তৈমুর খান
১
ঈদ সংবাদ
……………….
ঘর নেই, পর নেই হৃদয় আকাশে
এক টুকরো ঈদের চাঁদ উঠেছে হেসে।
তোমরা এসো, আমরাও আছি
আমরা সবাই সবার কাছাকাছি।
ঈমানের জ্যোতি আছে, তৌহিদের বাণী
এসো আজ বুকে বুকে রাখি বুকখানি।
মরমে মরমী হই, দরদে দরদী
বেহেশতী সুঘ্রাণে অন্তর জাগে যদি।
এজন্ম সার্থক করি মানববাগানে
আমরা ফোটাই ফুল দ্বীন-সন্নিধানে।
২
বান্দা
………
এই চাঁদ ফিরে এলে আমিও নিষাদ হই বিষাদের কাছে
এই আরশের নিচে আজও আশ্রয় খুঁজে খুঁজে
তোমার আনন্দ নেয়ামতে
নিজেকে বিলীন করে চলে যেতে চাই
কতদূর আর? একটি ঈদের পর আরও কোনো ঈদে
ঈমানি আলোর ভোরে জেগে উঠব তবে
আমার কাঙ্ক্ষিত সিয়ামের শেষে পূর্ণ আবেশে
মানব মহিমার দিন সানন্দে ঘোষিত হবে?
হাত ধরে নিয়ে যাবে সবে, বুকের গুঞ্জন শুনবে বুক
হৃদয় উথলে উঠবে হৃদয়ের সংবাদে
আনন্দের যাকাত কেন আনন্দ হবে না?
পবিত্র পরশ নামবে ঈদ মোবারকে!
এ মাটিতে, এ ধুলোয়, এ আকাশে-বাতাসে
সম্মোহন ছড়িয়ে পড়ুক দ্বীনের প্রসন্ন সওগাতে
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা সমূহ মখলুকাতে
আমি একান্ত সেজদায় লুটাই তবে স্রষ্টার জমিনে।
৩
প্রথম রুকুর দিকে
………………
ঈমানবৃক্ষের ফুল ফুটছে একে একে
আমি তার ছায়া তলে আসি
সব রাস্তা দেখতে পাই তোমার আলোকে
রুকুর সম্মোহন দূর থেকে ডাকছে আমাকে
সুন্নাহ্ জাগিয়ে তোলে আজানের ধ্বনি
এই ভোর অস্তিত্বে আঁকে আত্মসম্পর্পণ
যেমন আঁধারের কুঞ্জে ডাকে আলোপাখি
সমূহ পার্থিব দুঃখ করে দেয় মোচন
কোথায় লুকোনো আছে আবেজমজম
সাফামারুয়ার দৌড় শেষ হয়ে এলে
আমিও পৌঁছে যাব নিমেষে সেখানে
সমস্ত সান্নিধ্য জুড়ে পিপাসার গান
আজ দিন রঙিন হয়ে উঠছে এমন
আজ মানুষের দিল্ উজ্জ্বল নৌসীন
নীরবে নীরবে সেই মহিমায় ভিজে যাই
আজ সব পাঠ করে ফাবিইয়্যাআলাইহি রাব্বিকুমা তুকাজ্জীবান্…
৪
একটা নীল মেঘ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে
……………
এসো, গড়িয়ে যাই
ভোর হয়ে গেছে কবে
আমাদের আলোগুলি জলে জলে ছড়িয়ে দিয়েছি
মনোরম জল আজ
ভাঙা ও ধূসর মনের হ্রদগুলি জুড়ে বয়ে যাক
প্রশান্তির হাঁসগুলি ঝাঁক ঝাঁক নেমে এসেছে
আজ কোথাও ক্লান্তি নেই
সব গাছ ক্লান্তি রঙের ফুল ঝরিয়ে দিয়েছে
এক একটি হাত বৃহৎ হাত হয়ে ডেকে নিচ্ছে আমাদের
পাহাড়ি কন্যাদের ঘুঙুর বেজে উঠছে ঘন ঘন
