তাজ ইসলাম
‘জিয়া এই নামটিই আমার কাছে নতুন বিস্ময় হিসেবে এসেছিলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। আমি মেজর জিয়া বলছি…..
তিনি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সূচনা এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও ঘোষণা করেছিলেন মেজর জিয়া। বাংলা ভাষার এই সময়ের অন্যতম প্রধান কবি ড. মাহবুব হাসান এভাবেই শুরু করেছেন তার প্রবন্ধ।
মাহবুব হাসান কবি, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক। বয়সে প্রবীণ। মুক্তিযুদ্ধের একজন সচেতন সাক্ষীও বটে। আমরা তার সাক্ষ্যকে ইতিহাসের দলিল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি বিনা প্রশ্নে। তার মতো প্রাজ্ঞজনদের বয়ানই ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত।
মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক। এই নিয়ে যাদের মনে দোদুল্যমানতা তা কেটে যাবে মাহবুব হাসানের মতো জীবিত সাক্ষীদের জবানীর তরতাজা বয়ানে। আমরা আরও আশ্বস্ত হই তার পরবর্তী বয়ানে। যখন তিনি লেখেন, ‘ তাঁর সেই ঘোষণা শুনে আমি আর আমার মেজভাই মাহবুব মোরশেদ খান, উল্লাসে ফাটতে ফাটতে বাড়ির দিকে এসেছিলাম। সেই তারুণ্যদীপ্ত কালে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য মুখিয়েছিলাম। কারণ, আমরা বিশ্বাস করতাম বন্দুকের নল ছাড়া দেশ শত্রুমুক্ত করা যাবে না।’ ড. মাহবুব হাসানের কথার গুরুত্ব আছে। তার কথা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের উপাদান। কারণ তিনি কবি, আবার তিনি রণাঙ্গনের সরাসরি যোদ্ধা। তার জবানীতে, ‘মেজর জিয়ার ঘোষণার আগেই আমরা ট্রেনিং শুরু করি।’ জিয়ার ঘোষণা মাঠের যোদ্ধাদের শুধু মনোবলই বৃদ্ধি করেনি, তাদের কাণ্ডারী শূন্যতাও দূর করেছিল।
আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। পাকিস্তান বাহিনী যখন ২৫ মার্চের রাতে পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমণ করে বসেছে তখনও পত্র পত্রিকায় প্রেস রিলিজ হিসেবে পরের দিন সংবাদ ছাপে আওয়ামী লীগের নিয়মিত কর্মসূচি অংশ হিসেবে হরতাল আর ধর্মঘটের কর্মসূচীর নিউজ। তাদের দলীয় কর্মীসহ আমজনতা আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে হয়ে গিয়েছিল হতভম্ব। এই সময়ই এগিয়ে আসেন একজন মেজর জিয়া। তিনি অসীম সাহসে ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। ড. মাহবুব হাসান যুদ্ধ দিনের কথা বলতে গিয়েই বলেছেন সেসব কথা তার ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’ প্রবন্ধে।
‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’ ইতিহাসের এই সত্যটুকু আড়াল করে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে একটি বিশেষ মহল। ইতিহাস স্বমহিমায় জ্বলে ওঠে। কেউ চেপে রাখতে পারে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা সরব থাকলে তা আরও অসম্ভব। ইতিহাসের আরও অনেক না জানা বিষয় জানতে পাঠ জরুরি ড. মাহবুব হাসানের এই প্রবন্ধখানা। তা পাঠ করতে সংগ্রহ করতে হবে জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা ‘বাংলা রিভিউ’র সপ্তম সংখ্যা। সপ্তম সংখ্যা জানুয়ারি- মার্চ ২০২৫ সংখ্যাটি বাজারে এসেছে ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংখ্যা’ হিসেবে। একগুচ্ছ প্রবন্ধ ও একগুচ্ছ কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা।
প্রাবন্ধিক ফজলুল হক সৈকত প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছেন ‘ জিয়াউর রহমান ছিলেন অনিবার্য ‘।
শিরোনামেই বুঝা যায় মেজর জিয়া নিয়ে তিনি কি বলতে চাচ্ছেন। জিয়া স্বনামে পরিচিত। একাধিক বিশেষণে তিনি প্রোজ্জ্বল। যে বিশেষণেই অভিহিত করা হয় তাই যেন তার নামের সাথে যুক্ত হয়ে যায় যথোপযুক্তভাবে। মেজর জিয়া, প্রেসিডেন্ট জিয়া, রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক, রাজনীতিবিদ জিয়া, এমন কি শুধু জিয়া বললেও আমজনতার মানসপটে একজন সফল জিয়ার মুখাবয়ব ভেসে ওঠে।
জিয়া মানেই অনন্য উচ্চতায় আসীন এক নাম।
জিয়াকে জানতে হলেও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন ‘বাংলা রিভিউ’র হাল সংখ্যাটি।
আর জিয়াকেই বা জানার এত গুরুত্ব কেন তা শুনুন ফজলুল হক সৈকতের বয়ানে। তিনি লেখেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে,স্বাধীন দেশে রাজনৈতিক- সামাজিক অগ্রগতির সাথে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (জন্ম : জানুয়ারি ১৯,১৯৩৬; মৃত্যু: মে ৩০,১৯৮১) এর নাম যে সব কারণে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত, তা আজকের প্রজন্মের কাছে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।’
‘সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল এমনই আবেগধর্মী যে আমাকেও তখন কিছু লিখতে হয়েছিল। কলম তুলে নিতে হয়েছিল হাতে।’ জিয়াউর রহমান এমন মন্তব্য করেছিলেন তার স্মৃতিচারণমূলক লেখা
‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক গদ্যের প্রেক্ষিত বুঝাতে। কবি কাজী জহিরুল ইসলাম
“কীভাবে রচিত হলো ‘একটি জাতির জন্ম’?” শীর্ষক প্রবন্ধে জিয়াউর রহমানের উল্লেখিত রচনার প্রেক্ষপট বর্ণনা করতে গিয়ে হাজির করেছেন লেখাটির ইতিহাস ও চমকপ্রদ নানা ঘটনার বিষয় আশয়। লেখক বলেন ‘আমি কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি জিয়াউর রহমান বাংলা জানতেন না, এই মন্তব্যটি আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি’।
লেখক তার লিখিত প্রবন্ধে ‘একটি জাতির জন্ম’ কি আছে তা খোলাসা করতে চেষ্টা চালিয়েছেন। একটি লেখার ইতিহাসের বয়ানে রচিত হয়েছে আরেকটি লেখা। জিয়াউর রহমানের লেখাটি কেবল কোন একটি লেখাই না, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। এটি ছাপা হয় ২৬ মার্চ ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায়। ‘ যদি ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট (তৎকালীন লে. কর্নেল) জিয়াউর রহমান তার এই রচনাটি দৈনিক বাংলা রিপোর্টার মনজুর আহমদের হাতে তুলে না দিতেন তাহলে হয়ত এমন একটি ঐতিহাসিক দলিল থেকে বঞ্চিত হত বাংলাদেশের মানুষ।’
‘উই রিভোল্ট বলে সাহসের প্রচ্ছদে/ একদিন এই অভিজ্ঞতাই আমাদের জানিয়েছিলেন/ বীর উত্তম জিয়াউর রহমান। ( বীর উত্তম জিয়াউর রহমান : মহিবুর রহিম)।’
নয়ন আহমেদের কবিতার নাম, ‘জিয়া– একজন গাছের নাম।’ জিয়া সংখ্যায় কবিতা লিখেছেন, সালেম সুলেরী, ফেরদৌস সালাম, শাহীন রেজা, কামরুজ্জামান, আবু জাফর সিকদার, জাকির আবু জাফর, সাজ্জাদ বিপ্লব, ফরিদ সাইদ, জিয়া হক, এ কে আজাদ প্রমুখ।
প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিকদের নামের তালিক এমন,
‘একাত্তরের গল্প : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী,’ ‘শেখ মুজিব ভার্সেস প্রেসিডেন্ট জিয়া : মীর সালমান শামিল’, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ : আমান আবদুহু’, এছাড়াও আরও অনেকেই আছেন সূচিতে।
‘এটা স্বীকার করতেই হবে, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের বার্তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সামরিক এবং রাজনৈতিক ঘোষণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ( স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জিয়াউর রহমান : মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন)। ‘ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন তার প্রবন্ধে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে জিয়াউর রহমানের ভাষণ, ভাষণের গুরুত্ব খুব সম্বৃদ্ধ তথ্যের ভিত্তিতে খোলাসা করেছেন। ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জিয়াউর রহমানে অবদান নিয়েও করেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা। তাজ ইসলাম প্রেসিডেন্ট জিয়াকে নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধের নাম দিয়েছেন, ‘ স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া : কমল থেকে শহীদ জিয়া।’
প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, কবিতা দিয়ে সাজানো বাংলা রিভিউ : সপ্তম সংখ্যা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংখ্যা হিসেবে এটি একটি ইতিহাসের স্রোতে যুক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। সংখ্যাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখা জরুরি। সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব বরাবরের মতো এবারও একটি গুরু দায়িত্ব পালন করলেন। জিয়ার ছবি সংবলিত প্রচ্ছদে পত্রিকাটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন : সোহানুর রহমান অনন্ত। পত্রিকাটির গুরুত্বপূর্ণ অলংকরণ করেছেন শিল্প সম্পাদক : আল নোমান। শেষ পৃষ্ঠায় আছে বাংলা রিভিউ প্রকাশনীর বইয়ের বিজ্ঞাপন। আশা করা যায় সংখ্যাটি সব মহলে সমাদৃত হবে। মূল্য মাত্র ১০০ টাকা। শেষ দুই পৃষ্ঠায় আছে শহীদ জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের খবর। আছে কিছু আলোকচিত্র। বাংলা রিভিউ ‘র এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
বেশ ভালো
আলোচনাটি বেশ ভালো হয়েছে।
বাংলা রিভিউ কি শুধু অনলাইন পত্রিকা ?
প্রিন্ট সংখ্যাও হয়।
নি:সন্দেহে বাংলা রিভিউ মানসম্পন্ন পত্রিকা। তাজ ইসলামের লেখাটি বেশ তথ্য সমৃদ্ধ । অন্যান্য লেখা সব পড়ার ইচ্ছে রইল।
ইসলামের লেখাটি বেশ তথ্য সমৃদ্ধ । অন্যান্য লেখা সব পড়ার ইচ্ছে রইল।