তাজ ইসলাম
‘রেজা নুর কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক।’ রেজা নুরকে এভাবেই পরিচিত করেছেন সম্পাদক তার ভূমিকায়। রেজা নুরকে নিয়ে সাহিত্যের কাগজ ‘ চতুরঙ্গ ‘ প্রকাশ করছে তার চতুর্থ বর্ষের প্রথম সংখ্যা। এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছেন জব্বার আল নাঈম। চতুরঙ্গের ‘রেজা নুর’ সংখ্যার নাম দিয়েছেন ‘চন্দন বনের ঐশ্বর্য ‘। ‘একজন রেজা নুর চন্দন বনের ঐশ্বর্য রেজা নুর সংখ্যা’ চতুরঙ্গের রেজা নুর সংখ্যার মূল বক্তব্য। এই নাম বাক্যে চলে এসেছে সামগ্রিক কথা।
রেজা নুর সাহিত্যে বহুমাত্রিক পদযাত্রী। তিনি কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। দীর্ঘ সময় যাপন করছেন প্রবাস জীবন।
প্রবাসে থেকেও নিয়মিত চর্চা করে যাচ্ছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়। তাকে নিয়ে চতুরঙ্গের আয়োজন ‘ চন্দন বনের ঐশ্বর্য ‘ রেজা নুর সংখ্যা। এ ধরনের সংখ্যার হাকিকত হল এক মলাটে একজন লেখককে সহজে পাঠ করা। এ জাতীয় সংখ্যা লেখক জীবনকে জানতে, চিনতে, বুঝতে আয়নার মতো কাজ করে। বিশাল কলেবরের এই সাহিত্য পত্রিকায় রেজা নুরকে নিয়ে লিখেছেন বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ অনেক লেখক। লেখক তালিকা ঈর্ষনীয়। রেজা নুরের ব্যক্তি ও সাহিত্য জীবনের নানা বাঁক,নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিবর্গ।
রেজা নুরের লেখক জীবন ও ব্যক্তি জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তার সতীর্থ লেখকেরা।
শুরুতেই লেখক তালিকায় আছেন আইভি চট্টোপাধ্যায়, রাজু রহমান, ছায়েদ আলী, সাম্মি ইসলাম নীলাসহ তার বন্ধু মহলের অনেকেই।
রেজা নুর সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই সচল।কবিতা তার চর্চার প্রিয় শাখা। কবি হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। তার কবিতার ব্যবচ্ছেদ করেছেন ফিরোজ আশরাফ, মুম রহমান, তাজ ইসলাম, ইমরুল বাহার। কবিতায় রেজা নুরের সরব উপস্থিতি। প্রকাশ হয়েছে বহু সংখ্যক বই।কবিতায় তার আছে নিজস্ব ঢঙ। কবিতায় রেজা নুরের শব্দ, বাক্য, উপমা, অলংকারের দক্ষতা, চেষ্টাকে চিহ্নিত করেছেন আলোচকগণ।
কাজী শোয়েব শাবাব তার বিষয়ে লেখেন
‘এক শান্ত কবিমন নিয়ে লেখেন রেজা নুর। বাইরের পরিবেশ যতই অস্থির হোক, তাঁর কবিতা বয়ে চলে নদীর মতো।…. তার কবিতা পড়তে বসলে বিক্ষিপ্ত মন স্থির, শান্ত ও নরম হয়ে ওঠে।সময়কে শ্লো মোশনে নিয়ে আসেন। যেন সময় ফুরাবার নয়।’
কবিতায় রেজা নুরের বক্তব্য, শিল্প, দর্শন এসব আলোচনা সবিস্তারে করেছেন বোদ্ধা আলোচকগণ। সাফি উল্লাহ্ বলেন, ‘কবি রেজা নুর আধুনিক সময়ের বিশ্বস্ত কথক’। ‘রেজা নুরের কবিতায় স্বদেশ প্রেম ‘ শিরোনামে কথা বলেছেন ড. জোহা শাখাওয়াত।আরও লিখেছেন ড. আবদুল সাত্তার, আজিম হিয়া, মাহমুদ নোমান, শিমুল জাবালি প্রমুখ।
