| মাহমুদ নোমান |
সহজাত সারল্যে নিজস্ব খেয়ালি কবি অভীক ওসমান। দোর্দন্ডপ্রতাপে দুরন্ত কবি, আগেপিছে ডাইনে বাঁয়ে ভাবার অবকাশ নেই ; অভীক ওসমানের কবিতা সদা তারুণ্যের শক্তিতে স্মার্ট রিদ্মিক দোলন। যেন সমুদ্রের ঢেউ এগিয়ে এগিয়ে আসছে,আবার ফিরে যাচ্ছে,আবার এগিয়ে আসছে অমন এক ছন্দিত গতিধারা। এসব বাড়াবাড়িও নয়, নিজস্ব ধ্যাণ। নিজেতে খুলে দিয়ে বসে প্রকাশের স্বাধীনতা, রসাত্মক স্ফূর্তি;
অভীক ওসমান আমার পার্শ্ববর্তী এলাকার অগ্রজ কবি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব অগ্রজদের কবিতা পড়ে বড় হয়েছি,অভীক ওসমান এদের অন্যতম। উনার দশকে চট্টগ্রামে দাপুটে কবিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলা সাহিত্যে একেকজন নাম-জাগানিয়া। স্বতন্ত্র ধারায় বুক সটানভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারার মতো কবি। কেন জানি কোন ছায়াবলে ম্রিয়মাণ নাকি নিজের লেখার ধ্যাণে থেকেছেন সেটাই বলবার কথা; আদতে দেশের কী জগতে যতো পুরস্কার সব লবিংয়ে নতজানু, সেখানে সত্যিকারের কবিমন এসবে সায় দেবে না এটাই সত্যি। অগ্রজ কবি অভীক ওসমান যখন পুরোদমে লিখছেন চট্টগ্রামের যেই বলয় উনারা কবিতার আনন্দে কবিতা লিখতেন। এখন পাঠকদের কাজ খুঁজে নেওয়া। বরঞ্চ এখন সত্যিকারের কবি লেখকরা তথাকথিত পুরস্কার পেলে আরও হীনমন্যতায় ভোগেন।
০২.
কবি অভীক ওসমান মর্মভেদী কবিতার মরমি পুরুষ। সম্প্রতি কবির ‘নির্বাচিত পদ্য’ পাঠের মাধ্যমে কবিকে এক মলাটে বুঝতে চেষ্টা করেছি মাত্র। হয়তো কবিকে কবির ভাবনার পুরোপুরি ধরা যায় না। পাঠক কেবল পাঠকের ভাবনায় এগোতে পারে। প্রকৃতির নির্ভেজাল আকুতিভরা বোধবিজ্ঞান, প্রকৃতির রূপ রহস্যের উন্মোচিত সরল প্রকাশ। পরাবাস্তববাদ কিংবা ঠেঁস কথা আবার উপমা বলে অনেকে সেখানে অভীক ওসমান শেয়ানা খুব; উৎপ্রেক্ষায় সুস্থির বলন, শব্দের বাছাইয়ের তেমন ধার ধারেনি কেননা মনের আনন্দে কিংবা মনের দহনের কবিতায় কবিতা হয়ে লেখে। ছন্দে রিদ্মিক তাল লয়ের ব্যাপারটি সহজাত কিংবা অনুশীলনে আয়ত্তাধীন; কয়েকটি কবিতার কয়েক লাইন উল্লেখ করলে বুঝবেন-
ক.
ভালোবাসা মানে কিছু নয়
কিছু কিছু দুঃসহ অসহায় পুরুষের আত্মসমর্পণ
নারীর বুকব্রিজের কাছে
মনে করে বুকব্রিজের নিচে – হৃদয়,
নদী আছে
জল আছে
আছে সবুজচড়ার সুদৃশ্য হাতছানি
নদী নেই
জল নেই
সবুজ সুদৃশ্য হাতছানি ছলনা।
- হেরফের; ২০পৃ.)
খ.
