আনিসুর রহমান
ভারতে ওয়াকফ বিল পাশ নিয়ে দেশটির বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি এবং জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ওয়াকফ বিল কী?
প্রসঙ্গত, আরবি ভাষায় ‘ওয়াকাফা’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘ওয়াকফ’ থেকে– যার অর্থ হল সম্পত্তির হাতবদল। ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে তার সম্পত্তি দান করেন, তখন সেটাকেই বলে ওয়াকফ সম্পত্তি। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়কেন্দ্র বা শুধু জমি– সব কিছুই থাকতে পারে।
পাস হওয়া ওয়াকফ বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম নন এমন সদস্য রাখা হবে। ওয়াকফ বোর্ডে অন্ততপক্ষে দুই জন মুসলিম নন, এমন সদস্য থাকবেন। তাছাড়া অন্তত একজন করে শিয়া, সুন্নী এবং অনগ্রসর মুসলিমদের প্রতিনিধি থাকবেন। সার্ভে কমিশনারের পদটি বাতিল করা হয়েছে। তার জায়গায় জেলার কালেক্টরকে সার্ভে বা সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিরোধী দলগুলোর দাবি, এই সংশোধনী সংখ্যালঘুদের অধিকারের পরিপন্থি। সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তবে বিজেপি সরকারের মতে, এই সংশোধনী বিলের মাধ্যেমে বেআইনি দখল রোধ করা সম্ভব হবে এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
বিলটি ‘অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধীদের অভিযোগ, ৪৪টি সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের উপর সরকারি কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
ভারতে মুসলিম ও বিরোধী রাজনীতিকদের প্রবল আপত্তির মুখে লোকসভায় পাশ হয়েছে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল। ১২ ঘণ্টা বিতর্কের পর ২ এপ্রিল গভীর রাতের ভোটাভুটিতে এর পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৮টি। বিপক্ষে পড়ে ২৩২টি। এরপর রাজ্যসভায় যাবে বিলটি। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা বলছেন, এর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। সরকার এ ধরনের জমিতে থাকা মুসলিমদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও হস্তক্ষেপ করতে পারবে। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া জোট’ সংশোধিত বিলটিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছে। কংগ্রেস বলেছে, সরকার সংখ্যালঘুদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে।
বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে যখন তর্কবিতর্ক চলছে, তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মুসলিম সংগঠন এই আইনটিকে ‘কালা কানুন’ বলে বর্ণনা করে আসছেন এবং তারা প্রবল বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ আইন-বিরোধী প্রতিবাদ রীতিমতো সাম্প্রদায়িক চেহারা নেয়। গত সপ্তাহে ওই সহিংসতায় বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়েছেন।
ইতিমধ্যে এই আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে এটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আলাদা আলাদা পিটিশন দাখিল করেন একাধিক পার্লামেন্টারিয়ান। বেশ কয়েকটি নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীও এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
তবে, সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা অনেকগুলো মামলার একত্রিত শুনানিতে ভারতের শীর্ষ আদালত ১৬ ই এপ্রিল বুধবার কেন্দ্রের উদ্দেশে একাধিক ‘অস্বস্তিকর’ ও ‘কঠিন’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।
বিশেষ করে নতুন আইনে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিমদের সদস্য করার যে বিধান রাখা হয়েছে, সেই পটভূমিতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে হিন্দু এনডাওমেন্ট বোর্ডে (মন্দির বা দেবোত্তর সম্পত্তির পরিচালনা করে যারা) মুসলিম সদস্যদের রাখা হবে কি না?
পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে। বাংলায় এই আইন জারি হবে না।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেও শেষটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নরেন্দ্র মোদি আগামী নির্বাচনে ভোটার টানার জন্য এই স্ট্যান্টবাজি নিয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলমান কমিউনিটির, এটা রাষ্ট্রের হতে পারে না। রাষ্ট্র এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ওয়াকফ সম্পত্তির পরিচালনা পরিষদে অবশ্যই কমিউনিটির মানুষ থাকতে হবে। রাষ্ট্র বা অন্য কমিউনিটির মানুষ এলে ওয়াকফ সম্পত্তি কুক্ষিগত হতে পারে।”
তথ্যসূত্র :
হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি, DW বাংলা
বাংলা রিভিউ পড়ার সুযোগ এতোদিনে পেলাম। আনন্দ হচ্ছে অনেকদিন চেয়ে না পেয়ে কোন জিনিস পাওয়ার মতো!