spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদতরজমাফাদি জৌদাহ'র কবিতা

ভূমিকা ও তরজমা : জহির হাসান

ফাদি জৌদাহ’র কবিতা

[ ফাদি জৌদাহ একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ও অনুবাদক। পেশায় তিনি চিকিৎসক। ১৯৭১ সালে তিনি টেক্সাসের অস্টিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং লিবিয়া ও সৌদি আরবে বেড়ে উঠেছেন।
জৌদাহর প্রথম কাব্যগ্রন্থ The Earth in the Attic (২০০৮) Yale Series of Younger Poets প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়, যা লুইস গ্লিক নির্বাচিত করেন। ২০১৩ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ Alight, এরপর ২০১৪ সালে Textu প্রকাশিত হয়।তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ Footnotes in the Order of Disappearance প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে তিনি কবিতার জন্য Guggenheim Fellowship লাভ করেন।
সমালোচক চার্লস বেইনব্রিজ ২০০৮ সালে The Earth in the Attic সম্পর্কে The Guardian-এ মন্তব্য করেছিলেন: “জৌদাহর কবিতা দৃষ্টিভঙ্গির নাটকীয় পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল, যা প্রচলিত ধারণাকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ জানায়।”
জৌদাহ ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দরবিশের কয়েকটি কবিতা সংকলন অনুবাদ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে The Butterfly’s Burden (২০০৬), যা যুক্তরাজ্যের Banipal prize অর্জন করে। PEN Award for Poetry in Translation-এর জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
ফিলিস্তিনের আত্মাই তার কবিতার শ্বাস-প্রশ্বাস। ইসরায়েলের গাজায় উপনিবেশিক দখল, গণহত্যা ও সকল ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই কবি ২০২৪ সালে একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন যার আক্ষরিক কোনো নাম নাই। তিনটি ফুলস্টপকে তিনি থার্ড ব্রাকেট বন্দী […] করে কবিতার বইয়ের নাম দেন সাংকেতিকে।এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, আমি ভবিষ্যতের জন্য লিখি কারণ আমাদের বর্তমানকে ধ্বংস করা হয়েছে। এককথায় বলা খুব সরলীকরণ হবে যে আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি যেখানে পুঁজিবাদ বই তৈরির উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে এটি ভুলও নয়। আজ কবিতার বইগুলো বৈচিত্র্যময়, সংকরধর্মী হলেও, এখনও একটি নির্দিষ্ট ছাঁচ আমাদের চিন্তায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে। ঐতিহাসিকভাবে, নির্দিষ্ট শিরোনাম ছাড়াই কবিতা মানুষের স্মৃতিতে ভাসমান ছিল, টুকরো টুকরোভাবেই টিকে ছিল। আমরা মনে করি, আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে আর্কাইভ অনিবার্য ও অপরিবর্তনীয়। মনে করা হয়, অতীতের মতো নয়, এখন আমরা যা নথিভুক্ত করি তা চিরকাল টিকে থাকবে। কিন্তু যখন গাজার ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হলো, তখন আমার কাছে শিরোনাম কল্পনাতীত হয়ে পড়ে। আমি বরং পিক্টোগ্রামের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হলাম।
ফাদির কবিতা ও ফিলিস্তিনকে আলাদা করা যায় না। পৃথিবীর তথাকথিত অগ্রগতি ও সভ্যতার মুখোশের তলে অমানবিক বর্বরতা প্রমাণ করে আমরা এমন একটা নৌকায় চড়েছি যা বৃত্তাকারে ঘুরছে আর আমাদেরকে সময়ের কিছু সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই দিতে পারতেছে না!এইখানে তার কয়েকটি কবিতা বাঙলায়ন কথ্যভাষায় করা হয়েছে। ]

ফাদি জৌদাহ’র কবিতা
তরজমা : জহির হাসান

উচ্ছেদ
………..

তোমরা যারা আমারে আমার ঘর থাকি বার করি দাও
সেই তোমরা তোমাদের পিছনের দিনগুলার ব্যাপারে আন্ধা,
তোমাদেরে তোমাদের ঐদিনগুলা কহনই না ছাড়ি যায়
তারপরও আমার লগে তোমরা যা করছ এহনও
তোমরা তার এক রত্তিও টের পাও না
তোমাদের অনুভবের ভিতর।
এহন, দিনে দিনে চুই চুই মুছি যায় অতীত
হই যায় যেন জলবায়ু পরিবর্তন, তা যেন কোনো গণহত্যা ন,
আর তাই বর্তমান কোনো দিন শেষই হয় না।
কিন্তু মনে রাইখো তোমার চাইতে আমিই তোমার নিকটে,
আর দোস-দুশমন,
এইটাই দূরত্বের সংজ্ঞা।
ওহ, গোস্বা কইরো না,
ভিডিও খান দেখিও, আমি তোমারে লিঙ্ক পাঠামু,
যেইখানে তুমরা আমারে পরিষ্কার করছো
একে একে আমার জিনিসপত্র
রাস্তায় ফেলি দি হাঁটতে কইতেছ
যেইখানে
আমার বর্তমান খান খান বিপর্যয়,
জানিও, তোমার অতীত আমার ক্ষতির সমান নহ এহনও ।
এটা কি সেই দেয়াল,
যেইখানে তুমি তোমার পাশা ছুড়ি ফেল?
আমি বুৎপত্তির দিক হইতে কইতেছি,
যদি পাল্লাটা তোমার দিকে হেলে, আমি ঠিক আছি,
তাতে নাই আমি, আমার একখান কলিজা আছে যা পচে গলে বটে,
প্রতিরোধ করে, আর স্বপ্ন দেখে। তোমার মতো, আমারও জিন আছে,
যা ডেমেজ পিরামিডরে স্বীকার করে না।
তোমরা যারা আমারে আমার ঘর থাকি উচ্ছেদ করছো
তোমরা আমার আব্বা-আম্মা
তাদের আব্বা-আম্মারেও হেদের ঘর হইতে উচ্ছেদ করছো।
আমার জানালা দিয়া ঐসব দৃশ্য কেমন লাগে?
আমার দুর্দশা তোমার কেমন লাগে?
তোমার লাগি কি আমি নিজেরে একটু নিন্দা করুম
যাতে তুমি আমার শরীরের মধ্যে নিজেরে ক্ষমা করতে পারো?
আহারে, তুমি আমার শরীরকে কত ভালোবাসো,
আমার শরীর, আমার ঘর।

