spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধসমকালীন আফগানিস্তানের কবিতার রূপরেখা : দুই

লিখেছেন : মাসুদুল হক

সমকালীন আফগানিস্তানের কবিতার রূপরেখা : দুই

মাসুদুল হক

খ. গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান:

আফগান কবিরা সাধারণত মানবাধিকারের পক্ষে এবং দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। তারা কবিতায় তাদের দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার আহ্বান জানান।
আফগান কবিতায় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আফগানিস্তান দীর্ঘকাল ধরেই যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ছিল। কবিরা তাদের কবিতায় মানবাধিকার, স্বাধীনতা, এবং সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আফগান কবিদের মধ্যে কিছু বিশেষ কবি রয়েছেন, যারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং তাদের কবিতায় এই বিষয়গুলি উঠে এসেছে।এখানে কয়েকজন আফগান কবির কবিতা ও তাদের কবিতায় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার
পক্ষে অবস্থানের চিত্র তুলে ধরা হলো।

১. খালিলুল্লাহ খালিল (Khalilullah Khalil)আফগানিস্তানের একজন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক । তিনি ১৯৬৩ সালের ১৫ই জানুয়ারি আফগানিস্তানের কাবুল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মূলত আফগান কবিতার আধুনিক ধারার একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি, যিনি তার কবিতায় গভীর মানবিকতা, প্রেম, জীবন, দুঃখ ও সংগ্রামের কথা বলেছেন। তার কবিতাগুলোর মধ্যে এক ধরনের নান্দনিকতা ও তাত্ত্বিক ভাবনার মিল দেখা যায়, যা আফগান সমাজের সমস্যা এবং মানবিক অভিজ্ঞতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। সেইসঙ্গে তাঁর কবিতায় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় উচ্চারণ লক্ষণীয়।তাঁর কবিতায় আমরা আফগান জনগণের সংগ্রাম এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণা দেখতে পাই। যেমন, তিনি লেখেন:
“যুদ্ধের মাটি, দুঃখের ছায়া,
স্বাধীনতার আলো সবকিছু নেবে।
মানুষের অধিকার, সবার সমান,
একদিন এই ভূমিতে ফিরে আসবে শান্তি।”
খালিলুল্লাহ খালিলের কবিতায় স্বাধীনতা একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। তিনি মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি তাঁর অনুভূতিগুলি প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতায় স্বাধীনতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং চিন্তার এবং মননের স্বাধীনতাও গুরুত্ব পায়। যেমন:
“স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করেছে,
সে যেন মুক্তির অমৃত পান করে।”
এখানে খালিলুল্লাহ খালিল স্বাধীনতার সংগ্রামী শক্তিকে সম্মান জানান এবং স্বাধীনতার মাহাত্ম্য বোঝান।
কিংবা:
“গণতন্ত্রের বাণী যদি সঠিকভাবে বজায় থাকে,
তবে শাসন হবে ন্যায্য, সমান হবে সকলের দৃষ্টি।”
এখানে খালিলুল্লাহ খালিল গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শোষণ এবং বৈষম্য দূর করার কথা বলেছেন।
তিনি দেখিয়েছেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সকলের মতামত ও অধিকার সমান হওয়া উচিত। তাঁর কবিতায় তিনি সমাজের স্তরে স্তরে শোষণ, বৈষম্য এবং দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