গল্পের পর্যালোচনা করেছেন খালেদ রাহী, মোজাফফর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, রনি অধিকারী।
রেজা নুর কথাসাহিত্যিক। গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। ছোটগল্প যেমন লিখেন, লিখছেন উপন্যাসও। তার গল্প ও গদ্যের ভাষার বর্ণনায় সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক কামরুল আহসান লেখেন, ‘রেজা নুরের গদ্য কাব্যময়। উপন্যাসের মাঝে মাঝে তিনি কিছু কবিতাও দিয়েছেন। উপন্যাসের বিষয় প্রেম বলে কাব্যের মাধুর্যটুকুও খুব প্রয়োজন ছিল। উপন্যাসের মাঝে মাঝে কিছু কবিতা সংযোজিত হয়েছে। কোথাও কোথাও আছে কিছু গান।’
গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ সামগ্রিক রেজা নুর বিবৃত হয়েছেন এই সংকলনে। রেজা নুরের অধিকাংশ বইয়ের বিষয়ে বিশ্লেষণ করছেন সমকালের কবি ও সাহিত্য বোদ্ধাগণ। গ্রন্থিত হয়েছে নির্বাচিত লেখা। এই পর্বে আছে লেখকের কবিতা,গল্প ও অন্যান্য বিষয়।
তিনি একজন দক্ষ সম্পাদকও।
নিয়েছেন সাহিত্যের মহিরুহদের সাক্ষাৎকার। এগুলোও যুক্ত হয়েছে এই সংখ্যায়।
‘ লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ হচ্ছে দেশের মধ্যে না থাকা। দেশে না থাকার চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে? ৩০ টা বছর দেশের বাইরে কাটিয়ে দিলাম। কি যে রিগ্রেট, মনস্তাপ হয়!’
রেজা নুর মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলা ভাষার আলোচিত কবি শহীদ কাদরী’র। শহীদ কাদরী কথা বললেন তার সমকাল ও মহাকাল নিয়ে।সাহিত্য ও জীবন নিয়ে। জীবন বাস্তবতার উপলব্ধিজাত কথায় ব্যক্ত করলেন উপরোক্ত কথা। রেজা নুর সম্পাদিত ‘ চতুরঙ্গ’ এর সৌজন্যে গ্রন্থিত হয়েছে শহীদ কাদরীর এই সাক্ষাৎকার পর্ব। শহীদ কাদরী বলেন, ভেবেছিলাম সাহিত্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। যখন লন্ডনে ছিলাম বই পড়তাম না। ইংরেজি বইও পড়িনি। … ( কেউ কেউ) দু’চারটা কবিতা লিখে আমি কী হনুরে…। অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার। এক ধরণের অজ্ঞতা,ইগনোরেন্স”।
‘ চন্দন বনের ঐশ্বর্য ‘ রেজা নুর সংখ্যাটি একজন রেজা নুরকে খুব সহজে ও সুলভে পাঠ করার দারুণ আয়োজন। সাহিত্য রসিক সকলের হাতের নাগালে রাখার মতো জরুরি আয়োজন।
গবেষকদের জন্য এটি একটি মূল্যবান সংখ্যা। এ সংখ্যার সম্পাদক দক্ষতার সাথে কাজটি আঞ্জাম দিয়েছেন। শেষে যুক্ত হয়েছে ছবি পর্ব। জীবনের স্মৃতিবহ ছবিগুলো অতীতকে বর্তমানে স্মৃতিকাতর করে। প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এই বৃহৎ সংকলনের বিনিময় মূল্য ৫০০ টাকা। ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে আরও নান্দনিক রূপ ধারণ করেছে। আপনি সংগ্রহ করুন। একজন রেজা নুরকে জানুন।