………….
অনুকরণ
…………..

আমার মাইয়্যা
মাকড়সাডারে আঘাত দিবার চায় নাই
মাকড়সাডা মাইয়্যার বাইসাইকেলের
হ্যান্ডেল দুইটার মাঝখানে
বাসা বানাইছিল
দুই সপ্তাহ ধরি মাইয়্যা
ধৈর্য্য ধরি আছে যেন সে নিজে নিজেই
যায় গা

আমি কইলাম, আম্মাজান,
মাকড়সার জালডা যদি ভাঙ্গি ফেল
ও ঠিকই ধরি লইব যে এইটা তার বসবাসের জায়গা না!
আর তহন তুমি বাইকিং-এ বার হইতে পারবা!

মাইয়্যা কইল
এভাবেই তো
লোকজন শরণার্থী
হয়, হয় নি , কও?

[…]

তুমি টানেলের ভিতর ঢুকি পড়ছ।
সীমাহীন টানেলের শেষে বাতি জ্বলতেছে।
তোমার ভাবনার সব শব্দই
তা অলরেডি লিখা হই গেছে
হয় তুমি বা অন্য দোস্তরো লিখি ফেলছে,
যারা হেদের দরিয়ার ফেনা ছুই যায়।
হেরা সফর ভালোবাসে।
হেরা তোমারে আরও আরও বাসে ভালো যহন তুমি মরো।
তুমি মরলে হেরা তোমারে আরও জীবিত ভাবে।
ফের জীবিত হইয়া, সেই টানেলে ঢুকো
যার দিকে হাটি গেছ,
যেইখানে তোমারে খেদানো হইছে,
যেইটা তুমি রাগের চোটে খুড়ছো,
তোমারই রক্তের গোরস্থান।
তোমার দেহপিন্ডরে খন্ডবিখন্ড করা হয়,
তোমার ভূখন্ডের সীমানা মুছি ফেলে।
প্যাসিভ কণ্ঠস্বর
তোমার খুনিরই গলা।
মাঝে মাঝে হেরা সমর্থন করে।
মাঝে মাঝে ভাষা মরি যায়।
এখনই তা মরতেছে।
কেইবা জীবিত আছে
এইটা বলার লাগি?


[…]

ছোটবেলায় আমরা জেলে জেলে
একটা খেলা খেলতাম:

তুমি খালি সোডার ক্যান সাজাই
একটা পিরামিড বানাইতা
যাতে তোমার প্রতিপক্ষ সেইটা
একটা টেনিস বল দিয়া ফালাই দিতে পারে,
বলডা সবসময় হইত হলুদ।
মাছের মতোই মাঠে ছড়াই পড়ত।
পিরামিডের মতোই মাছ ধরার লাগিও
বলডাই আছিল বর্শা।
যদি তুমি সেইটা পষ্টভাবে ধরতে পারতা
আর দূরে ছুইড়া দিতা,
যাতে তোমার প্রতিপক্ষ
হেদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করতে
একত্র হইতে বাধ্য হয়,
এইডা ছাড়া মূলত তারা কিছুই ছিল না,
এই ফাকে তুমি যা পার
আবার গড়তে পারতা
তারা যা ধ্বংস করছে,
যতক্ষণ না বর্শা আবার আঘাত হানে।
আহারে, আঘাতগুলা ছিল যন্ত্রণার, অসহ্য।
একজন একজন করি পইড়া যাইতাম আমরা।
পিরামিডরে ফের পুরা দাড় করতে পারা মানে
তুমি নিশ্চিহ্ন হও নাই।
আর তোমার দল জিইতা যাইত।

…………..
নামগুলি
…………..

সেলাম আমারে খোয়াবে দেখনের লাগি
আমারে জানাবার লাগি
খোয়াব দেখি জাগি ওঠনের লাগি
আমি কহনো জাগি উঠি না যহন তোমারে খোয়াবে দেখি
তোমারে কি জাগায়ে তুললো?
কেউ কি আছিল—
অন্য কোনো শরীর?
একটা ছোট্ট শিহরণ, আমাদের গোপন এক রহস্য
আপদহীন সফরের ভরসা
অঝরা রক্তের ভেতর দিয়া।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মরুভূমি