spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাফিলিস্তিন

লিখেছেন : সৈয়দ আহমদ শামীম

ফিলিস্তিন


সৈয়দ আহমদ শামীম

১.
প্রেম নিয়ে যখন কথা বলি
আমার ধারণা লাগে আমার মনটা কালের সাথে আসেনি
রয়েছে গত শতাব্দীর পার
বেনিমাধব ভুলে গেছে মালতী লতা বালিকা বিদ্যালয়ের কথা
একটা দরিদ্র অভিজাত বালিকা নবম শ্রেণির গণিত করার বদলে
অন্তরে চিৎকার করছে তোমার বাড়ী যাব
আর সাদা শুভ্র বহিঃজগত কী নির্মেঘ
আমার পরানপার একালের খুনিদের রক্তগাঙ পারে
ঝিম মেরে থাকে রাফাহর আকাশ হতে খুনীদের জিহবা ঝরতে ঝরতে
যখন আশা বলতে কিছু থাকে না
তখন পাঁচ বছরের কোনও মেয়ে বলে ওঠে আমরা পালিয়ে যাব না প্রতিশোধ নেব,
খুশীতে আমার মন আবার পুরনো হৃদয়কে খুঁজে পায়
আমি ভারতবর্ষের পাশে থাকি দীর্ঘ কাল
আমি লোপামুদ্রার বেনিমাধব গান শুনতে শুনতে ভাবি
প্রেম ইনসাফ এইগুলো পৃথক দুনিয়ার ঘোর নাকি

২.
আমি এক তুচ্ছ শিল্পী হিসেবে জয় গোস্বামীর বেনিমাধব গানটা শুনে আত্মা সংরক্ষণ করতে পারি না
এমনকি গাজ্জা যখন পৃথিবীর সত্যকে মিথ্যার আর পাশে স্পষ্ট বিভাজন করে ফেলেছে
তখনও এক মুশরিক কবির সুর আত্মাকে গ্রাস করে রাখে
আল্লাহ হয়তো বিপদসংকুল সময়েও হৃদয়প্লাবী কোনও ন্যায্য অবসর সংগত করে রেখেছেন
মাধবীলতা স্কুলের ত্যাগী মেয়েটাকে আমার এত সতী আর পবিত্র মনে হয়
তার নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রাণসংহার আত্মত্রাস আমি বিশ্বাস করি না
তাকে স্নেহ দিয়ে ঘিরে রাখি অকলুষ অপাপবিদ্ধ
বহির্দুনিয়া যেমনই হউক হয়তো এক অবিনাশী সত্তার পবিত্রতার দিকে ঝুঁকে থাকে কবির অন্তর

৩.
দুনিয়াবি সংঘবদ্ধ সিনসিরিয়াটি তালমুদের অনুসারীদের অধিক কেউ দেখাতে সমর্থ হবে না
তার প্রতিরোধ সংগ্রাম গাজ্জার অধিবাসীর অধিক কেউ চিন্তাও করতে পারে না
পৃথিবীর উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি যতদিন তালমুদ আর গাজ্জার সম্পর্ক বুঝবে না
সে জানবে না ইতিহাস যাত্রায় তার জীবনের কী অর্থ

৪.
অনেক মানুষ চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে
পুরো জীবদ্দশায় ফালিস্তিনের সাথে গাদ্দারি করে
অথচ কবিতা লিখেছে
নদী জল শিল্প অধিকার এর কথা বলেছে
সে রকম গাদ্দার এখনও জীবন যাপন করছে
হাজার হাজার শিশুর খুন উপেক্ষা করে তারা মানবাধিকার এর বাহাস করছে
বোঝা সহজ দ্যয়ার ইজ অ্যা হিয়ার আফটার
এই জানোয়ারদের বিচার ঐখানে না হলে আমি আল্লাহকে ভালোবাসতাম না
তুমি অনেক কুশলি স্রষ্টা আমাদের বিশ্বাস এর সর্ব অতলে কী স্থির হয় সেইটে বিচারের এক দুঃসহ রীতি রূপে ফালিস্তিনকে উপহার দিয়েছ
এখন আমার মৃত্যু হলে ফালিস্তিনের সাথে বিজয়ী হয়ে উঠব