২. মুজতবা সৈয়দ(Mujtaba Syed;১৯৩২-২০০৪) একজন প্রখ্যাত আফগান কবি, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবী। তার কবিতায় তিনি মূলত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সামাজিক অবিচার, এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি তার গভীর অনুপ্রেরণা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মৌলিক অধিকার, যেমন স্বাধীনতা এবং সঠিক বিচার, সুরক্ষিত থাকতে হবে, এবং তার কবিতায় এই বিষয়গুলি বারবার উঠে এসেছে। তার কবিতা আফগান সমাজের অবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ, এবং সাধারণ মানুষের কষ্টের প্রতি একটি গভীর মনোভাব এবং সমর্থন প্রকাশ করে:
“স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি শব্দ নয়,
এটি একটি রক্তাক্ত যাত্রা,
যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে
জননীদের কান্না মিশে থাকে।”
এই কবিতার মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে স্বাধীনতা অর্জন সহজ নয়। এটি একটি লড়াই, যেখানে মানুষ এবং সমাজের সংগ্রাম অনিবার্য। এভাবে, মুজতবা সৈয়দ তার কবিতায় স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ধারণাকে এক কঠিন, কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান সংগ্রাম হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তার আরেকটি কবিতায় তিনি লেখেন:
“দেশে যুদ্ধ, দেশে অশান্তি,
কিন্তু আমরা হারতে পারব না।
রক্তাক্ত মাটি, তবু নতুন সূর্য ওঠে,
স্বাধীনতা আসবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
তাঁর কবিতায় অনেক সময় আক্ষরিকভাবে গণতন্ত্র এবং মানুষের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি আফগানিস্তানের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংগ্রামকে তাঁর কবিতায় নিবিড়ভাবে তুলে ধরেছেন।

৩.সায়েদ ইসমাইল (Syed Ismail; ১৯২৯-১৯৮১) আফগান কবিদের মধ্যে অন্যতম একজন, যিনি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা লিখেছেন। তিনি আফগান জনগণের অধিকার এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে উচ্চকিত কণ্ঠস্বর। এই ধারার কবিতার উদাহরণ:
“স্বাধীনতার দাবিতে,
রক্তের নদী, শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত,
আমরা বিজয়ী হব, আমাদের অধিকার ফেরত পাব।”
তাঁর কবিতায় তিনি সাধারণ মানুষের কষ্ট এবং সংগ্রামকে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তুলে ধরেন। যেমন তিনি লেখেন:
“গণতন্ত্রের আলোতে
আমরা আমাদের পথ খুঁজে পাবো,
সব বাধা আর শৃঙ্খল ভেঙে,
একদিন সত্যের জয় হবে,
আমাদের অধিকার ফিরে পাবো।”
এই কবিতায় তিন স্বাধীনতার জন্য তার দেশের মানুষের সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন। গণতন্ত্রের আলোকে তিনি আশা রাখেন যে একদিন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

৪. আবদুল্লাহ নায়েম (Abdullah Nayem;১৯১৪-১৯৯৫)
একজন প্রখ্যাত আফগান কবি, সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার কবিতার মাধ্যমে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেছেন। তিন ১৯৪০ সালে আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন।তার কবিতায় সাধারণত মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক চেতনা লক্ষণীয়। তিনি আফগানিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে কবিতা রচনা করেছেন এবং তার সময়ে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলি তিনি তার কবিতায় তুলে আনেন। যেযন তিনি লেখেন:
“এখানে থেমে থাকবে না আমাদের আন্দোলন,
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে,
জনগণের অধিকার ফিরে আসবে,
গণতন্ত্রের পতাকা উড়বে উচ্চে।”
তাঁর কবিতায় আফগান জনগণের আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামের চিত্র ফুটে ওঠে। তিনি কবিতায় আফগানিস্তানের সংগ্রামী মনোভাব এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।
তিনি তার কবিতার মাধ্যমে জনগণের দুঃখ-কষ্ট, রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। তার কবিতাগুলিতে বিপ্লব, সামাজিক আন্দোলন, এবং যুদ্ধবিরোধী বার্তা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একজন প্রকৃত কবি জনগণের কষ্টের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠতে পারেন এবং তাদের সংগ্রামে সহযোগিতা করতে পারেন।তাই তিনি লেখেন:
“গণতন্ত্র একটি স্বপ্ন নয়,
এটি আমাদের সংগ্রামের ফল।
আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ
গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
এখানে আবদুল্লাহ নায়েম গণতন্ত্রকে একটি লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন যা সহজে অর্জিত নয়, বরং একটি দীর্ঘকালীন সংগ্রাম যা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ফল।
এই কবিরা তাঁদের কবিতার মাধ্যমে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন। তাঁদের কবিতা শুধুমাত্র সাহিত্যিক কাজ নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের আওয়াজ।

[ চলবে]

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা
এড. শাহানারা স্বপ্না on লেট ফ্যাসিজম
Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প