছে ইবরাহীমের আ. ব্যাপারটা জেনে মুহাম্মদ সা. নিজেকে ইবরাহীমের বংশধর বলে ভাবতে শুরু করলেন।
উইলিয়াম ম্যুর এবং মন্টগোমারি ওয়াটের এই সমস্ত অনুমান ভিত্তিহীন। বাস্তবতা হলো, আরবরা নিজেদেরকে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ) এর বংশধর বলে জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন । তারা এই পয়গাম্বরদের বংশধর হবার প্রশ্নে গর্ব করতেন। তারা জানতেন পবিত্র কাবা নির্মাণ করেছেন হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল আ.। তারা সত্যধর্ম অনুসরণের চেষ্টা করতেন, যাকে তারা বলতেন দ্বীনে হানিফ। নিজেদের যে প্রথাগুলোকে তারা মহিমান্বিত বলে জানতেন, তাকে দ্বীনে হানিফের সাথে করতেন যুক্ত। তাদের সত্যসন্ধানী মানুষগুলো জাহেলিয়াতের চরম অন্ধকারেও তালাশ করতেন ইবরাহীম আ. এর শিক্ষা ও আদর্শকে।
প্রাচীন কাব্যে ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ)
আরবী ঐতিহ্যে হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর উল্লেখ ছিলো না , এমন দাবি করতে হলে হয় আপনাকে আরবদের ইতিহাসের সাথে সম্পূর্ণ অন্ধ থাকতে হবে, নয় প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ এবং মানসিক সঙ্কীর্ণতার কারণে দিনকে রাত বলার জেদ করতে হবে ।
আরবী সাহিত্যের মনোযোগী পাঠকমাত্রই জানেন, ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের যে অল্প সংখ্যক কবিতা পাওয়া যায়, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে হযরত ইবরাহীম – ইসমাইল আ. এর।

ইসলামপূর্ব আমলে উমাইয়া ইব্‌ন আবুস সালত তার কাব্যে হযরত ইবরাহীম আ. কর্তৃক পুত্র ইসমাইল আ. এর কুরবানীর কাহিনী উল্লেখ করেছেন। গোটা আরবের মানুষ তার কাব্য শুনেছে, আবৃত্তি করেছে। উমাইয়া লেখেন:

ولإبراهيم الموفى بالنذر … احتسابا وحامل الأجزال
بكره لم يكن ليصبر عنه … أو يراه في معشر أقتال
এবং ইবরাহীমের জন্য, যিনি মানত পূরণ করেছিলেন । তা করেছিলেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং হয়েছিলেন পুরস্কারের বাহক। তার সন্তানের কুরবানী, যার বিচ্ছেদ তিনি সহ্য করতে পারেননি। কিংবা তাকে শত্রু কর্তৃক ঘেরাউ দশায় দেখাটা বরদাশত করতে প্রস্তুত ছিলেন না। [8]

উমাইয়া তার কবিতায় স্পষ্টভাবে ইবরাহীম আ. এর ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ও মহিমাগান উচ্চারণ করেন। লেখেন-
كل دين يوم القيامة عن … د الله إلا دين الحنيفة زور
কিয়ামতে আল্লাহর কাছে দ্বীনে হানিফ বা ইবরাহীম আ.এর ধর্ম ছাড়া সব দ্বীনই বাতিল, মিথ্যা। [9]
জুহায়রের মৃত্যু হয় মহানবী সা. এর নবুওতের আগে, 609 খ্রিস্টাব্দে। তার কবিতায় আছে কাবাঘরের মহিমার বয়ান, তাওয়াফের বয়ান এবং স্পষ্টই তিনি বলছেন একে নির্মাণ করেছিলেন কুরাইশ ও জুরহামের পূর্বপুরুষরা। হযরত ইসমাইল আ. জুরহামী রমণী বিয়ে করেন এবং এই ধারায় মক্কায় জনবসতির বিস্তার হয়, কুরাইশের উদ্ভব হয়। জুহাইরের ভাষায়-

فَأَقْسَمْتُ بالبَيْتِ الذي طافَ حوْلَهُ رِجالٌ بَنَوْهُ من قُرَيشٍ وَجُرْهُمِ
“সুতরাং আমি সেই ঘরের শপথ করছি যার চারপাশে লোকেরা প্রদক্ষিণ করে, কুরাইশ ও জুরহুম কবিলার বুনিয়াদী লোকেরা একে নির্মাণ করেন।” [10]
বাইবেলের ইসমাইলীয়গণ :
ম্যুর -ওয়াটের ফ্যালাসিকে রদ করে বাইবেলীয় ভাষ্য স্বয়ং। আরবরা নিজেদের ইবরাহীম-ইসমাইলের আ. বংশধর ভাবতো না, এমনটি বাইবেলীয় ব্যাখ্যাকেও চ্যালেঞ্জ করে। ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব জেনেসিসে আব্রাহামকে ইসমাইল এবং আইজ্যাকের পিতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইসরাইল বংশের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব । কারণ আইজ্যাকের পুত্র জ্যাকবের বংশধররাই হলেন বনু ইসরাইল। অতএব ওল্ড টেস্টামেন্টের ভাষায় ইবরাহীম অনেক জাতির পিতা। [11] । বাইবেলের বুক অব জেনেসিস জানায়, এই জাতিদের প্রথমটি ইসমাইলি, দ্বিতীয়টি ইসরাইলি। কারা এই ইসমাইলি?
বুক অব জেনেসিস জানাচ্ছে, ইসমাইলীয়রা ফারান ভূমির বাসিন্দা। এটি সেই ভূমি, যেখানে ঈশ্বর ইসমাইল ও হাজেরাকে রেখে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রায় সব পণ্ডিতই ইসমাইলীদেরকে আরব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।[12]

বুক অব জেনেসিস হাজেরা এবং ইসমাইল ফারানের মরুভূমিতে বসতি স্থাপন করেন। ইসমাইল মিশরীয় এক মহিলাকে বিয়ে করেন।তাদের ছিলো বারোজন ছেলে। প্রত্যেকেই হন গোত্র প্রধান। এই বারো সন্তান হলেন-

  1. নাবাইথ
  2. কেদার
    3.ইদবীল
  3. মিবসাম
  4. মিশমা
  5. ডুমাহ
  6. মাসা
  7. হাদদ
  8. তেমা
  9. জেতুর
  10. নাফিশ
  11. কেডেম [13]
    নাবাইথ :

