spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যহুমায়ুন আজাদ

লিখেছেন : ইমরুল হাসান

হুমায়ুন আজাদ

ইমরুল হাসান 

.

হুমায়ুন আজাদ’রে নিয়া কোনদিন ভালো কথা আমি বলতে পারি নাই। খারাপ কথাও বলি নাই কোন। যেহেতু আজকে উনার জন্মদিন, এই অকেশনে কয়েকটা কথা বলি। 

সাহিত্য নিয়া উনার ডেডিকেশন যেমন মাঝে-মধ্যে এপ্রিশিয়েট করার মতো মনে হইছে, একইভাবে চিন্তা-ভাবনায় উনার গোঁজামিলও চোখে পড়ছে অনেক সময়। কিন্তু উনি যেহেতু এক ধরণের এটেনশন-সিকার ছিলেন, এই কারণে মেবি উনার কাজকামের প্রতি ইন্টারেস্ট কখনোই হয় নাই আমার। উনার লেখা খুব বেশি পড়া হয় নাই। বাংলা-ভাষা নিয়া উনার বই দুইটা খাপ-ছাড়াই মনে হইছে, মনে হইছে রিসার্চার হিসাবে উনি খুব বেশি মনোযোগ দেন নাই। ‘নারী’ বইটাও এতো বেশি অগোছালো লাগছে যে, পড়তে পারি নাই। 

উনার অল্পকিছু কবিতা যা পড়ছি, শামসুর রাহমানের ঘোর থিকা বাইর হইতে পারে নাই — এইরকম মনে হইছে। মেবি, উনার একটা ফ্রি-সৌল ছিল, যেইটারে খুব কম সময়ই উনি কবিতাতে নিয়া আসতে পারছেন। উনার জানা-বুঝা যা-ই ছিল, সেইটা উনার কবিতার জায়গাটারে ওপেন না কইরা এক ধরণের পাহারা বসায়া দিছিলো বইলা মনে হইছে।

তবে উনার যেই জায়গাটারে সবচে বেশি এপ্রিশিয়েট করা হয় — আউটস্পোকেননেস, ‘মুখের উপর সত্যি কথা বলতে পারা’র এরোগেন্স; এইটারেই উনার সবচে বাজে দিক বইলা মনে করি আমি। উনি ঠোঁট-কাটা হয়া ‘সত্যি-কথা বলার’ যেই ইমেজ বা ট্রাডিশন সেট করতে চাইছেন, সেইটারে একটা ঘৃণার জায়গা বললেও কম বলা হবে, এক ধরণের বেটাগিরি করতে পারা, অন্যরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারাটারে ‘সত্য-বলার’ ঘটনা হিসাবে এস্টাবলিশ করছেন। যেন এইরকম লাউড হইতে পারাটাই হইতেছে ‘সত্যি কথা বলা’, ক্রিটিক করতে পারা। বাংলাদেশে সত্যি-কথা বলার নামে যেই হেইট-স্পিচ কালচারটা শুরু হইছে, এর অলমোস্ট পুরাটাই হুমায়ুন আজাদের ক্রেডিট, বাদবাকি আহমদ ছফার। উনাদের বেটাগিরি থিকা বাইর না হইতে পারলে বাংলাদেশে পাবলিকলি ‘সত্য-কথা’ বলার জায়গাটারে আমরা ক্লেইম করতে পারবো না, পারতেছিও না।

সেক্যুলার, বিজ্ঞান-মনষ্কতার জায়গাতেও থিওরিটক্যালি নতুন কোন চিন্তা উনি রাখতে পারছেন বইলা আমার জানা নাই। যা পারছেন, সমাজের মানুশ-জনরে গালি-গালাজ করতে পারছেন। আজকে যারা কথায় কথায় ‘পাবলিকের দোষ’ খুঁইজা পান, উনারা কম-বেশি হুমায়ুন আজাদের এই ইগোর এক্সটেনশন। এইটা খেয়াল করতে পারাটা দরকার।

আজকে উনার জন্মের দিনে উনার মেয়ে আর বউয়ের একটা আলাপ পড়লাম, বুঝা যায়, পারসোনাল লাইফে উনি ভালো মানুশ ছিলেন। কিন্তু আমরা উনারে উনার সোশ্যাল কাজকাম, চিন্তা-ভাবনার বেসিসেই যাচাই করবো। কারণ আমরা উনারে চিনি উনার চিন্তা-ভাবনা, লেখালেখি দিয়া। আর সেইখানে উনারে ‘সাহিত্যের আইকন’ বানায়া রাখাটা আমাদের চিন্তা-ভাবনার জন্য খুব একটা পজিটিভ ঘটনা না।  যারে আমরা ভালো বইলা জানি, গ্রেট বইলা ভাবতে চাই, আমাদের প্রশ্ন করতে পারা দরকার, কেন উনারে ভালো মনে করি আমরা, ঠিক কোন কাজের জন্য উনারে গ্রেট বানাইতে চাই আমরা? 

যদিও মনে করা হয় হুমায়ুন আজাদ এই প্রশ্নগুলা করতে পারতেন, কিন্তু আমার ধারণা, উনার প্রশ্ন কমই ছিল। ছিল টিটকারি করার প্রতিভা, ঠেস মারার অভ্যাস। এইগুলারে ইন্টেলেকচুয়াল সাহসের ঘটনা বইলা দেখলে ভুল হবে। বরং কোন প্রশ্ন না করতে পারার ভ্যাকুয়াম এইগুলা। (হুমায়ুন আজাদের আজকে বাংলাদেশে ইন্টেলেকচুয়াল আইকন হওয়ার কারণে এইরকম বেহুদা এগ্রেসিভ হওয়া, সুডো স্মার্টনেস আর অন্যরে অপমান করতে পারাটারে আমরা ইন্টেলেকচুয়ালিটি হিসাবে ভাবতে পারি।)

আজকে উনার জন্মদিনে, উনারে ভক্তি-শ্রদ্ধা করার চাইতে উনার কন্ট্রিবিউশনের জায়গাগুলা নিয়া কথা বলতে পারলে বেটার। 

আমি বলতে চাইলাম, উনি একজন দেমাগি ভালো-মানুশ ছিলেন, যেইটা আমাদের আরো কম দরকার এখন। দরকার এমন ইন্টেলেকচুয়ালের, যিনি আমাদের কথার উত্তর দিবেন না, বরং আমাদের হয়া দরকারি প্রশ্নগুলা করতে পারবেন। হুমায়ুন আজাদ অই ইন্টেলেকচুয়াল ছিলেন না। এই কারণে উনারে বড় কইরা তুললে আজকে ইন্টেলেকচুয়ালিটির জায়গাটারে মিস কইরা যাওয়ার চান্সই বেশি আমাদের।  

………..

রচনা কাল : ২০২১

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা
এড. শাহানারা স্বপ্না on লেট ফ্যাসিজম
Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প