৫.
বেণিমাধব গানটি আমায় কিশোর গড়ে তোলে
সুরকে এমন গহন করা হয়েছে
আমার আত্মলীন নিপাপ শরীর এর ওপর সুদূর চোখ আর গূঢ় কানের দেখা হয়ে আমাকে অন্ধ করে তোলে
না হয় আমি সংগীত হতে দূরে রয়েছি
কদাচ শয়তান এসে বসে বলে তোমার আত্মলীনতা নিতান্ত তোমার
আমি উদাস হয়ে তোলে
পৃথিবীর এক পশ্চিম বঙ্গের মেয়ে গানটি গায়
আমি ফের দুনিয়ার ইতিহাসের ভেতর মগ্ন হয়ে ফালিস্তিন পাশ ফিরে শোয়
তুমি সব জান গো খোদা আমি সংগীতে বিশ্বাস করি না

৬.
সব ভাষা
জাদুকর শব্দের পাথার
সব বাণী
প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ইশারা
সংশয় সৃষ্টি করে
কেবল ফালিস্তিন দৃঢ়মূল
উপড়ে নিলে অধিকতর মূলে পৌঁছে যায়
একে স্বতঃসিদ্ধ করে আয়াত, আসমানী কিতাবের

৭.
ফালিস্তিন আমার এক চোখ পানি ঝরতে ঝরতে অনাদিকালের ঝরনা
ফালিস্তিন আমার এক চোখ
পাথর হতে হতে হতে
মমত্বের পাষাণ

৮.
হে রব!
দুঃখ ভালোবাসার এক গভীর সংকটে আমার আত্মা সেই প্রসন্নতার নাগাল পাচ্ছে না যা তোমার প্রতিশ্রুত
আমার দৃষ্টিতে জমতে থাকা ফালিস্তিন একদিন কোন বৃহৎ শান্তির উৎসব ফিরিয়ে দেবে যদি একপলক দেখতে পারতাম আমি আরও ফালিস্তিন জমাতাম চোখের তলায়, আমার এ তাৎপর্যহীন জীবন এক বোতল বিশুদ্ধ পানি করে তুলে দাও প্রভু এই ফালিস্তিন প্রাপ্ত কোনও অলৌকিক শিশুর হাতে

৯.
যেহেতু তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করব
আমি অন্তরগূঢ় কথা গুলো বলে যাই
ফালিস্তিন গাজ্জার এরিয়া ছেড়ে যেদিকেই যাই
মুহূর্তে জাহিলিয়া আমাকে ঘিরে ফেলে
আমার দুনিয়াবী হায়াত দীর্ঘায়ত লাগে
মনে হয় বিভূতির পাঁচালী বক্ষে অপু এক
দুর্গার ভাই যেন সত্য ছড়ায়!
ফালিস্তিন গাজ্জার সীমান্ত ছেড়ে
আমার মন ওড়ে ভালো হাতে রচনা করে মুভি
যেখানে আগৈলঝরা এক গ্রাম যেখানে
নদীর সাথে মেশে হারাম সঙ্গম
আমার দুনিয়াবী হায়াত দৃশ্য ও শব্দের
সমস্ত জালজালিয়াত জাপটে ধরে
প্রিয় কল্পনার অন্ধকার যেমতি ঘুন!

১০.
কবিতা একটা উত্তুঙ্গ শ্বাস
রুদ্ধ
জীবন ও মৃত্যু মধ্য
ভাগ্য মাঝে রেখে অচেনা আশায় ঝাঁপিয়ে পড়া
আর ক্ষুদ্র প্রাণসত্তা চুইয়ে ঝরতে ঝরতে
ঈমান হয়ে
আমার কৈশোরের যে ভাব আল্লাহ শব্দের সাথে মিশে সময় ও শব্দাতীত আনন্দের এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে
আমার অদেখা জগতে জমতে পারতো
এখনও পারে বলে একটা দুরন্ত মহাকালিলিক উদ্বেগ পৌত্তলিক শিল্পপাড়া হতে আমার পা ছিন্ন করে আনে
সেই উড়ন্ত অমরতা কেবল গাযা’র অভিমানী সেন্ডেলের তলায়
সুস্থির হয়ে আছে