ইসমাইলের (আ.) জ্যেষ্ঠ পুত্র নাবাইথ। বাইবেল জানায়, কেদার ও নাবাইতের গোত্র ভেড়া পালনের জন্য বিখ্যাত ছিল ।[14] অ্যাসিরিয়ান রেকর্ডে তাদেরকে প্রায়ই একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইহুদি ঐতিহাসিক জোসেফাস নাবাথিদের উল্লেখ করেছেন বারবার। তিনি ইসমায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্রের সাথে তার সময়ের নাবাতিদের সম্পর্ক নিশ্চিত করেন। তিনি দাবি করেন , নাবাতিরা ইউফ্রেটিস থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত সমগ্র ভূমিতে বাস করত এবং এই অঞ্চলটিকে ‘নাবাতেন’ বা নাবাতেনদের বিচরণভূমি বলে উল্লেখ করেন তিনি।ফ্লেভিয়াস জোসেফাস (৩৭/৩৮ – ১০০ খ্রি.) লেখেন- নাবাতিয়ানরা আরব দেশগুলির নানা অঞ্চলকে তাদের নামে নামকরণ করেছিলো। [15] জোসেফাস নাবাতিদের থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করেন। নাবাতিরা প্রাথমিক অবিকশিত আরবি ভাষায় কথা বলতো এবং লেখতো। গ্রীক এবং রোমান ইতিহাসবিদরা তাদেরকে সরাসরি ‘আরব’ বলেই ব্যক্ত করেছেন।
অ্যাসিরিয়ান রেকর্ডস থেকে স্পষ্ট যে, রাজা আশুরবানিপাল (668-663 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ‘আরবের নাবাইতিয়ানদের সাথে যুদ্ধ করছিলেন।’ তারপর 703 খ্রিস্টপূর্বাব্দে কালাদিয় এবং প্রতিবেশী উপজাতিদের একটি দল আসিরীয় শাসক সেন্নাকেরিবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। Tiglath Pilezeer III-এর প্রাচীন নথিতে, বিদ্রোহীদের নেতাদের নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আছেন হাগারানু (সম্ভবত হাগার বা হাজেরার আ. বংশধর, যিনি ইসমাইলের আ. মা), নাবাতু (খুবই সম্ভবত নাবায়েতের বংশধর, যিনি ইসমাইলের (আ.) জ্যেষ্ঠ পুত্র) এবং কেদারাইটিস (কেদার ইসমাইল আ. এর দ্বিতীয় পুত্র)। এই রেকর্ড জানায়, উপজাতিরা অ্যাসিরিয়া থেকে আরব মরুভূমিতে চলে গিয়েছিল এবং তাদেরকে পরাজিত করা যায়নি।
অ্যাসিরিয়ান রাজ্য শেষ পর্যন্ত দুই ভাইয়ের শাসনে বিভক্ত হয়, একজন ব্যাবিলোনিয়ার রাজা এবং অন্যজন অ্যাসিরিয়ার রাজা। 652 খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং ব্যাবিলনীয় রাজার সমর্থনে কেদারিয়রা পশ্চিম অ্যাসিরিয়া আক্রমণ করে।

records of Esarhaddan এর তথ্য হলো, এই যুদ্ধে কেদারীরা পরাজিত হয় এবং নিরাপত্তার জন্য নাবাতিদের নেতা নাটনুর কাছে পালিয়ে যায়। পরে কেদারি এবং নাবাতিরা আসিরিয়ার পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণ করে কিন্তু আবার পরাজিত হয়। তাদের পরাজয়ের পর নাটনুর ছেলে নুহুরুকে নাবাতুর নেতা ঘোষণা করা হয়।
তিনশত বছর পরে 259 খ্রিস্টপূর্বাব্দের জেনন প্যাপিরিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে নাবাতুরা গাজা ও সিরিয়ার পথে গেরহিয়ান এবং মিনিয়ান লোবানের ব্যবসা করত। তারা উত্তর আরবের কেদারদের কেন্দ্র জাউফ এবং তাইমা থেকে তাদের পণ্য পরিবহন করত। সৌদি আরব এবং বাহরাইনের উপকূল বরাবর পারস্য উপসাগরের অবস্থানগুলিতেও প্রারম্ভিক নাবাতিদের মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্নতাত্তিম নিদর্শন পাওয়া গেছে আরবের তুওয়ার, জুবায়দা, থাজ এবং আয়ন জাওয়ানে।
আরব উপদ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে এবং সিনাইয়ে নাবাতিরা বসবাস করতো। বন্দর শহর আইলা (আধুনিক দিনের আকাবা) সহ বেশ কয়েকটি সমুদ্রবন্দরে ঘাঁটি স্থাপন করে।
নাবাতিয়ানরা কেবল উটের বহর নিয়ে ব্যবসা করতো না, তারা সমুদ্র বাণিজ্যেও দক্ষ ছিলো।
নাবাতিরা বণিক বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে একটি চিত্তাকর্ষক সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। তাদের রাজধানী ছিল মূলত পেট্রা শহর, যা দক্ষিণ জর্ডানের বেলেপাথরের পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। পরবর্তীতে দক্ষিণ সিরিয়ার বোস্ত্রা শহরটিও একটি রাজকীয় শহর হিসাবে বিকশিত হয়। নাবাতিরা নেগেভ, উত্তর আধুনিক সৌদি আরব এবং আধুনিক জর্ডানের অন্যান্য অংশেও কয়েকটি শহর তৈরি করেছিল। 106 খ্রিস্টাব্দে, নাবাতিদের সাম্রাজ্য দখল করে রোমানরা এবং অবশেষে তাদের নাবাতিয় স্বাতন্ত্রকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়।
কেদার :

  1. ইসমাইলের আ. দ্বিতীয় সন্তান কেদারের বংশধরদের বাইবেলে বলা হয়েছে কেদারাইট। তারা ছিল একটি বৃহৎ যাযাবর কবিলা। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে উত্তর আরবের বেশিরভাগ অংশ তারা নিয়ন্ত্রণ করত।[16]
    ] খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর অনেক অ্যাসিরিয়ান শিলালিপি তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয় । খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম অব্দে আসিরিয়ার একটি শিলালিপিতে কেদারাইটদেরকে উল্লেখ করা হয় ব্যাবিলনের পশ্চিমে ভূমিতে বসবাসকারী হিসাবে। [17]
    কেদারের ছেলেরা কেদারিয় রাষ্ট্রগঠন করে । তারা ছিল ইসমাইলের পুত্রদের প্রধান সামরিক শক্তি। বুক অব ইশাইয়া কেদারিয়দের “গৌরব এবং তার প্রতিভাধর তীরন্দাজদের” কথা বলেছে ।[18] বুক অব ইজেকিল দেখায় কেদারের সমস্ত রাজকুমার ছিলেন আরব । [19]
    কেদারিয়দের কেন্দ্র ছিলো বর্তমান সৌদি আরবের আল-জাওফ প্রদেশে তাদের রাজধানী ছিলো দুমাত আল-জান্দালে । খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দী থেকে কেদারিয়দের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের প্রমাণ মিলে। যা খ্রিস্টপূর্ব ৯ম থেকে ৭ম শতাব্দী জুড়ে উত্তর আরবের একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিলো। যার পশ্চিম সীমান্ত নীল বদ্বীপের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বে ট্রান্সজর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং দক্ষিণ জুডিয়া (তখন ইদুমিয়া নামে পরিচিত ), নেগেভ এবং সিনাই উপদ্বীপের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ছিল এর বিস্তার।

কেদারীয়রা আসিরীয়দের সাথে অবিরাম সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।তাদের অধিনে ছিলো উত্তর আরবের বাণিজ্যিক রোডসমূহ।পরে সেগুলো নাবাতিদের নিয়ন্ত্রণে যায়। সেগুলো দখলে নিতে চেষ্টা করে বহু অনারব রাষ্ট্র। যাদের মধ্যে আছে অ্যাসিরিয়ান, নব্য-ব্যাবিলনীয়, পারস্য এবং এমনকি রোমানরা।
কেদারিয়দেরকে বাইবেলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে যাযাবর হিসেবে দেখানো হয়েছে। Psalm 120 এ দেখা যায় , বক্তা পালিয়ে যায় কেদারীদের তাঁবুতে, এবং মেশেক নামক জায়গায় বাস করে। ইশাইয়া 42:11-এ, কেদারকে প্রশংসার একটি গানে বন্দিত করা হয় । Jeremiah 2:10 এ ইস্রায়েলের সন্তানদের শেখানো হয়েছে কেদারিদের সাথে কেমন আচরণ করবে। Jeremiah 49:28 এ আরবের (হাজোর এবং কেদার) বিরুদ্ধে একটি ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে , এতে বলা হয়, ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার তাদের ধ্বংস করবেন। Ezekiel 27:21 জানাচ্ছে, আরব এবং কেদারের রাজপুত্ররা টায়ারের সাথে ভেড়া, ভেড়া এবং ছাগলের ব্যবসা করত।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কেদারিদের প্রতাপ কমলে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে হাজির হয় নাবাতিরা।