চলো, গড়িয়ে যাই
নবজাগরণের দেশে একটা নীল মেঘ
পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে
৫
আমাদের চরিত্ররা
……………
এই ধূসর স্টেশনে সমস্ত কষ্টগুলি ভাগ করে নিচ্ছি
কষ্টের রেখাচিত্রগুলি আমাদের মুখের উপর
এঁকে দিচ্ছেন কোনও শিল্পী
আমরা আবছা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকছি
খুব সূক্ষ্ম দু’একটা পাখি উড়ে আসছে আশার ব্যঞ্জনার মতো
আমরা তা দিয়েই আমাদের অন্ধকার ব্ল্যাকবোর্ড মুছে নিচ্ছি
আমাদের ভাগফলগুলি বেঁচেথাকার অঙ্ক
আমাদের শুষ্ক নদীগুলি ভবিষ্যতের শিল্পকারখানার সম্ভাবনা
একটা ভূখণ্ড তার জনসংখ্যা, তার বিষাদ, তার স্বপ্ন, তার জাগরণ থেকে
আমাদের চরিত্ররা নতুন পোশাক পরে নিচ্ছে আর
বিনয়ী হয়ে উঠছে ক্রমশ ভবিষ্যতের দিকে
৬
রাখি
……….
কারা সবাই বাইরে আছো?
ঘরে এসো, আরও কাছে
আজকে আদর পাওনা আছে
ডাকছে পাখি বুকের মাঝে।
সব দূরত্ব যাক ঘুচে যাক
শত্রুরাও বন্ধু হোক
অন্ধকারে আলো জ্বেলে
অন্ধরাও চক্ষু পা’ক।
হাতের কাছে আসুক হাত
মনের কাছে আসুক মন
দুঃখগুলি মুছে ফেলে
বেজে উঠুক ঐক্যতান।
তবেই তো হবে ভোর
তবে গান গাইবে পাখি
তবেই আমরা পরস্পর
বাঁধবো সবাই প্রেমের রাখি।
৭
এ দুর্যোগ মুছে দিতে সম্মিলিত এই আহ্বান
………………
মৃত্যুর খবরগুলি আমাদের অন্ধকারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
কোথায় দাঁড়াব তবে?
এই সভ্যতাও এবার ধ্বংস হবে?
মানুষ আজ মানুষ হতে দূরে
প্রহরে প্রহরে মৃত্যুর ঘন্টা বাজে
তবুও রঙিন প্রাণ জাগে ঘরে ঘরে
শফথ নেয় বাঁচার অঙ্গীকারে
স্পর্শহীন স্বপ্নের ভিতরে
কোথাও এক সুখবর তার
নতুন সকালের অপেক্ষা করে।
এসো হে মুগ্ধতা, তবে সচকিত হই
পরিচ্ছন্ন প্রাত্যহিকের আলোকে
নিজেকে আবার পুনর্নির্মাণ করি ;
ছিন্ন সুর বেঁধে নিয়ে দারুণ দুঃসাহসে
দাঁড়াই এই জীবনের প্রগলভ বিশ্বাসে।
ভয়ের সীমানাগুলি ভয়ংকর নয়
বিজ্ঞান সত্যের জয় চেতনা ফিরে পেলে
আবার পলাশ ফোটে আমাদের উৎসবে
আবার গার্হস্থ্য জীবনে প্রদীপ্ত সভ্যতা
সচল হয়, সংগ্রামী এ মনস্বী আত্মার কাছে।
এ দুর্যোগ মুছে দিতে সম্মিলিত এই আহ্বান
দিকে দিকে দিগন্তের পথে উঠেছে আজান
ধৈর্য আর নিষ্ঠার কর্তব্য সমাপন হলে
ফিরে পাব আবার আবার এই নম্র যাপন
স্তব্ধ হবে কালের করাল কণ্ঠের গান।