আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিগত বহু বছর যাবত আওয়ামী লীগের অপছন্দনীয় রাজনৈতিক নেতাদের মুখকে বিকৃত করে ঢাকায় আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শন করা হয়েছে। অন্যান্য প্রতীকও থাকতো শোভাযাত্রাগুলোতে। এই কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে করতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্রশিক্ষকরা। চালচিত্র বদলে গেছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে এবার থাকছে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়ব। তার মাথায় খাড়া চারটি শিং, হা করা বিকৃত মুখ, বিশাল আকৃতির নাক, ভয়ার্ত দুটো চোখ।
হাসিনার এই প্রতিকৃতি ফ্যাসিবাদের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের জালাল আহমেদ বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছিল; এটিকে সেটির একটি পাল্টা প্রতিকৃতি বলা যেতে পারে। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে একধরনের আওয়ামী জাহিলিয়াতের যে ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড হয়েছে, তারই এই দৃষ্টান্ত চারুকলার এই প্রতিকৃতি।”
মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুরু রাজ্যের রাজা ধৃতরাষ্ট্র। তার “লঘু ভ্রাতা” অর্থ্যাৎ ছোটভাই বিদূর, যিনি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, ধর্মের প্রতি অতি নিষ্ঠাবান ছিলেন, যাকে ভারতবর্ষের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি বিবেচনা করা হতো। যা কিছু ঘটুক না কেন, যিনি সবসময় ধৃতরাষ্ট্রকে ধর্মের পথে থাকার পরামর্শ দিতেন। বিদূরের নীতিমূলক বাণী ‘বিদূর নীতি’ হিসেবে পরিচিত। তার একটি বাণী হচ্ছে: “শঠে শাষ্ঠাং সমাচরেৎ” অর্থ্যাৎ ‘যে যা করে তার সঙ্গে তেমন আচরণ করো,’ ইংরেজিতে যাকে বলা হয় “টিট ফর ট্যাট,” যার সরল বাংলাকরণ হয়েছে “ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়।” সুফি কবি জালালুদ্দীন রুমি বলেছেন, “তুমি যদি অন্যকে ফেলার জন্য কূয়া খনন করো, তাহলে তুমি নিজেই সেই কূয়ায় পড়বে। একথাটি বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যতায় বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।
কোনো সরকার বা দলের উচিত নয়, এ ধরনের কাজ করা বা করতে উৎসাহ দেওয়া। কারণ কখন কার দুর্দিন বা সুদিন আসে, তা কেউ জানে না। কিন্তু সাধুবাক্য কে শ্রবণ করে! তারা অন্যকে ঢিল মারে নিজে পাটকেল খাওয়ার জন্য; কূয়া খনন করে নিজে সেই কূয়াা পতিত হওয়ার জন্য।