আদবিল:

ঐতিহাসিক জোসেফাসের মতে, আদবিলের বংশধররা উত্তর আরবীয় অঞ্চল অধিকার করেছিলো। একে আবার নাবাতেন অঞ্চল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। রোম এবং পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে এই অঞ্চলের ব্যাপক বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া ছিলো। কেউ কেউ মনে করেন, তারা সিনাই অঞ্চলে বসবাস করতো। তিগলাথ পিলেসার -৩ (744-727 খ্রিস্টপূর্ব) এর বশ্যতা কবুল করে তারা । তাদের এক সর্দারের নাম ছিল ইদিবি’লু । যিনি মিশরের সীমান্তে অ্যাসিরিয়ান রাজার গভর্নর হিসেবে কাজ করতেন। তার গোত্র পশ্চিম দিকে বহুদূরে ছড়িয়ে পড়েছিলো বলে কথিত আছে।

ক্রমাগত অভিবাসন, বাণিজ্য এবং আন্তঃবিবাহের কারণে, আদবীল সহ এই বিভিন্ন গোত্রগুলি বৃহত্তর আরব সংস্কৃতিতে বিলীন হয়ে যায়। তবে তাদের বংশধররা যুগে যুগে আরব সভ্যতার দুর্দান্ত স্পন্দনে অবদান রেখেছে।

মিবসাম ও মিশমা:
কিছু ইতিহাসবিদ দাবি করেছেন, মিশমার বংশধররা জাবালে মিসমা এর আশেপাশের জনপদগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল হয়তো । মিবসাম ও মিশমা উপজাতি হয়তো সিমিওনাইটদের সাথে আন্তঃবিবাহে যুক্ত ছিলো । একসময় একটি পৃথক সত্তা হিসাবে ইতিহাস থেকে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। [20]

দুমাহ:
বাইবেলের বুক অব যশোয়ায় ডুমাহকে কেনানের একটি শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । [21]বুক অব ইশাইয়ায় একে ইদোম এবং সেয়েরের সাথে যুক্ত বলে দেখানো হয়েছে।[22]
ডুমাহকে সাধারণত দুমাতুল জন্দল বলে ব্যাখ্যা করা হয়। অনেকের মতে, ডুমাহদের নামে আদুমাতু এলাকার নামকরণ হয়। records of Esarhaddan এ বর্ণনা করে রাজা সেনাহেরিব আদুমাতুর বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন ।সিরিয়া, ব্যাবিলন, নাজদ এবং হিজাজ এলাকার মধ্যে প্রধান বাণিজ্যপথের একটি ছিলো আদুমাতু। এখানকার রাজা ছিলেন হাজায়েল। সেনাহেরিব তাকে বন্দী করেন। হাজায়েলকে বলা হতো “আরবদের রাজা” । আশুরবানিপালের একটি শিলালিপিতে হাজায়েলকে “কেদারিয়দের রাজা” বলে আখ্যায়িত করা হয়।

মাসা:
তিগলাথ পাইলেসার III-এর রেকর্ডে রয়েছে মাসা এবং তেমার বাসিন্দাদের বিবরণ। তাকে শ্রদ্ধা জানাতেন বাসিন্দারা । তাইমা থেকে প্রায় 14 কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত জাবালে ঘুনাইমের চূড়ায়, প্রত্নতত্ত্ববিদ উইনেট এবং রিড কিছু গ্রাফিতিলিপি আবিষ্কার করেন। এতে ডেদান এবং নেবায়োত উপজাতি মাসাকে উল্লেখ করা হয়। এই স্ক্রিপ্টে রয়েছে দেদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং মাসার বিরুদ্ধে যুদ্ধচিত্র । সম্ভবত উপজাতিগুলি সেই সময়ে একে অপরের কাছাকাছি ছিল । টলেমির মতে, মাসা উপজাতি সম্ভবত উত্তর আরবের মাসানোইয়ের সাথে যুক্ত।
মাসার অধিবাসীদের ইসরাইলীদের সাথে বিতণ্ডা করতে দেখা যায় বাইবেলে।[23]
হাদাদ:
এই উপজাতি সম্ভবত হারার বা হারারিনা নামে পরিচিত ছিলো। এরা পালমিরার উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ের কাছে বাস করত। আরবে এখনো একটি হাদ্দাদ গোত্র আছে। হাদাদের অধিকাংশই এখন খ্রিস্টান এবং সমগ্র সিরিয়া জুড়ে ছড়িয়ে আছে। জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইনেও হাদ্দাদীদের বসবাস।
টেমা :
তেমা সাধারণত ইয়াসরিব (মদিনা) এবং দুমার মধ্যখানে ছিলো, বাণিজ্য পথে হিজাজ জেলার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত তাইমার প্রাচীন মরূদ্যান। তাইমা ও দুমার মাঝখানে বিখ্যাত নাফুদ মরুভূমি। নাফুদ মরুভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বর্তমান তাইমা শহরটি প্রাচীন মরূদ্যানের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত।
রাজা থিগলাত পিলেসারের বিরুদ্ধে আরবরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন রানী সামসি। এই জোটে মাসা, তাইমা শহর, সাবা, হাজাপ্পা, বাদানা, হাট্টি এবং ইদিবাইল উপজাতিরা ঐক্যবদ্ধ হয় ।যুদ্ধে তারা পরাজিত হয় এবং এ্যাসিরিয়দের কাছে স্বাধীনতা হারায়।

আনুমানিক 552 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনের রাজা নাবোনিডাস (555-539 খ্রিস্টপূর্ব) এবং বাইবেলের জনক বেলশাজার তাইমা শহরকে আপন বাসস্থান বানিয়েছিলেন। [24] রাজা নবোনিডাস তার রাজত্বের ষোল বছরের মধ্যে দশ বছর সেখানে কাটিয়েছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে, নাবাতিয়ানরা তাইমায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে এবং এটি ধীরে ধীরে তাদের বাণিজ্য সাম্রাজ্যের একটি অংশ হয়ে ওঠে।
বুক অব ইসাইয়া 21:13-14 ,. বুক অব জেরেমিয় 25:23 তাইমা শহরের অধিবাসীদের উল্লেখ করেছে।

জেতুর, নাফিশ, কেদেমাহ :
আজ পর্যন্ত এই উপজাতিদের সম্পর্কে প্রাচীন ঐতিহাসিকদের দ্বারা লিখিত কোনো নথির তথ্য পাইনি ।
ইসমাইলের রক্তধারা ও আরব জাতি :

কেদারিয়রা ইসমাইলের দ্বিতীয় পুত্র কেদারের সন্তান, তা বাইবেল মনে করিয়ে দেয় বারবার। বুক অব ইশাইয়া 21:16-17 , বুক অব জেরমিয়া ৪৯: ২৮-৩২ স্পষ্ট করে যে,

  1. কেদার কেবল এক ব্যক্তি নন, বরং তার বংশধররা ছিলো এক জাতি। বুক অব জেরমিয়া পরিষ্কার করে যে, খ্রিষ্টপূর্ব 6 ষ্ঠ শতাব্দীর দিকে, নেবুচাদনেজারের কাছাকাছি সময়ে কেদারাইটরা তাদের ক্ষমতার শীর্ষে ছিল।[25]

বুক অব ইজকেলীয় এর ২০, ২১ ও ২৭ থেকে স্পষ্ট যে, কেদার ও আরবদের মধ্যে ছিলো বাণিজ্যিক , সাংস্কৃতিক ও রক্তসম্পর্কীয় সম্পর্ক।
খ্রিস্টপূর্ব 5ম শতাব্দীর একটি আরামাইক লিপিত কেদারাইট গাশমু বা গোমেশকে দেখাচ্ছে আরবদের সাথে এক ও অভিন্ন হিসেবে।

বহু অ্যাসিরিয়ান এবং দক্ষিণ আরবি শিলালিপি কেদারের সাথে আরবদের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে তো বটেই, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেও কেদারিরা ইসমাইলিক ঐতিহ্যের ধারক ছিলো, তা প্রমাণিত হয়। বাইবেল এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে ব্যক্ত করেছে মাত্র।

অপরদিকে খ্রিস্টপূর্ব ৭৩৮ থেকে ৭৩৩ সালের মধ্যে কেদারিয় রাণী জাবিবার শাসনামল ছিলো।

  1. তার রাজত্বের বিবরণী রয়েছে তিগ্লাথ-পিলেসার তৃতীয়ের অ্যানালসে । [26]
    এই অ্যাসিরীয় শিলালিপিতে, তাকে “আরবের রানী” বলা হয়েছে। অ্যাসিরিয়ান পাণ্ডুলিপিতে “আরবের রানী” উপাধিটি আসুরবানিপালের রাজত্ব পর্যন্ত যাযাবরদের দেওয়া একটি সাধারণ উপাধি ছিল।[27]

Tiglath-Pileser III শিলালিপিতে উত্তর আরবীয় এমন সাতটি উপজাতির নাম উল্লেখ আছে, যাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে বলা হয়েছিল। এই নামের তালিকা আমরা পাই Eph’al এর বই থেকে । নামগুলোর মধ্যে আছে–

১. মা-আস-‘-সা
২. তে-মা-আ-আ
৩. ইদ বি লা

অপরদিকে পিলাগনের উত্তরসুরী সারগন II, এর শিলালিপিতে উত্তর আরবিয় আরো চারটি উপজাতির নাম রয়েছে:

  1. হা-ইয়া-পা-আ
  2. তা-মু-দি
  3. ইবাদি দি
  4. মার-সি-(আই)-মা-নি
    প্রায় প্রতিটি নামের সাথে আছে ইসমাইলের (আ.) ছেলেদের নামের সাদৃশ্য। প্রথম শিলালিপিতে উল্লিখিত সাতটি নামের মধ্যে তিনটি সরাসরি ইসমাইলের (আ.) পুত্রদের নাম। তাদের নাম ছিলো মাসা, ইদবিল এবং তেমা । দ্বিতীয় তালিকাও এই সাদৃশ্যকে স্পষ্ট করে।
    প্রাচীন আরব উপজাতির আদিপুরুষ হিসেবে ইসমাইলের আ. চার পুত্রের সন্ধান পাওয়া আশ্চর্যজনক কিছু নয়। তবে এর চেয়েও আকর্ষণীয় বিষয় হল সেই শিলালিপি, যা বলছে ‘হাযায়েলের পুত্র ইয়াউতা’ ।’ইয়াউতা ইবনে হাযায়েল কেদারের একজন রাজা ছিলেন। সম্ভবত 676-652 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত তিনি শাসন করেছিলেন । তাঁর আমলের শিলালিপি পাওয়া গেছে প্রচুর । এতে রয়েছে অবাক বিবরণী । এতে হাজায়েলকে কে দুবার বলা হয়েছে সুমাইল এর রাজা । অন্য একটি শিলালিপিতে তাকে “কেদারের রাজা” বলা হয়েছে, কেদার সেই উপজাতি যা তাইমা’র উত্তরে ২০০ মাইল দূরে আদুমাতু মরূদ্যানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, কেন উভয়কেই কখনও কখনও “আরবদের রাজা” বা “আরবের রাজা” নামে অধিকতরো মহৎ উপাধি দ্বারা উল্লেখ করা হয়? [28]
    অ্যাসিরিয়ান “সুমুইল” নামটি যে আরবীয় “ইসমাঈল” এর সাথে সম্পর্কিত, তাতে সন্দেহের কারণ নেই ।
  5. জার্মান গবেষক আর্নস্ট অ্যাক্সেল নাউফ লেখেন “সুমুয়েল” উপজাতিগুলি বাইবেলের ইসমাইলীয়দের সাথে মিলে যায়। অ্যাসিরিয়ান রেকর্ড অনুসারে, সুমুয়েল ছিল উত্তর আরবে বসবাসকারী উপজাতিদের একটি জোট । তাদের রাজা-রাণীকে আরবের রাজা -রাণী বলা হতো। [29]
    এই যে আরবে ইসমাইল আ. এর বংশধরদের প্রাচীন ধারা, তা বিশ্লেষণ করে প্রাচীনতম রোমান -ইহুদী ঐতিহাসিক ফ্ল্যাভিয়াস জোসেফাসের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আরব জাতির প্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত ইসমাইল আ. । [30]

    ইসমাইলের বংশের বহু ধারা আরবে বিস্তৃত ছিলো। তবে কুরাইশরা যে ধারা থেকে আসেন, তা হলো কেদারিয়। ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতার বিস্তৃত ক্রমধারাকে উপেক্ষা করা যায় না বলেই পশ্চিমা গবেষকরা অবশেষে স্বীকার করছেন, কুরাইশরা হযরত ইবরাহীম -ইসমাইল আ. এর বংশধর। ক্যারল বাখোস কবুল করেন যে, ইসমাইলের বংশধারাটি তার পুত্র কেদারের দ্বারা বাহিত হয়, আদনানে উপনীত হয়, তারপর আরবে মুস্তারিবা বিকশিত হয় , তারপর কুরাইশ পর্যন্ত বাহিত হয়। [31]

আমাদের তদন্তের সারকথা যদি হাজির করি, তাহলে দেখা যাচ্ছে –

  1. ইসমাইলের (আ.) পুত্র কেদারের বংশধর কেদারিয়দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব 8ম শতাব্দী থেকে।
  2. কেদারিয়রা নিজেদেরকে একই সময় থেকে সুমুইল (ইসমাইলি) নামক গোত্র হিসেবে পরিচয় দিতো।
  3. ইসমাইলের (আ.) বারো পুত্রের মধ্যে চারজনের বংশধররা খ্রিস্টপূর্ব 8ম শতাব্দীতে আরব উপজাতি হিসেবে পরিচিত ও প্রমাণিত ।
  4. জেনেসিসের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি ইসমাইল (আ.) বিষয়ক বাইবেলের কিংবদন্তি বয়ান করে, যা খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীর ভাষ্য।
    5.প্রত্নতাত্তিক রেকর্ড দেখাচ্ছে আব্রাহামিক ঐতিহ্য ইসরায়েলীদের মধ্যে বিস্তৃত হওয়ার আগে আরবদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
    ৬. আরবরা হাজার বছর ধরে নিজেদেরকে এক নির্দিষ্ট পিতৃপুরুষের বংশধর হিসেবে ব্যক্ত করে এসেছে। সেই পূর্বপুরুষ হলেন ইসমাইল ও ইবরাহীম আ.।
    আরব সংস্কৃতির মর্মমূলে ইবরাহীম আ.:
    ফলে আরব ঐতিহ্যে ইবরাহীম-ইসমাইলের আ. উল্লেখ নেই এবং তারা নিজেদেরকে তার বংশধর মনে করতো না, এমন দাবি ভুল তো বটেই, একই সাথে উদ্ভট, আজগুবি । শুধু বংশসূত্রে আরবরা ইবরাহীম আ. এর সাথে যুক্ত ছিলো, তা নয়, বরং তারা যুক্ত ছিলো ধর্মসূত্রেও। দ্য ইক্লেসিয়াস্টিকাল হিস্ট্রি অফ সোজোমেন পঞ্চম শতাব্দীর গ্রীক সূত্র। তাতেই স্পষ্ট দেখানো হয়েছে, ” আব্রাহাম আরবদের শিখিয়েছিলেন একত্ববাদী ধর্ম । এরা হলেন সেই সব আরব, যারা ইসমাইল ও হাজেরার বংশধর। । [32]

ইয়েহুদা নেভো একজন ইসলামের বিরুদ্ধে আপত্তিমুখর ইতিহাসবিদ। তিনিও কবুল করেন যে, ইবরাহীমের ধর্ম দ্বীনে হানিফ ইসলামপূর্ব আরবের একেশ্বরবাদী ধর্ম। তার মতে, এই ধর্ম শেষ অবধি ইসলামের বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে বিবর্তিত হয়। মাইকেল কুক বলেন, “এর সঠিক অর্থ অস্পষ্ট” কিন্তু কুরআন “এটিকে একটি আদিম একেশ্বরবাদের ইঙ্গিতপূর্ণ প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করেছে, যা এটি (পরবর্তীকালের) ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মের সাথে বিপরীত বলে মনে করে”। কুরআনে হানীফকে “ইব্রাহিমের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু কখনও মূসা বা যীশুর সাথে নয় । [33]
বস্তুত আরবদের যে ধর্মীয় জীবন, তা আবর্তিত ছিলো ইবরাহীম আ.কে কেন্দ্র করে। তারা কাবাকে সম্মান করতো, যেহেতু এটি তাদের পূর্বপুরুষদের দ্বারা নির্মিত খোদার ঘর। তারা হজের আনুষ্ঠানিকতাকে পবিত্র জ্ঞান করতো, যেহেতু এই ইবাদতের প্রচলন করেছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। কাবাঘরের প্রদক্ষিণ, সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ, মিনা এবং আরাফাতের আচার-অনুষ্ঠান তারা করতো হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অনুসরণে । তারা তাদের মৃতদেরকে গোসল দিতেন, কাফন পরাতেন এবং কবরে দাফন করতেন । ইব্রাহিমের ধর্ম ও শিক্ষার অনুসরণে এসব করতে হয় বলেই তারা জানতেন । পবিত্র মাসগুলো এবং হারামের পবিত্রতাকে সম্মান করতেন তারা। বিশ্বাস করতেন যে, এটা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুসরণ। এই যে ব্যাপারগুলো, তা আরবদের সম্মিলিত পবিত্র ঐতিহ্য বলেই স্বীকৃত ও চর্চিত ছিলো, আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাকে ঐকসূত্রে বেঁধেছিলো এই ব্যাপারগুলোই। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই বিষয়াবলীকে ঘিরে তাদের পবিত্রতার বোধ ও ইবাদতের অনুশীলন বিকশিত হয়েছে, নানা ধারায় বিবর্তিত হয়েছে।
তাদের সকল ধর্মীয় ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল ইব্রাহিমের ধর্মের নামে। যদিও তারা এই বিশুদ্ধ তাওহিদের ইবাদাতকে শিরকী আনুষ্ঠানিকতায় বদলে ফেলেছিল। তারা কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করত, কিন্তু নগ্নাবস্থায়। বহুবিদ কুসংস্কারের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর তাওয়াফকে নিস্প্রাণ করে দেয়। তারা কাবাকে সম্মান করত এবং একে খোদার ঘর বলে সম্মান করতো। কিন্তু তাওহিদের এই কেন্দ্রে ৩৬০ টি মূর্তি সাজিয়ে তারা কার্যত কাবাঘরের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছিল। তারা মৃত ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠানে ইব্রাহিমী ধর্মের পরিভাষা ব্যবহার করত, কিন্তু সেখানে খোদার প্রশংসা বা মৃত ব্যক্তির জন্য কোনো প্রার্থনা ছিল না। তারা মৃতদেহকে সাজিয়ে রাখতো নানা উপাদানে এবং তারপর তাঁর প্রশংসায় আকাশ – পৃথিবীকে একাকার করতো। নিজেদের এই অর্থহীন আচারকে জানাযা হিসেবে অভিহিত করত।
তারা পবিত্র মাসগুলোকে সম্মান করত বটে, কিন্তু নিজেদের সুবিধামতো এই মাসগুলোকে কখনো নিয়ে আসতো আগে, কখনো পেছাতো। তাদের কাছে ইব্রাহিমি ধর্মের নাম ও পরিভাষা ছিলো বিদ্যমান। কিন্তু তার শিক্ষা ও বৈশিষ্টের সবটুকুই হারিয়ে ফেলেছিলো তারা।তখনও মরুভূমিতে এমন কিছু লোক ছিলো, যারা ইবরাহীমের ধর্মের তালাশে জীবন পার করছিলো।
তারা ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মে ইব্রাহামি ধর্মের আলো খোঁজার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু যেই হারানো সম্পদের সন্ধান না ছিলো ইহুদিদের কাছে, না খ্রিস্টানদের কাছে।কোনো আসমানী হেদায়েত ছিলো না তাদের সামনে। তবুও তারা জানতেন, ইবরাহীমের আ. ধর্ম মূর্তিপূজার অনুমতি দেয় না। মদপানের অনুমতি দেয় না। মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়ার অনুমতি দেয় না। এই মানুষগুলোর মধ্যে ছিলেন কাস ইবনে সায়িদাহ আল-আইয়াদি, যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নাফিল, উমাইয়া ইবনে আবি সালত, আসাদ আবু কারব আল-হুমাইরি, সাইফ ইবনে জি ইয়াজান এবং ওয়ারকা ইবনে নওফালের মতো ব্যক্তিত্ব । হজরত ইব্রাহিম (আ.)এর ধর্মের অনুসরণ প্রয়াসের কারণে তাদের হুনাফা বলা হয়।
এসব কিছুই আরবদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে বিদ্যমান রয়েছে। উইলিয়াম ম্যুর এবং মন্টোগোমারি ওয়াট এই বাস্তবতা ও তথ্যগুলো জানেন না, তা মনে করি না। কিন্তু সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে যেনতেন প্রকারে মহানবীর সা. মহিমাকে ক্ষুন্ন করতে হবে, এই হলো তাদের লক্ষ্য। এখানে পাণ্ডিত্য ও সত্যনিষ্ঠা তালাশের কিছু নেই। যা আছে, তা হলো পূর্বস্থির ধারণার আলোকে মিথ্যার সজ্জা এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগাণ্ডা। বস্তুত মুস্তারিব আরবরা জানতেন তারা ইবরাহীম আ. এর বংশধর,তিনি কাবাঘর নির্মাণ করেছেন , তিনি মানুষকে দিয়েছেন মহান এক দ্বীন। আরবদের সর্বজনীন এই অবগতি কয়েক শতাব্দী নয়, কয়েক হাজার বছরের ধারাবাহিকতা। ফলে মক্কার আমলে মুসলিমরা তা জানতেন না, এমন দাবি পশ্চিমা ঐতিহাসিক সূত্রেই প্রত্যাখ্যাত হয়।
খুজিস্তান ক্রনিকলে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে ইবরাহীম আ. কাবার নির্মাতা, তিনিই আরবদের মুখ্য পিতা, তার অনুকরণ ও স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আরবরা সংরক্ষণ করেছে। ক্রনিকল জানায়- ইব্রাহীমের কাবতা (কাবা) সম্পর্কে আমরা সেটি ছাড়া আর কিছু আবিষ্কার করতে পারিনি, কারণ আশীর্বাদধন্য ইব্রাহীম সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং কেনানীয়দের হিংসা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতে পছন্দ করেছিলেন, যেটি মরুভূমির প্রশস্ত অংশ।যেহেতু তিনি তাঁবুতে থাকতেন, তাই তিনি ঈশ্বরের উপাসনা এবং কুরবানীর জন্য সেই জায়গাটি তৈরি করেছিলেন।এটি প্রথমে যা ছিলো , তা থেকে এর বর্তমান নাম নেওয়া হয়েছে। যেহেতু স্থানটির স্মৃতি তাদের বংশের প্রজন্মের সাথে সংরক্ষিত ছিলো।প্রকৃতপক্ষে, আরবদের জন্য সেখানে উপাসনা করা কোনো নতুন বিষয় ছিলো না,বরং এটি অত্যন্ত প্রাচীন। তাদের প্রাথমিক যুগ থেকে,যেখানে তারা তাদের জনগণের মুখ্য পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।[34]

