spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকঅবিচুয়ারি : সনজীদা খাতুন

লিখেছেন : ইমরুল হাসান

অবিচুয়ারি : সনজীদা খাতুন

ইমরুল হাসান 

১. সনজীদা খাতুন (১৯৩৩ — ২০২৫) মারা গেছেন গত ২৫শে মার্চ; কিনতু সত্যি কথা বলতে গেলে উনি বাঁইচা থাকার সময়ে উনার কাজ-কর্ম ও লেখালেখি নিয়া আমি খুব একটা ইন্টারেস্টেড ছিলাম না, যার ফলে উনার বেপারে ইন-ডেপথ কোন জানা-শোনা নাই আমার… তারপরও উনি তো একজন পাবলিক-ফিগার, যার ফলে কিছু না জানতে চাইলেও অনেক কিছু জানা হয়া যায় 

২. তো, সবচে স্ট্রাইকিং যে জিনিস’টা সেইটা হইতেছে, বাংলাদেশের সমাজে মেয়েদের পরিচয় হয় বাপ, ভাই,  জামাই বা ছেলের পরিচয়ে, এলাকার মসজিদে যখন মারা যাওয়ার খবর মাইকে বলা হয় বা পত্রিকাতেও শোক-সংবাদ ছাপা হয় তখন দেখবেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয় অমুকের মেয়ে, তমুকের স্ত্রী বা কারো একজনের বোন বা মা মারা গেছেন

মানে, আলাদা কইরা মেয়েদের সোশাল বা পাবলিক পরিচয় তৈরি হওয়াটা বেশ কঠিন; আর সনজীদা খাতুনের বাপ তো বিখ্যাত কাজী মোতাহার হোসেন, জামাইও পরিচিত-ই ওয়াহিদুল হক, ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনও পপুলার, কিনতু এইগুলা ছাড়াও উনি যে নিজের পরিচয়ে পাবলিকলি পরিচিত হইতে পারছেন, এইটারে একটা এচিভমেন্টই বলতে পারতে হবে আমাদেরকে; ইভেন, সেকুলার লিবারাল এরিনাতেও এই এক্সাম্পলও কমই… 

৩. এই পরিচিতির বা উনার লাইফের সবচে বেশি সিগনিফিকেন্ট ঘটনা মেবি এইটাই যে উনি দুইটা ইন্সটিটিউশন তৈরি করতে পারছিলেন — ছায়ানট এবং নালন্দা; এইগুলা অনেক দিন ধইরা টিকায়া রাখছেন এবং এমন একটা ইন্সিটিটিউশনাল সেট-আপে নিয়া আসতে পারছেন, যেইগুলা এটলিস্ট ইকনোমিকালি টিইকা থাকতে পারবে; ভালো হোক বা খারাপ, সাসটেইনেবল ইন্সিটিটিউশন তৈরি করতে পারা একটা ঘটনা, যেমন, পাবনা শহরে গিয়া দেখছিলাম জামাতে ইসলামি’র একজন নেতার বানানো একটা মাদরাসা, এলাকার লোকজন খুবই প্রেইজ করতেছে যে, ভালো একটা মাদরাসা বানাইছেন উনি… এইরকম 

৪. কিনতু সনজীদা খাতুনের বেপারে আমার অনাগ্রহ বা আপত্তির জায়গাটাও এই ইন্সিটিটিউশনের জায়গাটাতেই, উনি যেই পলিটিকাল ও কালচারাল জায়গাটাতে বিলং করেন, আমি সেই জায়গাটারই বিরোধিতা করি; আমি মনে করি, ছায়ানট ও নালন্দা যেই কালচারাল অরিয়েন্টশনটারে তৈরি করতে চায়, সেইটা অনেক বেশি বাংলাদেশ-বিরোধি ঘটনাই! 

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল যে বাংলাদেশের কালচারের বাইরের ঘটনা — তা তো না, কিনতু ছায়ানটের কালচার যে প্রো-ইনডিয়ান পলিটিকাল পারপাস’টা সার্ভ করে বাংলাদেশে সেইটা না দেখার মতো কানা হয়া থাকাটা তো খুবই ইম্পসিবল একটা ঘটনা! আর এইজন্য উনি খালি বাংলাদেশের একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার-ই পান নাই, ইনডিয়ান রাষ্ট্রিয় পুরষ্কার পদ্মশ্রীও পাইছেন! 

তো, যেইটা উনার সিগনিফিকেন্ট এচিভমেন্ট, সেইটাই উনার সবচে কন্ট্রোভার্সিয়াল পার্টও

৫. এর বাইরে, উনি একজন রাইটার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নিয়া লেখছেন, নজরুলরে নিয়া লেখছেন, আর বাংলাদেশে র.ঠা-পূজার তো ছিলেন প্রধান পুরোহিত! 