১১.
ফিলিস্তিন জগতের সকল শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার জন্য নিজ সন্তানের মৃত্যুর স্রোত কেয়ামত পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাবে, এসময় সত্য ও মিথ্যার কনফ্লিক্ট মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রাখবে; তোমার ধৈর্য থাক বা থাক বিবেচনায় বুঝতে পেরেছো কেয়ামত সংঘটিত হবার আগে এর সমাধা কোথাও নেই, মানুষের আশার মধ্যে আছে, নয়তো জীবন চালিয়ে নেওয়া কঠিন কিন্তু ইনসাফ বাস্তবতায় আসবে মৃত্যুপর জীবন ময়দানে।
এই উপলব্ধি পাশ্চাত্যের মেয়েদের মন বিমর্ষ করে দিয়েছে, স্নেহার্দ্র চোখে তারা যখন ফিলিস্তিনের মা ছেলেদের দিকে তাকালো তারা এক আধ্যাত্মিক বিহ্বলতার কোলে উত্থিত হলো, তারা জানলো এ ধৈর্যের উৎস অলোক আগত এক গ্রন্থ। ওখানের বাণী ও বিবরণ সরল পথ নির্দেশ করে আর তা নবী মুহাম্মদ দ. বহন করে এনে সমাজে বিস্তার করেছেন। আর ওখানের সূচনা ও শ্বাস বিন্দুর নাম এক। এক বোঝা ব্যতীত অহংকার মুক্ত হওয়া অসম্ভব। জায়ন ও অন্যান্য অহংকার জগতজুড়ে খুনের বৈধতা উন্মুক্ত করে। চিন্তার বিকৃতি এতদূর প্রসারিত হয়, মৃত্যু নিশ্চিত জানার জ্ঞান বিলোপ হয়ে যায়। কোনও খুনী তার রক্ততৃষ্ণা সম্পূর্ণ করে যেতে পারে না। অথচ রক্তে প্লাবিত ফিলিস্তিনি মা সন্তানের লাশ কোলে নিয়ে আল্লাহর জিম্মায় দিয়ে এসে আফসোস করে যদি আরও সন্তান তার জটরে ধরে অনুরূপ শহীদী ময়দানে পাঠিয়ে দিয়ে দুনিয়ার বেইনসাফ দূর করতেন!

১২.
জগতে সত্যের শুরু হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছা দিয়ে
কারো কারো মন সে সূত্রের সাথে যোগ হয়েছে
মিথ্যার শুরু সামিরি ইত্যাদি খড়কুটো দিয়ে
কারো কারো মন সে ইতিহাসের সাথে যোগ হয়েছে
জগতের স্কুল গুলো ভজঘট পাকিয়ে রাখে
সময়ের ঊর্ধ্বে আছে আল্লাহর ইচ্ছা আর মানুষের দুর্মতি হলো লাল গরু ইত্যাদি
মানুষের ভাষা জ্ঞান বিশেষ শব্দ ব্যবহার কী পুওর
অন্তরচোখ জানে আল্লাহর ইচ্ছাকে স্বেচ্ছায় ধরা যায় না
ইতিহাস চক্রের ভাষারা জানে অধিকাংশ শব্দ বেলাজ বিচ্ছিন্ন

১৩.
তূরীয় অনুভব দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যায় না কিন্তু বিশ্বাস হয় সে অনুভব দীর্ঘ আর তাতে একদিন সওয়ার হওয়া যাবে, তাই মানুষ সমাজ সৃষ্টি করে।
সমাজ মানুষকে তার তূরীয় অনুভবের জগতে নিতে সাহায্য করবে তাই সমাজ একটা পুণ্য অবস্থা।
তাই ধর্মীয় সমাজ সৃষ্টি হয়। যৌনতাপ্লব সমাজ সৃষ্টি হয়। সর্বহারা খুনোখুনি সমাজ সৃষ্টি হয়। সব সমাজ বিশ্বাস করে তার তূরীয় অনুভবের জগত অপর সমাজ কর্তৃক নিগৃহীত হবার সম্ভাবনায় রত তাই সে তার সমাজবন্ধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়ভিত করতে থাকে আর একটা একটা করে সমাজসভ্য মরে যায়।
নতুন সভ্য এসে যোগ দেয় আর প্রাক্তনদের নাম দেয় স্বর্গত পরলোকগত জান্নাতবাসী প্রয়াত এবং তাদের ইতিহাসের নাম দেয় ঐতিহ্য কৃষ্টি ধারাবাহিকতা।
এরাও মরে। আরেকদল আসে। সচল রাখে ঐতিহ্য ইতিহাস কিন্তু সেই তূরীয় অনুভব পৃথিবীর কোনও সমাজে দীর্ঘ হয় না।
মানুষ পরকালের দিকে যাচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