আরবে নবী না আসার অতীত :
নিজের বক্তব্যকে গ্রহণীয় করবার কৌশল হিসেবে আল কুরআনকে ব্যবহার করতে চাইলেন ওয়াট । হাতিয়ার কী?
কুরআনুল হাকীমের কিছু আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন আমি আপনাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছি, যাদের কাছে ইতোপূর্বে কোন সতর্ককারী আসেননি। যেমন :
لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ
যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্বপুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।[35]

بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। [36]
এমনতরো আয়াতসমূহ কি বলছে ইসমাইল -ইবরাহীম আ. আরবে আসেননি? এ থেকে কি প্রমাণ হয় যে, উভয় নবী আরবে এসেছিলেন, এমন তথ্য মক্কার যুগে নবীজি জানতেন না? মন্টোগোমারি ওয়াট দাবি করেন , আয়াতগুলো এটাই প্রমাণ করে।
এই দাবি আগাগোড়া ভুল। কারণ আয়াতে মূলত বলা হয়েছে তাদের মধ্যে দীর্ঘ অতীতজুড়ে কোনো নবী আরবে আসেননি। আল কুরআনের ব্যাখ্যাতাদের অগ্রপথিক ইমাম কাতাদাহ রহ. বলেন –আরবরা ছিল নিরক্ষর জাতি। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বে তাদের কাছে দূর অতীতে কোন সতর্ককারী আসেনি। [37]
এছাড়া আয়াতগুলোতে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা হলো কাওম বা সম্প্রদায়। সম্প্রদায় হিসেবে কুরাইশদের কাছে কোনো নবীই আসেননি। কুরাইশ কবিলার জন্মের পরে প্রথম যে নবীর আগমন ঘটলো, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। [38]
মন্টোগোমারি ওয়াট নিজেও জানেন যে, হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) পাঠানো হয়েছিল ব্যাবিলনের অধিবাসীদের প্রতি। সেখানে তিনি নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করেন, তার সম্প্রদায়ের মূর্তিপূজার উপর কঠোর আঘাত করেন এবং তারপর হাসিমুখে নমরুদের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। খোদার কুদরতে সেই আগুন তাঁর জন্য ফুলবাগান হয়ে গেল এবং তারপর তিনি আল্লাহর পথে স্বদেশ থেকে হিজরত করেছিলেন।তিনি কি আরবদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন? না? তিনি কি মক্কায় এসেছিলেন? হ্যাঁ। মক্কার পানি এবং সবুজবর্জিত বালুবেলায় তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে যান। তারা এখানে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র ইসমাইল আ. এর বংশধারাকে আরবে মুস্তারাবা হিসাবে স্মরণ করা হয়।
আরবদের নবী ছিলেন না হযরত ইবরাহীম আ.। না তার জন্ম আরবে, না ইন্তেকাল। না তাঁর দাওয়াতী সাধনার কেন্দ্র আরব, না ক্ষেত্র। না তার ধর্মগ্রন্থ আরবী ভাষায়,না তার নসিহত। আরবরা ছিলো তার পুত্র হযরত ইসমাইলের (আ.) বংশধর । তাঁর এই পুত্র ইসমাইলও খোদার মনোনীত পয়গম্বর ছিলেন। তিনি আরবদের শিখিয়েছেন ইবরাহীম আ. এর দ্বীন, দ্বীনে হানিফ।
ইসমাইল আ. ছাড়াও হযরত শুয়াইব আ. হযরত হুদ (আ.), হজরত সালেহ (আ.)আরবে প্রেরিত হন। কিন্তু তা হাজার বছর আগের ঘটনা। হযরত মুসা আ. এর তাওরাত লাভের আগে এসেছিলেন তারা। এরপরে আরবদের মধ্যে বহু শতাব্দী ধরে কোনো নবী প্রেরিত হননি।
হযরত ইসমাইল আ. এর মাধ্যমে প্রজ্জলিত আসমানী নূর নিভে গিয়েছিলো। বনু ইসরাইলের মধ্যে এমনতরো পরিস্থিতিতে অসংখ্য নবী প্রেরিত হয়েছেন। হযরত মুসা আ. পরবর্তী নবীদের সংখ্যা বিপুল। কিন্তু আরবদের মধ্যে মুসা আ. পরবর্তী গোটা সময়ে কোনো নবী প্রেরিত হননি। ফলে যে সম্প্রদায় কিংবা উম্মীরা সহস্রাব্ধ অতীত থেকে নববী উপস্থিতি থেকে বঞ্চিত থেকেছে, তাদের কাছে প্রেরিত হয়েছেন হযরত মুহাম্মদ সা.। আয়াতের এই যখন মর্ম, তখন ওয়াট সাহেবের পায়তারা নিজেই নিজের দুর্বলতাকে উপহাস করছে।
মুসা -ইবরাহীম (আ.) বনাম মক্কা-মদীনা:
এইস সব ফ্যালাসির উপর দাঁড়িয়ে ওয়াট বললেন, মক্কী যুগের মুসলমানরা হযরত ইব্রাহিম এবং ইসমাইল (আ.)-এর সাথে তাদের সম্পর্কের কথা জানত না। তারা ইবরাহীম আ.এর চেয়ে মুসা আ.কে বেশি আপন মনে করতো। অদ্ভুদ! ওয়াট সাহেবের দাবি অনুযায়ী , মুসলমানরা মক্কী যুগে মুসা আ.কে বেশি জানতেন। মানে মুসা আ. সম্পর্কে জানা ও তাঁকে বেশি আপন ভাবার জন্য মদীনায় হিজরত করা লাগেনি, ইহুদিদের থেকে শেখা লাগেনি। তবে ইবরাহীম আ. সম্পর্কে জেনেছেন ইহুদিদের থেকে শিখে। ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গেলো না? কাবাকেন্দ্রিক মক্কায় মুসলমানরা ইবরাহীমের আ. চেয়ে মুসাকে আ. বেশি আপন ভাবতেন ও বেশি জানতেন, এটা কীভাবে বুঝলেন ওয়াট?
তিনি তা বুঝেছেন কুরআনে যেহেতু মুসা আ. এর উল্লেখ বারবার হয়েছে, তা থেকে। কুরআনে কোনো নবীর উল্লখই যদি মুসলিমদের কাছে গুরুত্বের মানদণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে তো মুহাম্মদ সা. এর উল্লেখ থাকার কথা সবচেয়ে বেশি। যেহেতু তার উল্লেখ বেশি সংখ্যক নয়, তাহলে কি বলতে হবে কুরআনে মুহাম্মদ সা. এর গুরুত্ব কম?
বস্তুত যে নবীর কোনো উল্লেখ কুরআনে নেই বা একবার মাত্র উল্লেখ আছে, তিনিও অন্য নবীদের সমান। যে রাসুলের উল্লেখ অনেক বেশি, তার চেয়ে কম উল্লেখিত রাসুলের সম্মান ও গুরুত্ব মোটেও কম নয়। মুসলমানরা যেমন মুসা আ. সম্পর্কে জানার জন্য ইহুদিদের আশ্রয় নিতে হয়নি, ইবরাহীম আ. সম্পর্কেও ইহুদিদের থেকে জানতে হয়নি।
বস্তুত, হজরত ইব্রাহিম (আ.) সম্পর্কে ইহুদিরা যা জানতো , তার ভ্রান্তিসমূহ মুসলমানরা সংশোধন করেন।মদীনায় মুসলিমরা শুনলেন, ইহুদীরা বলে, হজরত হাজেরা একজন ক্রীতদাসী এবং হজরত ইসমাইল (আ.) একজন ক্রীতদাস। মুসলমানরা এই ভুলকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তারা হজরত হাজেরাকে মিশরের রাজকন্যা হিসেবে জানতেন এবং সেটাই ব্যাখ্যা শেখাতেন। হজরত ইসমাঈল (আ.) হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রিয় পুত্র, এটা মুসলমানদের ঈমান। এটাই তারা সবাইকে জানাতেন । ইহুদীরা বলতো , ইব্রাহীম (আ) হাজেরা ও তার ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। মুসলমানরা এই ভুল সংশোধন করলেন। কারণ ইবরাহীম (আ) তার প্রভুর নির্দেশে তার স্ত্রী ও পুত্রকে মক্কায় পাঠিয়েছিলেন এবং আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে ফিরে এসেছিলেন। মদীনায় ইহুদীরা বলতো, ইব্রাহীম (আ) ইসহাক (আ)-কে কোরবানির জন্য নিবেদন করেছিলেন। কিন্তু মুসলমানরা প্রমাণ করেন , কুরবানীর এই অধ্যায় রচিত হয় মিনার মাটিতে, এখানে সন্তান ছিলেন হযরত ইসমাইল আ. , ইসহাক আ. নন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কুরবানির স্মরণে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কোরবানির রীতি পালন করে এসেছে আরবরা। ইহুদিরা মুসলমানদের বলেছিল যে, ইস্রায়েলের সন্তানরা আল্লাহর চুজেন পিপল বা নির্বাচিতজন। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক গৌণ। মুসলমানরা এই ভ্রান্তিকে দেখেন গুরুতর জাহেলিয়াত হিসেবে। মুসলমানরা শেখান, আল্লাহ পাক হলেন রব্বুল আলামীন বা বিশ্বজগতের রব। তিনি সবার রব, সবাই তার বান্দা। বস্তুত মুসলিমরা হযরত ইবরাহীম আ. প্রশ্নে ওহীর শিক্ষাকেই অবলম্বন করেন। ফলে এ বিষয়ক আরবের কুসংস্কারকে যেমন সংশোধন করেছেন, তেমনি ইহুদিদের ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতাকে করেন প্রত্যাখ্যান।
ইতিহাসের কণ্ঠস্বর :