উনার কয়েকটা বই বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্রাউজ করছি আমি, কখনো পইড়া ডিটেইল কথা-বলার ইচ্ছা আছে, কিনতু উনি যেই জায়গা থিকা কালচার ও পলিটিকসরে দেখছেন, সেইটার কোর জায়গা তো আসলে ‘অখন্ড ভারত’ যার ফলে পাকিস্তান-ঘৃনা উনার লেখালেখির একটা সেন্টার ফেনোমেনা হওয়ার কথা, যেইটার ডিটেইল একটা আরগুমেন্ট কইরা রাখাটা বেটার

৬. তো, আমি ভাবতেছিলাম, উনি অই পলিটিকাল ও কালচারাল জায়গাটাতে রিচ করলেন কিভাবে? উনার বাপ কাজী মোতাহার হোসেন কুষ্টিয়ার লোক হইলেও উনার আম্মা সাজেদা খাতুন কলকাতা শহরের মানুশ, যার ফলে উনার মায়ের ভাষা তো পাইছেনই, বাপের রবীন্দ্র-প্রীতি এবং নজরুল-প্রেমও উনি দেখছেন… 

পাকিস্তান পিরিয়ডে যারা ঢাকার কালচারাল স্পেইসটারে তৈরি করছেন তারা ঢাকা শহরের কালচার তৈরি করার জন্য কলকাতারেই কেবলা মানছেন, এবং রাষ্ট্রিয়-ভাবে যখন এক ধরনের ‘পাকিস্তান জাতি’ তৈরি করার নামে ‘বাঙালি-পনা’রে ‘আদার’ কইরা তোলার কথা উঠতে থাকছে তখন ‘বাঙালি’ হয়া উঠার একটা জোশ উনারা পাইছেন, যেইটারে মরতে দম তক আপহোল্ড কইরা যাওয়াটারে তাদের লাইফের মঞ্জিলে মাকসুদ বানায়া নিতে পারছেন! 

এইটারে ‘আদর্শবাদী’ হইতে পারা বইলা গ্লোরিফাইও করতে পারছেন নিজেদের কাছে, এবং কোন না কোনভাবে রিভিউ করাটারে বেঈমানি করা ও ব্লাসফেমি বইলা ভাবতে পারেন উনাদের স্পিরিচুয়াল মুরিদরা, এখনো 

৭. এইভাবে আসলে পাবলিকের কাছ থিকা ‘আলাদা’ ও ‘ডিফরেন্ট’ হইতে পারাটারেই ‘সংস্কৃতি’ হিসাবে এস্টাবলিশ করছে সনজীদা খাতুনের লিগাসিটা, যেইটা ধিরে ধিরে ভয়াবহ-রকমের এন্টি-পিপল একটা জায়গাতে গিয়া রিচ করছে! ‘অখন্ড ভারতের’ ফুট-সোলজার হইতে গিয়া বাংলাদেশ-বিরোধিতাটারেই ‘বাঙালি-সংস্কৃতির’ কাল্ট বানায়া ফেলছেন! এবং নানান-ভাবে এর জাস্টিফিকেশন তৈরি করতে চাইছেন… যেইটা একটা গ্রুপ অফ পিপলের কাছে উনারে হাইলি-রেসপেক্টবল কইরা তুললেও পিপলের কাছে অ-পরিচিত এবং দূরের ঘটনাই কইরা তুলছে

৮. উনার কাল্ট-ফিগারও মেবি ছিল ভুল-ধরা টিচারের, কনভেন্টের প্রধান নানের, যার চেহারা ও এপিয়ারেন্স খুবই সাদা-মাটা, কিনতু খুব কড়া! 

৯. উনার অন্য অনেক কাজ থাকলেও সনজীদা খাতুন বাংলাদেশে রবি-কাল্টের, প্রো-ইনডিয়ান কালচারাল উইংয়ের একজন ক্রুশিয়াল ফিগার হিসাবে নিজেরে সাকসেসফুল কইরা তুলছিলেন, যেই জায়গা থিকা বাংলাদেশ-বিরোধিতার পজিশনটারে উনি লোকেট করতে পারেন নাই বা চান নাই, কিনতু উনার এই রোলটা দিয়াই উনার কাজগুলারে একসেপ্ট করার বা রিজেক্ট করার জায়গাটা তৈরি হয়, যেইটারে আজকের বাংলাদেশে ইগনোর করার কোন উপায় নাই! 

উনার কালচারাল লিগাসিরে ক্রিটিকালিই দেখতে পারতে হবে আমাদেরকে! 

মে আল্লাহ রেস্ট হার সৌল ইন পিস!

ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না লিলাহি রাজিউন

Author

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা