তাজ ইসলাম
পণ্য কিনে তা ধ্বংস করলে প্রতিবাদ হয় বটে কিন্তু সবার আগে উপকৃত হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ধ্বংসকারী আগেই মূল্য পরিশোধ করে উৎপাদনকারীর তহবিলে অর্থ পাঠিয়ে দিয়েছে।
তাহলে করনীয় হল কেনা এড়িয়ে চলা। না কেনার প্রচারণা চালানো।
অভিযুক্ত পক্ষ শক্তিশালী হলে কথা উঠে তাকে বয়কট করা সম্ভব না। দেশ, জাতি,বিশ্বাসের শত্রু পক্ষ মজবুত হলেও তাকে বয়কট করতে হবে।আপাতত যতটুকু পারা যায় ততটুকু বয়কট করতে থাকতে হবে।বিকল্প তালাশ করতে হবে।সম্মিলিত শক্তি ঐক্যবদ্ধ হলে বিকল্প উৎপাদনও হয়ে যাবে।বিকল্প রাস্তায়ও আবিস্কার হয়ে যাবে। চিন্তা ও বিশ্বাসের প্রতিপক্ষের স্বদেশীয় দালালরা আপনার সামনে যুক্তি তুলবে।তারা বলবে ‘আপনি তাদের এই এই পণ্য বর্জন করে থাকতে পারবেন না।’জীবনে আবশ্যিক পণ্য আছে তাদের।যা বর্জন করা অসম্ভব।আপনি ক্ষুদ্র থেকে শুরু করেন। এক পয়সার পণ্য বর্জনও যদি বাস্তবায়ন করেন তবু কোটি টাকার পরিমাণে গিয়ে ঠেকবে। সবচেয়ে বড় কথা আপনার ইমান,আন্তরিকতা জারি রাখলেন। যখন যে বিকল্প সামনে আসবে তাই গ্রহণ করবেন। জনগোষ্ঠী সোচ্চার হলে, কোন বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বা পক্ষের বিপক্ষে গেলে জাতীয় পর্যায়ে তার একটা প্রভাব পড়ে।জনমতকে যখন জাতীয় নেতৃত্ব উপলব্ধি করতে থাকে,তখন পরিবর্তনের চিন্তা আসে।শিল্প ও উদ্যোক্তারা নতুন করে ভাবতে শিখে।এভাবেই দাঁড়িয়ে যায় বিকল্প।সুতরাং বয়কটের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে আপনি সম্ভব হলে গোটা ইসরাইলি সামগ্রী বর্জন করুন।অন্তত আপনি আপনার বর্জন তালিকায় শার্টের বোতাম দিয়েই শুরু করুন।তারপর ধীরে ধীরে শার্ট পাল্টান।
ভাঙচুর থেকে বিরত থাকুন।আন্তর্জাতিক ইস্যু আর দেশীয় ইস্যুর প্রেক্ষাপর,পরিস্থিতি, পরিবেশ ভিন্ন রকম। দেশীয়, দলীয় ইস্যুতে ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরাসরি প্রতিপক্ষ। আর আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিজ দেশের লোক।তারা কখনো কখনো অভিযুক্ত পণ্যের পক্ষ নন,কেবল বিক্রেতা বা অক্ষম বানিজ্যিক, ব্যবসায়ীক পরিবেশক। ধরেন কোকাকোলার ক্ষুদ্র দোকানদার। মানবিক দিক থেকে সেও মজলুমের পক্ষের। তার দোকান ভাঙচুর করলে সে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।এমন কি যে কোকাকোলাটা নষ্ট করা হল সেটাও তার নিজস্ব অর্থের।এখানে কোকাকোলার কোন আর্থিক ক্ষতি নাই।
এক্ষেত্রে যা করা যায় তা হল রূপান্তর।
মানসিকতায় প্রভাব ফেলুন। বিক্রয়ে প্রভাব রাখুন। ক্যাম্পেইন করুন।দোকানদাররা যেন এসব পণ্য আর পরিবেশন না করে।
বিক্রয়ে প্রভাব বিস্তার করুন।ক্রয় থেকে বিরত থাকলেই বিক্রয়ে প্রভাব পড়বে। বিক্রয় কম হলেই মজুত কমে যাবে।
বড় প্রতিষ্ঠান গুলো রূপান্তর করতে প্রভাব রাখুন। জনমত তৈরী করে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারলে বড় প্রতিষ্ঠানের দেশীয় অংশ পলিসি ও নাম পাল্টাতে বাধ্য হবে। কেএফসিকে নানাভাবে বিএফসি করা যায়। ভাঙাভাঙির চেয়ে রূপান্তর অনেক উত্তম।
মিছিল, প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। মজলুমের পরিচয় তারা মানব সন্তান।দেশ,ধর্ম,বিশ্বাসের সাথে তার মানব পরিচয়টা অন্যতম।পৃথিবীর কোন প্রান্তে মজলুম জনগোষ্ঠীর জন্য মানুষ হয়ে প্রতিবাদ জারি রাখা মানুষের কাজ।
বিশ্বের যেকোন প্রান্তে জুলুম হলে প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।
চিন্তার বিপরীত বিশ্বাসের প্রতিপক্ষের মানসিকপুত্ররা নানা কথায় নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
কি হবে মিছিল করে,কি হবে এনতেন করে এগুলো হল প্রতিযুক্তি দাঁড় করিয়ে প্রতিবাদীদের স্পৃহা কমানোর নামান্তর। প্রতিবাদ জারি রাখতেই হবে। কি হবে এই প্রশ্ন প্রতিপক্ষ মানসিকতার লোকদের।আপনি মজলুমের পক্ষ হলে,মানুষ ও মানবিক হলে আপনার প্রশ্ন ভিন্ন।আপনি চিন্তা করবেন কি কি উপায়ে প্রতিবাদ করলে আপনার কার্যক্রম বিশ্ব মিডিয়ার নজর কাড়বে এবং পজিটিভ ও কার্যকরী হবে।
এক দেশ থেকে অন্য দেশ,এক এক দেশ করে সারাবিশ্বে প্রতিবাদী হলে সবার আগে মজলুমেরা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিক সাপোর্ট পায়।মুক্তির লড়াই আক্রান্ত জনগোষ্ঠীই করে যাবে।বিশ্ব শুধু তাদের পাশে থাকবে। যত রকমের সাপোর্ট করা যায় তা করার বৈধ উদ্যোগ নিতে হবে। এতে আক্রমণকারীর মানসিক, নৈতিক শক্তি দুর্বল হতে থাকবে।
কেউ প্রতিবাদ না করলে একটা জাতি,গোষ্ঠী নিরবে নির্যাতনে নিঃশেষ হয়ে যাবে। ইসরাইলি পাষণ্ডতায় সারাবিশ্ব সোচ্চার। কোন কোন রাষ্ট্রের শাসকপক্ষ পক্ষরা জন্ত জানোয়ারের পক্ষ নিলেও সাধারণ জনতা মজলুমের পক্ষে। এর সবচেয়ে বড় যে উপকার তা হল পৃথিবীর কোন ভূখণ্ডে ইসরাইলী নাগরিক সদম্ভ বিচরণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে।বিবেকবান ইসরাইলী হিসেবে পৃথিবীর দিকে দিকে তারা লজ্জিত হবে। ইয়াহুদী পরিচয়ে তারা বিব্রত হবে।
প্রতিবাদ জারি থাকবে। মজলুমের প্রতি সহমর্মি হিসেবে আপনার অবস্থানের জানান আপনাকে দিতেই হবে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বহু বছর যাবত নির্যাতিত।ইসরাইল জারজ রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত। গাজা ও সমগ্র ফিলিস্তিনও যদি ইসরাইল দখল করে ফেলে,আর যদি ফিলিস্তিনি নাগরিকরা নিশ্চিহ্নও হয়ে যায় তবু ইসরাইল ফিলিস্তিনে জালেম হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এই কালিমায় কলঙ্কিত হবে বিজয় পরবর্তী সময়ে আজকের ইসরায়েলের শাসক দল।তারপর তারা নিজ দেশে একসময় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও নিশ্চিহ্ন হবে।তারপর আবার ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রাম শুরু হবে।এবং আমি বিশ্বাস করি ফিলিস্তিন তার ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠবে। উপরের কথা যদি নির্ভর।আবার বিশ্বাস ফিলিস্তিন তার পতাকা রক্তের নদীতে উঁচিয়ে রাখবেই।এবং একসময় আজকের ইসরাইল বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত হয়ে পরাজিত হবে। মুক্তির তামান্না আর রক্তের স্রোতে পৃথিবীর কোন জালেম ঠিকতে পারেনি,ইসরাইলও পারবে না।তারা সভ্যতার শত্রু,মানবতার শত্রু।ইসলাম ও মুসলমানের জনয অন্যতম জালেম রাষ্ট্র। মুসলমান শাসকদের মাঝে আছে নপুংসক, অপদার্থ, মোনাফেক, ক্ষমতালোভী শাসক । সাধারণ মুসলমানের স্পিরিট শাসকদের মনে, মানসিকতায় থাকলে ইসরাইল ধুলোয় মিশে যেত সেই কবেই। তবু জারি রাখতে হবে প্রতিবাদ ও ঘৃণা।
আমাদের দেশে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন।জুলাই পরিবর্তনের পর পতিত ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী সবকিছুতেই সুযোগ খোঁজে।
চক্রান্তের জাল বিস্তার করতে চায় সকল ইস্যুর ফাঁকফোকরে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ মিছিলে সাবোটাজের ষড়যন্ত্রের চক তারা এঁটে রাখে পূর্ব থেকেই।তাই যে কোন প্রতিবাদ মিছিল বা কার্যক্রম পরিচালনার আগে আয়োজকদের সতর্ক থাকতে হবে। মিছিলকে ভলান্টিয়ার দ্বারা ঘিরে রাখতে হবে।কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকে।এবং কড়া ভাষায় ঘোষণা করে দিতে হবে ‘ ঘোষিত কর্মসূচির বাইরে কোন কাজ করা যাবে না।’ পরিস্কার করে বলে রাখতে হবে নিজেদের নির্দিষ্ট কর্মসূচি। এর বাইরে যে যা করবে তা করতে হবে প্রতিরোধ।।’ মার্চ ফর গাজা’ র দিনের কর্মসূচীর দিন যেন কোন রকমের লুটপাট,ভাঙচুর না হয় তা বলিষ্ঠভাবে বলে রাখতে হবে।এবং এমন যারা করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের সোপর্দ করতে হবে আইনের হাতে।
আমরা দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি গাজা, ফিলিস্তিন একদিন ইসরাইলী জুলুম থেকে মুক্ত হবেই।বিজয়ের পতাকা গাজার আকাশে বাতাসে উড়বে পতপত করে।
ইনতিফাদা ইনতিফাদা।ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ।
ইসরাইল নিপাত যাক।