মজিদ মাহমুদ
কেউ কেউ যুদ্ধ বাধিয়ে আনন্দ পায়
অনেকদিন নিজেকে প্রশ্ন করেছি–
আমিও কি সেই দলের
খুব একটা উত্তর পাইনি–
ভয় বা শান্তি এর কোনোটাই নয় কারণ
যুদ্ধ শান্তির জন্যও হতে পারে
শান্তিভঙ্গের জন্যও হতে পারে
যুদ্ধ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান
যুদ্ধে যোগদান করা
যুদ্ধের জন্য সরঞ্জাম তৈরি
এসব চাকরিরই মতো
কারো বাড়ি দখল গ্রাম দখল রাজ্য দখল
একই কথা– মহৎ যুদ্ধ বলে কিছু নেই
যুদ্ধ লাগলে কিছু মানুষ মারা যাবে
কারো হাতপা উড়ে যাবে
কারো বাড়ি ঘর পুড়ে যাবে–
ঠিক সময়ে বিয়ে করা হবে না
কারবালার কাসেম-সখিনার কথা আলাদা
সন্তান-সন্ততির জন্ম হারও কমে যাবে
নারীরা ধর্ষিত হবে
শিশুদের বিক্রি করা হবে বাজারে
পুরুষ কমে যাবে
এক পুরুষকে চাইবে বহুনারী
এটা যুদ্ধের প্রণোদনা
এটা যুদ্ধ থেকে বেঁচে থাকা পুরুষের দায়
নারীর আধিক্য বহু বিবাহ
যদিও বিবাহিত নারী দেবে না পুরুষের ভাগ
স্বমী স্ত্রী পরস্পর সম্পদ বিশেষ
যুদ্ধে অনেকে বাস্তুচ্যুৎ হয়
এক দেশের মানুষ চলে যায় অন্য দেশে
ইহুদি মুসলিম খ্রিস্টান
হিন্দু শিখ বৌদ্ধ পারসিয়ান
কাকে রেখে কাকে মরব– সেসব বিবেচ্য নয়
এ কাজের ধরনই এমন
যুদ্ধে স্বপক্ষের গুলিতে মরলেও লাগে বীরের তকমা
বেশি মারা– বেশি ফসল কাটার মতো
বেশি মাছ ধরা ভালো মৃগয়ার মতো
না মারলে দুদিন পরে মরবে কেউ
একজনের সম্পদ অন্যজন নিয়ে নেবে
যুদ্ধ ছাড়াই পিতার সম্পদে পুত্রের অধিকার
যুদ্ধের চেয়েও এ এক জঘন্য রীতি
যখন যুদ্ধ হয় না তখন পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে
রোমান গ্রিক পারস্য আরব মোগল
এসব যুদ্ধ না থাকলে সময় আলাদা হতো না
ইতিহাসের বই থাকতো না
কেউ যুদ্ধ করে স্বর্গে যাবে
কেউ যুদ্ধ করে যাবে নরকে
কেউ শহিদ হবে কেউ নিহত
যুদ্ধ বাধাতে এসব কিছুই লাগে না
কেবল সাহস করে দিতে হবে প্রথম কোপ
সভ্য মানুষ সভ্য দেশ–সবাই যুদ্ধবাজের বংশধর–
য়ুরোপ মার্কিন এখনো যুদ্ধ বেচে খায়
শত শত বছর মানুষ করেছে বেচাকেনা
এখনো দেশে দেশে যুদ্ধের জন্য বানায় অস্ত্র
তোমার কাছে পটকা বেচলেও
নিজের জন্য রাখে পারমাণবিক অস্ত্র
আমি আসলে যুদ্ধের পক্ষে
যুদ্ধ করেনি এমন মানুষ আমি চিনি না
পাইনি ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম
জেনেছি হত্যাকারীরাই পৃথিবীতে মহান
হিটলার মুসোলিনি অশোক চেঙ্গিস তৈমুর
তাদের রয়েছে গৌরবান্বিত ইতিহাস
যুদ্ধ অনেকটা রান্না তরকারি মতো
তেল উত্তলোনের মতো
রান্না না করলে তোমার খাবার সুস্বাদু হবে না
তেল উত্তোলন না করলে চুলা জ্বলবে না
মানুষ যদি যুদ্ধ না করতো
তবু মানুষ মরে যেতো
যারা মরার ভয়ে যুদ্ধ করেনি
তারাও মরে গেছে ক্ষুধার্ত সিংহের মতো একা
যারা তোমাকে যুদ্ধ না করার পরামর্শ দেয়
দেয় সাধুতার উপদেশ–
জেনে রেখো তারাও তলে তলে যুদ্ধবাজ
নিজে যদি যুদ্ধ করতে ভয় পাও
তাহলে তুমি আগেই নিহত
সেনাপতি হতে না পারলে সেপাহি হও
না পারলে অন্তত আমার পিছে সমবেত হও
চলো যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়ি
ডনকুহিতোর মতো মরকুটে ঘোড়া থাকলেই হবে
যেকোনো অভিযান যেকোনো স্বপ্নকে তুমি
যুদ্ধ নামে ডাকতে পারো–
যেভাবে আলেকজান্ডার বেরিয়ে পড়েছিল
আর ফিরতে পারেনি
মায়ের পরামর্শে বাবাকে করেছিল খুন
পৃথিবীর সকল রাজা পিতৃ ও ভ্রাতৃঘাতী
অশোক অটমান সেলিম খুররম ঔরঙ্গজেব
তুমিও জন্মের সময় ভ্রাতৃঘাতী ছিলে
আসা এবং যাওয়ার সময় সবাই যোদ্ধা
খালি হাতে ফিরতে হবে একদিন —
একজন যোদ্ধাকেও একজন রাজাকেও
ডাক্তার সেনাপতি খাজাঞ্চির মালিকেও
কেউ বাঁচবে না– যুদ্ধ বেঁচে থাকবে
অন্তত ইতিহাসের পাতায়
আসো যুদ্ধ করি– বেরিয়ে পড়ি পৃথিবীর পথে
যুদ্ধ বাঁচার এক অনন্য শিল্প।
মজিদ ভাইয়ের কবিতা ভালো লাগে।
‘যুদ্ধ বাঁচার এক অনন্য শিল্প’! কবির কবিতায় একথা পড়ে থ’ হয়ে গেলাম, কি কথা শুনলাম! পর পর তিনবার কবিতাটি পড়লাম । ভোরের সূর্য যেমন কুয়াশার আবরন সরিয়ে প্রকাশিত হয়, কবিতাটির অর্থও যেন তেমনি বোধগম্য হতে লাগল! বেশ ভাবনার কথা বটে!