আমরা যদি ইতিহাসের কণ্ঠস্বর শুনতে চাই, তাহলে মহানবীর সা. সমসাময়িক খ্রিস্টান ভাষ্য থেকেও পাবো বাস্তবতার বিবৃতি। বিখ্যাত আর্মেনিয়ান বিশপ,ইতিহাসবিদ ও বংশতত্ত্ববিদ সেবেওস (৬০০ খ্রি.-৬৬১ খ্রি.) স্পষ্ট লিখেছেন- মুহাম্মাদ (স.) ইসমাইলের বংশধর। তার জবানী :

At that time a certain man from along those same sons of Ismael, whose name was Mahmet [i.e., Muḥammad], a merchant, as if by God’s command appeared to them as a preacher [and] the path of truth. He taught them to recognize the God of Abraham,

এ সময় ইসমাইলের পুত্রদের মধ্য থেকে একজন নির্দৃষ্ট ব্যক্তি, যার নাম ছিলো মাহমেত, (মুহাম্মদ সা.) ; ছিলেন একজন ব্যবসায়ী, খোদার আদেশে একজন ধর্মপ্রচারক ও সত্যের দিশা হিসেবে তাদের সামনে আবির্ভূত হলেন। তিনি আব্রাহামের প্রভুকে চিনতে শেখালেন।[39]

৬৬০ খ্রিস্টাব্দের আগে রচিত বিখ্যাত ঐতিহাসিক নথি খুজিস্তান ক্রনিকলে স্পষ্টই মুহাম্মাদ (স)কে ইসমাইলের বংশধর বলা হচ্ছে:-
Then God raised up against them the sons of Ishmael, [numerous] as the sand on the sea shore, whose leader was Mḥmd (Muhammad).
অর্থ:- অতঃপর ঈশ্বর তাদের বিরুদ্ধেইসমাইলের পুত্রদের উত্থান করলেন যারা ছিলো সাগরের তীরের বালির মতো,যাদের নেতা ছিলেন মহমদ (মুহাম্মাদ)।[40]

ব্যাপারটি নিয়ে James Hastings ও John Alexander সম্পাদিত দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন অ্যান্ড এথিক্স – এ ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ সাপেক্ষে স্পষ্ট উপসংহার টানা হয়। তা হলো :
He was an Ishmaelite, who taught his country men to return to the religion of Abraham and claim the prom ises made to the descendants of Ishmael.
“হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন ইসমাইলি ছিলেন যিনি তাঁর স্বদেশীদেরকে শেখান দীনে ইব্রাহিমের শিক্ষা। তাদেরকে তিনি সেই খোদায়ী প্রতিশ্রুতির প্রতি নিবেদিত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন।[41]
পশ্চিমা দুনিয়ায় পথিকৃত ঐতিহাসিকদের অন্যতম হলেন এডওয়ার্ড গিবন ( ১৭৩৭ – ১৭৯৪) । নবীর বংশের উপর সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রাচ্যবিদদের এমনতরো চেষ্টার সমালোচনায় তিনি লেখেন–
The base and plebeian origin of Muhammad is an un skilful calumny of the christians who exalt instead of de grading the merit of their adversary .
“মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশসূত্রকে অসম্মান ও সাধারণ করার প্রচেষ্টা খ্রিস্টানদের একটি নির্বোধ পদক্ষেপ। যা তাদের প্রতিপক্ষের (সম্মানজনক) অবস্থানকে কমানোর পরিবর্তে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।” [42]

যে মহিমা অক্ষয় :

মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মানজনক অবস্থান চিরন্তন। একে কমানোর চেষ্টা করলে আরো প্রদীপ্ত হয়। কারণ এই সম্মানের আয়োজক তিনিই, যিনি মহাকাল ও ইতিহাসের নির্মাতা। তিনিই তাঁর রাসুলের বংশীয় মহিমাকে অনন্য করেছেন। সকল কালে প্রতিপক্ষদের জবানেও এই সত্য অনুচ্চারিত থাকেনি। রাসুলুল্লাহর (সা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুরাইশদের নেতা আবু সুফিয়ানকে বাইজেন্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস প্রশ্ন করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে নবুওতের ঘোষকের বংশ কেমন? উত্তরে আবু সুফিয়ান বলেছিলেন, هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ ‘তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশীয়’। হেরাক্লিয়াস বলেছিলেন, كَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِى أَحْسَابِ قَوْمِهَا ‘এভাবেই নবী-রাসূলগণ তার সম্প্রদায়ের সেরা বংশে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন’।[43]

আল্লাহ পাক মহানবী (সা.)-কে মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত ও পবিত্র বংশধারায় প্রেরণ করেছিলেন। এটা ছিল তার তরফে পূর্বনির্ধারিত।
রাসূলুল্লাহ (সা. ) বলেন, إِنَّ اللهَ اصْطَفَى مِنْ وَلَدِ إِبْرَاهِيْمَ إِسْمَاعِيْلَ وَاصْطَفَى مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيْلَ بَنِي كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ بَنِي كِنَانَةَ قُرَيْشًا وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِي هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِى مِنْ بَنِي هَاشِمٍ-

‘আল্লাহ তাআলা ইব‌রাহিম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে থেকে ইসমাইল (আ.)-কে বেছে নিয়েছেন এবং ইসমাইলের বংশে কিনানা‌ গোত্রকে বেছে নিয়েছেন, কিনানা‌ গোত্র থেকে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন, কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং বনি হাশিম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন। ’[44]

[1] মুসলিম ৯৩৪ হা-কিম : ১/৩৮৩ ত্বাবারানি/কাবীর, হাদীস ৩৪২৫, ৩৪২৬ ।

[2] তিরমিযী ,হাদীস নং ৩৯৫৫। সহীহুল জামে’, হাদীস নং ৫৪৮২।
[3] সহীহ বোখারী , হাদীস নং ৪৭২৭, ( জিহাদ ও এর নীতিমালা বিষয়ক অধ্যায়)সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮০৭।
[4] সহীহ বুখারী হা/৭, ‘অহির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬, মুসলিম হা/১৭৭৩, মিশকাত হা/৫৮৬১।

[5] সহীহ বুখারী হা/৭, ‘অহির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬, মুসলিম হা/১৭৭৩, মিশকাত হা/৫৮৬১। ।
[6] মুহাম্মদ ইহসানুল হক সুলায়মানি, রাসূলুম মুবীন, মকবুল একাডেমি লাহোর, ১৯৯৩, পৃ. ৯৪, উদ্ধৃত লাইফ অব মুহাম্মদ , উইলিয়াম ম্যুর।

[7] . W. Montgomery Watt, Mohammad at Madina, p.204-5, Clarendon Press, 1956।

[8] আশআরুশ শুয়ারায়িস সিত্তাতিল জাহিলিয়্যাহ, খণ্ড-১, পৃ. ৯৮, https://ketabonline.com।
[9] আল আগানী, আল আদাবু ওয়াল বালাগাহ, খণ্ড-২, পৃ.১৭০, https://ketabonline.com।
[10] আবু আবদুল্লাহ, জুযানী, কিতাবু শারহি মুয়াল্লাকাতিস সাব’, পৃ. ১৩৯, https://shamela.ws/book।
[11] বুক অব জেনেসিস 17:5।
[12] archerismybae : Abraham and Ishmael in the Pre-Islamic Arabic tradition,
The Hejazi Philosophorian, March 17, 2020।

[13] বুক অব জেনেসিস, ২৫: ১৩-১৬।
[14] বুক অব ইশাইয়া , 60:7।
[15] Flavius Josephus: Antiquities of the Jews-1: 22-23,
[16] King, Philip J. (1993), Jeremiah: An Archaeological Companion।
[17] Lipschitz, Oded; Knoppers, Gary N.; Albertz, Rainer (2007), Judah and the Judeans in the fourth century B.C.E.।
[18] বুক অব ইশাইয়া, 21:16-17।
[19] বুক অব ইজেকিল 27:21।
[20] ক্রনিকলস -১; 4:24-27।
[21] বুক অব যশোয়া , 15:52।
[22] বুক অব ইশাইয়া , 21:11।

[23] বুক অব এক্সোডাস ,১৭:৭।
[24] বুক অব দানিয়েল, 7:1।
[25] King, Philip J. (1993), Jeremiah: An Archaeological Companion, p. 40।

  1. [26] Kenneth Anderson Kitchen, Documentation for Ancient Arabia, 1994, p. 49।
    [27] Israel Eph’al, The Ancient Arabs: Nomads on the Borders of the Fertile Crescent, 9th-5th Centuries B.C., 1984, p. 82-83।
  2. [28] Frederick Victor Winnett, William LaForest Reed, Ancient records from North Arabia, 1970, p. 95।
  3. [29] Jaroslav Stetkevych, Muhammad and the Golden Bough: Reconstructing Arabian Myth, 1996 ।
    [30] Millar, Fergus, 2006. ‘Hagar, Ishmael, Josephus, and the origins of Islam’. In Fergus Millar, Hannah H. Cotton, and Guy MacLean Rogers, Rome, the Greek World and the East. Vol. 3. The Greek World, the Jews and the East, 351-377. Chapel Hill: University of North Carolina Press.।
    [31] Bakhos, Carol (২০০৬)। Ishmael on the Border: Rabbinic Portrayals of the First Arab। State University of NY Press।
    [32] Ibn Waraq, ed. (2000). “2. The Origins of Islam: A Critical Perspective on the Sources”. A search for the historical Muhammad. Prometheus. Pages 89–124.।
    [33] Cook, Michael (1983). Muhammad Oxford University Press. Page 39.
    [34] R. G. Hoyland, Seeing Islam As Others Saw It: A Survey And Evaluation Of Christian, Jewish And Zoroastrian Writings On Early Islam, 1997, op. cit., p. 186.
    [35] সূরা ইয়াসিন : ৬।
    [36] আস সিজদা: ৩।
    [37] তাফসীরে তাবারী, সুরা সিজদা, আয়াত -৩ ।
    [38] শাইখ হাফিয সালাহুদ্দীন ইউসুফ, তাফসীর আহসানুল বায়ান, সুরা সেজদা আয়াত ৩।
    [39] Hacikyan 2002, p. 82, R. W. Thomson (with contributions from J. Howard-Johnson & T. Greenwood
    [40] R. G. Hoyland, Seeing Islam As Others Saw It: A Survey And Evaluation Of Christian, Jewish And Zoroastrian Writings On Early Islam, 1997, op. cit., p. 186.
    [41] Hastings, James: Encyclopaedia of religion and ethics, v.8 p.872।
    [42] Edward Gibbon, The Decline and Fall of the Roman Empire, 1962, ch. 5. p. 228।
    [43] বোখারী হা/৪৫৫৩; মুসলিম হা/১৭৭৩; মিশকাত হা/৫৮৬১।
    [44] সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৫, মুসলিম হা/২২৭৬; মিশকাত হা/৫৭৪০ ।
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