পলিয়ার ওয়াহিদ
‘মুসলমানরা আবু লাহাবকে ঘৃণা করবে, ইহুদিরা হিটলারকে ঘৃণা করবে, সেক্যুলাররা পোপকে ঘৃণা করবে, কম্যুনিস্টরা নিকোলাসকে ঘৃণা করবে, ফিলিস্তিনিরা আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে ঘৃণা করবে। আর ১৮ জুলাইয়ের পর বেঁচে থাকলে আপনাকে শেখ হাসিনাকে ঘৃণা করতে হবে। এটাই তো সত্য। শেখ হাসিনার দেখানো ঘৃণা মানে কি? শেখ হাসিনা গুম-খুন, ক্রসফায়ার, জেল-জুলুম দিয়ে আমাদের ঘৃণা শিখিয়েছে। আমরা তার বিপরীতে কেবল প্রতীকী তাৎপর্যের ঘৃণা উৎপাদন করছি। এর বেশি কিছু না। এবার শোভাযাত্রায় হাসিনার সাথে নেতানিয়াহুকে রাখা দরকার।’
উপরের লেখাটির সঙ্গে যোগ করে বলতে চাই, ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র নাম বদলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কেন করা হয়েছিল? সেই যাত্রায় ৭১ এর ঘৃণা টেনে এনে কারা জামায়াতের নেতাদের দাঁড়ি-টুপিকে প্রদর্শন করে ভয়ের সংস্কৃতি উপহার দিয়েছিল? ককটেল হাতে খালেদা জিয়াকে বিকৃত উপস্থাপন কারা করেছিল? কেন করা হয়েছিল? কোন সে রাজনীতি? আর খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদী প্রর্দশনের প্রেক্ষাপট কি? যারা ঘৃণার এই সিলসিলাকেও ঘৃণা করছেন তাদের সন্দেহ করা জরুরি। কারণ? তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা আর গণমানুষের আকাঙ্খাকে একই জায়গা থেকে দেখছেন। ফলে কোনটা রাজনৈতিকভাবে চাপানো আর কোনটা গণমানুষের উৎপাদন সেটা তারা বুঝতে চাচ্ছেন না কিংবা বুঝতে পারছেন না।
তৃতীয় যে শক্তিশালী পয়েন্ট সেটা হলো, বর্তমানে তৌহিদী জনতার নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে গোলা ভরছেন। ইসলামের ঘাড়ে বন্দুক রেখে অনেকে হারামকেও জায়েজ করছেন। বিশেষ করে দিল্লির মিডিয়াগুলো বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জজবাকে জিহাদ ও জঙ্গি তৎপরতার পর বাংলাদেশে যে সেক্যুলার ও কম্যুনিস্টরাও হাসিনাকে ঘৃণা করছে সেটাও বিশ্ববাসী দেখুক। বরং বেশি করেই দেখুক।
এর সঙ্গে আমেরিকার পাগলা ট্রাম্প ও ভারতের মোদির প্রতীকও রাখা যায় কিনা চিন্তা কইরা দেখেন…কারণ বাংলাদেশের দূতাবাস গুড়িয়ে দেওয়ার পরও এ দেশের জনগণ তাদের দেশের জনগণের মুখোমুখি হয়নি। এটাই বাঙালি মুসলমানের শিষ্টাচারের নজির। ফলে কূটনীতির ভাষা যাই হোক গণমানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠুক ক্ষমতার প্রতীককে বৃদ্ধাঙুলি দেখানো।
এবার আসি মূল আলাপে। গত পরশু আমি একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম। পহেলা বৈশাখের র্যালি কোন নামে চান?
১. আনন্দ শোভাযাত্রা ২. মঙ্গল শোভাযাত্রা । সেখানে প্রায় ১০০টি কমেন্ট জমা হয়। এর মধ্যে ৩৫ জনে লিখেছেন ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ৭ জনের লিখেছেন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। আর ৫ জন লিখেছেন, ‘বৈশাখী শোভাযাত্রা’। এ ছাড়া বিশেষ ও আলাদা কয়েকটি মন্তব্য করেছেন অনেকে। যেমন, আকবরিয়া শোভাযাত্রা, বর্ষবরণ শোভাযাত্রা, বৈশাখী র্যালি, নববর্ষ শোভাযাত্রা।
মজার মন্তব্য জমা পড়েছে আরও কয়েকটি। ইসলামিক শোভাযাত্রা, ইসলামি কাফেলা ও ইউনূসযাত্রা। আর দুটি মন্তব্য এসেছে– হো মা সা, মব যাত্রা নামে। মন্তব্য করে মতামত জানানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আজ সরকার ঘোষণা করেছে ‘নববর্ষ আনন্দ শোভাযাত্রা’। গণমানুষের চাওয়ার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য সরকারকেও ধন্যবাদ।
আর যার যা বক্তব্য শুনলে শোনেন না শুনলে ঘুমান…সত্য ও ইনসাফের জয় হবেই। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৬ সালে যশোরে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নববর্ষ উপলক্ষে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল- পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরের শোভাযাত্রা সারাদেশে আলোড়ন তৈরি করে।
তারপর ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেবারই এ উৎসব সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এরপর থেকে বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে এটি। কিন্তু ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র নাম হয়ে যায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’!