তোমাদের জোরালো চিৎকার
চমক
চা’খানার
গ্লাস ভাঙে ঝনাঝন,মাথার উপরে
মাছির মতো হরদম ওড়ে সিলিং ফ্যান।
এসব শব্দ যখন পথে নামে
হয় স্লোগান
- শংকিত পূর্ব পুরুষ;২১ পৃ.)
গ.
আমার সামন্তসুখ সবুজ গ্রাম দুধেল রমণী গাই ঝিঙে ফুল
আসরের নামাজে জননীর সাদা শাড়ি শৈশব ডুবজলা পুকুর
সন্ধ্যা চেরাগ জ্বলা যুবতী- বধূর প্রতীক্ষা গৃহ
রক্তাক্ত ছোঁরায় এরাই এঁকেছে বহুবার
আবাসিক প্লটের নকশা
বিরান হয়ে গেছে কোমল ক্লাসিকেল হৃদয়
আমি আজ পতিত জমিতে উদ্বাস্তু প্রেমিক।
- বিজ্ঞাপন- ভালোবাসার প্লট বরাদ্দ হচ্ছে ঠিকানাসহ যোগাযোগ করুন;১৩-১৪পৃ.)
০৩.
অভীক ওসমান সমাজসচেতন কবি। অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চারিত কণ্ঠের সাথে মিলিয়ে দেওয়া এক অকৃত্রিম কবি স্বর। ভালোবাসার নীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে; রোমান্টিসিজমেও বীজ বুনে দেন সমতা ও সাম্যের। আশপাশের পরিচিত ও নিজের বাসভূমের সেই শঙ্খ নদী অভীক ওসমানের কবিতায় জড়াজড়ি করে আছে। ভাষায় আন্তরিক বৈভবে স্মার্ট শব্দগুচ্ছে কবি সর্বদা গতিময় গীতি ধারা –
ক.
হে বালিকা!
করো স্নান নব ধারা জলে
এসো! পেশল কৃষকের বুকে এসো, শয্যা শস্যের জমিনে এসো।
মন ও শরীরের তুখোড় বৃষ্টি আমার
তোমাকে চায়।
আমরা জুড়াতে চাই জীবনের অন্তর্গত জ্বর ও জ্বালা
স্নান- শুদ্ধ হই এসো!
- বৃষ্টি বালিকা;৮৪ পৃ.)
খ.
প্রেমিক হতে হলে বৃক্ষ হতে হবে,
কেন,সহন বহন দাঢ়্যতা,দখিনা ঝড় ধরার ক্ষমতা
কোন বৃক্ষ হবো বলো,শৈশবের নানা বাড়ির নমিত
কাঁঠাল চাপার গন্ধ, হাঁটুরে পথে ভয় ও ভালোবাসার বট,
বিটপীর অহংকার, অনার্স জীবনের কৃষ্ণচূড়া অ্যাভিনিউ,
রোদেলা সকালের ইউক্যালিপটাস অথবা
সাসটেইনেবল হুইপিং ট্রি।
কুয়াশাকণ্ঠ;৯০পৃ.)
‘ নির্বাচিত পদ্য’ অভীক ওসমানের পূর্ব প্রকাশিত কবিতা বইগুলো থেকে বাছাই করা কবিতার সংকলন বিশেষ। ‘বিষাদের জার্নাল’, ‘শুধু তোমার জন্যে এই অরণ্যে’, ‘হে সংসার হে লতা’ বই থেকে উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং ‘অগ্রন্থিত পদ্য’ শিরোনামে কয়েকটি নতুন কবিতার স্বাদ পাবে পাঠক। এই ‘নির্বাচিত পদ্য’ পাঠের মাধ্যমে একজন কবির জীবনযাত্রা ও কবির তাড়না- তাড়া খাওয়া বুঝতে পারবেন এটাই বড় খবর…
||
নির্বাচিত পদ্য
অভীক ওসমান
খড়িমাটি
প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য: ৩০০টাকা