spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যঈদের সেকাল, একাল, পরকাল এবং ব্যক্তিগত অনুসঙ্গ : ৩য় পর্ব

লিখেছেন : আবু জাফর সিকদার

ঈদের সেকাল, একাল, পরকাল এবং ব্যক্তিগত অনুসঙ্গ : ৩য় পর্ব

আবু জাফর সিকদার 

[পর্ব তিন ] 

ঈদ বিনোদনে নতুন পোশাক অনুষঙ্গটি অনেক বেশি আকর্ষণীয়, প্রাসঙ্গিক। বড়লোকদের বিষয়টি আলাদা। তাদের ছেলেমেয়েদের তো সারাবছরই ঈদ। বিশেষ করে গরীব,নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ঈদকে ঘিরেই পোশাক কেনাকাটার ধুম পড়ে যেতো। এখনও অবশ্যই এর ব্যতিক্রম নয়।

যার যার সামর্থ্য অনুসারে সবাই চেষ্টা পরিবারের সকলকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিত। জুতা স্যান্ডেল, শাড়ি চুড়ি গহনাদি সহ প্রায় সব নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ঈদকে কেন্দ্র করেই কেনাকাটা হতে থাকে। তবে আর্থিক অনটনের কারণে ঘরের প্রধান কর্তা ও কত্রীদের  দেখা যায় নিজের সাধ আহ্লাদ আড়াল করে পরিবারে ছোট সদস্যের সাধ্যমতো চাহিদা পূরণ করতে। অসংখ্য পরিবারের কর্তারা দেখা যায় ছোটদের চাহিদা পূরণ করার পর নিজেদের জন্য একটি সুতোও নিতে পারেন না!  তাতেও তাদের তেমন কষ্টবোধ থাকে না যদি ছেলে মেয়েদের মুখে একটু হাসি ফুটাতে পারেন। অনেককে আবার কর্জ করে হলেও এই সাংবাৎসরিক  ঈদের কেনাকাটা সারতে হয়। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, ইসলামি শরিয়ার হুকুম আহকামের আলোকে যাকাত ফিতরা গরীব, দুস্থ মানুষের প্রাপ্ত হক। ঈদকে ঘিরে তাদের এই পাওনা টাকাগুলো পরিশোধের আয়োজন চলে, ফলে গরীব দুস্থ মানুষের হাতেও এসময় কিছু আর্থিক প্রাপ্তিযোগ ঘটে এবং ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইসলামী সংস্কৃতিতে আনন্দ বিনোদনের এটাই পরম সৌন্দর্য। একা একা নয়, সবাইকে সাথে নিয়ে আনন্দ উপভোগেই ঈদের মূল উদ্দেশ্য। 

আমাদের সেই সময়গুলোতে ঈদের আপ্যায়নে প্রধান নাস্তা ছিলো সেমাই!  রান্না, পোলাও সেমাই যেমন ছিলো, চাকাচাকা রঙিন লাচ্ছা সেমাই ছিলো বেশ অভিজাত। সাথে বাদাম, নারিকেল দুধে মিশিয়ে পরিবেশিত হতো এসব সেমাই। লাউ বা চালকুমড়া দিয়ে তৈরি করা হতো খুবই সুস্বাদু মোরাব্বা! ঝাল আইটেম হিসাবে রান্না হতো চানাবুট। গরুর গোশত, মুরগীর মাংস, মাছ এসব তো রান্না করা হতোই নিজেদের জন্য এবং বিশেষ বিশেষ মেহমান যারা  দূরদূরান্ত থেকে আসতেন দুপুরে বা রাতে তাদেরও সাদা ভাতের সাথে এসব মাছ গোশত দিয়ে আপ্যায়ন হতো। 

পোলাও ভাত, বিরিয়ানি, জর্দা, নুডুলস এসব আগের দিনে তেমন প্রচলন ছিলো না। পরে পরে এগুলোও আভিজাত্যের নিদর্শন হিসাবে কারও কারও বাড়িতে ঈদ মেন্যুতে যুক্ত হতে থাকে। সত্য বলতে কি, এসব দামী, মুখরোচক খাবার বিশেষ বিশেষ মেহমানদের জন্যই সংরক্ষিত থাকে। সাধারণ পাড়া প্রতিবেশিরা এর নাগাল খুব একটা পায় না! 

এতক্ষণ যে বিষয়আশয় তুলে ধরতে চেষ্টা করলাম,  তা মূলত ঈদুল ফিতর তথা রমযানের ঈদের বেলায় বেশির ভাগ প্রযোজ্য। 

ঈদুল আযহাতে ঈদ আনন্দ ও উদযাপন বেশ খানিকটা আলাদা। প্রেক্ষিত ও আচার অনুষ্ঠানের ভিন্নতা থাকার দরুণ এই ঈদে বেড়ানোর সুযোগ কমই থাকে। কোরবানির পশু জবেহ ও গোশত বিলিবণ্টন নানা পদের রান্না, খাওয়া নিয়েই সবার ঈদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। তবে সারারাত জেগে, দল বেঁধে পাড়ার মহিলারা প্রচুর চালের রুটি বানাতেন। এক বাড়িতে শেষ করে আর এক বাড়ি, এভাবে  সারা রাত পালা করে রুটি বানানো হতো। এই রুটি ও মাংস ঈদের দিন আমরা ঘরে ঘরে বিলি করতে থাকতাম।  আগের দিনে পালাকরে বড় বড় মেজবান হতো এক এক বাড়িতে। পালা করে একবাড়িতে দুপুরে আর একবাড়িতে রাতে মেজবানের একটা ধুম পড়ে যেতো।

এখন দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এসব রুটি ও মাংস বিলি করার ঐতিহ্য এবং  ঈদের মেজবানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে! এই ঈদ এখন অনেকটা ফ্রিজ কালচারে ঢুকে গেছে। তবে মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে, কোরবানি দেয়ার সংখ্যাও বেড়ে গেছে, গরীবিও কিছুটা কমে গেছে। যারা যারা কোরবানি করেন নিজেদের আত্মীস্বজনের কাছে কাঁচা মাংস বণ্টন করে দেন। এখনও গ্রামগঞ্জে সবার কাছে মাংস কিছু না কিছু  মাংস পৌঁছে যাচ্ছে। কেউ কেউ এসব দানের মাংস খোলাবাজারে নাকি বিক্রি করে নগদ টাকাও আয় করছেন বলে শোনা যায়, তবে মাংস ছাড়া অন্য সব  উপকরণ ক্রয়ের অসামর্থ্যের কারণেও কেউ কেউ  মাংস বিক্রয়ে বাধ্য হয়েছে বলেও খবর আসছে।

চামড়া বিক্রয় করে এক একটা থেকে ২৫০০-৩০০০ টাকা পাওয়া যেতো সেই সময়, সেই টাকাগুলো গরীবের মধ্যে শতভাগ বণ্টণ করে দেয়া যেতো এভাবে সারা দেশে শত শত কোটি টাকা গরীব দুস্থদের কাছে পৌঁছে যেত। এখন কোথা থেকে কী হল!  চামড়াগুলো ১০০-১৫০ টাকায়ও বিক্রয় হচ্ছে না। গরীবদের হকের টাকাগুলো নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের কারসাজিতে। আন্তর্জাতিক বাজারের চামড়ার চাহিদা যেখানে কমেনি, সেখানে সরকারি অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেট চক্রই  এই চামড়া সংক্রান্ত গরীব দুস্থদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার জন্য মূলত দায়ী।

[ চলবে….]

Author

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা